বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ড্রপআউট হয়েও বিশ্বজয়ী

আবদুল কাদের

ড্রপআউট হয়েও বিশ্বজয়ী

এরা সবাই ইতিহাস-গড়া মানুষ। মানবতার জন্য পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। তবে কেউই পড়াশোনার গন্ডি পেরোতে পারেননি। আনতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কারণে স্কুল-কলেজেই পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেকেই দ্বিতীয়বার স্কুলের ব্যালকনিতে পা রাখলেও অর্থাভাবে শেষ করতে পারেননি পড়াশোনা।  এদের অনেকেই জীবিকার তাগিদে ছোট থেকেই শুরু করেছিলেন চাকরিজীবন। তবু থেমে যাননি। এগিয়ে গেছেন সম্মুখে..

 

ছিলেন নিতান্ত এক সাধারণ ছাত্র তবে করেন বিশ্বজয়

আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন মহান বিজ্ঞানী এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ মহান এই বিজ্ঞানীর জন্ম। ছেলেবেলা কেটেছে জার্মানির মিউনিখ শহরে। ছিলেন এক সাদামাটা অবুঝ বালক। আইনস্টাইনের বয়স যখন পনেরো; তখন তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। তখনো কেউ ভাবেনি বড় হয়ে ছেলেটি হবে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ছেলেবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত মেধাশক্তি ছিল না তার। একবার তো সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থই হয়েছিলেন। যদিও তিনি পদার্থবিদ্যায় বৈপ্লবিক আবিষ্কার করার জন্য দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু এক সময় এই বালকটি জয় করে নেয় নোবেল পুরস্কার। আইনস্টাইনের বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। তাই বাবার কাছ থেকে খুব বেশি সময় পেতেন না। আইনস্টাইন ছিলেন খুবই সাধারণ ছাত্র। বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতি ছিল সম্পূর্ণ অনীহা। সেরাদের তালিকায় কখনই ছিলেন না। কথাও বলতে শিখেছিলেন দেরিতে। পড়া আর লেখা শিখতেই কেটে যায় সাতটি বছর। একবার তো স্কুলের শিক্ষক মন্তব্য করেই বসেন, ‘বোকা ছেলে, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।’ সহপাঠী, শিক্ষকদের কাছে প্রায়ই হাসির পাত্র হতেন। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। শুধু একমাত্র সঙ্গী তার মা। তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানা সুর শোনেন। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন। স্কুলের ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন ভালো লাগত না। শুধু দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। ১৫ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিলেন স্কুল ছেড়ে দেবেন। এক সময় জার্মানির স্কুল ছাড়েন। তবে গণিতে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করেন এবং মাত্র ১৭ বছরে গ্র্যাজুয়েট হন। এরপর বার্নে এসে চাকরির পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনস্টাইনের আবিষ্কারগুলো বাইরের বিশ্বে প্রকাশ পেতে থাকে। তার আবিষ্কৃত বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিজ্ঞানজগতে এক নতুন দিগন্ত উšে§াচিত করে। ১৯২১ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বিশ্বজয় করেন।

 

পর্তুগিজ সাহিত্যিক হোসে সারামাগো

পর্তুগিজ লেখক ও কথাসাহিত্যিক হোসে সারামাগো। খ্যাতি, অর্জন আর সমালোচনায় ঠাসা তার জীবন। ১৯২২ সালের ১৬ নভেম্বর পর্তুগালের একটি গ্রামীণ মজদুর পরিবারে জন্ম নেন সারামাগো। তিনি সব সময় মেধাবী ছিলেন। তবে অর্থ সংকটে তাকেও আসতে হয়েছিল ড্রপআউটের তালিকায়। পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে এক সময় হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়েন। জীবিকার তাগিদে তিনি পরবর্তীতে টেকনিক্যাল স্কুলে অটো রিপেয়ারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে অনুবাদকের কাজ করতেন। তিনি এমন এক মানুষ যিনি নিজের নিয়ম তৈরি করেছিলেন। ডিয়ারিও ডি নটিসিয়াসের সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর পার করেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস বাল্টটাশার ও ব্লুমুন্ড প্রকাশ হওয়ার পর তিনি সবার নজর কাড়েন। তার বইয়ের বেশির ভাগ চরিত্রের নাম ছিল না। কারণ তিনি যথাযথ বিশেষ্যগুলোয় বিশ্বাস করতেন না এবং প্রকাশ্যে নাস্তিকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালের দিকে সামারগো কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করেন। যদিও অনেকেই তাকে উদার সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা মনে করতেন। তিনি তথাকথিত কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামিকে ছাড় দিতেন না। এ কারণেই ক্যাথলিক চার্চ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) বেশ কিছু বিষয়ে তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেন হোসে সারামাগো। তবে তার সাহিত্যে সরকারি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার কারণে মনঃক্ষুণ হন।

 

অল্প বয়সে অনাথ হয়েছিলেন হ্যারি

সম্ভবত তালিকার সবচেয়ে বড় সংগ্রামী ব্যক্তিদের একজন মার্টিনসন। তার পুরো নাম হ্যারি এডমন্ড মার্টিনসন। খুব অল্প বয়সেই অনাথ হয়েছিলেন। সুইডিশ এই ঔপন্যাসিকের জন্ম ৬ মে ১৯০৪ সালে সুইডেনে। গ্রামের অনাথ আশ্রমেই (কম্যুলিনবার্ন) বড় হন। আশ্রমটিই ছিল তার ঘরবাড়ি আর এটিই ছিল স্কুল। যত দিন আশ্রমে ছিলেন ঠিক তত দিনই পড়াশোনার সুযোগ পান। তবে এখানে মার্টিনসনের মন টিকত না। মাত্র ১৬ বছর পালিয়ে গিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিলেন। বেশির ভাগ সময় কাটান জাহাজে। করেন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ। জাহাজে বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে কাজ করে মার্টিনসন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করা মানুষটি স্থির থাকতেন না। মার্টিনসন সব কাজে জাহাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেন। অল্প বয়স থেকেই লেখালেখির অভিজ্ঞতা ছিল তার। জাহাজে কাজের অবসরে লেখালেখি করতেন। ১৯২৯ সালে লেখক হিসেবে মার্টিনসনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৭৪ সালে আইভিন্ড জনসনের সঙ্গে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 

অর্থ সংকটে ছাড়েন পড়াশোনা

১৮৭৯ সালে দরিদ্র বাবা-মায়ের কোলে আসেন। পুরো নাম লিওন জুহক্স। ইতিহাস তাকে ড্রপআউট নোবেল-জয়ী হিসেবেই চেনে। প্যারিসের প্যান্টিনে কাটে তার ছেলেবেলা। দীর্ঘ ধর্মঘটের কারণে তার বাবার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে হাই স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ১৬ বছর বয়সে ঝরে পড়তে হয়েছিল স্কুল থেকে। বাবার আয়ে কোনো মতে চলছিল তাদের সংসার। তাই বাবার মতো জুহক্সও ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। নিজের চোখের সামনে দুর্ঘটনায় বাবাকে চোখ হারাতে দেখেন। এরপর তিনি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন এবং সাদা ফসফরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন যা তার বাবাকে অন্ধ করে দেয়। পরে সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করেন।  তবে সেখান থেকেও তাকে আবার ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে ফিরে আসতে হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে ইউরোপীয় শ্রমিকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন জুহক্স। ১৯৪১ সালের দিকে একই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ২৫ মাস পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৫১ সালে শান্তিতে নোবেল পান।

 

হার্বার্ট ব্রাউন

তার পুরো নাম হার্বার্ট চার্লস ব্রাউন। নোবেল জয়ী রসায়নবিদ, তবে ছিলেন ড্রপআউট। ১৯১২ সালের ২২ মে লন্ডনের হার্বার্ট ব্রোভারনিকে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন একজন স্টোর ম্যানেজার। ব্রাউন সে সময় শিকাগোর ক্রেন জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতেন। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে পড়াশোনা না করে পরিবারের হাল ধরেন। এক সময় তিনি বুঝতে পারলেন, তাকে দিয়ে আর যাই হোক ব্যবসা হবে না। তাই ব্রাউন লেখাপড়ায় ফিরে রসায়নের মতো বিষয় বেছে নেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত তখন কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়াশোনার আগে অন্য কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ব্রাউন ১৯৩৬ সালে বিএসসি এবং ১৯৩৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এক বছর পরই ব্রাউন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি নানা গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ওয়েন ইউনিভার্সিটির সহ-অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে পারডু ইউনিভার্সিটিতে অজৈব রসায়নের অধ্যাপকও হন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিক অব সায়েন্সের সম্মানিত সদস্য হন এবং ১৯৭৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 

অসুস্থতায় ছাড়েন পড়াশোনা

নানা গুণে গুণান্বিত আলবেয়ার কামু। দার্শনিকতা, লেখনী এবং সাংবাদিকতায় ছিলেন পটু। এক সময় নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন লেখক। তবে কামু ছিলেন ড্রপআউট। যদিও পরবর্তীতে আবার লেখাপড়ায় ফিরে আসেন। ৭ নভেম্বর ১৯১৩ সালে আলজিয়ার্সে জন্ম নেন আলবেয়ার কামু। বাবা ছিলেন লুসিয়ান গরিব কৃষক আর মা ছিলেন অশিক্ষিত আয়া। কামুর বয়স এক বছর পূর্ণ হয়নি তখনো, প্রথম যুদ্ধের দামামা চলছিল গোটা বিশ্বে। তখন কামুর বাবাকে হত্যা করে শত্র“পক্ষ। জীবন বাঁচাতে ছোট্ট কামুকে নিয়ে মা, নানু এবং চাচা অন্যত্র চলে আসেন। আলজিয়ার্সের অলিগলিতে গরিবি হালতে কামু বড় হন। কামু স্বনামধন্য স্কুলে পড়াশোনা করে বৃত্তি পেয়েছিলেন ঠিকই, তবে যক্ষ্মার কারণে ১৭ বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। কামু এখানেই থামেননি। এ অবস্থাতেই আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রাইভেট টিউশনি, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি এবং আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের সহকারীর কাজও করেন কামু। থিয়েটারের প্রতি তার ছিল অন্যরকম ভালোবাসা, যা কি না তার বিভিন্ন লেখায় ফুটে ওঠে। পরবর্তীকালে কামু ফ্রান্সে সাংবাদিকতা এবং সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে ৪৪ বছর বয়সে কামু সাহিত্যে নোবেল অর্জন করেন। এর তিন বছর পরে তিনি মারা যান।

 

ফকনারের ভবঘুরে জীবন

নিজস্ব ধারার লেখনীর পথিকৃৎ উইলিয়াম ফকনার। জন্ম নিউ আলবেনির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। জšে§র বছর না পেরোতেই পরিবারসহ মিসিসিপির রিপ্লেতে চলে আসেন। বাবা শিকাগো রেলপথ কোম্পানির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ বছর বয়সে ফকনারের পরিবার মিসিসিপির অক্সফোর্ডে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি বড় হয়েছেন। স্কুলজীবনের সমাপ্তি শেষে কলেজে দ্বিতীয় বর্ষেই ঝরে পড়েন। পরবর্তীতে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করলেও আর ডিগ্রি নেওয়া হয়নি। তিনি ১৫ বছর বয়সে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি লন্ডনে চলে যান এবং তার কোনো বই বিক্রি করে এক দশক সংগ্রামী জীবনযাপন করেন। ভবঘুরে জীবন ছিল তার। সামান্য টাকা-পয়সা উপার্জনের জন্য নৌকা চালানো, বাড়িঘর রং করা- এসব কাজ করতেন। কিন্তু তখন থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। তাও আবার কথাসাহিত্যিক শেরউড এন্ডারসনের হাত ধরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কানাডিয়ান এবং পরে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন উইলিয়াম ফকনার। বিভিন্নজনের বয়ানে অতীত থেকে গল্প তুলে আনার বিষয়ে মুনশিয়ানা দেখাতেন ফকনার। এটাই তার লেখার শৈলী। অসংখ্য ছোট গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও চিত্রনাট্য লেখা- প্রায় সব শাখাতেই সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯১৯ সালে প্রথম তার লেখা প্রকাশ হয়। ১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান এই সাহিত্যিক। মিসিসিপিতে জন্ম নেওয়া তিনিই একমাত্র নোবেল বিজয়ী লেখক।

 

আরও যারা আছেন

জর্জ বার্নার্ড শ

স্কুল হলো কারাগার ও শিক্ষক হলেন কারা পরিদর্শক- এমনটাই মনে করতেন নোবেল ও অস্কার জয়ী লেখক, নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ। সারা জীবনই স্কুল, কলেজ ও শিক্ষকদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করা মানুষটির জন্ম ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কাটে তার ছেলেবেলা। ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১। এ সময় পর্যন্ত চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেও কোনোটিতেই মন বসাতে পারেননি। ডাবলিনের সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুলই ছিল তার শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৫ বছর বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে চাকরি নেন। আর তা করেই সংসার সামাল দিতেন বার্নার্ড শ। তবে ২০ বছর বয়সে সব ছেড়ে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহের কারণে ফেবিয়ান সোসাইটিতে যোগ দেন। ড্রপআউট হয়েও তার লেখার শৈলী ছিল দারুণ। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, শ্রমজীবীদের অধিকার; সব বিষয়ে শ ছিলেন স্বচ্ছ মনের অধিকারী। সাহিত্য সমালোচনা ও সংগীতবিষয়ক লেখার পাশাপাশি নাটকেও তার পরম উৎকর্ষের বিকাশ ঘটে। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল এবং ১৯৩৮ সালে অস্কার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর এই গুণী ব্যক্তিত্ব পরলোকগমন করেন।

আর্থার হেন্ডারসন

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় ১৮৬৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্ম আর্থার হেন্ডারসনের। পোশাক শিল্পের এক দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম হেন্ডারসনের। হেন্ডারসন দুইবারের চেষ্টায় স্কুলের গন্ডি  না পেরোলেও ১৯৩৪ সালে ঠিকই নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘রবার্ট স্টিফেনসন অ্যান্ড সন্স’ নামের গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে কাজ শুরু করেন। ১৭ বছর বয়সে এক বছরের জন্য সাউদাম্পটনে চলে যান। জীবন

বাস্তবতায় হেন্ডারসন হার মানেননি। ওয়ার্কশপ ছিল তার ক্লাসরুম আর দৈনিক পত্রিকা ছিল বই। পত্রিকা থেকেই তিনি বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করতেন। ১৮৭৯ সালে হেন্ডারসন একজন বিজ্ঞ ধারণা প্রবর্তক হয়ে ওঠেন। স্থানীয়রা তাকে বিজ্ঞ ধর্মপ্রচারক হিসেবে জানত। ১৮৮৪ সালে চাকরি ছেড়ে ধর্মযাজক হন। ১৮৯২ সালে হেন্ডারসন ব্রিটেনের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯০৬ সালে লেবারেল পার্টি নামের দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর ওই দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৯ সালে পররাষ্ট্র সচিব হন।

 

জোসেফ ব্রডস্কি

সাহিত্যাঙ্গনে তার পদচারণা মার্কিনিদের জন্য গৌরবের। জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে প্রাচীন রাব্বিনিক স্কর পরিবারে। লেনিনগ্রাদেই এই সাহিত্যিকের বেড়ে ওঠা। স্কুলে তাকে সবাই ‘বোকা ছেলে’ বলেই ডাকত। স্কুল অব সাবমেরিনারসে যোগ দিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছাড়েন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। সেই থেকে আর স্কুলে পা রাখেননি। দরিদ্রতার জন্য মিলে মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। এরপর চিকিৎসক হওয়ার সংকল্প নিয়ে ক্যাসিটি কারাগারের মর্গে লাশ কাটা ও সেলাইয়ের কাজ করেন। ফলে বিভিন্ন জাহাজের হাসপাতালে কাজের সুযোগ পান। এরপর পোলিশ এবং ইংরেজি ভাষা শিখতে শুরু করেন। এরপরই কবিতা লেখা শুরু। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। কিন্তু তখনো সাহিত্যে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। রাশিয়ান কবি আন্না আখততোর সঙ্গে মিশে এক সময় সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন। তবে মুক্তচিন্তার অপরাধে ১৯৭২ সালে নিজ জন্মভূমি রাশিয়া থেকে নির্বাসিত হন। নির্বাসিত ব্রডস্কি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর