সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৃষ্টিবহুল স্থান

আবদুল কাদের

বৃষ্টিবহুল স্থান

সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় মৌসিনরাম গ্রামে

ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে মাত্র ৫৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মৌসিনরাম। গ্রামটিকে বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্রতার শিরোনাম রাখার জন্য প্রায়শই গ্রামের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। যদিও গ্রামটি বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান হিসেবে পরিচিত। ছাতা ছাড়া এখানে কেউই ঘর থেকে বের হন না। গ্রামবাসী বৃষ্টি এবং বৃষ্টির শব্দরোধে তাদের বাড়িঘরে ঘাস কিংবা পাতা ব্যবহার করে। মৌসিনরাম খুব শান্ত, কোলাহল নেই বললেই চলে। মানুষজনের চলাচল কম। খাসি উপজাতিপ্রধান অঞ্চল এটি। সব মিলিয়ে মাত্র হাজার খানেক মানুষ থাকেন এখানে। আবহাওয়াবিদরা বলেন, এর অবস্থান বাংলাদেশ এবং বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি, আর তাতে এত বৃষ্টি হয়ে থাকে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের সুনীতি দাস বলেন, “যখনই বঙ্গোপসাগরের ওপর কোনো আর্দ্রতা জড়ো হয় তখনই তা মৌসিনরামে বৃষ্টিপাত ঘটায়, ফলে মৌসিনরামে ভারি বৃষ্টি

আর দীর্ঘ বর্ষার দেখা মেলে। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১২ হাজার মিলিমিটার। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে দেখা যায়- ১৯৮৫ সালে এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ছিল ২৬ হাজার মিলিমিটার। মৌসিনরামে বছরে গড়ে ৪৬৭ ইঞ্চি (প্রায় ৩৯ ফুট) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পর্যটকরা এ মেঘের খেলা দেখতেই ছুটে যান পাহাড়ের পর পাহাড়ঘেরা গ্রামে।

 

চেরাপুঞ্জি (ভারত)

বৃষ্টিবহুল স্থানের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চেরাপুঞ্জি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর এটি। কিছুদিন আগেও চেরাপুঞ্জিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান হিসেবে ধরা হতো। এখানে সারা বছর তাপমাত্রা গড়ে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। বৃষ্টিপাত বেশি হয় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৮৭২ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ মোট বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ১৮৬০-১৮৬১ সালের মধ্যে বার্ষিক ২৬ হাজার ৪৬১ মিলিমিটার।

 

রেকর্ড বুকে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি

চেরাপুঞ্জি বিশ্বের অন্যতম বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। হিসাব রাখা শুরু করার পর থেকে জুনের এক দিনে সেখানে এ পর্যন্ত নয়বার ৮০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন। সেদিন এখানে ১ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ১৯৫৬ সালের ৫ জুন। সেদিন বৃষ্টিপাত হয় ৯৭৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আর গেল বছর ১৬ জুন সকাল থেকে ১৭ জুন সকাল পর্যন্ত ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়; যা ১২২ বছরের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

 

কেন এত বৃষ্টি হয়?

প্রাকৃতিক অবস্থানগত কারণে চেরাপুঞ্জি বিশ্বের অন্যতম বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। কারণ হিসেবে বলা হয়- ভারত মহাসাগর থেকে ওঠা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু হিমালয় পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালগুলোতে এসে ধাক্কা খায়। তখন তা ওপরে উঠতে বাধ্য হয়। যা প্রবল বৃষ্টির আকারে জলীয় বাষ্পগুলোকে ঢেলে দেয়। ফলে মেঘালয় মালভূমিতে দেখা দেয় প্রচুর বৃষ্টি। চেরাপুঞ্জিতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ অঞ্চলে গড়ে এক বছরে ১৮০ দিন বৃষ্টি হয়। গেল বছর মাত্র তিন দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও আসামে আড়াই হাজার মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টি হয়েছিল। আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর থেকে আসা প্রচুর জলীয়বাষ্প এর অন্যতম কারণ।

 

তুতেনেন্দো (কলম্বিয়া)

তুতেনেন্দো পৃথিবীর এমন একটি নয়নাভিরাম স্থান যেখানে বছরে দুটি বর্ষা ঋতুর দেখা মেলে। যা দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় অবস্থিত। তাই সারা বছরই স্থানটি বর্ষায় মুখোরিত হয়ে থাকে। বছরে এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১,৭৭০ মিলিমিটার। তুতেনেন্দোতে বছরে গড়ে ৪৬৩ ইঞ্চি (৩৮.৫ ফুট) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে নিরক্ষরেখা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি অঞ্চল হওয়ায় এখানে প্রায়শ নিম্নচাপের কারণে আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র হয়ে থাকে।

 

ক্রপ রিভার (নিউজিল্যান্ড)

পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের জায়গাটি নিউজিল্যান্ডের ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্রপ নদী। যা অস্ট্রেলিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে বৃষ্টিপাতের স্থান। এর বেশিরভাগ অঞ্চলজুড়ে দেখা মেলে মাঝারি থেকে শুষ্ক বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৫১৬ মিলিমিটার। মজার বিষয় হলো, এখানকার বেশিরভাগ বৃষ্টি পাহাড়ে পড়ে, সমভূমিতে নয়। ১৯৮৯ সালে এ অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল।

 

মাউন্ট ওয়ালিয়ালো (হাওয়াই)

মাউন্ট ওয়ালিয়ালো-এর অর্থ ‘উচ্ছ্বল জল’। বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরির চারপাশের বৃষ্টি এতই ভেজা এবং পিচ্ছিল যে প্রবেশ করা কঠিন। গবেষকদের ধারণা, এ শৃঙ্গের শঙ্কু আকৃতির কারণেই এত বৃষ্টিপাত। এখানকার উপকূলীয় নিম্নভূমিতে সবসময় বয়ে যায় ঊর্ধ্বগতির বাতাস, যার সর্বোচ্চ বেগ ১,৫৬০ মিটার। আর বৃষ্টিপাতের কারণে সারা বছরই আর্দ্র থাকে এ এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় এপ্রিল মাসে। শুধু বৃষ্টিভেজা সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর এখানে আসে কয়েক লাখ পর্যটক। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ ১৭,৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৮২ সালে।

 

দিবাংসা (ক্যামেরুন)

দিবাংসা গ্রামটি আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ক্যামেরুন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, পর্বতটি মেঘ ধরে রাখে বলেই এখানকার পরতে পরতে এত বৃষ্টি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখানে ভারি বৃষ্টিপাত কেবল তিনটি কারণে হয়। এক. আটলান্টিক উপকূল, দুই. বিষুবরেখা এবং তিন. নিকটবর্তী পর্বত। দেশটির দক্ষিণ আটলান্টিক উপকূলের এ গ্রামে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০,৩০০ মিলিমিটার। দিবাংসা গ্রামটিতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। সে সময় প্রায় ১৪,২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের দেখা গিয়েছিল।

 

মাউন্ট বেল্লেন্দেন কের (অস্ট্রেলিয়া)

উষ্ণম-লীয় আবহাওয়ার জন্য খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট বেল্লেন্দেন কের পর্বত। এটি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বর্ষা মৌসুম চলে এপ্রিল থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময় খুব ভারি বৃষ্টিপাত হয়। প্রবাল প্রাচীরঘেরা সমুদ্র উপকূল, অন্য তিনদিকে পর্বতঘেরা এ এলাকায় যেন সব সময় কালো মেঘের ছায়া লেগেই থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৬০০ মিটার উঁচু এলাকাটিতে বৃষ্টি একটি নিয়মিত ব্যাপার। মাউন্ট বেল্লেন্দেন কেরে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮ হাজার ৬৩৬ মিলিমিটার। এখানে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ২০০০ সালে, ১২,৪৬১ মিলিমিটার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর