সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

টাইটানিক থেকে টাইটান ট্র্যাজেডি

টাইটানিক থেকে টাইটান ট্র্যাজেডি

অনেকে বড়াই করে বলতেন, টাইটানিক কখনো ডুববে না। প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় জাহাজটি। প্রাণ যায় হাজারও যাত্রীর। এ করুণ ইতিহাস আজও মানুষকে কাঁদায়। এখনো কৌতূহল জাগে টাইটানিক নিয়ে। আটলান্টিক মহাসাগরের ১৩ হাজার ফুট গভীরে পড়ে আছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষ ডুবোজাহাজে চড়ে ঘুরে দেখানোর ব্যবসা শুরু করেন স্টকটন রাশ।  কোটি কোটি টাকা খরচ করে পর্যটকরা রওনা দেন সমুদ্র অতলে। সম্প্রতি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে একই পরিণতি হয়েছে ডুবোজাহাজ টাইটানের পাঁচ যাত্রীর। এ যেন টাইটানিক থেকে টাইটান ট্র্যাজেডি। লিখেছেন - তানভীর আহমেদ

 

আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে হঠাৎ নিখোঁজ

ওশানগেটের মালিক স্টকটন রাশ। ডুবোজাহাজে করে পর্যটক নিয়ে যান আটলান্টিকের গভীরে। কানাডার উপকূল থেকে স্থানীয় সময় রবিবার সকাল ৬টায় আরও চার পর্যটক নিয়ে যাত্রা করে। সব ঠিকঠাক চলছিল। ধীরে ধীরে সমুদ্রের গভীরে নামছিল টাইটান। যত গভীরে নামছিল তত অন্ধকার বাড়তে শুরু করে। একসময় চারপাশ ঢেকে গেল গাঢ় আঁধারে। প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ডুবোযানের দেয়াল গরম রাখার যন্ত্র আরও জোরে চলতে শুরু করে। সমুদ্রের ওপর ভেসে থাকা জাহাজ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছিল ডুবোযানে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর হঠাৎ করেই সাড়াশব্দ বন্ধ হয়ে গেল। টাইটান তখন আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার গভীরে নেমে গেছে। কিছুক্ষণ চেষ্টা চালানোর পর ওপরে থাকা জাহাজের কর্তারা টের পান টাইটানের সঙ্গে তাদের সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। ডুবোজাহাজে অতিরিক্ত মাত্র চার দিনের অক্সিজেন ছিল। এ সময়ের মধ্যে উদ্ধার সম্ভব না হলে যাত্রীদের মৃত্যু নিশ্চিত। উত্তর আটলান্টিকের বিশাল অংশজুড়ে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। শুরুতে কানাডার একটি আকাশযান থেকে সমুদ্রের গভীরে শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্য দেয়। তবে সে শব্দটি ঠিক কীসের সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য তখনো পাওয়া যায়নি। উদ্ধার অভিযানে নামে কানাডার নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলরক্ষী এবং নিউইয়র্কের বিমান বাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গভীর সাগরে দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চালিত যান। এর মধ্যে একটি সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে পৌঁছায়। ফরাসি গবেষণা সংস্থা ইফ্রেমে ভিক্টর-৬০০০ নামে একটি যান এ উদ্ধার কাজে মোতায়েন করে। ভিক্টর-৬০০০ এর দুটি যান্ত্রিক হাত আছে যেগুলো মূল জাহাজ আতালান্তি থেকে খুবই সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা যায়। দুজন পাইলট আতালান্তি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা শিফটে কাজ শুরু করেন। ব্রিটেনের জার্সি থেকে জুলিয়েট নামে দ্বিতীয় একটি শক্তিশালী আরওভি ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এ ডুবোযানটি এর আগে আটলান্টিকের তলদেশে ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে প্রায় ২০০ ঘণ্টা কাজ করেছে।  এরই মধ্যে উদ্ধার অভিযান শেষে পাওয়া গেল না চিরচেনা সেই ডুবোজাহাজকে। মিলল শুধু ধ্বংসাবশেষ!

একনজরে ডুবোযান টাইটান

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ওশানগেটের সাবমার্সিবল বা ডুবোজাহাজ ‘টাইটান’ নিয়ে উত্তাল গোটা বিশ্ব। এ ডুবোযানে চড়ে আটলান্টিক সাগরের ১৩ হাজার ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান কৌতূহলী মানুষ। টাইটান ডুবোযানটি কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি। প্রায় ২২ ফুট দীর্ঘ এ যানের ওজন ২৩ হাজার পাউন্ড। এটি পানির চার হাজার মিটার গভীরে নামতে সক্ষম এবং ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিন মাইল গতিতে চলতে পারে। কোম্পানির দাবি, টাইটানে অত্যাধুনিক আলো এবং সোনার ন্যাভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। সেই সঙ্গে এর ভিতরে এবং বাইরে ভিডিও ও ছবি ধারণের জন্য ক্যামেরা বসানো রয়েছে। পানির চাপের প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য রয়েছে বিশেষ সেন্সর। একজন চালকসহ মোট ৫ জন একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারে এ ডুবোযানে। ২০০৯ সাল থেকে এ ভ্রমণ পরিকল্পনা শুরু হয়। ২০১৮ সালে টাইটানের সমুদ্রে ট্রায়াল দেওয়া শুরু হয়। ২০২১ সালে এটি প্রথম যাত্রা করে। গত বছর এটি দশবার সাগরের তলদেশে গেছে। টাইটান বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছিল পর্যটকদের টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। সাগরের সবচেয়ে গভীরে যেতে সক্ষম মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস ডলফিনের  চেয়েও বেশি গভীরতায় যেতে সক্ষম টাইটান।

পানির ওপরে থাকা সাপোর্ট জাহাজ থেকে নির্দেশাবলির টেক্সট  মেসেজ পাঠানো হতো। সেই মেসেজ পড়ে একটি মডিফায়েড ভিডিও গেম কন্ট্রোলারের সাহায্যে সাবমেরিনটি পরিচালনা করছিলেন পাইলট ও  ওশানগেটের মালিক স্টকটন রাশ

যাত্রীদের ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকানো হতো

ডুবোযানটি পরিচালনা করা হতো অন্য আরেকটি জাহাজ থেকে। পানির নিচে যাওয়ার আগে একটি সহায়তাকারী দল যাত্রীদের এ ডুবোযানের ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা টেনে ১৭টি বোল্ট দিয়ে আটকে দিতেন। অর্থাৎ ভিতরে থাকা যাত্রীদের বাইরে বের হওয়ার কোনোরকম সুযোগ ছিল না। সাধারণত এর ভিতরে অতিরিক্ত চার দিনের জরুরি অক্সিজেন থাকত। এ সময়ের মধ্যে ভ্রমণ শেষ করতেই হতো টাইটানকে।  সিবিএসের এক সাংবাদিক টাইটানে করে ভ্রমণ করেছিলেন, তখন তাকে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল যে, ‘এ ডুবোযানটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত নয় এবং এটিতে ভ্রমণের ফলে যে কোনো ইনজুরি, মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’ বলা যায়, এ ডুবোযানে মৃত্যুঝুঁকি মেনেই পর্যটকরা চড়তেন।

 

টাইটানের ভিতরটা চাপা থাকতে হতো ডায়েটে, ছিল গান শোনার ব্যবস্থা

এ বিশেষ ডুবোযানের ভিতরের পরিবেশ ছিল গুমোট। খুব অল্প জায়গার মধ্যে চাপাচাপি করে মেঝেতে বসতে হতো পাঁচজনকে। টাইটানের আকৃতি মাত্র ২২ ফুট বাই ৯.২ ফুট বাই ৮.৩ ফুট। এ নিচু ও চাপা জায়গায় নড়াচড়ার জন্যও জায়গা ছিল না। ডুবোযানের সামনে একটি বড় গম্বুজাকৃতির পোর্টহোলে ভিউয়িং পয়েন্ট ছিল। এ স্বচ্ছ জায়গাটা জানালার কাচের মতো থাকায় পুরো সমুদ্র দেখা যেত। সমুদ্রের যত গভীরে নামা হয় তত আলো ও তাপমাত্রা কমতে থাকে। এ কারণে ডুবোযানে প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব হতো। তখন ডুবোযানটির দেয়াল উষ্ণ করার সুবিধা এতে ছিল। ভিতরে আলোর একমাত্র উৎস দেয়ালে লাগানো ল্যাম্প বাতি। ডুবোযানের সামনের দিকে যাত্রীদের জন্য একটি ব্যক্তিগত টয়লেট ছিল। চাইলে পাইলট এখানে গান ছেড়ে দিতে পারতেন। টাইটানে করে ভ্রমণ অভিযানে আসার আগে থেকেই নিজের ডায়েট সীমাবদ্ধ করতে এবং পানির নিচে থাকার সময় যেন টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন কম পড়ে সে নিয়ে নির্দেশনা জানিয়ে দিত ওশানগেট কর্তৃপক্ষ। ডুবোযানটির বাইরের অংশে শক্তিশালী আলোর ব্যবস্থা ছিল। এ আলো ফেলেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখা যেত। বাইরের দিকে একাধিক ফোর কে ক্যামেরা এবং জাহাজের ম্যাপিং করতে বাইরের দিকে ছিল লেজার স্ক্যানার ও সোনার। সেই সঙ্গে ভিতরে বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ব্যবস্থা ছিল। টাইটান সাগরের গভীরে চলে গেলে আর জিপিএস সিস্টেম কাজ করত না। তখন যাত্রীরা পানির উপরে থাকা সাপোর্ট জাহাজ থেকে নির্দেশাবলী পেতেন। এ নির্দেশাবলীর ওপর ভিত্তি করে একটি মডিফায়েড ভিডিও গেম কন্ট্রোলারের সাহায্যে সাবমেরিনটি পরিচালনা করতেন পাইলট ও  ওশানগেটের মালিক স্টকটন রাশ। এ ডুবোযানটি পরিচালনা করতে খুব বেশি দক্ষতার দরকার ছিল না।

চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাগরতলে যেতেন তিনি

বিভিন্ন মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আটলান্টিকের অতলে ধনী পর্যটকদের নিয়ে যেতেন স্টকটন রাশ। এ অভিযানে ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে রাখঢাক রাখতেন না। গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘কখনো কখনো নিরাপত্তা মানে অপচয়। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আপনি যদি নিরাপদ থাকতে চান তবে বিছানা থেকে ওঠবেন না, গাড়িতে ওঠবেন না। অর্থাৎ আপনি কোনো কিছুই করবেন না।’ স্টকটন রাশ ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাকাশ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নেন। স্নাতক শেষ করার পর ম্যাকডোনেল ডগলাস করপোরেশনে ফ্লাইট টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে চলে যান স্টকটন রাশ। দীর্ঘদিন ধরেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন লালন করছিলেন তিনি। পরে নিজের মত পাল্টান।  নতুন কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৯ সালে ওশানগেট প্রতিষ্ঠা করেন। ডুবোযানে করে আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখানোর ব্যবসা শুরু করেন।

 

টিকিটের দাম ২ কোটি ৭০ লাখ

আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে পড়ে থাকা টাইটানিক দেখতে যাওয়ার এ ভ্রমণ ছিল ৮ দিনের। নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন’স থেকে ডুবোজাহাজটি যাত্রা শুরু করে। সেখান থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ভ্রমণে প্রতি টিকিটের দাম ছিল ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। এ ভ্রমণে যারা যেতেন তাদের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে ওশানগেটের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে যে, টাকা দিয়ে যারা ‘টাইটান’-এ ভ্রমণ করবেন তাদের আগে থেকে কোনো ডাইভিং অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলবে। আর যদি কোনো প্রশিক্ষণ দরকার হয় তাহলে ভ্রমণ শুরুর আগে অনলাইনে তা দেওয়া হবে। ভ্রমণেচ্ছু গ্রাহকদের বয়স অবশ্যই কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। লম্বা সময় আবদ্ধ একটা জায়গায় বসে থাকতে এবং মই বেয়ে উঠতে সক্ষম হতে হবে।

 

যে কারণে ডুবল

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার পথে ডুবে যায় ডুবোজাহাজটি। আটলান্টিকের গভীরে প্রবল পানির চাপ সামলাতে পারেনি টাইটান। সমুদ্রের তলদেশে ডুবোযানটি পানির অস্বাভাবিক চাপে ভয়ঙ্কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের শিকার হয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টির সত্যতা মেলে মার্কিন নৌবাহিনীর বক্তব্য থেকেও। বাহিনীর এক কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানান, টাইটান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই বিস্ফোরণের মতো শব্দ শনাক্ত করা হয়েছিল। এমনকি সে খবর তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডকে দ্রুত জানিয়েও দিয়েছিলেন। গত বছর সিবিএসের সাংবাদিক ডেভিড পগ টাইটানে ভ্রমণ করেছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, টাইটানের কিছু কিছু ব্যালাস্ট পুরনো হয়ে গিয়েছিল। পাইপগুলো ছিল মরিচা ধরা। এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করায় চাকরি যায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ডিরেক্টর অব মেরিন অপারেশন ডেভিড লোচরিজের।  তিনি এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেছেন, টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় ২০১৮ সালে তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

 

মিলি সেকেন্ডে সব শেষ!

ডুবোযানটি বিস্ফোরণের এক সেকেন্ড আগেও হয়তো কিছু টের পায়নি ভিতরে থাকা যাত্রীরা। এ দুর্ঘটনা নিয়ে বিশেষজ্ঞ অফার কেটার ‘দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জলের প্রচন্ড চাপে টাইটানে কোনো অংশে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থাকতে পারে। মিলি সেকেন্ড অর্থাৎ একেবারে অল্প সময়ের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। যারা ওই ডুবোজাহাজে ছিলেন তারা হয়তো বুঝতেও পারেননি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে। যা কিছু ঘটেছে তা এতটাই অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছে যে, কারও কাছে কোনো বার্তাই এই নিয়ে পৌঁছায়নি।’

টাইটানিক দেখতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া যাত্রী তারা

টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে টাইটানিক যাত্রীদের মতোই দুর্ভাগ্য করুণ পরিণতি হলো টাইটান যাত্রীদের। টাইটানের ভিতরে পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। তাদের দুজন হলেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ও ধনকুবের শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯)। শাহজাদা দাউদ পাকিস্তানের একটি ধনী পরিবারের সদস্য। তার ছেলে সুলেমান দাউদও ওই সাবমেরিনে ছিলেন। শাহজাদা পাকিস্তানি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী হ্যামিশ হার্ডিং। তিনি একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী। বেশ কয়েকবার দক্ষিণ মেরু ঘুরে এসেছেন তিনি। যাত্রীবাহী মহাকাশযান ব্লু অরিজিনে চড়ে ২০২২ সালে মহাকাশও ভ্রমণ করেছেন তিনি। পৃথিবীর গভীরতম স্থান হিসেবে পরিচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ডুব দিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় থাকার গিনেস রেকর্ড রয়েছে তার। যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থা ‘অ্যাকশন এভিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান তিনি। গভীর সমুদ্রে যাওয়ার নেশা ছিল তার। আরও ছিলেন পল অঁরি নাজোলে। তিনি ৭৭ বছর বয়সী ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি। তিনি মি. টাইটানিক নামে পরিচিত। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন নাজোলে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দুই বছরের মাথায় ১৯৮৭ সালে প্রথম অভিযানে গিয়েছিলেন পল অঁরি নাজোলে। টাইটানিকের অনেক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেশিরভাগের উদ্ধার কাজই তিনি তদারক করেন। এ চারজন পর্যটকের সঙ্গে ছিলেন টাইটানের পাইলট ও ওশানগেটের মালিক স্টকটন রাশ। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। উদ্ধার অভিযানে থাকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইটানের যাত্রীদের মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার বলেন, মরদেহের সন্ধান অব্যাহত থাকবে। তবে এটি একটি ‘অবিশ্বাস্যভাবে জটিল পরিবেশ’ সমুদ্রের তলায়, ভূপৃষ্ঠের দুই মাইল নিচে। এমন পরিবেশে মরদেহগুলোর সন্ধান করা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আলো ফেলে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখা যেত টাইটান থেকে

টাইটানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে টাইটানিকের কাছে

দীর্ঘ উদ্ধার অভিযান শেষে খোঁজ মেলে টাইটানের। আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের পাশেই নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের ‘ধ্বংসাবশেষ’ পাওয়া গেছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১ হাজার ৬০০ ফুট (প্রায় ৫০০ মিটার) দূরে পড়ে আছে ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। এর বেশ কয়েকটি টুকরা শনাক্ত করা গেছে। একটি কানাডিয়ান জাহাজ নিখোঁজ সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ খুঁজে পেয়েছে। যে অংশগুলো পাওয়া গেছে তাতে রয়েছে- লেজের দিকের কিছু অংশ, একটি ল্যান্ডিং ফ্রেম।  যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড নিশ্চিত করেছে, গভীর সমুদ্রের এ যানটির আরোহীদের কেউই বেঁচে নেই। সম্পূর্ণ সাবমেরিনটি খুঁজে পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর