রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ রাজার বাড়ি

আবদুল কাদের

ব্রিটিশ রাজার বাড়ি

ব্রিটিশ রাজ্য; এক সময় যে সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি ছিল বিশাল। কালের পরিক্রমায় সাম্রাজ্যের পরিধি অনেক ছোট হয়ে এলেও তাদের রাজপরিবারকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণ যেভাবে শোকে ভাসিয়েছে বিশ্বকে তেমনি রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকও সাধারণ মানুষকে করেছে কৌতূহলী। রাজার রাজ্যাভিষেকের পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজপ্রাসাদ সম্পর্কে অনেকের অজানা।  ইংল্যান্ডের নরফোকের ৫০ হাজার একর রাজপ্রাসাদ থেকে ক্ষুদ্র বার্কশায়ার ওয়েন্ডি বাড়ি পর্যন্ত, ব্রিটিশ রাজপরিবারের অধীনে রয়েছে প্রায় ৩০টি রাজকীয় বাড়ি...

 

ব্রিটিশ রাজপরিবার; কয়েক শ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কয়েকটি ভবনে বসবাস করে আসছে। বাকিংহাম প্যালেস, কেনসিংটন প্যালেস, এমনকি রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপনের বালমোরাল ক্যাসেল সম্পর্কেও অনেকে জানেন। তবে যুক্তরাজ্যের বাইরেও বেশ কয়েকটি দেশে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পত্তি রয়েছে।  যেসবের মালিক সে দেশের সরকার কিংবা জনগণ নয়, বরং উত্তরাধিকার সূত্রে রাজপরিবারের অনেক সদস্য এসব বাড়ির মালিক। যা ব্রিটিশ রাজপরিবার ও ব্রিটিশ জনগণের ইতিহাসকে স্মরণ করে...

 

বাকিংহাম প্যালেস

১৭০৩ সালে নির্মিত বাকিংহাম প্যালেস প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারি বাসভবন। ১৭৬১ সালে রাজা তৃতীয় জর্জ ও পরবর্তীতে ১৯ শতকে এর বিস্তৃতি ঘটে।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজকীয় সম্পত্তির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো বাকিংহাম প্যালেস। এটি ছিল ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারি বাসভবন। ১৭০৩ সালের দিকে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ১৭৬১ সালে রাজা তৃতীয় জর্জের সময় ও পরবর্তীতে ১৯ শতকে এটির বিস্তৃতি ঘটে। ১৮৩৭ সাল থেকে ব্রিটিশ রাজাদের সরকারি বাসভবন হিসেবে এই প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিওক্লাসিক্যাল নকশায় তৈরি সাড়ে ৮ লাখ বর্গফুটের এই প্রাসাদে রয়েছে মোট ৭৭৫টি ঘর। যার মধ্যে ১৮৮টি বেডরুম, ৯২টি অফিস, ৭৮টি বাথরুম, ৫২টি রাজকীয় এবং অতিথি শয়নকক্ষ এবং ১৯টি রাষ্ট্রীয় কক্ষ। বছরে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি এই প্রাসাদে আসেন। প্রাসাদের গ্যালারিতে রয়েছে সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রায় ৪৫০টি ছবি। ৪০ একর খেলার মাঠও রয়েছে এই প্রাসাদ-সংলগ্ন এলাকায়।

 

হাইগ্রোভ হাউস

এটি রাজা চার্লস-৩ এর সবচেয়ে প্রিয় বাড়ি। ১৯৮০ সালে তিনি বাড়িটি ক্রয় করেছিলেন। সে সময় রাজা তার সহধর্মিণী ক্যামিলার সঙ্গে বসবাসের জন্য বাড়িটি বেছে নেন। রানি ক্যামিলা পার্কার বোলস ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস। তবে এর আগে বাড়িটি তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলস (রাজা চার্লস-৩) এবং প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের পরে সাপ্তাহিক অবকাশ যাপনের জন্য ব্যবহৃত হতো। বাড়িটি অপরূপ বাগান বিলাসের জন্য বিখ্যাত। গ্রাম্য পরিবেশ আর নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে আবৃত হাইগ্রোভ হাউস। যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারে রাজপরিবারের বাড়িটির অবস্থান। যা লন্ডন, ওয়েলস, গ্লুচেস্টারশায়ার এবং ব্রিটেনের অন্যান্য স্থান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত।

 

ক্ল্যারেন্স হাউস

প্রায় ২০ বছর রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলার অসংখ্য স্মৃতি ধরে রেখেছে ক্ল্যারেন্স হাউস। যা সেন্ট জেমস প্যালেসের ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটি বাকিংহাম প্যালেস থেকে হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত।  ১৮২৫ থেকে ১৮২৭ সালের মধ্যে বাড়িটি নির্মিত। রাজার দুই ছেলেসহ রাজপরিবারের অনেক সদস্যের বাসস্থান ছিল এটি। ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই দম্পতি সিংহাসন আরোহণের আগে লন্ডনের এই বাসভবনে বসবাস করতেন। ২০০৩ সালে ব্রিটিশ রাজা চার্লস তৃতীয় ও রানি ক্যামিলা এই বাড়িতে চলে আসেন। কথা ছিল- বাকিংহাম প্যালেস সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে থাকবেন। ১৯৪৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ তাদের বিয়ের পর এই বাড়িতে থাকতেন।

 

ফোর্ট বেলভেডের

১৮ শতকের নানা ইতিহাসের সাক্ষী এই ফোর্ট বেলভেডের। ১৭৪৫ সালে কুখ্যাত জ্যাকোবাইটের উত্থানের পরে এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। ১৮২০-এর দশকে ইংরেজ স্থপতি জেফরি ওয়াটভিল এর মূল স্থপতি। দুর্গটি ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন ভবিষ্যৎ রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের প্রধান বাসভবন হয়ে ওঠে। সে সময় যুবরাজ প্রাসাদের অনেক কক্ষ সংস্কার করেন। দুর্গের সঙ্গে যোগ করেন ঘোড়ার আস্তাবল, সাঁতার কাটার পুল এবং টেনিস কোর্ট। রাজপরিবারের আরও কয়েকজন এখানে বসবাস করেছিলেন। সম্প্রতি গুজব ছড়িয়েছে, অনেকটা আড়ালে থাকা কেমব্রিজের এই দুর্গের বাড়িতে ডিউক এবং ডাচেস বসবাসের জন্য উঠতে পারেন।

 

ফ্রগমোর হাউস

উইন্ডসর ক্যাসেলের হোম পার্কে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদটি রাজার মালিকানাধীন বাসভবন। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি নানা স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছে। ১৭৯০ সালে এটি কেনার পরে পরবর্তী রাজা এবং তাদের উত্তরাধিকাররা প্রাসাদটি ব্যবহার করে আসছেন। এটি মূলত জর্জ তৃতীয় তার স্ত্রী রানি শার্লটকে উপহার দেওয়ার জন্য কিনেছিলেন। তখন থেকেই প্রাসাদটি রাজপরিবারে অংশ হিসেবে অক্ষত রয়েছে। যদিও বাড়িটি ১৮৭২ সাল থেকে প্রায় খালিই পড়ে ছিল। তবে আজও রাজপরিবার প্রায়ই এই বাসভবনে তাদের ব্যক্তিগত এবং অফিশিয়াল নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও এখানে আয়োজন করা হয়েছিল।

 

বালমোরাল ক্যাসেল

বালমোরাল ক্যাসেল হলো স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনশায়ারের বিশাল প্রাসাদ এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের একটি বাসস্থান। এটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপনের স্থান। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ রানি এখানে অবস্থান করতেন। ২০২২ সালে রানি এই প্রসাদেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৫০ হাজার একর জমির ওপর নির্মিত বালমোরাল ক্যাসেল। যেখানে রয়েছে ১৫০টি ভবন। ১৮৫২ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্ট ফার্কুহারসন পরিবারের কাছ থেকে প্রাসাদটি কিনেছিলেন। সেই থেকে প্রাসাদটি রাজপরিবারের সদস্যদের অবকাশ যাপনের জন্য প্রিয় স্থান হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মকালে প্রাসাদটি দর্শকদের জন্যও খুলে দেওয়া হয়।

 

হোলিরুড হাউস

স্কটল্যান্ডে অবস্থিত হোলিরুড হাউস ব্রিটিশ রাজপরিবারের আরেকটি বাসস্থান। ১৬০০ শতকের রাজা-রানিরা থাকতেন এই প্রাসাদে। আরও আগে ১১২৮ সালে এটি ছিল একটি মনাস্ট্রি। স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস এটি তৈরি করেন। পরে ইংল্যান্ডের রাজা-রানিরা এটির দেখভাল করতেন। স্কটল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে এই প্রাসাদ। নানা আয়োজনের মাধ্যমে রাজারা এই প্রাসাদে স্কটিশ সংস্কৃতি উদযাপন করতেন। এই প্রাসাদের গ্যালারিতে প্রায় ১০০ জন শাসকের ছবি রয়েছে। প্রাসাদ লাগোয়া বেশ কিছু প্রাচীন বাংলো রয়েছে; যা ছিল রানির নিজস্ব সম্পত্তি।

 

উইন্ডসর ক্যাসেল

৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উইন্ডসর ক্যাসেলটি যুক্তরাজ্যের রাজাদের জন্য ব্যক্তিগত বাড়ি এবং একটি সরকারি রাজকীয় বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১১০০ শতকের এই প্রাসাদটি লন্ডনের পশ্চিমে অবস্থিত। প্রয়াত রানি এলিজাবেথ লন্ডনের কোলাহল থেকে দূরে উইন্ডসর ক্যাসেলে সপ্তাহান্তে সময় কাটাতেন। বিশেষত ইস্টার সানডেতে রানি এক মাসেরও বেশি সময় এই প্রাসাদে অবস্থান করতেন। ১ হাজার ঘরবিশিষ্ট এই প্রাসাদে রয়েছে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা (রুবেনস, ক্যানালেত্তো) বিরল ছবি। রয়েছে প্রাচীন আমলের বিরল আসবাবপত্রও। যেমন- দ্বিতীয় চার্লসের খাট। মধ্যযুগের সেন্ট জর্জ চ্যাপেল ও হল রয়েছে এখানেই। এই প্রাসাদে রানির সঙ্গে অনেক বিশ্বনেতার বৈঠক হয়েছিল। প্রায় ৫ লাখ বর্গফুটের এই প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতে ২৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এখানে আছে সেন্ট জর্জ চ্যাপেল, যেখানে ২০১৮ সালে  প্রিন্স হ্যারি-মেগান মার্কেল, প্রিন্সেস ইউজেনি-জ্যাক ব্রুকসব্যাঙ্কস বিয়ে করেছিলেন।

 

সেন্ট জেমস প্যালেস

রাজকীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে সেন্ট জেমস প্রাসাদ। রাজা হেনরি অষ্টম থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনামল পর্যন্ত ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি ইংল্যান্ডের রাজা এবং রানির সরকারি বাসভবন ছিল। লাল ইটের অবকাঠামোটি রাজা হেনরি অষ্টম ১৫৩১ থেকে ১৫৩৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করেছিলেন। রাজতন্ত্র পরিচালনায়ও এই প্রাসাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তৎকালীন রাজা গার্টারের মৃত্যুর পর থেকে এই প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজা বা রানির নাম ঘোষণা করা হয়। প্রাসাদটি কেবল ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরকারি দফতরই নয়, প্রিন্সেস অ্যান, প্রিন্সেস বিট্রিস এবং প্রিন্সেস আলেকজান্দ্রারের বাসভবনও।

 

দ্য ক্যাসেল অব মে

‘দ্য ক্রাউন’-এর প্রথম সিজনে যেমন দেখানো হয়েছিল, ১৯৫২ সালে দ্য কুইন অব মাদার (রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা) লেডি ডরিস ভাইনারের সঙ্গে এক সফরে দুর্গটি দেখার পর ধ্বংস আর ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যারোগিল ক্যাসেল কিনেছিলেন। ১৯৫৫ সালে দুর্গ এবং এর চারপাশের বাগানের সংস্কারের পর এর নাম দেওয়া হয় দ্য ক্যাসেল অব মে। এটি মূলত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মায়ের পৈতৃক বাড়ি। স্কটল্যান্ডে অবস্থিত রাজকীয় দুর্গটি এখন দ্য প্রিন্স ফাউন্ডেশনের স্টুয়ার্ডশিপের অধীনে রয়েছে। যেখানে সাম্প্রতিককালে গ্রানারি লজ বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট নামের এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলা হয়েছে। দ্য ক্যাসেল অব মে দুর্গটি ১৫৬৬ এবং ১৫৭২ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।

 

স্যান্ড্ররিংহাম হাউস

স্যান্ডরিংহ্যাম হাউস প্রায় ২০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ১৮৬২ সালে রানি ভিক্টোরিয়া এটি ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ডের জন্য ক্রয় করেন। বড়দিন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রানি এলিজাবেথ থাকেন এই প্রাসাদেই। ১৯৫২ সালে রানি দ্বিতায় এলিজাবেথ তার পরিবারের কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। প্রিন্স ফিলিপ বাড়ির পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান। এই প্রাসাদে রাজপরিবারের সদস্যরা ক্রিসমাস উদযাপন এবং এর সেন্ট মেরি ম্যাগডালিনের চার্চে উপাসনা করে থাকেন। রাজা বা রানির জনগণের উদ্দেশে বলা বেশির ভাগ বার্তাই এই বাড়ি থেকে রেকর্ড করা হয়। ১৮৭০ সাল নাগাদ স্যান্ডরিংহ্যাম হাউস পুনর্নির্মাণ করা হয়।

 

দ্য রয়্যাল লজ

পার্কের অভ্যন্তরে জনসাধারণ থেকে দূরের রয়্যাল লজটি ১৬৬২ সাল থেকে ব্রিটিশ রাজকীয় বাসস্থান। উইন্ডসর ক্যাসেল থেকে মাত্র তিন মাইল দক্ষিণে অবস্থিত দ্য রয়্যাল লজ ব্রিটিশ রাজার আরেকটি রাজপ্রাসাদ। এটি ছিল রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের দীর্ঘদিনের বসবাসের বাড়ি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা ২০০২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন লজটিকে যুক্তরাজ্যে সরকারি নানা কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করেন। ব্রিটিশ রাজার বাড়িটি অসংখ্যবার সংস্কার করা হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ইয়র্কের ডিউক প্রিন্স অ্যান্ড্রু দ্য রয়্যাল লজের বাড়িতে চলে আসেন। ৩০ কক্ষের এই বাড়িতে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার প্রাক্তন স্ত্রী সারাহ ফার্গুসনকে নিয়ে বসবাস করতেন।

 

কেনসিংটন প্যালেস

বিখ্যাত কেনসিংটন প্যালেস রানি ভিক্টোরিয়ার জন্মস্থান এবং শৈশবের বাড়ি। ৫৪৭ কক্ষের প্রাসাদটি হলো ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরকারি বাসভবন এবং অফিস। যার মধ্যে রয়েছে ডিউক এবং ডাচেস অব কেমব্রিজ। চারতলা এবং ২০ কক্ষবিশিষ্ট কেনসিংটন প্যালেস প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন মিডলটনের প্রধান বাসস্থান। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে রাজপরিবারের এই দম্পতি পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। এই প্রাসাদটি প্রিন্সেস ডায়ানার পাশাপাশি প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের প্রধান আবাসস্থল ছিল। এই প্রাসাদের ঐতিহাসিক অংশগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। যেখানে ১৮ শতক থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজার রাজকীয়, আনুষ্ঠানিক এবং আদালতের পোশাক রয়েছে।

 

গ্যাটকম্ব পার্ক

গ্রামীণ আবহে তৈরি গ্যাটকম্ব পার্ক প্রাসাদটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একমাত্র কন্যা প্রিন্সেস অ্যান এবং তার স্বামী স্যার টিমোথি লরেন্সের গ্লুসেস্টারের বাসভবন। প্রয়াত রানি ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ বাড়ি ও খামারটি অ্যানের জন্য কিনেছিলেন। এরপর থেকে অ্যান বাড়িটি নিজের বলে দাবি করে থাকেন। যদিও কঠোর রাজকুমারি লন্ডনের সেন্ট জেমস প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে মাঝে মধ্যে গ্যাটকম্ব পার্কে চলে যান। কারণ- এখানে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ উল্লেখযোগ্য সময় পার করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে অ্যানের মেয়ে জারা টিন্ডাল ও তার পরিবার এই প্রাসাদে বসবাস করছে।

 

হিলসবোরো প্যালেস

উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত হিলসবোরো প্যালেস ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরকারি বাসভবন এবং সেক্রেটারি অব স্টেট। লিসবার্নের কাছে এই প্রাসাদে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সবচেয়ে কম দিন থেকেছেন। ১৮ শতকের শেষের দিকে এই হিলসবোরো প্রাসাদ তৈরি করেন উইলস হিল। ১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড গঠনের পর ব্রিটিশ সরকারকে হিলসবোরো প্রাসাদ বিক্রি করতে হয়। ১৯৮৫ সালে অ্যাংলো-আইরিশ চুক্তিও হয় এই প্রাসাদে। ১০০ একর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত প্রাসাদের বাগান। ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও যখন আয়ারল্যান্ডে আসেন তখন তারাও এই দুর্গে অবস্থান করেন।

 

ড্যামফ্রিজ হাউস

ড্যামফ্রিজ হাউস প্রিন্স ফাউন্ডেশনের একটি অংশ। প্রায় ২ হাজার একর জমিতে স্থাপিত প্রাসাদ এবং এর আসবাবপত্র সবাইকে মুগ্ধ করবে। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ১৭৫৪ সালে রাজা উইলিয়াম ক্রিচটন-ডালরিম্পল রঙিন ও হস্তশিল্পের আসবাবপত্রে ভরা বিলাসবহুল প্যালাডিয়ান-স্টাইলের এক বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ১৮ শতকে গ্রেট ব্রিটেন বড় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। ড্যামফ্রিজকে বাঁচাতে তখনকার প্রিন্স অব চার্লস তার একটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। ১৮ শতকের সেই রাজকীয় প্রাসাদ ও আসবাবপত্র আজও জনগণের জন্য উন্মুক্ত।

 

বার্নওয়েল ম্যানর

বাড়িটি নর্দাম্পটনশায়ারের গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। ৪০ কক্ষের বার্নওয়েল ম্যানরের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ১৫৪০ সালে তৎকালীন রাজা হেনরি সপ্তম মন্টাগু পরিবারকে বার্নওয়েল ম্যানর বাড়িটি উপহার দেন। ৩৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের মালিকানাধীন ছিল। তবে এর পরে মন্টাগু পরিবার বাড়িটি ভাড়া দেয়। তারা স্বল্প সময়ের জন্য এলিজাবেথান ম্যানর হাউসে অবস্থান করেন। ১৯১৩ সালে উইলিয়াম মন্টাগু ডগলাস স্কট বাড়িটি বিক্রি করে দেন। প্রিন্স হেনরি ষষ্ঠ, ডিউক অব গ্লুসেস্টার বাড়িটি কিনে নেন। এর পরে ১৯৩৮ সালে বিশাল এই বাড়িটি আবারও রাজপরিবারের মালিকানায় ফিরে আসে।

 

হ্যাটফিল্ড প্যালেস

১৪৮৫ সালে শুরু হ্যাটফিল্ড হাউসের ইতিহাস- যখন বিশপ অব এলি (কেমব্রিজশায়ার) হ্যাটফিল্ড প্যালেস তৈরি করেছিলেন। পুরনো প্রাসাদটি রানি প্রথম এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানেই কেটেছিল প্রথম এলিজাবেথের শৈশবকাল। এটি ছিল রানির প্রিয় বাসস্থান। রাজা প্রথম জেমস ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণের পর রানি প্রথম এলিজাবেথকে প্রাসাদটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রবার্ট সেসিল; যিনি ছিলেন স্যালিসবারির প্রথম আর্ল। তিনি প্রথম জ্যাকোবিনের এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন যা এখন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। মূল প্রাসাদের কিছু অংশে এখনো মাটি রয়ে গেছে।

 

হ্যাম্পটন কোর্ট

হ্যাম্পটন কোর্টের গল্প শুরু হয়েছিল ১৫১৪ সালে। ব্রিটিশ রাজবংশের রাজা হেনরি অষ্টম-এর লর্ড চ্যান্সেলর কার্ডিনাল টমাস ওলসি লন্ডনে একটি দুর্দান্ত প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রাসাদটি এতটাই আধুনিক ছিল যে, রাজা হ্যাম্পটন কোর্টটি নিজের করে নিয়েছিলেন। প্রাসাদের সঙ্গে যোগ করেন হোটেল, থিয়েটার এবং রিল্যাক্স কমপ্লেক্স। পরে রাজা উইলিয়াম তৃতীয় এবং রানি মেরি দ্বিতীয় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলে স্যার ক্রিস্টোফার রেনকে প্রাসাদ সম্প্রসারণ এবং আর্কিটেক্ট ক্যাপাবিলিটি ব্রাউনকে বাগান দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত করেন। ১৮৩৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া একে জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করে দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর