রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অদ্ভুত যত দ্বীপ

আবদুল কাদের

অদ্ভুত যত দ্বীপ

পৃথিবীজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে হাজারো দ্বীপ। এসব দ্বীপের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরিষ্কার নীল জলরাশি, মেঘহীন আকাশ এবং উষ্ণ বালুময় মনোমুগ্ধকর সৈকত। তবে প্রকৃতির এরূপ সৌন্দর্যের বাইরেও বেশ কিছু অদ্ভুত দ্বীপ রয়েছে। আজ জানব সেই দ্বীপগুলোর বিস্তারিত...

 

পৃথিবীর বুকে এখনো রহস্য প্রশান্ত মহাসাগরীয়ইস্টার আইল্যান্ড

বিশ্বের বুকে বিস্ময় ‘ইস্টার আইল্যান্ড’। প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জন এ দ্বীপটিতে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য। একেকটি ভাস্কর্য ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা। কিন্তু গবেষকদের প্রশ্ন- ইস্টার দ্বীপের আদি বাসিন্দারা কীভাবে এই ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন? এসবের উত্তর খুঁজছেন বিশ্লেষকরা। তাহলে কি আদি মানুষের একমাত্র হাতিয়ার ছিল পাথর, হাড় ও প্রবাল! তা যদি হয়, তাহলে দ্বীপবাসীরা সেই কৌশল শিখল কীভাবে? পাথরগুলোই তারা বয়ে আনল কীভাবে এবং কোথা থেকে? এসবের উত্তর এখনো খুঁজছেন বিশ্লেষকরা। যা আজও রহস্যই হয়ে আছে।

কম করে হলেও এসব ভাস্কর্যের একেকটির ওজন ২০ টনেরও বেশি। দ্বীপের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৩২ ফুট। ওজন প্রায় ৯০ টন। আছে পাথরে তৈরি ৮০০টি মূর্তির মাথা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাথাটির উচ্চতা ৩২ ফুট এবং ওজন ৯০ টন। এ ছাড়া ইস্টার দ্বীপে আছে ‘আহু’ বলে পরিচিত পাথরের বিশাল বিশাল প্ল্যাটফরম। আছে পাথরের তৈরি বিস্ময়কর দেয়াল, পাথরের ঘর ও গুহাচিত্র। পরস্পর সংগতিহীন এসব সৃষ্টি বিস্ময়কে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৭৭২ সালের ৫ এপ্রিল ডাচ সমুদ্র অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জ্যাকব রোগভেইন প্রথম দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। দিনটি ছিল ‘ইস্টার ডে’। ডাচ এই অভিযাত্রীই দ্বীপটির নাম দেন ‘ইস্টার আইল্যান্ড’। বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থর হেয়ারডাল প্রচুর গবেষণা ও খননকার্যের পর তথ্য দিলেন ৩৮০ খ্রিস্টাব্দে পেরু থেকে কিছু মানুষ এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তারা সবাই ছিলেন পলিনেশিয়ান। তারা ইস্টার আইল্যান্ডে তৈরি করেছিলেন রাস্তা, মন্দির, মানমন্দির ও সুড়ঙ্গ পথ। তবে অনেকে বলেন, দ্বীপের বাসিন্দারা ছিলেন প্রাচীন মিসরীয়। ইস্টার আইল্যান্ড বিখ্যাত ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে স্বীকৃত।

 

বিচিত্র পরিবেশ প্রাণিকুলের ভান্ডার মাদাগাস্কার

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি এবং বিচিত্র সব প্রাণীর সন্ধান মিলেছে এই মাদাগাস্কার দ্বীপপুঞ্জে

পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপগুলোর একটি মাদাগাস্কার। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। তবে একে ভিন্ন গ্রহ বললেও ভুল হবে না। কারণ শুধু দ্বীপ নয়, প্রাণিবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই দ্বীপরাজ্যটি। এখানে যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদের দেখা মেলে, তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ভূত্বাত্ত্বিকগণের ধারণা, প্রায় ১৬৫০ বছর আগে মাদাগাস্কার আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে। ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানের আগে হাজার হাজার ভ্রমণপ্রিয় মানুষ মাদাগাস্কারের অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন। মনোমুগ্ধকর এই দ্বীপের প্রায় ৯০ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময় হয়ে আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বীপটিতে প্রায় ৯৬ শতাংশ ভাস্কুলার উদ্ভিদ এন্ডেমিক, ৪৫ শতাংশ ফার্ন এন্ডেমিক, ৯০ শতাংশ সরীসৃপ এন্ডেমিক, ৩৭ শতাংশ পাখি আর ৭৩ শতাংশ এন্ডেমিক বাদুড় রয়েছে। এখানকার বিখ্যাত একটি উদ্ভিদ বাওবাব, গাজর আকৃতির গাছটি ৮০ ফুট (২৪ মিটার) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। মাদাগাস্কারজুড়ে ১১ হাজারের মতো উদ্ভিদ আছে যাদের দেখা শুধু এই দ্বীপেই মেলে। এখানকার অধিকাংশ প্রাণীর মধ্যে একাধিক প্রজাতির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় ফসা নামক একটি প্রাণী দেখতে অনেকটাই বেজি, কুকুর আর বেড়ালের সংকর বলে মনে হয়।

 

পেরুরটিটিকাকা হ্রদ একটি ভাসমান দ্বীপপুঞ্জ

দক্ষিণ আমেরিকার পেরু-বলিভিয়ার সীমান্তে অবস্থিত টিটিকাকা হ্রদ। যার মূল আকর্ষণ- ভাসমান দ্বীপ। মানবসৃষ্ট দ্বীপগুলো বেশ অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর। উরো বা উরোজ গোত্রের মানুষ দ্বীপগুলো বানিয়েছে। ১৯৮৬ সালে এক ঝড়ের পর তীরের কাছে এ ধরনের দ্বীপ বানানো হয়। সেই থেকে আজ অবধি এভাবে দ্বীপ বানিয়ে উরোজ গোত্রের মানুষ বসবাস করছেন। এর নির্মাশৈলীও বেশ মনোমুগ্ধকর। সাধারণত টটোরার শিকড় দিয়ে তৈরি বোনা চাটাই একটার সঙ্গে আরেকটা দড়ি দিয়ে বেঁধে ভাসমান দ্বীপগুলো তৈরি করা হয়। ভাসমান দ্বীপকে হৃদের পানির নিচে রাখা ইউক্যালিপটাসের খুঁটি ও দড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সাধারণত নোঙর করে রাখা হয়। এভাবে ৩০ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা যায় একটি দ্বীপ। ভাসমান দ্বীপগুলোয় মোটামুটি হাজার দুয়েক উরোজ উপজাতিদের বসবাস। মাছধরা এবং নানা সামগ্রী বুনে এই গোত্রের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন।

 

ভয়ংকর আর রহস্যময় দ্বীপপুতুল দ্বীপ

অদ্ভুত, রহস্যময় ও ভুতুড়ে দ্বীপ ‘লা ইসলা দে লাস মিউনিকাস’। যা স্থানীয়দের কাছে ‘পুতুল দ্বীপ’ হিসেবে পরিচিত। মেক্সিকো সিটি থেকে মাত্র ১৭-১৮ মাইল দক্ষিণে জোকিমিলকো-তে এই দ্বীপের অবস্থান। কথিত আছে, তিন শিশু খেলা করছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন এই দ্বীপে। পুতুলের বিয়ে দিচ্ছিল তারা। হঠাৎই তিনজনের মধ্যে একজন নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় দ্বীপের পরিত্যক্ত একটি খালে। মৃত অবস্থায়। এরপর থেকেই ভয়ে আর কেউ ওই দ্বীপে যাওয়ার সাহস করতেন না। কিছুকাল পরে দেখা গেল, দ্বীপটির গাছপালার ডালে, পরিত্যক্ত ঘরবাড়ির দেওয়ালে সর্বত্রই ঝুলে আছে পুতুল আর পুতুল। যা বীভৎস, ভয়ংকর। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। কারও মাথা, চেহারা ছেঁড়া-ফাটা। এসব পুতুল ঘিরেও নানান ভৌতিক কাহিনি ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। তাদের কথায়, রাতের অন্ধকারে নাকি পুতুলরা জীবন্ত হয়ে ওঠে! জনশ্রুতি আছে, পুতুলগুলোর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করতে দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন, শিশুটি মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর ডন জুলিয়ান সানতানা নামের এক যাজক তপস্যা করতে আসেন এই দ্বীপে। জুলিয়ান দ্বীপটিতে আশ্রম গড়ে তোলার পর মৃত শিশুটির আত্মা প্রায়ই তার সঙ্গে কথা বলত। পরে ইউনেস্কো দ্বীপটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।

 

ফিলিপাইনেরভলকান দ্বীপ

প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় অদ্ভুত আর সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে ফিলিপাইনের বিখ্যাত আইল্যান্ডটি। নাম ভলকান দ্বীপ বা ভলকান পয়েন্ট, যা বিশ্বের বুকে অপরূপ এক বিস্ময়। ফিলিপাইনের লুনজ দ্বীপের উত্তরে রয়েছে তাল নামক একটি হ্রদ। সেই হ্রদের মাঝখানে রয়েছে তাল ভালকানো নামক একটি দ্বীপ। এই হ্রদটি মূলত তৈরি হয়েছে ভলকানো থেকে। সেই দ্বীপের মাঝখানে রয়েছে আরও একটি ছোট দ্বীপ; যা দেখতে অনেকটা বাদামের খোসার মতো। আর এই ছোট্ট দ্বীপটিই বিশ্ববাসীর কাছে ভলকান আইল্যান্ড নামে পরিচিত- এক দ্বীপের মধ্যে আরেক দ্বীপ। একটু সহজ করে বললে, প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিরে একটি দ্বীপের একটি হ্রদের ঠিক অভ্যন্তরে জেগে উঠেছে আরেকটি দ্বীপ। এটি হলো- ভলকান পয়েন্ট। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি এই তাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর হ্রদটির আংশিক অদৃশ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ অগ্ন্যুৎপাতে হৃদের পানি হারিয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগ্নেয়গিরির নিচের লাভা হয়তো তাল হ্রদের পানির স্তরকে বাষ্পীয় আকারে হারিয়ে যেতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

 

ডেথ আইল্যান্ড থেকে কেউ ফেরেন না

ইতালির শহর ভেনিস এবং লিডোর মধ্যে ভেনিস উপসাগরে অবস্থিত একটি নির্জন দ্বীপ। নাম ‘ডেথ আইল্যান্ড’। তবে এর আসল নাম ‘পোভেগ্লিয়া আইল্যান্ড’। জনশ্রুতি আছে, এই দ্বীপে যিনি যান তিনি আর জীবিত ফিরে আসেন না। এক সময় দ্বীপটির প্রকৃতি ছিল অসাধারণ। বহু বছর আগে ইতালিতে ভয়াবহ প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। মহামারি থেকে বাঁচতে ইতালি সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার প্লেগ রোগীকে পোভেগ্লিয়া আইল্যান্ডে নিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এরপর ‘ব্ল্যাক ফিভার’ নামে আরেকটি রোগ ছড়িয়ে পড়ে ইতালিতে। সেবারও প্রচুর মানুষ প্রাণ হারান। কথিত আছে, সেই সব মৃতদেহও এই দ্বীপে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তখন থেকে দ্বীপের আশপাশের মানুষজন দ্বীপে ‘অদ্ভুত শব্দ’ শুনতে পায়। স্থানীয়রা দ্বীপে অতৃপ্ত ‘আত্মার’ উপস্থিতি টের পান এবং এই দ্বীপে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এক সময় ইতালি সরকার এই দ্বীপে একটি হাসপাতালও নির্মাণ করেছিল। তাতেও লাভ হয়নি। কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা ‘আত্মা’র উপস্থিতি অনুভব করেন। তাদের মতে, এখানে অস্বাভাবিক কিছু আছে। এরপর সরকার হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৬০ সালে সরকারের কাছ থেকে এই দ্বীপ কিনে নেন ইতালির এক ধনকুবের। তার পরিবারে ঘটে ভয়ংকর দুর্ঘটনা।

 

স্যাবল দ্বীপের বাসিন্দা শুধুই ঘোড়া!

পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু দ্বীপ রয়েছে, যার পুরোটাই একটি প্রাণীর দখলে আছে। তেমনি একটি দ্বীপ ‘স্যাবল আইল্যান্ড’। কানাডার নোভা স্কটিয়ার উপকূলের একটি দ্বীপ। যা ‘আটলান্টিকের কবরস্থান’ নামেও পরিচিত। পৌরাণিক হোক বা সত্যিকারের গল্প; এক সময় আটলান্টিকের বুক চিরে গড়ে ওঠা এই দ্বীপপুঞ্জে নাকি অসংখ্য জাহাজ ধ্বংস হয়েছিল। কথিত আছে, ৪৯০টিরও বেশি জরাজীর্ণ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দ্বীপটিকে সাজিয়েছে। যেখানে এখন ৫০০টিরও বেশি বন্য ঘোড়ার বসবাস। এর আগে নৈসর্গিক দ্বীপপুঞ্জটি ধ্বংস হওয়া জাহাজের নাবিক এবং স্থানীয় জলদস্যুদের দখলে ছিল। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে দ্বীপে প্রথম ঘোড়াগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের সংখ্যা। ঘোড়াগুলো শুধু ঘাস এবং জমে থাকা বৃষ্টির পানি পান করে টিকে আছে। এই ঘোড়াগুলো দ্বীপটির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ। বন্য ঘোড়া হলেও এদের আকৃতি ছিল ছোট। উচ্চতা ছিল খুবই কম এবং কালো রঙের। প্রথম দিকে ঘোড়াগুলোকে ব্যক্তিগত ব্যবহার এবং জবাইয়ের জন্য সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু ১৯৫০ সালের দিকে এই প্রাণীগুলো বিলুপ্তির পথে চলে যায়। পরে প্রজনন ত্বরান্বিত করতে আরও কিছু অন্য জাতের ঘোড়া রেখে আসা হয় দ্বীপটিতে। ১৯৬১ সালে স্যাবল দ্বীপের ঘোড়াগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডা শিপিং অ্যাক্টের স্যাবল আইল্যান্ড রেগুলেশনের অধীনে সুরক্ষিত করা হয় এবং সেই সময় থেকে মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই টিকে আছে এই ঘোড়ার দ্বীপ। ২০১৩ সালের ২০ জুন এটিকে কানাডার ৪৩তম জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। স্যাবল দ্বীপপুঞ্জের বন্য পশুপাল নিয়ন্ত্রণহীন এবং আইনত মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত।

 

ক্রিসমাস আইল্যান্ডে কেবল কাঁকড়ার রাজত্ব

ক্রিসমাস আইল্যান্ড। জাভা ও সুমাত্রা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে ভাসছে এই দ্বীপ। অস্ট্রেলিয়ার অধীনে থাকা দ্বীপটি মেলবোর্ন থেকে প্রায় ১৬৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে ২ হাজার অধিবাসীর আবাসস্থল। দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার দখলে থাকলেও বেশির ভাগ বাসিন্দা হলেন এশিয়ান। এই দ্বীপের জঙ্গলে আছে ৩৯০টিরও বেশি গুহা। দ্বীপটির উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৬ কিলোমিটার জুড়ে আছে ক্রিসমাস আইল্যান্ড জাতীয় উদ্যান। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু উদ্যানের মূল আকর্ষণ হলো লাল কাঁকড়া। তারা যেন নিজেদের রাজ্য গড়ে নিয়েছে এখানে। জাতীয় উদ্যানের ভিতর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে, তার মধ্যে বাস করে কোটি কোটি লাল কাঁকড়া। জানা গেছে, এই দ্বীপে বর্ষা আসে অক্টোবর-নভেম্বরে। তখন জঙ্গল ছেড়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় প্রায় ৫ কোটি লাল কাঁকড়া। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে কাঁকড়াগুলো প্রতিবছরই নির্দিষ্ট কিছু পথ দিয়ে সমুদ্রে যাওয়া-আসা করে। তাই কাঁকড়াদের সাগর অভিযানকালে ওই পথগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। সারা বছর প্রচুর পর্যটক এখানে ভিড় করেন। অস্ট্রেলিয়া সপ্তাহে দুটি এবং পার্শ¦বর্তী দেশ ফিজির ফিজি এয়ারওয়েজ সপ্তাহে একটি বিমান যাতায়াত করে ক্রিসমাস আইল্যান্ডে।

 

উসাগি-শিমা যে দ্বীপ শুধুই খরগোসের দখলে

‘উসাগি-শিমা’ জাপানি শব্দের বাংলা অর্থ ‘খরগোশের দ্বীপ’। স্থানীয়দের কাছে দ্বীপটি ‘উসাগি-শিমা’ বা ‘র‌্যাবিট আইল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। দ্বীপটিতে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় প্রায় ১ হাজার খরগোশ। প্রতিনিয়তই খরগোশের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে। ১৯২৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ‘উসাগি-শিমা’ ছিল জাপানের সেনাবাহিনীর অস্ত্র গুদাম। তবে বন্দুক, রাইফেল, ট্যাংক কিংবা গোলাবারুদের মতো অস্ত্র নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মাস্টার্ড গ্যাস নামে এক ধরনের গ্যাস ব্যবহৃত হতো এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জেনেভা প্রটোকলে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করা হতো এই দ্বীপটিতে। সে সময় এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল ছয় কিলোটন মাস্টার্ড গ্যাস। কথিত আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপানে বিষাক্ত গ্যাস পরীক্ষা করার জন্য খরগোশগুলোকে এই দ্বীপে আনা হয়েছিল। যুদ্ধে জাপান হেরে যাওয়ার পর সব কারখানা ও পরীক্ষাগার বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেঁচে থাকা খরগোশগুলোকে দ্বীপে অবমুক্ত করে যান কর্মীরা। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করেন যে, তৎকালীন বাসিন্দারা খরগোশ লালনপালন করতেন। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন, ১৯৭০-এর দশকে স্কুলের বাচ্চারা এই দ্বীপে বেড়াতে আসার সময় খরগোশ নিয়ে আসত। আজকের দিনের খরগোশ নাকি সে সময় নিয়ে আসা খরগোশেরই বংশধর। আর সেই খরগোশগুলো বেড়ে আজ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

স্নেক আইল্যান্ড যেখান থেকে কেউ জীবিত ফেরেন না

‘ইলহা দ্য কুয়েইমাডা গ্র্যান্ডে’ নামের দ্বীপে রয়েছে অসংখ্য সাপের বাস। ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাও পাওলো থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপে কেউ পা রাখার সাহস দেখান না। সেখানকার সরকারও ওই দ্বীপে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, প্রায় ১১ হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানে ব্রাজিলের মূল ভূভাগ থেকে এটি দ্বীপে পরিণত হয়। অনুমান করা হয়, ১০৬ একরের এই দ্বীপে প্রায় ২ থেকে ৫ হাজারের বেশি প্রজাতির সাপ বাস করে। প্রচলিত আছে, এই দ্বীপে ৪ লাখ ৩০ হাজার সাপ রয়েছে। আর এ কারণে ‘ইলহা দ্য কুয়েইমাডা গ্র্যান্ডে’ নামের দ্বীপটি অদ্ভুত, ভয়ংকর আর রহস্যময় দ্বীপের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের মধ্যে পিট ভাইপার অন্যতম। এই সাপ পৃথিবীর বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে একটি এবং এই দ্বীপই এই সাপটির প্রধান আবাসস্থল। পৃথিবীর অন্যান্য বিষাক্ত অসংখ্য সাপ এখানে আছে। লাইটহাউস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি পরিবার ওই দ্বীপে বেশ কয়েক বছর বসবাস করেছে। ১৯০৯-২০ সাল পর্যন্ত ছিলেন তারা। শোনা যায়, ঘরে ঢুকে পুরো পরিবারকে মেরে ফেলে সাপের দল! আর এ জন্যই দ্বীপটিকে সাপের দ্বীপ বা আইল্যান্ড অব স্নেক বলা হয়। বর্তমানে শুধু বিজ্ঞানী ও গবেষক দল গবেষণার কাজে সেখানে যেতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর