রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পড়াশোনা শেষ না করেও নোবেল জয়ী

ওনারা সবাই ইতিহাস-গড়া মানুষ। সবাই মানবতার বিভিন্ন অঙ্গনে রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। প্রত্যেকেই নোবেল-জয়ী। তবে কেউই পড়াশোনার গন্ডি শেষ করতে পারেননি। আনতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কারণে স্কুল-কলেজেই পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেকেই দ্বিতীয়বার স্কুলের ব্যালকনিতে পা রাখলেও অর্থাভাবে শেষ করতে পারেননি পড়াশোনা। এদের অনেকে জীবিকার তাগিদে ছোট থেকেই শুরু করেছিলেন চাকরি জীবন। তার পরও থেমে যাননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অর্জন করেন সেরা পুরস্কার।

আবদুল কাদের

পড়াশোনা শেষ না করেও নোবেল জয়ী

আলবার্ট আইনস্টাইন

আলবার্ট আইনস্টাইন; জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ। অনেক বড় বিজ্ঞানী তিনি। তবে তিনি নাকি খারাপ শিক্ষার্থী ছিলেন! এমন গল্পও আজও সবার মুখে মুখে। এমনকি মহান এই বিজ্ঞানী ড্রপআউট ছাত্র ছিলেন। আইনস্টাইন যখন খুব ছোট তখন তাঁর বাবা-মা ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। কারণ তাঁর ছেলেবেলা ছিল একেবারেই সম্ভাবনাহীন। তাঁর শেখার অক্ষমতা ছিল। তিনি কথা বলতে শিখেছিলেন অনেক দেরিতে। পড়া আর লেখা শিখতে শিখতে সাতটি বছর কেটে যায়।  ক্লাসের কেউ তাঁর সঙ্গী ছিল না। অন্যান্য শিশুদের এড়িয়ে চলতেন আইনস্টাইন। ছেলেবেলায় তাঁর মেজাজ ছিল ক্ষুব্ধ। সবার শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন। তবে আইনস্টাইন ছিলেন সৃজনশীল আর সমস্যা সমাধানে ভীষণ কৌতূহলী একজন। আলাভোলা ছাত্রটির বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতি আগ্রহ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। মিউনিখ স্কুলের শিক্ষকদের আচরণ, শৃঙ্খলাবদ্ধতার কায়দা-কানুন মোটেও পছন্দ করতেন না তিনি। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন। মা-বাবা অনেক বুঝিয়ে জুরিখের সুইস পলিটেকনিক্যালে পড়ার ব্যাপারে রাজি করান তাঁকে। কিন্তু ১৮৯৫ সালে পলিটেকনিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারলেন না আইনস্টাইন। গণিতে পারদর্শী হলেও উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা এবং ভাষা বিভাগে ব্যর্থ হন তিনি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। সংগ্রাম চালিয়ে যান। পরের বছর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেন। ভর্তি হন জুরিখের সুইস পলিটেকনিক্যালে। পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর ভালোবাসার শুরু এখানেই। কিন্তু এখানেও অধ্যাপকদের পড়ানোর পদ্ধতি ভালো লাগেনি তাঁর। তিনি নিয়মিত ক্লাসেও যেতেন না। ১৮৯৬ থেকে ১৯০০- এই চার বছরের কোর্স পাস করে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন আইনস্টাইন। এরপর চাকরির পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতেন। সময়ের       সঙ্গে সঙ্গে আইনস্টাইনের আবিষ্কারগুলো বাইরের বিশ্বে প্রকাশ পেতে থাকে। তাঁর আবিষ্কৃত তত্ত্ব বিজ্ঞান জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে। ১৯২১ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 

উইলিয়াম ফকনার

উইলিয়াম ফকনার; আমেরিকান নিজস্ব ধারার লেখনীর একজন অগ্রপথিক। বিংশ শতাব্দীর একজন সেরা লেখক। ১৮৯৭ সালে মিসিসিপির নিউ আলবানিতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের এক বছর না পেরোতেই পরিবারসহ মিসিসিপির রিপ্লেতে চলে আসেন। বাবা ছিলেন শিকাগো রেলপথ কোম্পানির কোষাধ্যক্ষ। ফকনারের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে মিসিসিপির অক্সফোর্ডে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ফকনারের প্রচলিত শিক্ষা-জ্ঞানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। কোনো মতে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়বর্ষেই তিনি ঝরে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রপআউটের পর ফকনার স্কুলে চাকরি নেন এবং তাঁর লেখালেখিতে সময় ব্যয় করেন। তবে ১৯২৪ সালে ফকনার তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত হন। ভবঘুরে জীবন ছিল তাঁর। সামান্য অর্থ উপার্জনের জন্য নৌকা চালানো, বাড়িঘর রং করা- এসব কাজ করতেন। কিন্তু তখন থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি শুরু। তাও আবার কথাসাহিত্যিক শেরউড এন্ডারসনের হাত ধরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান এবং পরে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন উইলিয়াম ফকনার। বিভিন্নজনের বয়ানে অতীত থেকে গল্প তুলে আনার বিষয়ে মুনশিয়ানা দেখাতেন ফকনার। এটাই তাঁর লেখার শৈলী। অসংখ্য ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস ও চিত্রনাট্য; প্রায় সব শাখাতেই সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান উইলিয়াম ফকনার।

 

আলবার্ট কামু

আলবার্ট কামু; নানা গুণে গুণান্বিত একজন। দার্শনিকতা, লেখনী এবং সাংবাদিকতা; সব বিষয়ে পটু ছিলেন তিনি। বাবা ছিলেন লুসিয়ান গরিব কৃষক আর মা ছিলেন আয়া। কামুর বয়স এক বছর পূর্ণ হয়নি তখনো। প্রথম যুদ্ধের দামামা চলছিল গোটা বিশ্বে। তখন বাবাকে হত্যা করে শত্র“পক্ষ। জীবন বাঁচাতে ছোট্ট কামুকে নিয়ে মা, নানু এবং চাচা অন্যত্র চলে আসেন। আলজিয়ার্সের অলিগলিতে গরিবি হালতে কামু বড় হন। কামু স্বনামধন্য স্কুলে পড়াশোনা করে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এক সময় স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কামু আলজিয়ার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে দরিদ্রতা ও যক্ষ্মার কারণে ১৭ বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। কামু এখানেই থামেননি। এ অবস্থাতেই আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। এ জন্য অবশ্য তাঁকে বিভিন্ন অদ্ভুত চাকরির মাধ্যমে শিক্ষার ব্যয় বহন করতে হয়েছিল। জীবিকার তাগিদে প্রাইভেট টিউশনি, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি এবং আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের সহকারীর কাজও করেন কামু।  তাঁর বেশির ভাগ লেখনীতে উঠে এসেছে দারিদ্র্য এবং অসুস্থতার নানা প্রসঙ্গ। ঔপনিবেশিকতা বিরোধী সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় তিনি আলজেরিয়ার দারিদ্র্যের অবস্থা সম্পর্কেও বিস্তৃতভাবে লিখেছেন। থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল অন্য রকম ভালোবাসা, যা কিনা তাঁর বিভিন্ন লেখায় ফুটে ওঠে। ১৯৫৭ সালে আলবার্ট কামু সাহিত্যে নোবেল অর্জন করেন।

 

হার্বার্ট ব্রাউন

হার্বার্ট চার্লস ব্রাউন; আমেরিকান নোবেল জয়ী রসায়নবিদ। বিখ্যাত এই মানুষটি পড়াশোনার গন্ডি পেরোতে পারেননি। ১৯১২ সালের ২২ মে লন্ডনের হার্বার্ট ব্রোভারনিকে তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন স্টোর ম্যানেজার। বাবা এক সময় একটি হার্ডওয়্যারের দোকান খোলেন। এটি ছিল ব্রাউন পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। ব্রাউন দোকানের ওপরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন এবং হারবার্ট স্কুলে পড়তেন। বাবার আকস্মিক মৃত্যু হয়। ব্রাউন তখন শিকাগোর ক্রেন জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতেন। তখন ব্রাউন পড়াশোনা না করে পরিবারের হাল ধরেন। এক সময় তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁকে দিয়ে আর যাই হোক ব্যবসা হবে না। তাই ব্রাউন লেখাপড়ায় ফিরে রসায়নের মতো বিষয় বেছে নেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত তখন কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাউন ১৯৩৬ সালে বিএসসি এবং ১৯৩৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এক বছর পরই ব্রাউন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি নানা গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ওয়েন ইউনিভার্সিটির সহঅধ্যাপক এবং অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ব্রাউন পারডু ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের অধ্যাপকও হন। ১৯৭৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 

 হোসে সারামাগো

পর্তুগিজ লেখক ও কথাসাহিত্যিক হোসে সারামাগো। খ্যাতি, অর্জন আর সমালোচনায় ঠাসা তাঁর জীবন। ১৯২২ সালের ১৬ নভেম্বর পর্তুগালের একটি গ্রামীণ মজদুর পরিবারে জন্ম নেন সারামাগো। পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে এক সময় হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়েন। জীবিকার তাগিদে যদিও তিনি পরবর্তীতে টেকনিক্যাল স্কুলে অটো রিপেয়ারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। ছিলেন একজন অনুবাদকও। ডিয়ারিও ডি নটিসিয়াসের সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর পার করেন এই কথাসাহিত্যিক। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস বাল্টটাশার ও ব্লুমুন্ড প্রকাশ হওয়ার পর তিনি সবার নজর কাড়েন। ১৯৬৯ সালে সারামাগো কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করেন। যদিও অনেকেই তাঁকে উদার সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা মনে করতেন। সারামাগো নাছোড়বান্দা। তথাকথিত কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামিকে তিনি ছাড় দিতেন না। আর এ কারণেই ক্যাথলিক চার্চ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ডের (আইএমএফ) বেশ কিছু বিষয়ে তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেন হোসে সারামাগো। তবে পরবর্তীকালে সাহিত্যে সরকারি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার কারণে মনোক্ষুণ্ণ হন। আর এ কারণেই অভিমান করে স্প্যানিশ দ্বীপ লানজারোতে নির্বাসিত জীবন বেছে নিয়েছিলেন। সেখানেই নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ১৮ জুন মারা যান সারামাগো।   

 

জর্জ বার্নার্ড শ

জর্জ বার্নার্ড শ; বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার। জন্ম ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। কিন্তু বিখ্যাত এই মানুষটি স্কুলে পড়ালেখার প্রতি সম্পূর্ণ বিদ্বেষ পোষণ করেন যা তিনি তাঁর সারা জীবন বজায় রেখেছিলেন। তাঁর মতে, স্কুল হলো কারাগার ও শিক্ষক হলেন কারা পরিদর্শক। আশ্চর্যের বিষয় হলো- ডাবলিন ইংলিশ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুল থেকে বাদ পড়ায় লেখক কখনই তাঁর নিজের শিক্ষা শেষ করেননি। ১৮৬৫-১৮৭১ এ সময় পর্যন্ত চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেও কোনোটিতেই মন বসাতে পারেননি। ডাবলিনের সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুলই ছিল তাঁর শেষ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। ১৫ বছর বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে চাকরি নেন। আর তা করেই সংসার সামাল দিতেন বার্নার্ড শ। তবে ২০ বছর বয়সে সব ছেড়ে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহের কারণে ফেবিয়ান সোসাইটিতে যোগ দেন। ড্রপআউট হয়েও তাঁর লেখার শৈলী ছিল দারুণ। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, শ্রমজীবীদের অধিকার; সব বিষয়ে শ ছিলেন স্বচ্ছ মনের অধিকারী। সাহিত্য সমালোচনা ও সংগীতবিষয়ক লেখার পাশাপাশি নাটকেও তাঁর পরম উৎকর্ষের বিকাশ ঘটে। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল এবং ১৯৩৮ সালে অস্কার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর এই গুণী ব্যক্তিত্ব পরলোকগমন করেন।

 

হ্যারি মার্টিনসন

হ্যারি মার্টিনসন; সম্ভবত এই তালিকার সবচেয়ে বড় সংগ্রামীদের একজন। তিনি খুব অল্প বয়সে অনাথ হয়েছিলেন। ১৯০৪ সালে তাঁর জন্ম সুইডেনের জ্যামশগে। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান। এরপর গ্রামের অনাথ আশ্রমে (কম্যুলিনবার্ন) থেকেই বড় হন। আশ্রমটিই ছিল তাঁর ঘরবাড়ি আর এটিই ছিল স্কুল। যত দিন আশ্রমে ছিলেন ঠিক তত দিনই পড়াশোনার সুযোগ পান। তবে এখানে মার্টিনসনের মন বসেনি। তাই তো ১৬ বছর বয়সে পালিয়ে যান। পাড়ি জমান সাগরে। জাহাজে কাজ করতেন। তাঁর কিশোর বয়সের বেশির ভাগ সময় কেটেছে জাহাজে এবং বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে। আর এভাবেই তাঁর কেটে যায় ছয়টি বছর। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে কাজ করে মার্টিনসন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করা মানুষটি কোথাও স্থির থাকতেন না। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা তাঁকে সুইডেনে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। মার্টিনসন যে কোনো কাজেই তাঁর জাহাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেন। খুব ছোট থেকেই লেখালেখির অভিজ্ঞতা মার্টিনসনের। জাহাজে কাজের অবসরে লেখালেখি করতেন। ১৯২৯ সালে মার্টিনসনের লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাঁর সাহিত্যের শৈলীতে বারবারই উঠে আসত প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য। মূলত প্রকৃতির ভাবনাটা তাঁর লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এসেছিল। মার্টিনসন ১৯৭৪ সালে আইভিন্ড জনসনের সঙ্গে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 

জোসেফ ব্রডস্কি

জোসেফ ব্রডস্কি এমন একটি নাম যা বিশ্বের প্রতিটি কবিই জানেন। তিনি একজন আমেরিকান সাহিত্যিক। জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে প্রাচীন রাব্বিনিক স্কর পরিবারে। লেনিনগ্রাদেই বেড়ে ওঠেন। স্কুলে তাঁকে সবাই ‘বোকা ছেলে’ বলেই ডাকত। ব্রডস্কি মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বিভিন্ন চাকরি নেন। এর কারণ ছিল- তিনি স্কুল অব সাবমেরিনারসে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। আর স্কুলে পা রাখা হয়নি। দরিদ্রতা দূর করতে মিলে মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। এরপর চিকিৎসক হওয়ার সংকল্প নিয়ে ক্যাসিটি কারাগারের মর্গে লাশ কাটা ও সেলাইয়ের কাজ করেন। ফলে বিভিন্ন জাহাজের হাসপাতালে কাজের সুযোগ পান। পাশাপাশি পোল্যান্ডের পোলিশ এবং ইংরেজি ভাষা শিখতে শুরু করেন। এর পরই কবিতা লেখা শুরু। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। কিন্তু তখনো সাহিত্যে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। রাশিয়ান কবি আন্না আখততোর  সঙ্গে মিশে এক সময় সাহিত্যিক  হয়ে ওঠেন। তবে  মুক্ত

চিন্তার অপরাধে ১৯৭২ সালে নিজ জন্মভূমি রাশিয়া থেকে নির্বাসিত হন। নির্বাসিত ব্রডস্কি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখানে তিনি ‘নয়টি খন্ড’ বিখ্যাত কবিতাটি রচনা করেন। এরপর তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মাউন্ট হলিওক কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেন। ১৯৮৭ সালে জোসেফ ব্রডস্কি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

 

লিওন জুহক্স

শান্তিতে নোবেল অর্জন করা লিওন জুহক্সের জীবন কাটে অশান্তিতে। জন্ম ১৮৭৯ সালের  ১ জুলাই।  বাবা-মা ছিলেন  অত্যন্ত  দরিদ্র। ১৯৫১ সালে

শান্তিতে নোবেল পাওয়া ফ্রান্সের নাগরিক। কিন্তু ইতিহাস তাঁকে ড্রপআউট নোবেল-জয়ী হিসেবেই চেনে। প্যারিসের প্যান্টিনে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি জুহক্স। ১৬ বছর বয়সে ঝরে পড়তে হয়েছিল স্কুল থেকে। কারণ সে সময়ের দীর্ঘ ধর্মঘটের কারণে তাঁর বাবার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে হাইস্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বাবার একার আয়ে কোনো মতে চলত তাদের সংসার। পরবর্তীতে বাবা দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর তাঁকে একটি ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে তাঁর বাবার চাকরি নিতে হয়েছিল। এখানেই থেমে যায় জুহক্সের শিক্ষাজীবন। এরপর সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করেন। তবে সেখান থেকেও তাঁকে আবার ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে ফিরে আসতে হয়েছিল। ফ্যাক্টরিতে এসে জুহক্স সাদা ফসফরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। এই কেমিক্যালের কারণে তাঁর বাবা চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যান। লিওন জুহক্স ছিলেন শান্তির কঠোর প্রচারক। ১৯৪৯ সালে ইউরোপীয় শ্রমিকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন জুহক্স। এর আগে ১৯৪১ সালের দিকে একই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ২৫ মাস জেল খাটার পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৫১ সালে শ্রমিক আন্দোলনে শান্তি বজায় রেখে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

 

আর্থার হেন্ডারসন

আর্থার হেন্ডারসন; জন্ম ১৮৬৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয়। পোশাকশিল্পের কর্মী দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম নেন হেন্ডারসন।  বাবার মৃত্যুর পর আর্থারকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। তবে মায়ের প্রচেষ্টায় তিন বছর স্কুলে পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় হেন্ডারসনের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। আবারও তাঁকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘রবার্ট স্টিফেনসন অ্যান্ড সন্স’ নামের গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে কাজ শুরু করেন। পাঁচ বছর থাকার পর ১৭ বছর বয়সে এক বছরের জন্য সাউদাম্পটনে চলে যান। জীবন বাস্তবতায় হেন্ডারসন হার মানেননি। ওয়ার্কশপ ছিল তাঁর ক্লাসরুম আর দৈনিক পত্রিকা ছিল বই। পত্রিকা থেকেই তিনি বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করতেন। ১৮৭৯ সালে হেন্ডারসন একজন বিজ্ঞ ধারণা প্রবর্তক হয়ে ওঠেন। স্থানীয়রা তাঁকে বিজ্ঞ ধর্মপ্রচারক হিসেবে জানত। ১৮৮৪ সালে চাকরি ছেড়ে ধর্মযাজক হন। তিনি ১৮ বছর বয়সে আয়রন ফাউন্ডারস ইউনিয়নে যোগদান করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে নিউক্যাসল লজের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তিনি ১৮৯২ সালে ব্রিটেনের রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯০৬ সালে লেবারেল পার্টি নামের দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর ওই দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে স্নেহের সঙ্গে ‘আঙ্কেল আর্থার’ বলে ডাকতেন। ১৯২৯ সালে পররাষ্ট্র সচিব হন। ১৯৩৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

 

সর্বশেষ খবর