শিরোনাম
সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
আটলান্টিক তলদেশে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ

ডুবে যাওয়া সেই টাইটানিক

কী হয়েছিল টাইটানিকের, সাগরতলে সে জাহাজের ধ্বংসাবশেষে কী পড়ে আছে? এমন প্রশ্নের জবাব শত বছর ধরে খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা...

তানভীর আহমেদ

ডুবে যাওয়া সেই টাইটানিক

বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই ডুবে যায়। এরপর পেরিয়ে গেছে ১১১ বছর। সম্প্রতি আটলান্টিক সাগরের প্রায় ১২ হাজার ফুট গভীরে পড়ে থাকা সেই জাহাজের ভালোমানের থ্রিডি ছবি প্রকাশ পেয়েছে, যা চমকে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে

১৪ এপ্রিল, ১৯১২। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক যাচ্ছিল বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক। প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই একটি আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় জাহাজটির। আটলান্টিকে ডুবে যায় টাইটানিক। এ দুর্ঘটনায় ১৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। টাইটানিক ট্র্যাজেডি এখনো বিশ্ববাসীকে কাঁদায়। এখনো টাইটানিক নিয়ে কৌতূহল সবার। কী হয়েছিল টাইটানিকের, সাগরতলে সে জাহাজের ধ্বংসাবশেষে কী পড়ে আছে? এমন বহু প্রশ্নের জবাব শত বছর ধরে খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে। কানাডার উপকূল থেকে ৬৫০ কিলোমিটার (৪০০ মাইল) দূরে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষটি ব্যাপকভাবে অন্বেষণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্যামেরা কখনোই জাহাজটিকে সম্পূর্ণরূপে ক্যাপচার করতে সক্ষম হয়নি। ২০২২ সালে ডিপ সি ম্যাপিং কোম্পানি ম্যাগেলান লিমিটেড ও আটলান্টিক প্রোডাকশনসে এ সংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে। সেই প্রজেক্টে প্রায় ২০০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে ৭ লাখ ছবি তোলা হয় ভগ্নাবশেষটির। যাতে প্রতিটি কোণ থেকে তা দেখতে পাওয়া সম্ভব হয়। এরপর ডিজিটাল স্ক্যান করে সামনে আনা হলো পূর্ণ অবয়ব। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে শত বছর আগে ডুবে যাওয়া প্রমোদতরী টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ডিজিটাল স্ক্যান ছবি। সমুদ্রের তলদেশে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের এমন ছবি আগে কখনো দেখা যায়নি। ফলে সাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে পড়ে থাকা জাহাজটিকে ভিন্নরূপে দেখছে মানুষ। এক শতাব্দীরও আগে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময় এর দুর্ভাগ্যজনক যাত্রা সম্পর্কে আরও বিশদ খবর প্রকাশ করতে পারে এই স্ক্যান এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিবিসির প্রকাশিত উচ্চ-রেজুলিউশনের ছবিগুলো আটলান্টিকে ৩ হাজার ৮০০ মিটার

প্রথম সমুদ্রযাত্রায় টাইটানিকের বিশালত্ব দেখে অনেকেই বলেছিলেন, ‘এ জাহাজ কোনো দিন ডুববে না!’ কী দুর্ভাগ্য! আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে আটলান্টিকেই ডুবে যায় টাইটানিক...

(১২ হাজার ৫০০ ফুট) গভীরে ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষের প্রথম ডিজিটাল স্ক্যান, যা ‘গভীর সমুদ্রের ম্যাপিং’ কৌশল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। দুটি অংশে বিভক্ত ধ্বংসাবশেষে জাহাজের সামনের দিকের অংশটিও একেবারে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে আটলান্টিক থেকে সব পানি সরিয়ে সমুদ্রের তলদেশে এই বিশাল জাহাজের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। টাইটানিক জাহাজের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ জরিপ করতে ডুবোজাহাজে বিশেষজ্ঞ দলের ২০০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। প্রত্যেক কোণ থেকে সাত লাখের বেশি ছবি নেওয়ার পর একটি পূর্ণাঙ্গ থ্রিডি ভিউ তৈরি করা হয়েছে। এর আগে সাগরের তলদেশে গভীর অন্ধকারে ক্ষয়িষ্ণু আটলান্টিক জাহাজটির কিছু স্ন্যাপশটই কেবল দেখা গেছে ক্যামেরায় তোলা ছবিতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রের তলায় জাহাজটি দুটো অংশে ভাগ হয়ে পড়ে আছে। জাহাজের অগ্রভাগ যেখান থেকে বাঁকা হতে শুরু করে ওই অংশ এবং জাহাজের পশ্চাদভাগ। এই দুটো অংশের মধ্যে দূরত্ব ৮০০ মিটার (২৬০০ ফুট)। ভেঙে যাওয়া জাহাজটির আশপাশে প্রচুর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। টাইটানিকের বিশালত্বের পাশাপাশি এই জাহাজের একটি প্রপেলারের সিরিয়াল নম্বরের মতো ছোটখাটো বিষয়ও ধরা পড়েছে। জাহাজটির সম্মুখভাগে মরিচা ধরে ঢাকা পড়ে গেছে। তার পরেও শতাধিক বছর আগে ডুবে যাওয়া এই জাহাজটি চেনা যায়। এর ওপরেই রয়েছে জাহাজের ডেক যেখানে একটি গর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটা শূন্যতা দেখতে পাওয়া যায় যেখানে এক সময় ছিল জাহাজের বিশাল সিঁড়ি। আর জাহাজের পশ্চাদভাগে বিভিন্ন ধাতব পদার্থের জঞ্জাল। জাহাজের এ অংশটি সমুদ্রের তলদেশে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ে। টাইটানিকের আশপাশে বিভিন্ন জিনিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসবের মধ্যে রয়েছে জাহাজ থেকে খসে পড়া অলঙ্কৃত ধাতব বস্তু, মূর্তি এবং মুখ খোলা হয়নি এরকম শ্যাম্পেনের বোতল। সেখানে ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও রয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রের তলানির ওপর অসংখ্য জুতা পড়ে আছে।  সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। পানিতে থাকা অণুজীব বা জীবাণু ক্রমশই এটিকে খেয়ে ফেলছে। এ ছাড়া এর বিভিন্ন অংশ ক্রমশই আলাদা হয়ে খসে পড়ছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর