সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেরা সুন্দরীদের মৃত্যুরহস্য

আবদুল কাদের

সেরা সুন্দরীদের মৃত্যুরহস্য

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অনেক সুন্দরীর দেখা মিলেছে, যারা বিশ্বদরবারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ পর্যন্ত অনেক সুন্দরী সেরাদের সেরা হয়েছেন, তারা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আকর্ষণীয় এবং আবেদনময়ী। সুন্দর চেহারার অধিকারী এ রানিরা সবসময়ই সমাজের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকেন।  তবে অনেক সুন্দরীই আছেন সমাজে সম্মানের সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে, প্রতারণার শিকার হয়ে কিংবা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনকে মৃত্যুকূপে ফেলেছেন। এমনই কিছু অপমৃত্যুর শিকার বিশ্বসুন্দরীদের নিয়ে এই আয়োজন-

 

অ্যাগনিয়েস্কো কোলতারস্কা

[মিস পোল্যান্ড]

নব্বই দশকের খ্যাতনামা মডেল অ্যাগনিয়েস্কো কোলতারস্কা। তৎকালীন সেরা মডেল আর মিস পোল্যান্ডের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন কোলতারস্কা। ১৯৯১ সালে ‘মিস ইউনিভার্স’ হয়েছিলেন এই সুপার মডেল। এক সময় গোটা বিশ্বে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিপত্তি বাধে জের্জি লিসিয়েউস্কি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের পর। লিসিয়েউস্কি  জনপ্রিয় এই মডেলকে ভীষণ উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু তৎকালীন এই সুপার মডেলকে উত্ত্যক্ত করা থামাননি জের্জি লিসিয়েউস্কি। তার ভাষ্যমতে, ‘কোলতারস্কার হাসি তাকে পাগল করে তোলে।’ পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভালোই ছিলেন এই ‘মিস ইউনিভার্স’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন। ‘মিস ইউনিভার্স’ খেতাব অর্জনের পর বিয়েও করেছিলেন কোলতারস্কা। কিন্তু এরপর বাড়তে থাকে উত্ত্যক্তকারীর যন্ত্রণা। লিসিয়েউস্কি তদন্ত পুলিশকে জানান, ‘সে বিয়ে করার পর থেকেই তার জীবন ধ্বংস হতে থাকে।’ পোল্যান্ডের এই মডেল ও অভিনেত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। অন্যদিকে উত্ত্যক্তকারী জের্জি ছিলেন বখাটে, অসাম্প্রদায়িক, ফুর্তিবাজ, চতুর প্রকৃতির লোক। বিয়ের পর যেখানে-সেখানে ডাকাডাকি, এমনকি বাসায়ও চলে আসত এই উত্ত্যক্তকারী। তার স্বামীও ধীরে ধীরে বিষয়টি উপলব্ধি করেন। এক সময় পুলিশের দ্বারস্থ হন। ১৯৯৬ সালের ২৭ আগস্ট রাতে যখন কোলতারস্কা পরিবার নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন, তখন জের্জি কোলতারস্কা ও তার স্বামীর পথ রোধ করে এবং জের্জি তার স্বামীকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে জের্জি তাকেও চারবার ছুরিকাঘাত করে। আড়াই বছর বয়সী কন্যার সামনে হত্যার শিকার হন এই অভিনেত্রী।

 

মণিকা স্পেয়ার

[মিস ভেনেজুয়েলা]

মণিকা স্পেয়ার; ২৯ বছর বয়সী অপেরা অভিনেত্রী। ২০০৫ সালের ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতায় তিনি ‘বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে সুন্দরী নারী’ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ২০০৪ সালে মাতৃভূমি ভেনেজুয়েলায় সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরা হয়েছিলেন মণিকা। সে সময় সুন্দরী প্রতিযোগিতার সব আয়োজনে সবাইকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন নামের সফলতার মুকুটটি তিনিই দখল করেছিলেন। তৎকালীন এই ‘মিস ভেনেজুয়েলা’ থমাস বেরিকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও সে সংসারটি ঠিকঠাক করা হয়নি এই অভিনেত্রীর। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয়েছিল। থমাস-মণিকা দম্পতির পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল। ২০১৪ সালে জানুয়ারির ৬ তারিখ নববর্ষের রাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন এই দম্পতি। সঙ্গে ছিল তাদের মেয়ে। পথিমধ্যে রাত সাড়ে ১০টায় তারা ডাকাতের হামলার মুখে পড়েন। ডাকাত দল তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে, এতে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। ডাকাতদের হামলায় মণিকা ও তার প্রাক্তন স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হামলায় তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের পায়ে গুলি লাগলেও সে বেঁচে যায়। তৎকালীন তদন্তকারী পুলিশ জানায়, যেখানে তারা নিহত হন সেই হাইওয়েতে নানা অপকর্ম ঘটে। অন্ধকার রাতে সে রাস্তাটি পার হওয়ার সময় একদল অস্ত্রধারী ডাকাত দলের মুখোমুখি হন এই সোপ অপেরা অভিনেত্রী ও তার পরিবার। ডাকাত দল মণিকা ও তার প্রাক্তন স্বামীকে বাধা দেয়। তাদের সবাইকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই মণিকা ও তার প্রাক্তন স্বামী একসঙ্গে নিহত হন। পুলিশ হামলাকারী ডাকাত দলের তিনজনকে গ্রেফতার করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এই হত্যাকান্ডকে ‘কন্ট্রাক্ট মার্ডার’ বা ‘চুক্তি হত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

 

আলেকজেন্দ্রা পার্তোভা

[মিস রাশিয়া]

১৯ বছর বয়সী রাশিয়ান মডেল আলেকজেন্দ্রা পার্তোভা। ১৯৯৭ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ আয়োজনে সেরা সুন্দরীর খেতাবও পান এই রুশ সুন্দরী। এর আগে অবশ্য তিনি অর্জন করেছিলেন ‘মিস রাশিয়া’ খেতাব। তৎকালীন গণমাধ্যম সূত্রমতে, রাশিয়ান এই সুন্দরী মাফিয়াদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। আর এমন বেপরোয়া চলাফেরাই রাশিয়ার এই সুন্দরীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ২০০০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পার্তোভা তার ২০তম জন্মদিনের দুই দিন আগে চেবোকসারিতে তার প্রেমিকের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তদন্তকারী পুলিশ জানায়, ১৯ বছর বয়সী পার্তোভা দুজন পুরুষের সঙ্গে চেবোকসারি একটি অ্যাপার্টমেন্টের বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন। এরপর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। জানা গেছে, পার্তোভা তার প্রেমিক মাফিয়া ডন কনস্ট্যান্টিন চুভিলিনের ওপর হত্যা প্রচেষ্টার সময় নিহত হয়েছিলেন। পার্তোভাকে প্রেমিকের অ্যাপার্টমেন্টের প্রবেশপথে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এই সুন্দরীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। বিশ্বসুন্দরীর খেতাব পাওয়া সত্ত্বেও পার্তোভা নিজেকে সামলাতে না পেরে নিজের দুর্ভোগ নিজেই ডেকে আনেন।

 

মিশেলিয়া মেকএরিয়াভে

[মিস আয়ারল্যান্ড]

আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ট্রালির সুন্দরী মিশেলিয়া মেকএরিয়াভে। ২৭ বছর বয়সী এই নারী আইরিশ ফুটবল ক্লাব টেরন গেলিকের ম্যানেজার মিকি হার্টের মেয়ে। আইরিশ এই সুন্দরী ছিলেন একজন শিক্ষক। স্থানীয়দের কাছে মেকএরিয়াভে ছিলেন একজন ক্যাথলিক এবং ধর্মভিরু ব্যক্তিত্ব। মেকএরিয়াভে স্থানীয় কিশোর ও তরুণদের অ্যালকোহলে নিরুৎসাহের জন্য ‘পায়োনিয়ার ক্লাব’ পরিচালনা করতেন। আর সৌন্দর্যের জন্য অর্জন করেন ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ খেতাবও। তবে রূপে, সৌন্দর্যে এই নারী যে কোনো পুরুষের মন কেড়ে নিতেন। তবে এই নারী ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ হওয়ার পর তরুণ ফুটবল তারকা জন মেকএরিয়াভের প্রেমে পড়েন। বাবা মিকি হার্টের মতে, ‘এটা ছিল মিশেলিয়ার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত’। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিলেশিয়া-মেকএরিয়াভের বিয়ে হয়। বিয়ে পরবর্তীতে হানিমুনে এই নব দম্পতি মরিশাসের একটি লাক্সারি হোটেলে উঠেন। সেখানেই মিস আয়ারল্যান্ড হত্যার শিকার হন। তদন্ত পুলিশের তথ্যমতে, মিস আয়ারল্যান্ড খ্যাত মিশেলিয়া ও তার স্বামী মরিশাসের ‘গ্র্যান্ড গাউবে’ হোটেলে তাদের মধ্যাহ্নভোজ শেষ করেন এবং রুমে চলে যান। হোটেলের ম্যানেজার সে সময় জানিয়েছিলেন, ওপরে যাওয়ার পর তারা আর নিচে নামেননি। কিন্তু সেখানে লাক্সারি হোটেলের বাথটাবে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশি তদন্তে আসে, সেখানে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। দুজন হোটেল বয়কে এ হত্যার জন্য গ্রেফতার করা হয়।  এদের মধ্যে একজন তাদের অপরাধ স্বীকার করে কিন্তু তার আইনজীবী তাকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিয়ে বের করে আনেন। ২০১১ সালের এ হত্যার কোনো বিচার পাওয়া যায়নি। এ মামলায় তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়।

 

মারিয়া হোসে

[মিস হন্ডুরাস]

হন্ডুরাসের সুন্দরী মারিয়া হোসে আলভারাডো। রূপে, গুণে মারিয়া ছিলেন হন্ডুরাসের অন্য সব মডেল ও সুন্দরীর আদর্শ। কিন্তু ‘মিস ইউনিভার্স’ হওয়ার আগে হত্যাকান্ডের শিকার হন এই সুন্দরী। ২০১৪ সালের ‘মিস হন্ডুরাস’ খেতাব পান। কথা ছিল, মিস ইউনিভার্সের আয়োজনে অংশ নেবেন। কিন্তু তার আগে একই বছরের ১৩ নভেম্বর নিখোঁজ হন এই সুন্দরী। তবে নিখোঁজের ছয় দিন পর খুলতে শুরু করে রহস্য জট। তদন্তে নেমে পুলিশ ‘মিস হন্ডুরাস’ মারিয়া এবং তার বোন সোফিয়াকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। সান্তা বারবারায় নদীর তীরবর্তী স্পার কাছে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার পরবর্তী তদন্তে তাদের হত্যা করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়। ন্যাশনাল পুলিশ ডিরেক্টর জেনারেল র‌্যামন সাবিলন বলেছিলেন, হত্যার জন্য সন্দেহ করা হয় সোফিয়ার প্রেমিক প্লুটারকো অ্যান্তোনিও রুইজকে। কারণ, দুই বোন রুইজের জন্মদিন উদযাপন করতে তার বাসায় গিয়েছিলেন। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন। তদন্তকারী পুলিশ জানায়, মারিয়া ও সোফিয়াকে খুঁজে পেতে ছয় দিন লেগেছিল। তদন্তকারী দলের মতে, রুইজ তার ২৩ বছর বয়সী প্রেমিকা সোফিয়া হোসে আলভারাডোকে পার্টিতে অন্য কারও সঙ্গে নাচতে দেখে। এরপর সোফিয়ার সঙ্গে ঝগড়া এবং বাগবিতন্ডার পর রুইজ সোফিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর সোফিয়ার ১৯ বছর বয়সী বোন মারিয়ার দিকে অস্ত্রটি তাক করে মারিয়াকে হত্য করে। এরপর রুইজ তার সহযোগীদের সাহায্যে নদীর তীরে তাদের লাশ দাফন করে। তদন্তকারী পুলিশ রুইজের স্বীকারোক্তি মতে, সান্তা বারবারায় একটি পাহাড়ি এলাকায় নদীর তীর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। বোনের বেপরোয়া প্রেমিকের বলির শিকার হন মিস হন্ডুরাস খ্যাত মারিয়া।

সর্বশেষ খবর