শিরোনাম
বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর যত ভাড়াটে যোদ্ধা

আবদুল কাদের

ভয়ংকর যত ভাড়াটে যোদ্ধা

এরা প্রত্যেকেই সৈনিক। তবে কোনো দেশ কিংবা সংস্থার সশস্ত্র সৈনিক নয়। অর্থের বিনিময়ে তারা যে কোনো দেশ কিংবা সংস্থার হয়ে যুদ্ধ করে। ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় নিরাপত্তা ঠিকাদার বা সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর। এসব সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী সারা বিশ্বে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছে। তাদের নিয়ে আমাদের আজকের রকমারি।

 

তাদের ইতিহাস

ভাড়াটে যোদ্ধাদের সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একদল সাবেক কর্মকর্তা গড়ে তোলেন ওয়াচগার্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠান। এটি সত্তরের দশকে লিবিয়ার গাদ্দাফিকে উৎখাতের চেষ্টাসহ অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এরপর স্নায়ুযুদ্ধকালে সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর বা নিরাপত্তা ঠিকাদারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সামরিক বিশেষজ্ঞ শন ম্যাকফেট তার বিখ্যাত বই ‘দ্য মডার্ন মার্সেনারি : প্রাইভেট আর্মিস অ্যান্ড হোয়াট দে মিন ফর ওয়ার্ল্ড অর্ডার’-এ বলছেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্বে নিরাপত্তা ঠিকাদারের সংখ্যা আগের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের কৌশল বদলে যাওয়ায় এমনটি ঘটছে।

 

কাদের হয়ে কাজ করে?

বিভিন্ন দেশের সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা ভাড়াটে যোদ্ধাদের কাজে লাগায়। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা নিরাপত্তা ঠিকাদারদের প্রধান ক্লায়েন্ট। দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে সৈন্যদের মৃত্যুর হার দেখেই বিকল্প সৈন্যদের বেছে নিচ্ছে রাষ্ট্রগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের ১০ শতাংশ ছিল ভাড়াটে। কিন্তু ইরাক ও আফগান যুদ্ধে এই সংখ্যা বেড়েছে অন্তত পাঁচগুণ। ভাড়াটে যোদ্ধা ও তাদের সংগঠনগুলোর তৎপরতা অনেকটা অন্তরালে থেকে যায়। পরাশক্তি বা ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি স্বল্প সামরিক শক্তির দেশগুলোও এসব ভাড়াটে যোদ্ধাদের ভাড়া করে।

 

ভাড়াটে যোদ্ধাদের তৎপরতা

ভাড়াটে যোদ্ধারা অত্যন্ত ভয়ংকর। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছাড়াও নানা অভিযানে এদের দেখা মেলে। আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার অনেক দেশে ভাড়াটে যোদ্ধাদের তৎপরতা দেখা গেছে। যেমন- ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য মার্সেনারিদের ভাড়া করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যাদের অধিকাংশই এসেছে লাতিন আমেরিকার দেশ থেকে। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া বোকো হারামের বিরুদ্ধে লড়াই করে যখন প্রায় নিঃস্ব, তখন ভাড়াটে এ যোদ্ধাদের শরণাপন্ন হয় আফ্রিকার দেশটি। এ ভাড়াটে যোদ্ধারা আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোকো হারামকে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। লিবিয়ার যুদ্ধও এখন অনেকটাই রূপ নিয়েছে ভাড়া করা যোদ্ধাদের লড়াইয়ে। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদের একটি প্রতিষ্ঠান লিবিয়ায় সহস্রাধিক সৈন্য মোতায়েন করেছে। যারা আবার জেনারেল খলিফা হাফতারের হয়ে যুদ্ধ করছে। এতে দেখা গেছে, ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি নেটওয়ার্ক লিবিয়ায় এসব সৈন্য পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি রুশ নেটওয়ার্ক লিবিয়ায় এসব ভাড়াটে সৈন্যকে পাঠিয়েছে। বলা হয়, এসব যোদ্ধা সেখানে চোরাগোপ্তা হামলাকারী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মার্সেনারিদের মতো ভাড়াটে যোদ্ধারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়ার দখল নিয়েছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত উপায়ে। এ জন্য মস্কো ওয়াগনার গ্রুপের মতোই বড় মার্সেনারি সংগঠন স্পেটসনাজ স্পেশাল ফোর্সেস, গ্রিন মেন ও তথাকথিত রুশপন্থি মিলিশিয়াদের কাজে লাগায়। এর আগে ব্যাপক মাত্রায় প্রচার-প্রচারণা-প্রপাগান্ডাসহ আরও তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াটে বাতাবরণ তৈরি করা হয়। ফলে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্রিমিয়া দখলে নিতে সক্ষম হয়।

 

সহিংসতা বিতর্ক

ভাড়াটে যোদ্ধাদের জবাবদিহি না থাকায় এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ নানাবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। মার্কিন কংগ্রেসের এক নথিতে বলা হয়েছে, ‘একাডেমি’র সদস্যরা ২০০৫ সাল থেকে অন্তত ২০০ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ২০০৭ সালে তারা ইরাকের একটি মার্কেটে গুলি চালিয়ে ১৪ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। এল-৩ নামের আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা কুখ্যাত আবু গারিব কারাগারে বন্দি নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধারা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের বাম্বারি শহরের তাকওয়া মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকায় গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে। দ্য সেন্ট্রি নামের একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার মতে, তাদের প্রাণভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চান না। হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইজেকের বাসভবনে ঢুকে হত্যা করে এই ভাড়াটে যোদ্ধারা।

 

ওয়াগনার গ্রুপ, রাশিয়ার বেসামরিক এই বাহিনী বিশ্বের শক্তিশালী ভাড়াটে যোদ্ধার দল

ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ান বেসামরিক সংস্থা। ২০১৪ সালে ‘পিএমসি ওয়াগনার’ নামে ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম জনসম্মুখে আসে। তখন এর সদস্যরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করছিল। তারপর থেকে, তারা সিরিয়া, লিবিয়া, ভেনেজুয়েলা, মোজাম্বিক এবং সিএডিসহ ডজন ডজন দেশে কাজ করেছে। সে সময় এর ৫ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে মনে করা হয়, যাদের বেশির ভাগই রাশিয়ার অভিজাত বাহিনী ও বিশেষ বাহিনী থেকে আসা প্রবীণ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। এরপর থেকে ওয়াগনারের কার্যক্রম যথেষ্ট বেড়েছে। ওয়াগনার গ্রুপের বর্তমান প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করা ছিল ওয়াগনার গ্রুপের প্রথম অপারেশন। তাদের অভিজ্ঞ স্নাইপার গোষ্ঠী সিরিয়ায় কাজ করছে এবং সেখানে আইএসআইএস জঙ্গি নির্মূলে তাদের ভূমিকা রয়েছে। অনুমান করা হয়, ২০১৪ সালে ওয়াগনার গ্রুপের শতাধিক অপারেটর রয়েছে। ২০১৭ সালে তাদের প্রায় ৬ হাজার অপারেটর ছিল। তারা ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন সংঘাতে জড়িত হওয়ার পরে তাদের প্রচার লাভ করে। সেখানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে জানায়, ওয়াগনার এখন ইউক্রেনে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধার নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল চলতি বছরের শুরুতে জানায়, ইউক্রেনে ওয়াগনারের প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধাকে আনা হয়েছে কারাগার থেকে। ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও ২০২২ সালে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ওয়াগনার গ্রুপ। এরপর তারা সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সদর দফতর খোলে। পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বাখমুত দখলে নেওয়ার সময় ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। যদিও ওয়াগনার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এটা অবশ্য প্রথম নয়, আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি সরকার সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগ তোলে অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীটির বিরুদ্ধে।

 

নিরাপত্তা সংস্থা G4S পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ ভাড়াটে যোদ্ধা

৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সশস্ত্র সৈনিক নিয়ে, তালিকায় থাকা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান G4S বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ভাড়াটে সৈনিক। ওয়ালমার্টের পরে এরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা। যদিও তাদের ব্যবসা কেবল ব্যাংক, কারাগার এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রদান। তবে তারা এসবের বাইরেও বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীল এলাকাগুলোর নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। G4S ব্রিটিশ বহুজাতিক নিরাপত্তা ঠিকাদার, যার সদর দফতর লন্ডনে অবস্থিত। সশস্ত্র এই বাহিনী ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা নিরাপত্তা কর্মী সরবরাহ, পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম, প্রতিরক্ষা ইউনিট এবং নিরাপদ বন্দি পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে। নিরাপত্তার পাশাপাশি বিদেশি সরকারের সঙ্গেও কাজ করে। ২০০৮ সালে G4S আর্মারগ্রুপকে নিরাপত্তা প্রদান করে। তাদের ৯ হাজার সশস্ত্র বাহিনী ইরাকের বেসামরিক স্থাপনাগুলোর এক-তৃতীয়াংশ রক্ষা করেছে। তবে আফগানিস্তানে ‘অ্যানিমেল হাউস’ স্টাইলের পার্টি আয়োজনের জন্য তাদের কুখ্যাতি রয়েছে। গোষ্ঠীটি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিপজ্জনক কিছু অঞ্চলসহ বিশ্বব্যাপী ১২৫টিরও বেশি দেশে ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে সেবা প্রদান করে আসছে।

 

ইউনিটি গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আমেরিকা এশিয়ায় সক্রিয়

বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ২০০-এর বেশি কর্মী নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মালিকানাধীন ইউনিটি রিসোর্সেস গ্রুপ বিশ্বব্যাপী ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে। সশস্ত্র সংস্থাটির ব্যবস্থাপনায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনা সদস্য। বেসরকারি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০১০ সাল পর্যন্ত বাগদাদে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস পাহারা দেওয়ার জন্য বেশি পরিচিত। ইরাক যুদ্ধে সার্বভৌম অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী পিছু হটলে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা সেখানে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ইউনিটি রিসোর্সেস গ্রুপের সৈনিকরা ইরাকে দুটি বিতর্কিত ও ব্যাপক সমালোচিত ঘটনার জন্য দায়ী। যার মধ্যে একটি অস্ট্রেলিয়ান অধ্যাপককে হত্যা এবং অন্যটি ইরাকে দুই বেসামরিক মহিলার মৃত্যু। ইরাকের বাইরে ইউনিটি রিসোর্সেস গ্রুপ লেবাননের জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোয় কাজ করে। এমনকি বাহরাইনের সংকটকালীন তেল কোম্পানিগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এর বাইরেও তারা তৎকালীন চিলির সৈন্যদের ম্যান গেট এবং মেশিনগান ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়। সশস্ত্র এই বাহিনী আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজ করে।

 

বিদ্রোহী মাদক কারবারিদের মূর্তিমান আতঙ্ক এই ড্যানকর্প

ভার্জিনিয়ায় ড্যানকর্প সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সদর দফতর। দীর্ঘ ২০ বছরের ইরাক যুদ্ধ শেষে ইরাকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পরে দেশটির প্রদেশগুলোয় থাকা আটটি বেসামরিক সশস্ত্র সংস্থার মধ্যে অন্যতম ড্যানকর্প। বেসরকারি সংস্থাটির সদস্যরা কলম্বিয়ার বিদ্রোহী এবং পেরুতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কলাম্বিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সৈন্যরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করার কারণে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। এই ভাড়াটে যোদ্ধারা পেরুতে মাদকবিরোধী অভিযানে নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়াও সোমালিয়া, লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ সুদানে বিদ্রোহীদের নিরস্ত্র করার জন্য ড্যানকর্পের ভাড়াটে যোদ্ধা পাঠানো হয়েছিল। অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম চলাকালীন তাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা কুখ্যাত ব্ল্যাকওয়াটারের পরে নিযুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। তাদের সংস্থায় রয়েছে ১০ হাজারের বেশি সশস্ত্র যোদ্ধার একটি বিশাল গ্রুপ, যাদের বাৎসরিক আয় প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ড্যানকর্পের সশস্ত্র যোদ্ধা আজো আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

 

ট্রিপল ক্যানোপি ইরাকে দশমিক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে

ইরাকে সরকারি মার্কিন বাহিনী কর্তৃক নিয়োজিত আটটি নিরাপত্তা ঠিকাদারের মধ্যে অন্যতম ট্রিপল ক্যানোপি। যাদের প্রায় ১ হাজার ৮০০ সৈন্য রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই উগান্ডা ও পেরুভিত্তিক। সশস্ত্র ভাড়াটে যোদ্ধাদের সঙ্গে ইরাক সরকারের ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিরাপত্তা চুক্তি রয়েছে। ইরাকের সংস্থাটির একটি অফিসিয়াল পর্যালোচনা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ট্রিপল ক্যানোপি একটি ‘উল্লেখযোগ্য পূর্ব অভিজ্ঞতা সংবলিত প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার কর্মশক্তি’। বেসামরিক এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নামের অর্থ ‘জঙ্গলের ছাউনি’ অর্থাৎ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সেনা বিশেষজ্ঞরা বন-জঙ্গলে তাদের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। এই সশস্ত্র সংস্থাটির বিশ্বের অন্যান্য অংশেও চুক্তি রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হাইতি, যেখানে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দূতাবাসের নিরাপত্তা দেয়। যেখানে তাদের নিয়োজিত সৈন্যরা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক পরিষেবাও প্রদান করে আসছে। ট্রিপল ক্যানোপি বিশ্বব্যাপী মিশন সমর্থন এবং সমন্বিত নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটি মূলত কনস্টেলিস সংস্থা। যারা বিশ্বব্যাপী জটিল ঝুঁকি এবং অপারেশনাল কার্যক্রম প্রদানকারী একটি নেতৃস্থানীয় ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী। কনস্টেলিস সংস্থাটি একাডেমি, অলিভ গ্রুপ, এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্র্যাটেজিক সোশ্যাল এবং এদের সব সহযোগীদের উত্তরাধিকার ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করে।

 

একাডেমি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বেসামরিক প্রশিক্ষণ দেয়

বিশ্বের নামি সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর যুক্তরাষ্ট্রের ‘একাডেমি’। যার আগের নাম ‘ব্লাক ওয়াটার’। তারপর জি সার্ভিসেস এবং সর্বশেষ নামকরণ করা হয় ‘একাডেমি’। উত্তর ক্যারোলিনা মরুভূমিতে ৭ হাজার একর ভূমির ওপর এদের যোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নেয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জটিল বেসামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন নেভি-সিল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা এরিক প্রিন্স এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৭ সালে সংস্থাটির ওপর লেখা বই অনুসারে, তখন ২০ হাজার সৈন্য, ২০টি যুদ্ধবিমান, একটি সাঁজোয়া যান এবং প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড সম্মিলিত একটি সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল আজকের একাডেমি। যার বেশির ভাগই মার্কিন সরকারের চুক্তিতে ইরাক এবং আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। তবে অসংখ্য ভুল আর নানা বিতর্ক নিয়ে ইরাক সরকারকে তারা ক্ষুব্ধ করে। এ কারণে পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিল করে তারা ইরাক থেকে পিছিয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে হারিকেন ক্যাটরিনার পর নিউ অরলিন্সের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একাডেমির ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। জাপানের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও রক্ষণাবেক্ষণ করে এই সংস্থা। বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে এর যোদ্ধারা অংশ নিয়ে থাকে।

 

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তেল কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত এডিএস

এডিএস ডিফেন্স সার্ভিস, যারা জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য বিশেষ করে ইরাকে সৈন্য সরবরাহ করে। এডিএস আনুমানিক ৫ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত সশস্ত্র সংস্থা। আফগানিস্তান এবং বাহরাইনে এদের দফতর রয়েছে। এরা যুক্তরাষ্ট্র ও তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করে। ২০০৫ সালে প্রথম ইরাকে তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। সে সময় সংস্থাটির সদস্যরা ইরাকি বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়ে বিতর্কিত হয়। এই ভাড়াটে সৈন্য স্কটল্যান্ডেও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি বিশ্বের ৬০টি দেশে নিরাপত্তা প্রকল্পের অভিজ্ঞতাসহ শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক করপোরেট সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সংস্থাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা। লন্ডনের জয়েন্ট ওয়ার কমিটির গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাও এডিএস। গোষ্ঠীটি করপোরেট অপারেশন, বাণিজ্যিক ঝুঁকি, বিদেশি সন্ত্রাস দমন, সরকারি সমর্থন থেকে নিরাপত্তা- সব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরামর্শ দিয়ে থাকে। এরা পরিচিতি এবং সহযোগীদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে।

 

এশিয়া সিকিউরিটি গ্রুপ একটি শক্তিশালী আফগান বাহিনী

আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের চাচাতো ভাই হাশমত কারজাইয়ের আগের মালিকানাধীন, এশিয়া সিকিউরিটি গ্রুপ (এএসজি) যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের একটি প্রধান স্থানীয় শক্তি। যাদের রয়েছে ৬০০-এর বেশি যোদ্ধা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির রাজধানী কাবুলে এদের সদর দফতর অবস্থিত। বেসামরিক এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব হলো- আফগানিস্তানের দক্ষিণে ভ্রমণকারী কোয়ালিশন সাপ্লাই কনভয়ের সুরক্ষা প্রদান। এশিয়া সিকিউরিটি গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়োগ দেয় মার্কিন মালিকানাধীন নিরাপত্তা ঠিকাদার ড্যানকর্প।

 

ইরিনিস ইরাকের তেল সম্পদের অধিকাংশ পাহারা দিয়েছে

ভাড়াটে যোদ্ধার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরিনিস। যারা ইরাকের সিংহভাগ তেল সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। এরিনিস মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের চুক্তি অনুসরণ করে। ইরাক যুদ্ধে সংস্থাটির সবচেয়ে বড় মিশন- ১৬ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা নিয়ে দেশটির ২৮২টি স্থানে নিরাপত্তা প্রদান। যেখানে তারা তেল পাইপলাইন এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এরা আফ্রিকায় তাদের উপস্থিতির জানান দেয়। তৎকালীন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বৃহত্তম লৌহ আকরিক খনি, তেল এবং গ্যাস প্রকল্পের সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের সঙ্গে দুটি চুক্তি সম্পাদন করে। এরিনিসকে ঝুঁকিপূর্ণ সংস্থা বলা হয়। কারণ তাদের নিরাপত্তা বিধান, ঝুঁকি পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা এবং কঠোর-প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকাকে এক ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হয়।

 

ডিফিওন ইন্টারন্যাশনাল উন্নয়নশীল দেশ থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দেয়

অতীতে ট্রিপল ক্যানোপি ডিফিওন ইন্টারন্যাশনাল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভাড়াটে যোদ্ধা নিয়োগ করেছিল। যা ছিল ল্যাটিন আমেরিকা থেকে বেসরকারি সামরিক কর্মীদের অন্যতম উৎস। পেরুতে এদের সদর দফতর; দুবাই, ইরাক, ফিলিপাইন এবং শ্রীলঙ্কায় তাদের শাখা রয়েছে। সংস্থাটি বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে দেহরক্ষী, ড্রাইভার, স্ট্যাটিক গার্ডদের প্রশিক্ষণ দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এদের কর্মীদের তারা মাসে ১ হাজার মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করে থাকে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ট্রিপল ক্যানোপি, ইন-করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে সংস্থাটির চুক্তি রয়েছে। তারা স্ট্যাটিক গার্ড, লজিস্টিক নিয়োগ দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর