শিরোনাম
সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কাশ্মীর দর্শন

ভূস্বর্গের কাছাকাছি

আবদুস সামাদ মিঞা

ভূস্বর্গের কাছাকাছি

ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর ভ্রমণের লালিত স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। কাশ্মীর ভ্রমণের উত্তম সময় বছরের এপ্রিল ও অক্টোবর মাস। সে বিবেচনায় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহকে আমাদের কাশ্মীর ভ্রমণের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ভ্রমণ আগ্রহী সদস্য সংখ্যা আটজন-একটি উত্তম প্যাকেজ। দেশীয় একটি ট্যুর অপারেটর কোম্পানির সহায়তায় স্বল্পমূল্যে শ্রীনগর থেকে কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ, দুই বেলা খাবারসহ হোটেল রিসোর্টের ব্যবস্থা করা হলো। স্বউদ্যোগে যথাসম্ভব কম পথখরচে শ্রীনগরে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করা হলো।

এক সুন্দর সকালে বহুল প্রত্যাশিত ভূস্বর্গ ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দু শ্রীনগরে পৌঁছে গেলাম। কলকাতা এবং দিল্লির প্রায় ৪০ ডিগ্রি খরতাপে পোড় খাওয়ার পর শেষ এপ্রিলে শ্রীনগরের সুন্দর আবহাওয়ায় মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। রৌদ্রোজ্জ্বল চমৎকার সকাল হালকা শীতের আমেজে ভ্রমণের ক্লান্তির বদলে মনটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল সামনে আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার অপেক্ষায়।

জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর। এ শ্রীনগরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে কাশ্মীরের পর্যটন বাণিজ্য। আর শ্রীনগর পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হলো ডাল লেক, যার দৈর্ঘ্য ৩৬ কিলোমিটার, প্রস্থে দুই-তিন কিলোমিটার। নভেম্বর-ডিসেম্বর ডাল লেকের পানি শক্ত বরফে রূপ নেয়। তখন ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের পর্যটকরা আসেন বরফে খেলাধুলা করতে। পর্যটকদের জন্য ডাল লেকে ভাসমান বোটহাউস আরেক বিস্ময়। একেবারে কাশ্মীরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে নির্মিত শাহী কারুকার্য খচিত কাঠের ডেকোরেশনসহ এক একটি বোটে সুবিশাল চার-পাঁচটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। আছে সংযুক্ত বাথরুম সঙ্গে সুবিন্যস্ত ও সুসজ্জিত ড্রয়িংরুম, ওয়াল কেবিনেট দেয়ালে সুদৃশ্য কাঠের কারুকাজ। এই বোটহাউসের প্রতিকক্ষই এক একটি হানিমুন রুম। বোটহাউসের সম্মুখে এবং ছাদে কারুকার্যখচিত আসন রয়েছে বসার জন্য। কাশ্মীর পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ বোটহাউসে রাতযাপন।

লেকের অপরদিকে সবুজে ঘেরা হিমালয়ের আকাশছোঁয়া শৃঙ্গ স্থানটিকে মোহনীয় রূপ দিয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে শ্রীনগরকে প্রাচ্যের ভেনিস বলা হয়। শিকাড়ায় করে ডাল লেকে ভেসে বেড়ানো এবং চতুর পার্শ্বের নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন ও লেকের মধ্যে বসে সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষকরণ ভ্রমণ রসিকদের কাছে ভালো লাগা আরেকটি অনুসঙ্গ। শিকাড়া হচ্ছে এক মাল্লা পরিচালিত চার আসনবিশিষ্ট বাহারি সাজে সজ্জিত এক ধরনের নৌযান। শ্রীনগরের ট্যুর অপারেটরের প্রতিনিধি ১২ আসন বিশিষ্ট একটি লাক্সারিয়াস জিপ নিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানান। শ্রীনগরে প্রথম দুই রাত আমাদের নিউজিল্যান্ড নামক বোটহাউসে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড্রাইভার ইশফাক ভাই আমাদের ডাল লেকের ৯ নম্বর ঘাটে পৌঁছে দিলেন। সেখানে অবস্থানরত শিকাড়ায় চড়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমরা নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে যাই। বোটহাউসের ড্রয়িংরুমে ঢুকে এর বাহারি সাজসজ্জা দেখে কিছু বোঝার আগেই এনসি এবং সাঈদা খানম ভাবি মনের আনন্দে ডুয়েল নৃত্য শুরু করে দেন। স্বপ্না বৌদি তাৎক্ষণিকভাবে এ নৃত্যের ভিডিও ধারণ করেন। বোটহাউসের মালিক গোলাম ভাই আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংকসে আপ্যায়িত করলেন। এরপর আমরা পুনরায় শিকাড়ায় চড়ে ৯ নম্বর ঘাটে গাড়িতে আরোহণ করি-সূর্য ডোবার আগে শ্রীনগরের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করার উদ্দেশে।

দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে প্রথম শুরু হলো শালিমার বাগ দিয়ে। বিখ্যাত দৃষ্টিনন্দন এ উদ্যানটি সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর প্রিয় মহিষী নূরজাহানের জন্য ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেন। উদ্যানের চারদিকে চীনারের সারি তিনদিকে প্রশান্ত সবুজ পর্বতশৃঙ্গ সুবিন্যস্ত ফুলের বাগান ও বৃক্ষরাজি এবং কৃত্রিম ঝরনা জায়গাটিকে মোহনীয় রূপ দিয়েছে। এ উদ্যানটি সিনেমায় দেখা লাহোরের শালিমার বাগের মতো দেখতে। শালিমার বাগে রাজা-রানির পোশাক পরে পেশাদার ফটোগ্রাফার দ্বারা এনসি এবং স্বপ্না বৌদি স্পট ছবি তুললে-দুজনকে প্রকৃতই রাজা-রানির মতো দেখাচ্ছিল। এর পরের দর্শনীয় স্থান টিউলিপ গার্ডেন। শ্রীনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ এই গার্ডেন। বছরে একবার সেখানে টিউলিপ ফুটে। আমাদের সৌভাগ্য টিউলিপের মৌসুমে আমরা শ্রীনগর ভ্রমণ করছি। নানা রকমের টিউলিপের এই বাগান দর্শনীর বিনিময় শত শত পর্যটক প্রত্যক্ষ করছেন। টিউলিপ বাগানে কিছুক্ষণ অবস্থান মনে অপার আনন্দ ও প্রশান্তি এনে দেয়।

এর পরের স্পট চশমাশাহী উদ্যান। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এ উদ্যান সম্রাট শাজাহানের আমলে গড়ে ওঠে। ভিতরে সুদৃশ্য ঝরনাসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ ও বৃক্ষরাজির সারির এক মনোরম পরিবেশ। স্থানীয়দের বিশ্বাস চশমাশাহীর ঝরনার পানি মানবদেহের বিভিন্ন রোগ বিমার থেকে মুক্তির জন্য উপকারী। চীনার ঝাউ এবং নানা রকম ফলবৃক্ষে ভর্তি এ বাগানে ঘুরতে ভালোই লাগে। চশমাশাহীর পাশে পাহাড় কেটে করা হয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত উদ্যান নিশাথবাগ মুঘল আমলের ঘরবাড়ি জাফরির সুন্দর কারুকাজ জায়গাটিকে করেছে মোহনীয় ও আকর্ষণীয়। সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে পিছে ডাল লেকের শিকাড়ায় ভ্রমণ এবং সূর্যাস্ত দর্শনে ছেদ পড়ে তাই ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে ৯ নম্বর ঘাটে শিকাড়ায় আরোহণ। ডাল লেকে শিকাড়ায় ভেসে বেড়ানো কাশ্মীর পর্যটনের রোমাঞ্চকর অধ্যায়। সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে সাজানো এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য এর চেয়ে আকর্ষণীয় স্পট দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই। ডাল লেকে বেড়ানোর সময় ভাসমান বাজার থেকে স্বপ্না বৌদি ও মাহমুদা ভাবি প্রচুর কেনাকাটা করলেন। আমাদের অনুসরণ করা ভাসমান এক রেস্টুরেন্ট থেকে কাশ্মীরি এক ধরনের মিক্সড ফলের সালাত খেয়ে সত্যিকারভাবেই তৃপ্ত হলাম। সন্ধ্যার পরে সামান্য বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বইতে শুরু করলে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে বোটহাউসে প্রত্যাবর্তন।

সূচি মোতাবেক পরদিন সকালে প্রাতরাশ শেষ করে আমাদের সনমার্গের উদ্দেশে যাত্রা। সনমার্গ শ্রীনগর থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরে কাশ্মীরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এর পরেই লাদাখের শুরু। সনমার্গের অর্থ স্বর্ণের উদ্যান ইংরেজিতে বলা হয় গবধফড়ি ড়ভ মড়ষফ. শ্রীনগর থেকে সনমার্গে যাওয়ার পথটি অত্যন্ত মনোরম ও সুন্দর। শহর ছেড়ে পাহাড়ি রাস্তার পাশে পাহাড় থেকে নেমে আসা বরফগলা নদী, নদীর ধারে সারিবদ্ধ পাইনগাছ তার পরে সাদা বরফে ঢাকা পর্বতশৃঙ্গ। পাহাড়ি পথের এ মনোরম দৃশ্য অনবরত ভিডিওতে ধারণ করে নিচ্ছিলেন মাহমুদা ভাবি ও আবদুল জলিল। মূল স্পটে পৌঁছানোর কিছু আগে আমাদের গাড়িচালক ইশফাক ভাই গাড়ি থামিয়ে দিলেন। এখান থেকে বরফের রাজ্যে ঢুকতে অন্য গাড়ি এবং শীত নিবারণের পোশাক ও গামবুট ভাড়া নিয়ে তিন কিলোমিটারের মতো পথ পেরিয়ে আমরা সাদা বরফের রাজ্যে প্রবেশ করলাম। এপ্রিল মাসের শেষদিক কড়কড়ে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন বরফ সামান্য গলতে শুরু করেছে। সুন্দর পাইন গাছের সারি বরফ ঢাকা এ শহরটি এক স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকগণ বরফের উপত্যকায় এসে উদ্বেলিত হয়ে যান। স্নোবাইকে বরফের রাজ্য ঘুরে বেড়ানো সে এক বিরল অভিজ্ঞতা। আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীরা বরফের ওপর শুয়ে বসে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলেছেন। বরফের ভিতর হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বসে বিশ্রাম নিয়েছি। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যের মধ্যে সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। ক্ষুধা জানান দিয়েছে সময় অনেক হয়েছে। অগত্য শ্রীনগরের পথে যাত্রা। পথিমধ্যে একটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে কাশ্মীরি খাবারে মধ্যাহ্নভোজ গ্রহণ এক নতুন অভিজ্ঞতা। বোটহাউসে পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। এরপর বোটহাউসে বসার ঘরে বসে প্রাণখোলা আড্ডা!

তৃতীয় দিন প্রাতরাশ সেরে হাউসবোট থেকে বিদায়। ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজসহ গুলমার্গের উদ্দেশে রওনা। হাউসবোটের মালিক গোলাম নবী ভাই তাঁর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতিথেয়তার প্রশংসা না করলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এককথায় কাশ্মীরের সমগ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহারই অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। গুলমার্গ শ্রীনগর থেকে ৫৭ কিলোমিটার দূরত্বের পথ। গুল ফরাসি শব্দ অর্থ ফুল সে মতে গুলমার্গের অর্থ ফুলের উপত্যকা। গ্রীষ্ম বসন্তে ফুলের মেলা বসে ছবির মতো এ শান্ত শহরে। চারদিকে পাইন গাছের সারি। মখমলের মতো সবুজ ঘাসে ঢাকা উদ্যান। অদূরে দৃশ্যমান সাদা বরফে ঢাকা পর্বতশৃঙ্গ সঙ্গে প্রশান্তি আনা হিমালয়ের নির্জনতা এ নিয়েই বিশ্বের সেরা বিউটি স্পট গুলমার্গ। এখানকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। সমতল পথ পেরিয়ে গুলমার্গের মূল স্পটের ১৩ কিলোমিটার আগে একটি বাজারে ইশফাক ভাই আমাদের গাড়ি থামিয়ে দিলেন যেখান থেকে পুনরায় শীত নিবারণ ওভারকোট, গামবুট ইত্যাদি ভাড়া নিয়ে আমরা মূল স্পটের দিকে অগ্রসর হলাম। পাহাড়ের পিঠ কেটে রাস্তা তৈরি ডানদিকে গভীর খাদ তাকালে পিলে চমকানোর অবস্থা। মাহমুদা ভারী খাদের গভীরতা দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। ভ্রমণ সঙ্গী অন্য একজন তাঁকে খোদার নাম স্মরণ করে চোখ বন্ধ করে থাকতে উপদেশ দেন। অনেক বিপদসংকুল রাস্তা পেরিয়ে কিছু সময় পর গাড়ি আমাদের জন্য সংরক্ষিত গ্রিন পার্ক হোটেলে পৌঁছে গেল। সুবিধামতো নিজ নিজ কক্ষ বুঝে নিয়ে লাগেজপত্র রেখে পর্বত আরোহণের পোশাক পরে নিচে নেমে দেখা গেল বেশ বাহারি সাজে সজ্জিত ঘোড়া নিয়ে কিছু লোক অপেক্ষমাণ। গুলমার্গের বিউটি স্পটগুলোতে গমন এবং দর্শনের জন্য ঘোড় সওয়ার গুলমার্গের অন্যতম আকর্ষণের মধ্যে একটি।

গুলমার্গের অপার সৌন্দর্য যথাসম্ভব দর্শন শেষে হোটেলে ফিরেছি তখন সন্ধ্যা প্রায়। ইতোমধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠান্ডা তীব্রতর হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল সন্ধ্যার তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের প্রায় শেষ সময়ে আমাদের মতো গরমের দেশের লোকের জন্য এরকম তাপমাত্রা মোকাবিলা করা কাশ্মীর ভ্রমণ আরেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বৈকি! রাতে বিছানার মধ্যে বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করে তবে ঘুমানোর ব্যবস্থা তাও কম রোমাঞ্চকর নয়।

চতুর্থ দিন সকালে আমাদের পাহেলগাঁও যাত্রা। গুলমার্গ থেকে শ্রীনগর শহরকে বাইপাস করে পাহেলগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। পাহেলগাঁও যাওয়ার রাস্তাটি অতীব মনোরম। পথেই পড়ে পামপুর। স্পেনের পর একমাত্র পামপুরেই চাষ হয় মূল্যবান মসলা জাফরানের। কাশ্মীরের অন্যতম পাহাড়ি শহর পাহেলগাঁও। অনেকের মতে, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর পর্যটন স্পট। একদিকে পাইন চিনারু দেবদারু ছাওয়া ঘনসবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তর অন্যদিকে বরফে মোড়ানো হিমালয় শৃঙ্গ কাশ্মীরের আরেক বিস্ময়। গুলবার্গ থেকে প্রায় চার ঘণ্টায় আমরা পাহেলগাঁও পৌঁছলাম। দিনটি ছিল শুক্রবার জুমার নামাজে শরিক হতে যাতে সমস্যা না হয় ড্রাইভারকে সেভাবে বলা ছিল। সে মতে জুমার নামাজ শুরুর আগেই পাহাড়ের কোলে সুপ্রশস্ত পাহেলগাঁও সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে আমাদের ড্রপ করে এনসি এবং ভাবিদের নিয়ে গাড়ি হোটেলে চলে যায়। মসজিদের কাছেই আমাদের হোটেল নাম হাইল্যান্ডস। যথারীতি জুমার নামাজ শেষে হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বাইরে মধ্যাহ্নভোজ সেরে সাইড সিংয়ে বেরিয়ে পড়ি। ভাবিরা কাছের মার্কেটে কেনাকাটার জন্য লেগে গেলেন-আমরা পুরুষরা হেঁটে প্রথমে মূল শহরের রাস্তার ধার দিয়ে প্রবাহিত নদীর পাশে গিয়ে বসি। চমৎকার এবং দর্শনী স্পট। ছোট পাহাড়ি নদী কলকল শব্দে ছুটে চলছে সাদা বরফগলা পানি নদীর নাম লিডার সে এক অপরূপ দৃশ্য। নদীর ওপারে পাহাড় থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুদিকে নেমে আসা দুটো ঝরনা মাঝে অত্যাশ্চর্য মন্দির জায়গাটি দর্শনীয়ই বটে। নদীর ওপারে মামল গ্রামের মামলেশ্বর মন্দিরটিও দেখার মতো গাড়ি বা ঘোড়সওয়ারে ঘুরে আসা যায় আরু ভ্যালি, পোশ পাথর, কুটপাথর কস্তুরি ওয়ান ইত্যাদি স্পট। এসব জায়গায় ঘুরে বেড়ালে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। সূর্য ডোবার আগে লিডারের পাড়ে গ্রিন পার্কে আমরা কিছু সময় অবস্থান করছিলাম। ফেরিওয়ালার কাছ থেকে বড়মিয়া সস্তা দামে একটি থ্রি-পিচ কিনলেন। সবচেয়ে মজার বিষয় ফেরিওয়ালা আমাদের বাংলাদেশি জেনে নদীর কূল নাই কিনার নাই গানটি ধরে দিল- এই দূর দেশে নিজ ভাষার গান শুনে সত্যি মনটা আনন্দে ভরে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। দ্রুত আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। শীতের প্রকোপ তীব্র হতে লাগল। জানা গেল তাপমাত্রা তিনের নিচে। গুলমার্গের আদলে বেডহিটার ব্যবহার করে তবে রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা হলো।

সমগ্র কাশ্মীরের অপরূপ আরও কত আকর্ষণীয় সৌন্দর্য রয়ে গেল আমাদের না দেখা যা সপ্তাহের সময়সূচির মধ্যে কোনোভাবেই শেষ করা সম্ভব নয়। পরদিন হোটেল কর্তৃক প্রদত্ত কাশ্মীরি প্রাতরাশ গ্রহণ শেষে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা। দুপুরের আগে শ্রীনগর শহরের আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল রয়্যাল পার্কে পৌঁছে যাই। আজ সারা দিন শ্রীনগরে কেনাকাটা এবং শহর দর্শন পরদিন সকালে শ্রীনগর ত্যাগ। পাঁচ রাত ছয় দিনের কাশ্মীর ভ্রমণের এই অধ্যায় সঙ্গী সাথী সবার জীবনেই এক অনন্য ও মধুর স্মৃতি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ খবর