রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুনিয়া কাঁপানো স্পেশাল ফোর্স

রণক ইকরাম

দুনিয়া কাঁপানো স্পেশাল ফোর্স

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত নিরাপত্তার জন্য যোগ্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। শত্রুর এলাকায় ঢুকে নিখুঁত অভিযান চালিয়ে আসতে সক্ষম এমন বাহিনী রয়েছে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক সামরিক শক্তিশালী দেশের। সাধারণভাবে এরা স্পেশাল ফোর্স কিংবা কমান্ডো নামে পরিচিত। মানা হয় বিপজ্জনক মুহূর্তের নির্ভরযোগ্য বন্ধু এরা। কারণ বিপদের মুহূর্তে এরা যে কোনো স্থানে যে কোনো পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকে।  জানা যাক বিশ্বের তেমন স্পেশাল ফোর্সের গল্প। রইল বিস্তারিত...

 

►যুক্তরাজ্যের এমআই সিক্স

বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা চলচ্চিত্র সিরিজ জেমস বন্ডের সুবাদে এম আই সিক্স নামটি সবার কাছেই পরিচিত। এটিই জেমস বন্ডের সংস্থা। এই সংস্থা গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে দারুণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেও এদের বিশেষায়িত কমান্ডো বাহিনীও কিন্তু কম ভয়ংকর নয়। এমআই সিক্স মূলত যুক্তরাজ্যের আরেক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৫ এর সঙ্গে দারুণ গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স, কাউন্টার এসপিওনাজের কাজ যেমন সহজে সারেন এমআই-৬ এর এজেন্টরা তেমনি দুর্ধর্ষ সব অভিযানের জন্যও প্রস্তুত থাকেন সব সময়। যুক্তরাজ্যবিরোধী যে কোনো তৎপরতাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য ভয়ংকর উদ্যোগ নিতেও দ্বিধা করেন না এমআইসিক্স-এর কমান্ডোরা। এরা যখন অপারেশনে যান,  তখন সম্পূর্ণ গেজেট (মারণাস্ত্র) সজ্জিত হয়ে যায়। এদের হেডকোয়ার্টার হলো লন্ডনের ভক্সহল ক্রস।

 

► ইউএস  গ্রিন বেরেট

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে স্পেশাল ইউনিটের শেষ নেই। আর ইউএস আর্মির আরেকটি বিখ্যাত স্পেশাল ফোর্স হচ্ছে গ্রিন বেরেট। এদের নামকরণের পেছনে মজার একটা কারণ আছে। এই কমান্ডো ইউনিটের সদস্যরা সাধারণত সবুজ বেরেট পরে। এ জন্যই তাদের এ নামে ডাকা হয়। এরা কখনো কখনো সরাসরি যুদ্ধ না করে স্থানীয়দের ট্রেনিং দিয়ে দুই বিবদমান গ্রুপের মধ্যে যুদ্ধ বাধাতে শুরু করে। এর মাধ্যমে নিজেদের যেমন স্বার্থসিদ্ধি ঘটে, ঠিক তেমনি গা বাঁচিয়েও থাকা যায়। এই কমান্ডো ফোর্সের কর্মকান্ডকে এমআই সিক্সের কাজের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যারাই এই এলিট ফোর্সে আসতে চায় তাদের যোগ্যতা ১২টি বিষয়ের ওপর থাকতে হয়। আবেদন করার মাত্র ৪০%-এর এই যোগ্যতা থাকে। এদের ট্রেনিং ভীষণ কষ্টসাধ্য।

 

সায়াতেত থার্টিন

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে মানা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর গোয়েন্দা সংস্থা। আর সেই ইসরায়েলের একটি বিশেষায়িত বাহিনী হলো সায়াতেত থার্টিন। এটি দেশটির অন্যতম এলিট ইউনিট। এই বাহিনীর বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এরা দেশের জন্য যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে যে কাউকে হত্যা করার ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শী। আর পৃথিবীজুড়ে জিম্মি উদ্ধারে পারদর্শী বাহিনী হিসেবে এদের সবচেয়ে বেশি খ্যাতি রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মতো এই সেনাদের পরিচয়ও লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হয়। এরা মানুষের সামনে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে না। এই কমান্ডো গ্রুপ অপারেশনে বের হলে খুন করার জন্যই বের হয়।

 

রাশিয়ান এলিট বাহিনী স্পেৎসাজ

সেনাবাহিনীর যোগ্যতা ও গোয়েন্দাবৃত্তি সম্পর্কিত বিষয়ে রাশিয়ানদের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। সেই সোভিয়েত আমল থেকেই তাদের ভয়ংকর অভিযানের গল্প ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী রয়েছে তাদেরই। সেই রাশিয়ারই ভয়ংকর এক এলিট বাহিনী স্পেৎনাজ। যোগ্যতা আর দক্ষতার বিচারে এরা রাশিয়ার অন্যান্য বাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার চেয়ে বিভিন্ন কারণে আলাদা। তাই তো ইউক্রেন অভিযানে পুতিনের অন্যতম হাতিয়ারও এই স্পেশাল ফোর্স। এই বাহিনীর ট্রেনিংয়ের ধরন শুনলেই যে কারও রোম শিউরে উঠবে। আর তাতে এই কমান্ডোদের দুর্ধর্ষতা সম্পর্কে খানিকটা অনুমান করা সম্ভব। অন্যান্য বাহিনীর মতো সব স্বাভাবিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় স্পেৎনাজ কমান্ডোদের। তবে বিশেষ করে এদের গ্রহণ করতে হয় ব্যথা সহ্য করার আলাদা ট্রেনিং। ব্যথা সহ্য করা মানেই আঘাত পেতে হবে। তাই এই ট্রেনিংয়ের সময় এদের শরীরের কোনো একটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়। এ পৈশাচিক অংশের মধ্যে আছে পাঁজরের হাড়, আঙুল, মেরুদন্ড ভেঙে ফেলা, এটা কমান্ডো ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে ঘটে।  পরে চিকিৎসা করে ভালো হলে সে একজন স্পেৎনাজ হয়। পৃথিবীর আর কোনো বাহিনীকে এমন বীভৎস প্রশিক্ষণের মুখোমুখি হতে হয় না। এরা মুখোমুখি যুদ্ধে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ।

 

যুক্তরাষ্ট্রের আরও যত ফোর্স

ডিভিশন মেরিন রেকুন : যুদ্ধে ইন্টেলিজেন্স মিশনে ছোট দলের স্পেশাল ফোর্স পরিচালনা করে ইউএস মেরিন। আমেরিকার সেরা পাঁচটি স্পেশাল অপারেটরের একটি এটি। শত্র“পক্ষের গোটা একটা ব্যাটালিয়নকে পর্যুদস্ত করে রাখা, শত্র“দের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা, মহামূল্যবান টার্গেটের পেছনে লেগে থাকা এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

 

আর্মি ‘কম্বাইন্ড অ্যাপ্লিকেশনস গ্রুপ : এরা অপারেটরদের অপারেটর। এমনকি লাদেনকে হত্যাকারী নেভি সিল-এর সদস্যরাও এ গ্রুপের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ দলের পুরনো নাম ‘কম্বাইন্ড অ্যাপ্লিকেশনস গ্রুপ’। কেউ বলেন ডেল্টা। এদের কোনো অফিশিয়াল নাম জানা যায়নি। সিল-এর টিম ৬-এর বাইরে এরাই একমাত্র দল যারা নিশ্চিত করে আমেরিকা যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে কি না। গোটা আমেরিকার সর্বোচ্চ মানের ইউনিট থেকে এদের সংগ্রহ করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ প্যারামিলিটারি এবং ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়ায় এরা।

 

ইউএসএমসি অ্যাম্ফিবিয়াস রেকুন প্লাটুনস : এই ফোর্সটি কোনো অ্যাকশন ফোর্সকে সরাসরি সহায়তা প্রদান, নাভাল ফ্লিট অপারেশনে সহায়তা ইত্যাদি কাজ করে। এরা ডিভিশন মেরিন রেকুন-এর মতো হলেও কাজের ধরন আলাদা।

এয়ার ফোর্স স্পেশাল অপারেশন্স ওয়েদারম্যান : যুদ্ধের আগে এরা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে, শত্র“ নিধন করে এবং আর্টিলারি ব্যবহারে এক্সপার্ট। এরা মূলত ছোট ইউনিট যারা আবহাওয়াবিদও।

 

মেরিন স্পেশাল অপারেশনস কমান্ড-এমএআরএসওসি : মেরিনের তিক্ত অংশ বলা হয় এদের। এরা গতানুগতিক মেরিন কমান্ডের অধীনে চলেন না। এরা স্পেশাল।

 

সিল টিম সিক্স-রেইনবো : সিলের সদস্যরা একে অন্যের পরিচয় পেতে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি নম্বর নাকি রং? ওপরের ৮টি দলের নম্বর রয়েছে। কিন্তু টিম ৬-কে রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

এদের জন্য লাল, নীল, সোনালি এবং রুপালি রং ব্যবহার করা হয়। এরা সন্ত্রাসবাদ, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সুরক্ষা এবং অপারেশনে নজরদারি করে।

 

ফোর্স রিকনিস্যান্স মেরিনস : এরা ফোর্স রেকুন নামেও পরিচিত। স্পর্শকাতর স্পেশাল অপারেশন পরিচালনায় এদের দেখা যায়।

এয়ার ফোর্স কমব্যাট কন্ট্রোলারস : মিলিটারির সবচেয়ে এলিট ফোর্সগুলোর একটি। এর প্রত্যেক সদস্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এরা মূলত বিমান আক্রমণের সময় যে কোনো সহায়তা দিয়ে থাকে।

এরা মাটিতে টার্গেট খুঁজে বের করে বিমান আক্রমণে সহায়তা দেয়। বর্তমানে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় কাজ করছে এরা। উচ্চগতিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সুদক্ষ এর সদস্যরা।

 

ফ্লিট অ্যান্টিটেরোরিজম সিকিউরিটি টিমস-এফএএসটি : এদের সাধারণ মিশনটি হলো আমেরিকান কূটনীতিকদের ও অ্যাম্বেসিগুলোর সুরক্ষা দেওয়া। এরা খালি হাতে যুদ্ধ, শহরের মধ্যে যুদ্ধ, শত্র“র অতি কাছাকাছি থেকে যুদ্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারদর্শী।

 

দ্য মেরিন রেইড ফোর্স-এমআরএফ : জলদস্যুতা বর্তমানে এত বড় একটি সমস্যা যে, নেভি তাদের সেরা সদস্যদের বেছে নিয়ে উচ্চগতির জলযান দিয়ে পানিতে ছেড়ে দিয়েছে। এরা জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করে।

 

মেরিন  ইউএসএমসি এয়ার নাভাল গানফায়ার লিয়াসিওন কোম্পানি-এএনজিএলআইসিও : এরা আরেকটি স্পেশাল ইউনিট যারা সিল বা অন্য কোনো ইউনিটের সঙ্গে থেকে ছায়ার মতো কাজ করে যায়। এএনজিএলআইসিও-এর একজন সদস্য শত্র“র ওপর বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণে দক্ষ।

 

মারসক

আরেকটি গোপন ও ভয়ানক কমান্ডো টিম হচ্ছে মারসক। এই টিমের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো কেবলমাত্র ইউএস মেরিনের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের সদস্যরা এ বাহিনীতে আসার যোগ্যতা রাখে। এদের প্রাথমিক মিশন হলো ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র পরিদর্শন, সরাসরি অ্যাকশন, বিদেশে গোপনে ঢুকে যুদ্ধ পরিচালনা করা। এই বাহিনী কৌশল ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিশ্বের অন্য যে কোনো বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। এদের বিশেষত্ব হলো- এরা বরফ থেকেও আগুন উৎপন্ন করতে পারে। বরফকে হাতের তালুতে নিয়ে গরম করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লেন্সের আকৃতি দিয়ে সেই লেন্সকে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস হিসেবে ব্যবহার করে সৌরশক্তির সাহায্যে আগুন ধরায়। এরা কারাতেসহ শারীরিক যুদ্ধ বা খালি হাতের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পারদর্শী হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এসব সাধারণ যোগ্যতার পাশাপাশি এরা পানির নিচে বিস্ফোরক বসানো, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঝুঁকিহীনভাবে ঘুরে আসা, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা কমিউনিকেশনের গোপন ব্যবহারসহ আরও নানা ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়। এসব কারণে মারসকদের সব দিক থেকে সমান পারদর্শী কমান্ডো দল মনে করা হয়।

 

ফ্রেঞ্চ নেভাল কমান্ডো

এই ফরাসি বাহিনীর ইতিহাস বেশ পুরনো। সেই বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এদের উৎপত্তি ও বিস্তার। আরও স্পষ্ট করে বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা। সেই সময়কার একজন বিখ্যাত নৌ অফিসার ছিলেন জ্যকুইস দ্য কস্তা। মূলত এই নৌ কর্মকর্তার হাত ধরেই ফ্রেঞ্চ নেভাল কমান্ডো গ্রুপ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই অসীম সাহস, বীরত্ব আর তীক্ষè বুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ফ্রেঞ্চ নেভাল কমান্ডোরা। ফরাসি ভাষায় তারা নিজেদের বলে ‘বেরেতস ভার্ত’। তবে আধুনিক ফ্রেঞ্চ নেভাল কমান্ডোতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান ফ্রেঞ্চ নেভাল কমান্ডো ছয়টি ফরমেশনে বিভক্ত। এর মধ্যে প্রতিটি ফরমেশন আলাদা আলাদা যুদ্ধে বিশেষজ্ঞ। কেউ আন্ডার ওয়াটার যুদ্ধে, কেউ ক্লোজ কমব্যাটে, কেউ স্নাইপিংয়ে। স্নাইপিংয়ে বিশেষজ্ঞরা আবার মিসাইল ছোড়ায়ও ওস্তাদ।

 

স্কাউট স্নাইপারস

অতি গুরুত্বপূর্ণ শত্র“কে খুঁজে বের করা, চিহ্নিত করা ইত্যাদি কাজে দক্ষ। শত্র“ এলাকায় অবস্থান করে স্লাইপিংয়ের মাধ্যমে তারা সব কিছু তছনছ করে দিতে পারে। এক কিলোমিটার দূর থেকে এরা আপনার একটি চুলকে টার্গেট করে তা গুলি করে উড়িয়ে দিতে সক্ষম।

ভয়ংকর নেভি সিল

জলে-স্থলে অন্তরীক্ষের লড়াইয়ে বিশেষ পারদর্শী যুক্তরাষ্ট্রের এলিট বাহিনী নেভি সিল। কয়েক বছর আগেও তাদের নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। কিন্তু ২০১১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ‘দামি মাথা’র মালিক ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ মার্কিন কমান্ডো বাহিনী ‘নেভি সিল’ বিশ্বে কৌতূহলের পাত্র হয়ে উঠেছে। অভিযানটির নাম ছিল ‘ওপারেশন নেপচুন’। এই বাহিনীর কাজকর্ম এমন, যা অনেক সময় উপন্যাসের গোয়েন্দা কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। নেভি সিল হচ্ছে সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ও ভয়ংকর সেনাদল। অস্ত্র তো বটেই প্রযুক্তিগতভাবেও সবচেয়ে এগিয়ে তারা। অত্যন্ত কঠিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুদ্ধে প্রায় অবিশ্বাস্য রকমের দক্ষ যুক্তরাষ্ট্র নেভি সিল সেনাদের অবস্থান অনেকটা গুপ্ত বাহিনীর মতোই। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নিয়ন্ত্রিত ওই সেনাদলকে সরকারিভাবে ‘টিম সিক্স’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ওয়াকিবহাল মহলের দৃষ্টিতে তারা হলো সেরাদের সেরা। এ ধরনের দুর্ধর্ষ সেনাদল গড়ে তোলার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসলই হলো বর্তমান নেভি সিল সেনাদল। সি এয়ার ও সমানতালে লড়াইয়ে অভ্যস্ত বলেই তাদের সিল বলা হয়। ২০০৯ সাল থেকে সিল সেনার সংখ্যা ২ হাজার ৫৮০। অভাবনীয় শারীরিক দক্ষতার কারণে তারা কেবল সব ধরনের লড়াইয়ে পারদর্শীই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের অংশ হলেও টিম সিক্স প্রকৃত গোয়েন্দা সংস্থার ইশারা-ইঙ্গিতে চলে। এ কারণে তাদের সিআইয়ের আজ্ঞাবাহী বলা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এলিট বাহিনীর টিম সিক্সের জন্য যেসব সেনাকে বাছাই করা হয়, তাদের ১৮ থেকে ২৪ মাস ধরে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কখনো কখনো শীতার্ত, ক্ষুধার্ত, বিনিদ্র এবং আর্দ্র অবস্থায় তাদের অনুশীলন চলে। যে কারণে বাছাই করা সেনাদের মধ্য থেকে মাত্র এক-তৃতীয়াংশই চূড়ান্তভাবে টিম-সিক্সে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই দলের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডানকান স্মিথ বলেছেন, প্রচুর শারীরিক যন্ত্রণা এবং কখনো কখনো মানসিক ব্যথা নিয়ে সিল সেনাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় সমুদ্রের তলদেশে, হিন্দুকুশ পর্বতের ১০ হাজার ফুট উপরে, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের দুর্গম মরুভূমি এবং পৃথিবীর গহিন অরণ্যে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল সেনারা ৩০টি দেশে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও মিশনে নিয়োজিত। বিশ্বে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে তারা হানা দিতে অক্ষম। নেভি সিল সদস্যরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক, আফগানিস্তানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অসংখ্য সফল অভিযান চালিয়েছে।

সর্বশেষ খবর