বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলিকন ভ্যালির যত কথা

আবদুল কাদের

সিলিকন ভ্যালির যত কথা

প্রযুক্তির আজব উপত্যকা সিলিকন ভ্যালি। এই শহর থেকে প্রযুক্তি বিকশিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বে। সিলিকন ভ্যালিতে আছে কয়েক হাজার প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এদের কোনো কোনোটি বদলে দিয়েছে পৃথিবীর চালচিত্র ও অর্থনীতি। তাই হয়তো বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে হেডকোয়ার্টার গড়ে তুলেছে।

 

প্রযুক্তিবিদদের স্বপ্নের শহর সিলিকন ভ্যালি

বিশ্ব প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর সিলিকন ভ্যালি। প্রতি বছরই নতুন নতুন স্টার্টআপ এই শহর থেকে যাত্রা করে। এদের কোনো কোনোটি পৃথিবীর চিত্র ও অর্থনীতির গতি বদলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো এবং সানহোসে শহরের মাঝামাঝি উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত একটি শহর সিলিকন ভ্যালি। ১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চ প্রযুক্তির এক বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানেই জন্মলাভ করেছে বিশ্বের বড় বড় টেক জায়েন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ব প্রযুক্তির এই শহরটির রয়েছে আদি ইতিহাস। অনেক বছর আগে থেকে স্ট্যানফোর্ড প্রযুক্তি আবিষ্কারের উৎস, উৎপাদন গবেষণায় অগ্রগতি এবং প্রযুক্তিগত কোম্পানি গঠনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৯৩৯ সালের দিকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষক ফ্রেডরিক টারম্যান ও সাবেক ছাত্র ডেভিড প্যাকার্ড এবং উইলিয়াম হেওলেট মিলে একটি ছোট্ট ইলেকট্রনিক কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন। তারাই প্রথম গবেষণার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রান্সিসকো এবং সানেহাসের দুই শহরের মাঝামাঝি স্থান পাওলো অলটো গ্যারেজে ছোট্ট একটি কোম্পানি গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে এই পাওলো অলটো গ্যারেজই সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিতি পায়। ১৯৪৭ সালে প্রফেসর উইলিয়াম ডব্লিউ হ্যানসিন নতুন মাইক্রোওয়েব ল্যাবরেটরি নির্মাণ করেন। পরে ১৯৫১ সালে ভ্যারিয়ান অ্যাসোসিয়েট উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য স্ট্যানফোর্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করেন। ১৯৭০ সালের দিকে প্রফেসর ভিন্টন কার্ফ (ইন্টারনেটের জনক) এক সহপাঠীকে নিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। সফলও হন। পরে ১৯৮০ সালে জন কিওফি ও তার ছাত্র টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডাটা ট্রান্সফারের উদ্ভাবন করেন। এখান থেকে আধুনিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির উৎপত্তি। নয়নাভিরাম পাহাড়ে ঘেরা এলাকাটি আজকের বিশ্বের হাইটেক প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু। কম্পিউটার প্রযুক্তি, সফটওয়্যার, মাইক্রোচিপস, ইন্টারনেট সেবা প্রযুক্তির সব বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে। যা এখন বিশ্ব-প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত।

 

প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বাজার

বৈশ্বিক প্রযুক্তির বড় বাজার সান ফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালি। যেখানে আছে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের অফিস, একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে ইয়াহু, গুগল ও অ্যাপলের হেড কোয়ার্টার। মাইক্রোচিপস, মাইক্রোসফট, ইন্টারনেট সেবা প্রযুক্তির সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে। বিখ্যাত সব স্টার্টআপের জš§স্থান সিলিকন ভ্যালি। আছে এনভিডিয়া, ইবে, অ্যামাজনের মতো বিখ্যাত ওয়েবসাইটের অফিস এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের অসংখ্য হাইটেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সিলিকন ভ্যালিকেই মনে করা হয় আধুনিক প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র। বছরে কোটি কোটি ডলারের প্রযুক্তি বাণিজ্য হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের এই হাইটেক সিটিতে। দেশটির গণমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা গেছে, সিলিকন ভ্যালির বার্ষিক জিডিপি ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৮ ডলার। যা মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র কাতারের বার্ষিক জিডিপির সমান।

 

কেন বিখ্যাত সিলিকন ভ্যালি

প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের হাত থাকলে বলা যেত, সিলিকন ভ্যালিতে তারা হাত ধরাধরি করে চলে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলটিকে অনায়াসে বিশ্বের প্রযুক্তি কেন্দ্র বলা যেতে পারে। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ইনটেল, এইচপি, ওরাকল, সিসকোসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা সব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সিলিকন ভ্যালিতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো বে-র দক্ষিণের অঞ্চলটিকে বলা হয় সিলিকন ভ্যালি। সান হোসে, সানিভেল, সান্তা ক্লারা, রেডউড সিটি, মাউন্টেন ভিউ, পালো অল্টো, মেনলো পার্ক, কুপার্টিনোসহ বেশ কিছু শহর সিলিকন ভ্যালির অন্তর্গত। বড় জোর পাঁচ দশক হলো অঞ্চলটি এমন নাম পেয়েছে। ১৯৫০-এর দশকের আশপাশে সিলিকন চিপনির্ভর উদ্ভাবক ও উৎপাদনকারীরা এলেন শহরগুলোতে। বলা যেতে পারে, ওই অঞ্চলে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছিল। কম্পিউটার তো বটেই, কম্পিউটার ঘরানার সব কিছুতে সিলিকন চিপ ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন, প্রিন্টার, গেম খেলার যন্ত্র থেকে শুরু করে ক্যালকুলেটর পর্যন্ত। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে- এমন অসংখ্য মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। আজকের দিনে সিলিকন ভ্যালি সমগ্র বিশ্বেই সবচেয়ে পরিচিত হাইটেক প্রযুক্তির আবাসস্থল। এখানে আছে প্রযুক্তি বাজারের লিডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর হেড-কোয়ার্টার। প্রযুক্তির এমন কোনো লিডিং প্রতিষ্ঠান নেই যারা সিলিকন ভ্যালি কেন্দ্রিক নয়। গুগল, মাইক্রোসফট থেকে শুরু করে সেই অ্যামাজন, ই-বের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর

বসতবাড়ি এখানে। বিখ্যাত সব স্টার্ট-আপের জন্ম এই ভ্যালিতে। অ্যাডবি, ওরাকলের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের স্টার্ট-আপ সিলিকন ভ্যালিতে। পৃথিবীর বিখ্যাত ডাটা সেন্টারগুলোর আবাসও এই সিলিকন ভ্যালিতেই। সামাজিকভাবে তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নয়নের জন্য বেশি ভূমিকা রয়েছে সিলিকন ভ্যালির। ফলে সমগ্র বিশ্বে সিলিকন ভ্যালি সৃষ্টি করেছে প্রযুক্তির জন্য আজব ক্ষেত্র। পৃথিবী বিখ্যাত ভেঞ্চারগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ আসে এখান থেকে। গবেষকদের মতে, সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠানগুলো না এলে বিশ্ব উদ্যোক্তারা অনেক পিছিয়ে থাকত। এক সময় এই ভ্যালিতে আফ্রিকান-আমেরিকান ও লাতিন আমেরিকানদের বসবাস ছিল। পরবর্তীতে প্রযুক্তির বাজার যত বড় হয়েছে, তত সিলিকন ভ্যালিতে বিদেশি মুখের সংখ্যা বেড়েছে। চীন, জাপান, ভারত, কিউবাসহ নানা দেশের মানুষ এখানে বসবাস করেন, কাজ করেন।

 

সিলিকন ভ্যালির প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো

গুগল (Google)

১৯৯৮ সালে দুই বন্ধু ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সার্চ জায়ান্ট গুগল। এটি আমেরিকার বহুজাতিক ইন্টারনেট এবং সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। যারা মূলত সার্চ জায়ান্টের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নানা গবেষণা করে। সিলিকন ভ্যালি বেজড সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এই গুগল। সিলিকন ভ্যালির সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এই গুগল।

 

মাইক্রোসফট (MicroSoft)

মাইক্রোসফট হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কম্পিউটার প্রযুক্তি করপোরেশন। তাদের সবচেয়ে পরিচিত সফটওয়্যার পণ্য হলো- কম্পিউটার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং মাইক্রোসফট অফিস। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটসের হাত ধরে।

 

অ্যাপল (Apple)

১৯৭৬ সালে স্টিভ জবসের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। যা ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর সান্তা ক্লারা কাউন্টির কুপারটিনোতে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যক্তিগত কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ২.৫৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

ই-বে (eBay)

ই-বে আমেরিকার জনপ্রিয় এক বহুজাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজও বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়।

 

ইয়াহু! (Yahoo!)

এটি আমেরিকার বৃহৎ ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। ইয়াহুর রয়েছে ওয়েবসাইট, সার্চইঞ্জিন, ডিকশোনারি, ইয়াহু মেইল, নিউজ, ইয়াহু এন্সার, ম্যাপ, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি।

অ্যালফাবেট (Alphabet)

অ্যালফাবেট; যাকে অনেক সময় ‘দ্য গুগলপ্লেক্স’ও বলা হয়। গুগলের সহযোগী সংস্থাটির সদর দফতর সিলিকন ভ্যালির সান্তা ক্লারা কাউন্টির মাউন্টেন ভিউতে অবস্থিত। গণমাধ্যম সূত্র মতে, ২০২২ সালে সংস্থাটির বার্ষিক আয় ২৮২ বিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

 

শেভরন (CVX) : শেভরন হলো বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এবং আয়ের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের পরে এর অবস্থান। সিলিকন ভ্যালির সান র‌্যামন, কন্ট্রা কোস্টা কাউন্টিকে এই বহুজাতিক পাওয়ার করপোরেশন সংস্থাটির বাড়ি বলা হয়। ২০২২ সালে সংস্থাটির বার্ষিক আয় হয়েছে ২৩৫ বিলিয়ন ডলার।

মেটা (META)

বিশ্বের বৃহত্তম সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে একটি মেটা। মার্ক জুকারবার্গের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর সিলিকন ভ্যালির সান মাতেও কাউন্টির মেনলো পার্কে অবস্থিত। কোম্পানির মার্কেট ভ্যালু ৫৫৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে সংস্থাটি ১১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। মেটার অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, থ্রেড এবং ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া।

 

এনভিডিয়া (Nvidia)

এনভিডিয়া করপোরেশন সান্তা ক্লারা, ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি। এরা সাধারণত গ্রাফিক্স প্রোসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) এবং মোবাইলের জন্য চিপ তৈরি করে থাকে। ১৯৯৩ সালে এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

ইনটেল করপোরেশন (Intel)

ইনটেল করপোরেশন আমেরিকান চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। ইনটেল কম্পিউটার প্রসেসর তৈরির পাশাপাশি মাদারবোর্ড, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কন্ট্রোলার, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট, ফ্ল্যাশ মেমোরি, গ্রাফিক্স কার্ড তৈরি করে।

 

আরও যত টেক শহর

নিউইয়র্ক, আমেরিকা

প্রযুক্তি বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি। এটি একটি বিশেষ ধরনের টেক হেভিওয়েট সিটি হিসেবে পরিচিত। শহর নিয়ন্ত্রকের অফিসের তথ্যানুসারে, নিউইয়র্ক সিটিতে ৭ হাজারের বেশি হাই-টেক কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় হাইটেক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ এমনকি ৫০০-এর বেশি ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় রয়েছে এই শহরে। এখানকার ২৫ শতাংশ উদ্যোক্তাই নারী। শহরটিতে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য রয়েছে উচ্চগতির ওয়াইফাই এবং ডাউনলোড স্পিড সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় হয়, তার একটা বড় অংশই চলে আসে এই নিউইয়র্ক শহর থেকে।

 

সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া

একে বলা হয় ভবিষ্যতের শহর; ঠিকই তাই। প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবন আর ডিজাইনের কারণে এটি নিউইয়র্কের প্রায় সমতুল্য। কারণ- সিউলের মেট্রো সিস্টেম এমনভাবে তৈরি যা নিউইয়র্কের পাতাল রেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। 2thinknow-এর মতে, সিউল বিশ্বের যে কোনো শহরের চেয়ে আধুনিক। হাইটেক প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর এটি। শহরটির অলিগলিতে, পার্কে, রাস্তায় রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার ওয়াইফাই। এখানকার ৯০ ভাগ কোরিয়ান দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহার করে। যার গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট। এ ছাড়া সিউলে রয়েছে এলজি, স্যামসাং, হুন্দাই-কিয়াসহ শতাধিক বিশ্বমানের কোম্পানির প্রধান কার্যালয়।

 

তাইপে, তাইওয়ান

টেক বিশ্বে মাইক্রোচিপের বিশাল একটি অংশ সরবরাহ করে উন্নত প্রযুক্তির শহর তাইপে। এটি তাইওয়ানের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। টেক গেজেট, দ্রুতগতির ট্রেন, মাইক্রোচিপ, হাইটেক প্রযুক্তিপণ্য, রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শহরটির জুড়ি নেই। 2thinknow-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, তাইপে শিল্প নকশার ক্ষেত্রে অনেক উন্নত। এটি বছরের পর বছর ধরে- সফটওয়্যারের পরিবর্তে হার্ডওয়্যার এবং মাইক্রোচিপ উদ্ভাবনে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। শহরটিকে আসুস, এমএসআই, গিগাবাইট এবং এসারসহ কয়েকটি বৃহত্তম পিসি কোম্পানির বাড়ি বলা হয়। শহরটিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের সংখ্যায়ও শীর্ষস্থান পেয়েছে।

 

সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর

বর্ষার মৌসুম হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুর প্রচুর সংখ্যক দক্ষ প্রোগ্রামার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের আবাসস্থল। শহরটি ক্রমাগত নিত্যনতুন অবকাঠামো এবং উচ্চ-প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে বিশ্বের বুকে অত্যন্ত উন্নত রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। এখানকার প্রতিটি ঘর, শপিংমল তো বটেই; এমনকি রাস্তার কোনায় কোনায়ও ইন্টারনেট সেবা ওয়াইফাই চালু রয়েছে। এ ছাড়া এই শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর চাপ কমিয়ে উন্নত প্রযুক্তির পাবলিক ট্রেন এবং হালকা রেলের ওপর বেশি নির্ভরতা বাড়িয়েছে। শহরটির এই প্রযুক্তিগত সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। যেমন- দ্য মারিয়ানা বে স্ট্যান্ডস এবং দ্য গার্ডেনস বাই দ্য বে তার মধ্যে অন্যতম।

 

টরন্টো, কানাডা

কানাডার টেকনোলজি ব্যবসার ৪০ শতাংশ সংঘটিত হয় এই রাজধানী শহরে। অসংখ্য স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবনী পরিকাঠামোতে ভরপুর, সিসকো ইনোভেশন সেন্টারের মতো জায়গা থেকে উদ্ভূত টরন্টো কানাডার ৩০ শতাংশ প্রযুক্তি (আইটি) ফার্মের আবাসস্থল। যার বেশির ভাগই ৫০ জনের কম কর্মী নিয়ে পরিচালিত হয়। ফলে তরুণ এই কোম্পানি আগামী দশকে বিশ্বের প্রভাব ফেলতে প্রস্তুত। সামগ্রিক-ভাবে, এই শহরের প্রযুক্তি সংস্থাগুলো থেকে বাৎসরিক রাজস্ব প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানেরও দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম টরন্টো। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, গুগলসহ বেশ কিছু নামিদামি সংস্থা আছে এখানে।

 

টোকিও, জাপান

প্রযুক্তি বিশ্বে জাপানের টোকিও সবচেয়ে এগিয়ে। দেশটির রাজধানী শহরে প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বৃহৎ শহরের তকমা ছাড়াও শহরটি অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থায় অনেক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টোকিওর পাতাল রেলব্যবস্থা প্রতি বছর ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও টেক জায়ান্টদের আবাসস্থল বলা যায় এই শহরকে। টেক গেজেট, দ্রুতগতির ট্রেন, নেক্সট জেনারেশন স্মার্টফোন, হাইটেক প্রযুক্তিপণ্য, রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শহরটির জুড়ি নেই। জনপ্রিয় প্যানাসনিক, নিক্কণ, সনিসহ অসংখ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জš§স্থান রাজধানী শহর টোকিও।

 

বেইজিং, চীন

চীনের রাজধানী শহরটি যদিও অন্যান্য উচ্চ-প্রযুক্তির শহরগুলোর মতো স্টার্টআপের ইতিহাস নেই, তবে বেইজিং তাদের শহরব্যাপী স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং মাথাপিছু বিশেষ সুবিধার জন্য বিখ্যাত। গত কয়েক বছর ধরে এটি প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের আয়ের সেরা উৎস হয়ে উঠেছে। এমন দৃশ্য এখন রাজধানী বেইজিংয়ের অলিগলিতে চোখে পড়ে। ২০১৬ সালের প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও অর্থনীতির তালিকায় ১৫তম স্থান অর্জন করতে পেরেছে। ঝংজুয়াংচুনও চীনের বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলার একটি প্রধান প্রযুক্তি কেন্দ্র। এই শহরের বেশির ভাগ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিস। এই শহরকে চীনের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়ে থাকে।

 

বেঙ্গালুরু, ভারত

ভারতীয় প্রযুক্তি শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বেঙ্গালুরু। এই টেক শহরকে ভারতের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেঙ্গালুরুতে গড়ে যত জায়গা লিজ দেওয়া হয়েছে, তার ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশই নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এখানে আছে ২৫০ সফটওয়্যার কোম্পানির সদর দফতর। মাইক্রোসফট করপোরেশন, হিউলেট প্যাকার্ড, গুগল, ফেসবুকসহ অনেক বিখ্যাত কোম্পানি রয়েছে এখানে। এর বাইরে ভারতীয় স্টার্টআপগুলো তো আছেই। এই শহরটি প্রযুক্তিবিদদের প্রধান আকর্ষণ। বিদেশি কোম্পানি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে অনেক আগ্রহী। কারণ এখানে খরচ এক-চতুর্থাংশ কম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর