রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনেতাদের বিচ্ছেদ

আবদুল কাদের

ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনেতাদের বিচ্ছেদ

১৮ বছরের দাম্পত্যে ইতি টেনে আলাদা হয়ে গেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তাঁর স্ত্রী সোফি। কানাডার নেতা বিশ্বনেতাদের একটি দীর্ঘ তালিকার মধ্যে সর্বশেষতম, যাঁর বিয়ে অফিসে থাকাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেছে। এখানে কিছু বিশ্বনেতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যাঁরা একই পথের পথিক 

জাস্টিন ট্রুডো, কানাডা

১৮ বছরের দাম্পত্য জীবন। তিন সন্তানের মা-বাবা তাঁরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত এই জুটি। তাঁরা আর কেউ নন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তাঁর স্ত্রী সোফি। জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রথম সারির নেতা; যিনি বিশ্বনেতাদের তালিকায় সর্বশেষতম। ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁর বিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেছে।

জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালে। তিনি কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী। আর সোফি গ্রেগোয়ের বেড়ে উঠেছেন মন্ট্রিয়লে। শৈশব থেকেই তাঁরা একে অন্যের পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ট্রুডোর এক ভাইয়ের বন্ধুর সহপাঠী। পরে ২০০৩ সালে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে আবার দুজনের দেখা হয়। তখন তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক। এর বেশ কয়েক মাস পর তাঁরা মেলামেশা শুরু করেন। ২০০৪ সালে এই জুটির বাগদান হয়। পরের বছর (২০০৫ সাল) ট্রুডো ও সোফি বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্তান জাভিয়ারের বয়স ১৫ বছর। মেয়ে এলা গ্রেসের বয়স ১৩ বছর। আর ছোট ছেলে হ্যাড্রিয়েনের বয়স ৯ বছর। ২০১৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হন ট্রুডো। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫১ বছর। ট্রুডোর সঙ্গে সোফির কেন বিচ্ছেদ হলো তার কারণ স্পষ্টভাবে এখনো কিছু জানা যায়নি। হয়তো কখনই জানা যাবে না। এই যুগলের বিচ্ছেদের খবরটি প্রথম প্রকাশ হয়েছে ইনস্টাগ্রামে। গেল সপ্তাহে জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ের নিজ নিজ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়। জাস্টিন ট্রুডো ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘সোফি ও আমি অনেক খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনার পর আলাদা          হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব সময়ের মতো আমরা ঘনিষ্ঠ পরিবার হিসেবে  থাকব। আমাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে।’ ট্রুডোর কার্যালয়ের বরাতে রয়টার্স তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,       এই দম্পতি বিচ্ছেদ-সংক্রান্ত আইনি     নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে।

জাস্টিন ট্রুডোর বাবাও ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। সে সুবাদে ট্রুডো বরাবরই পরিচিত মুখ। দেশের জনগণ যেমন তাঁর সাফল্যে আনন্দিত হয়েছেন, তেমনি আবার তাঁর খারাপ সময় তাঁদের মর্মাহত করেছে। তবে জাস্টিন ট্রুডো তাঁর জীবনের অনেক কথাই প্রকাশ করেছেন ‘কমন গ্রাউন্ড’ নামে তাঁর লেখা স্মৃতিকথায়। ২০১৪ সালে ‘কমন গ্রাউন্ড’ বইয়ে জাস্টিন ট্রুডো লিখেছিলেন, তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি কতটা যন্ত্রণা পেয়েছেন। বলেছিলেন, মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতেন।

রাষ্ট্রনায়কদের ব্যক্তিগত জীবনে বিচ্ছেদের মতো ঘটনা অতীতে অসংখ্যবার দেখা গেছে। ১৫৩৩ সালে ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম বান্ধবী মেরি বোলেনের বোন অ্যান বোলেনের প্রেমে পড়ে হেনরি অষ্টম আরাগন ক্যাথরিন থেকে আলাদা হয়েছিলেন। এরপর কালে কালে অসংখ্য শাসক মহাদেশ ও রাষ্ট্র শাসন করেছেন। যাঁদের মধ্যে অনেকে নানা কারণে সংসার জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন।

 

বরিস জনসন, ইংল্যান্ড

১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অ্যালেগ্রা ওয়েনকে বিয়ে করেন। সেবার বরিস-ওয়েনের সংসার টিকে ছিল ১০ বছর। ১৯৯৩ সালে এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সহপাঠী ম্যারিনা হুইলারের কাছে ফিরে যান বরিস। বিচ্ছেদের ঠিক ১২ দিন পর বরিস-ম্যারিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ম্যারিনার বাবা ব্রিটিশ হলেও মা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বরিস-ম্যারিনা দম্পতির সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। কিন্তু দাম্পত্য কলহের জেরে এই সংসারটিও বেশি দূর এগোয়নি। দ্য স্পেকটেটরের সম্পাদক থাকাকালীন কলামিস্ট পেট্রোনেলা ওয়াটের সঙ্গে বরিসের প্রণয়ের গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। ২০১৮ সালে বরিস কেবিনেট মন্ত্রী থাকাকালে ম্যারিনার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর দুই বছর পর ২০২০ সালে এ দম্পতির ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তত দিনে কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা প্রধানমন্ত্রী। পরে বরিস বান্ধবী ক্যারি সিমন্ডসের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ২০২১ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।

 

নিকোলাস সারকোজি, ফ্রান্স

১৯৮২ সালে ম্যারি-ডোমিনিক কুলিওলিকে বিয়ে করেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে আলাদা থাকার পর ১৯৯৬ সালে সারকোজি-কুলিওলি দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কুলিওলির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার অল্প সময় পরেই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সারকোজি। একই বছর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সেসেলিয়া সিগানার-আলবেনিজকে বিয়ে করেন। এরপর বলা হয়, ২০০৫ সালে সিগানার-আলবেনিজ অন্য একজনের জন্য সারকোজিকে ছেড়ে যান। অন্যদিকে এমন গুঞ্জনও ছিল, সারকোজি অ্যানি ফুলদা নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমে মেজেছেন। সে সংসারও টেকেনি। বিচ্ছেদ হয় ২০০৭ সালে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হওয়ার পাঁচ মাস পরে এই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তবে বিচ্ছেদের চার মাস না পেরোতেই সারকোজি সংগীতশিল্পী কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন। শোনা যায়, এর আগে সারকোজি সংগীতশিল্পী ব্রুনির সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছিলেন।

 

ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, ফ্রান্স

২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হন ফরাসি প্রেসিডেন্ট  ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তুমুল সমালোচিত হন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘ ২৯ বছর বিয়ে না করে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক সেগোলেন রয়্যালের সঙ্গে জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। ২০০৭ সালে ওলাঁদ-রয়্যাল ঘোষণা দেন, তাঁরা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। এরপর তিনি সাংবাদিক ভ্যালোরি ট্রিরওয়েলিয়ারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। গণমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসার পর তিনি রাজনৈতিক প্রতিবেদন করা বন্ধ করে দেন। ভ্যালোরির সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় ফরাসি অভিনেত্রী জুলি গায়েত-এর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার গুঞ্জন ওঠে। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ ঘোষণা দেন, ভ্যালোরির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে গেছে। তত দিনে ওলাঁদ-গায়েত সম্পর্ক মজবুত হয়। গত বছর তিনি গায়েতকে বিয়ে করেন। ফরাসি মিডিয়ার মতে, এত দিনে তিনি যোগ্য সঙ্গী পেয়েছেন।

 

ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়া

১৯৮৩ সালে সাবেক বিমানবালা ও ভাষাবিদ ল্যুদমিলা শ্রেবনেভাকে বিয়ে করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় পুতিন কাজ করতেন গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে। তাদের সংসারে মারিয়া ভোরন্তসোভা ও ক্যাটেরিনা তিখনোভা নামে দুটি কন্যা রয়েছে। ২০১৩ সালে দীর্ঘ ৩২ বছরের সংসারজীবনে ভাঙনের সুর ওঠে। সে সময় গণমাধ্যম সূত্র মতে, পুতিন-ল্যুদমিলার সময়টা ভালো যাচ্ছে না, তাঁরা আলাদা থাকছেন। এমনকি বান্ধবী জিমন্যাস্টিক এলিনা কাবায়েভারকে বিয়ে করবেন বলে গুঞ্জনও উঠেছিল। অন্যদিকে স্ত্রী ল্যুদমিলার অভিযোগ, পুতিন তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন না, আর তিনি রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসেবে সারাক্ষণ নজরবন্দি হয়ে থাকতেন। ল্যুদমিলা ফার্স্ট লেডির খেতাব বয়ে বেড়িয়েছেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এর পরের বছর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে নিউজউইক এক প্রতিবেদনে এলিনাকে ‘পরবর্তী মিসেস পুতিন’ বলে উল্লেখ করে। গুঞ্জন রয়েছে, এলিনা ও পুতিনের দুই ছেলে রয়েছে।

 

সানা মারিন, ফিনল্যান্ড

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন সানা মারিন। দেশটির ৪৬তম প্রধানমন্ত্রী।   বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালন করেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ফিনল্যান্ডের এই প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তবে তখনো তিনি অবিবাহিত। গণমাধ্যমে উঠে আসে, দীর্ঘদিনের সঙ্গী মার্কাস রাইকোন তাঁর কন্যা সন্তানের বাবা। পরবর্তীতে সানা মারিন- মার্কাস রাইকোন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে করোনাকালে বিশেষভাবে প্রশংসিত হলেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। ফলাফল জনপ্রিয়তায় ভাটা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সানা মারিনের দল নির্বাচনে হেরে যান। এর পরের মাসেই তিনি তাঁর বৈবাহিক জীবনের সঙ্গী রাইকোনেনের সঙ্গে নিজের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। জানা গেছে, ১৯ বছরের বেশি সময় ছিল তাঁদের এই দাম্পত্য জীবন।

 

সিলভিও বারলুসকোনি, ইতালি

বিবাহবিচ্ছেদের তালিকায় রয়েছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনিও। যিনি তিন মেয়াদে ছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও বারলুসকোনি ছিলেন একজন মিডিয়া মুঘল, ফুটবল ক্লাবের মালিক এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী। নারীদের নিয়ে তাঁর আগ্রহের কারণে প্রায়শই খবরের শিরোনাম হয়েছেন বারলুসকোনি। তাঁর ঘোষিত চারজন বান্ধবী ছিল। তিনি প্রথম বিয়ে করেন কার্লা ডাল ওগলিওকে। ১৯৯৪ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরুর আগেই সে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে বারলুসকোনি অভিনেত্রী ভেরোনিকা লারিওকে বিয়ে করেন। ক্ষমতার দুই দফায় (১৯৯৪-১৯৯৫ এবং ২০০১-২০০৬) তাঁদের এ সম্পর্ক বজায় ছিল। ২০০৮ সালে তৃতীয় মেয়াদ শুরু হলে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বারলুসকোনি পরের ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় অল্পবয়সী সুন্দরী বান্ধবী ফ্রান্সেসকা পাসকেলের সঙ্গে কাটিয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে মধ্য ডানপন্থি রাজনীতিবিদ মার্তা ফাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

 

হুগো শ্যাভেজ, ভেনেজুয়েলা

হুগো শ্যাভেজ ল্যাতিন অ্যামেরিকার তুমুল জনপ্রিয় ও বিতর্কিত একজন রাজনীতিবিদ। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল, টানা তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এই সমাজতান্ত্রিক নেতা। শ্যাভেজের অনেক বান্ধবী থাকলেও তিনি দুবার বিয়ে করেন। শ্যাভেজ প্রথমে ন্যান্সি কলমেনারেসকে বিয়ে করেন। সে সংসারে তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে। তাদের নাম রোজা ভার্জিনিয়া, মারিয়া গ্যাব্রিয়েলা এবং হুগো রাফায়েল। শ্যাভেজের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ভেনেজুয়েলার রেডিও সাংবাদিক মারিসাবেল রদ্রিগেজ। এই দম্পতির সংসারে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। যদিও তাঁদের দাম্পত্যজীবন বেশিদিন টেকেনি। ২০০২ সালে শ্যাভেজ-রদ্রিগেজ আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০০৪ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে হুগো শ্যাভেজ বলেছিলেন, তাঁদের বিচ্ছেদের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী অবিশ্বস্ততা। এমনকি শ্যাভেজ তাঁদের খারাপ আচরণকেও এ জন্য দায়ী করেন।

 

আন্দ্রেয়াস পাপানড্রেউ, গ্রিস

আন্দ্রেয়াস জর্জিউ পাপানড্রেউ গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগে গ্রিসে ব্যভিচার ছিল একটি জঘন্য অপরাধ। ক্ষমতায় আরোহণের প্রাথমিক পর্যায়ে সে আইন বাতিল করেন আদ্রেয়াস। গ্রিসের এই নেতা তিনটি বিয়ে করেন। ১৯৪১ সালে তিনি ক্রিস্টিনা রাসিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে সে সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয় ১৯৫১ সালে। ১৯৪৮ সালে আদ্রেয়াস মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী মার্গারেট চ্যান্টের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বলা হয়, এই সম্পর্ক তাঁর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের প্রধান কারণ। বিচ্ছেদের পর একই বছর আন্দ্রেয়াস মার্গারেট চ্যান্টকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন পুত্র এবং একটি কন্যা হয়। ১৯৮৯ সালে আন্দ্রেয়াস দীর্ঘ ৩৮ বছরের সংসারের ইতি টানেন। সেবার দিমিত্রা লিয়ানিকে বিয়ে করেন আন্দ্রেয়াস। দিমিত্র ছিল তার চেয়ে ৩০ বছরেরও কম বয়সী এয়ার স্টুয়ার্ডেস।

 

নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী প্রেসিডেন্ট। যাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রের জনক মানা হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা তিনটি বিয়ে করেছিলেন। ১৯৪৪ সালে প্রথম বিয়ে করেন ইভলিন মেজকে। এই দম্পতির ঘরে ছিল চার সন্তান। ১৯৫৮ সালে ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। একই বছরের জুনে নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন উইনি মাদিকিজেলাকে। এই ঘরে তাদের দুই মেয়ে রয়েছে। উইনির সঙ্গে ম্যান্ডেলার বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালে। সমাপ্তি ঘটে ৩৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের। ১৯৯৬ সালের একটি আদালতে ৭৭ বছর বয়সী ম্যান্ডেলা দাবি করেন, উইনির একটি সম্পর্ক ছিল। ১৯৬৩ সালে রাজনৈতিক অভিযোগে ম্যান্ডেলাকে কারাগারে প্রেরণের সময় ম্যান্ডেলা-উইনি মাত্র পাঁচ বছরের জন্য সংসার করছিলেন। তবে আশির দশকে ম্যান্ডেলা আরেকটি বিয়ে করেন। ১৯৮০ সালে তিনি গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন। গ্রাসা ছিল মোজাম্বিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাশেলের সাবেক স্ত্রী।

 

আলভারো কলম, গুয়াতেমালা

গুয়াতেমালার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট হন আলভারো কলম। যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে আলভারোর প্রথম স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া জারতা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তাদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। আলভারোর দ্বিতীয় বিয়ে হয় সুন্দরী কারেন স্টিলের সঙ্গে। সে বিয়েতে তাঁর ছেলে দিয়েগো উপস্থিত ছিল। কিন্তু সেই বিবাহ এক সময় বিচ্ছেদে রূপ নেয়। ২০০২ সালে আলভারো সান্দ্রা তরেসকে বিয়ে করেন। তরেস ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত চার সন্তানের জননী। ১৯৯৯ সালের এক নির্বাচনী প্রচারণায় তার সঙ্গে দেখা হয় আলভারোর। ২০১১ সালে তরেস ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালন করেন। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে আলভারো আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। আর গুয়াতেমালা দেখে নাটকীয় এক বিচ্ছেদ। কারণ হলো- সংবিধান প্রেসিডেন্টের আত্মীয়দের একই অফিসে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমোদন দেয় না। তাই একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আলভারো-তরেস দম্পতি বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন।

 

আলবার্তো ফুজিমোরি, পেরু

১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পেরুর প্রেসিডেন্ট ছিলেন আলবার্তো ফুজিমোরি। যিনি দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৪ সালে   আলবার্তো জাপানি-পেরুভিয়ান সুসানা হিগুচিকে বিয়ে করেন। তাঁদের চারটি সন্তান রয়েছে। যারা পরবর্তীতে বাবার মতোই রাজনীতিবিদ হন। ১৯৯৫ সালে আলবার্তো-হিগুচি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। একই সময় সাবেক এই প্রেসিডেন্ট  তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। গণমাধ্যমের সামনে আলবার্তো হিগুচিকে ‘আনুগত্য এবং ব্ল্যাকমেইলার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কথিত আছে, হিগুচি নাকি আলবার্তোকে প্রেসিডেন্ট ভবনে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। অভিযোগের পাশাপাশি আলবার্তো গণমাধ্যমকে আরও জানান, তিনি নতুন স্ত্রী খুঁজছেন- যে হবে বুদ্ধিমান এবং যার সুন্দর এক জোড়া পা আছে। ২০০৬ সালে আলবার্তো চিলির কারাগারে পুনরায় বিয়ে করেন। সেখানে তাঁকে দুর্নীতির অভিযোগে বন্দি করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর