রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশে দেশে চায়না টাউন

সব দেশেই দারুণ জনপ্রিয় চায়না টাউন রেস্তোরাঁ। কেনাকাটা কিংবা আড্ডায় সব সময় ব্যস্ত থাকে চায়না টাউনগুলো। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই খোলা, মানুষের পদচারণে মুখর চায়না টাউনগুলো নিয়েই আজকের রকমারি-

রকমারি ডেস্ক

দেশে দেশে চায়না টাউন

একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল বিনোন্দো

গোটা বিশ্বের চায়না টাউনগুলোর ধারণা এসেছে সম্ভবত ফিলিপাইনের ম্যানিলা চায়না টাউন থেকে। কারণ এটিই বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো চায়না টাউন। ১৫৯৪ সালে স্প্যানিশ গভর্নর লুইস পেরেজ ডাসমারিনাস চায়নিজ অধিবাসীদের অভিবাসনের জন্য এলাকাটি আলাদাভাবে গড়ে তোলেন। স্পেনবাসীর আবাসিক এলাকা প্রাচীর নগরী ইন্ট্রামুরোসের পাশের একটি নদীর তীরে অবস্থিত। সে সময় স্পেন একদল চীনা বণিককে এ  এলাকায় বিনা খরচে থাকতে দিয়েছিল। স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক যুগ শুরু হওয়ার আগেই এটি চীনা বাণিজ্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ম্যানিলার ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র বিনোন্দো। এখানে সব ধরনের ব্যবসা পরিচালিত হয়। বিশেষ করে ফিলিপিনো ও চায়নিজ পণ্যের জন্য বিখ্যাত। আর সে কারণেই ম্যানিলার চায়না টাউন বলতে বিনোন্দোকেই বুঝায়।

 

উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে পুরনো

উত্তর আমেরিকায় ১৮৪৮ সালে গড়ে ওঠা সান ফ্রান্সিসকো চায়না টউনই সবচেয়ে পুরনো। এমনকি আয়তনেও বিশাল। এশিয়ার বাইরে বৃহত্তম কোনো চায়না টাউনও এটি। সান ফ্রান্সিসকোর আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে গোল্ডেন গেট অন্যতম হলেও এখানে পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে। কী নেই এ চায়না টাউনে? একনজরে যেন পুরো চীন দেখার সুযোগ পান পর্যটকরা। তারা এখানে চীনের আদি আবহ খুঁজে পান। সাজানোও হয়েছে ঠিক সেভাবেই। মন্দির, থিয়েটার, রেস্টুরেন্ট, এন্টিক শপ এবং স্মারক শপে সাজানো দোকানগুলো বেশ নজরকাড়া। এখানে আপনিও পাবেন মনের মতো যে কোনো জিনিস। তবে সান ফ্রান্সিসকো চায়না টাউনের সবচেয়ে বেশি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হয় নববর্ষ উদযাপনকে। আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমকে ভরা এ অনুষ্ঠানের তুলনা যেন আর কিছুতেই নেই।  ব্যাংককের চায়না টাউনে রকমারি খাবার ব্যাংকক চায়না টাউনটি অবস্থিত থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ইয়াওরাত সড়কে। শহরটির সবচেয়ে পুরনো এলাকা হিসেবে ধরা হয় ব্যাংকক চায়না টাউনকে। ব্যাংককে আগত পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা এটি। আর আকর্ষণের কারণ হিসেবে ধরা হয় এ জায়গার রকমারি খাবারের দোকানগুলোকে। রেস্টুরেন্টগুলো সাজানো হয়েছে লোভনীয় খাবারের পসরা দিয়ে। এটি আরও একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত। আর তা হলো- এখানকার স্বর্ণের মার্কেট। মার্কেটটি প্রায় ২০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার জৌলুস নিয়ে। হয়তো এতদিনের ঐতিহ্যের সুবাদেই কারও নজর এড়ানোর কোনো উপায় নেই। ইয়াওরাত সড়কটি ওয়াট ট্রিমিট নামক একটি মন্দিরের জন্যও অনেক বেশি বিখ্যাত। কারণ এ মন্দিরটিতে কমপক্ষে ৫.৫ টন নিখাদ স্বর্ণ দিয়ে বানানো বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণমূর্তি।

 

নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে চায়না টাউন

নিউইয়র্ক চায়না টাউনটি অবস্থিত লোয়ার ম্যানহাটনে। উত্তর আমেরিকার মধ্যে সান ফ্রান্সিসকোর পরে এটিই দ্বিতীয় বৃহৎ আয়তনের চায়না টাউন। ১৮৪০ সালে আহ কেন নামের এক চায়নিজ সর্বপ্রথম এখানে বসবাস শুরু করেন। তার হাতেই মূলত এলাকাটি গড়ে ওঠে। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ। নিউইয়র্কের একদম প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে চায়না টাউনটি। এখানে চায়নিজদের ঐতিহ্যের আসল আবহ পাওয়া যাবে সহজেই। নিউইয়র্কের এ এলাকার বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে যাবে কিন্তু একজন পর্যটকের বিস্ময় শেষ হওয়ার নয়। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। হাতের কাছেই পাবেন অসংখ্য ছোট-বড় খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট। খাবারগুলো যেমন সুস্বাদু তেমনি অপেক্ষাকৃত দামে সস্তা। হেঁটে হেঁটে দেখে বেড়ানো বা ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য এ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য আদর্শ।

 

লন্ডনের অন্যতম আকর্ষণ

ওয়েস্টমিনস্টার শহরের গ্যারেড সড়কে অবস্থিত লন্ডনের চায়না টাউনটি। ১৯৫০ সালে যখন চায়নিজরা লন্ডনে অভিবাসন পেতে শুরু করল তখনই মূলত লন্ডন চায়না টাউনের গোড়াপত্তন ঘটে। এলাকাটিকে লন্ডনের বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলে ধরার জন্য ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বর্তমানে এটি ওয়েস্টমিনস্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও পরিগণিত হয়। এখানকার অধিবাসীরা মূলত হংকং থেকে আগত। অন্য চায়না টাউনের মতো এ চায়না টাউনটিও অসংখ্য খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়াও বেকারি ফুড, সুপার মার্কেট, শোপিসের দোকান এবং চায়নিজদের অন্যান্য চলমান ব্যবসার জন্য এলাকাটি বিখ্যাত। চায়নিজদের প্রতিটি পণ্যে বিশেষ শৈলী কাজ করায় পর্যটকদের আকর্ষণ কাজ করে অনেক বেশি। এখানকার অধিবাসীদের নববর্ষ উদযাপন অন্যদের কাছে খুবই আকর্ষণের বিষয়।

 

সিঙ্গাপুরে আকাশচুম্বী ভবনঘেরা আরেক শহর

সিঙ্গাপুরের আউটরাম জেলায় অবস্থিত এ চায়না টাউনটি। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যপূর্ণ এ এলাকাটি আকাশচুম্বী ভবনগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে। দেশটি এ এলাকাকে ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে চায়না টাউনটি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবেও মনোনীত হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম জাতিগত গ্রুপ হলো চায়নিজরা। এক সময় এটি চায়নিজদের একটি ছিটমহলের মতো ছিল। রেকর্ড অনুযায়ী ১৩৩০ সালে এ এলাকাটিতে চায়নিজরা বসবাস করে। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়। সে হিসেবে এ এলাকাটিতে চায়নিজ অভিবাসীরা থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পরবর্তীতে এখানকার অনেকেই অন্যত্র চলে যায়। চায়না টাউনটি অধিক জনবহুল হয়ে ওঠে। এ এলাকায় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা সবই পাবেন।

 

কানাডায় মিনি চায়না

কানাডার ভ্যানকুভার চায়না টাউনটিকে মিনি চায়না বলা যায়। দেশটির সবচেয়ে বড় চায়না টাউন এটি। এমনকি উত্তর আমেরিকার মধ্যে এটিই তৃতীয় বৃহত্তম চায়না টাউন। এটি গড়ে ওঠে উনিশ শতকের শেষের দিকে। অন্যান্য চায়না টাউনের মতোই এটির অবস্থানও শহরের প্রাণকেন্দ্রে। চায়না টাউনটির নকশা করা হয় কানাডার জাতীয় ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে। এ চায়না টাউনে রয়েছে পর্যটক আকর্ষণের মতো যথেষ্ট জনপ্রিয় উপাদান। ইদানীং এ এলাকার বাইরেও অনেক চীনা অভিবাসীর বসবাস রয়েছে। আবার অনেক হংকং এবং তাইওয়ানিজও এ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বসবাস শুরু করেছে। তারা এখানে চায়নিজদের আদি ব্যবসা এবং রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছে। এখানে নতুন করে গোল্ডেন ভিলেজ নামের একটি এলাকা করা হচ্ছে।           

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর