সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিখ্যাত যত রেইন ফরেস্ট

তানভীর আহমেদ

বিখ্যাত যত রেইন ফরেস্ট

অ্যামাজন

গরম আবহাওয়াচ্ছন্ন রেইন ফরেস্ট অ্যামাজন মোট ৯টি দেশজুড়ে বিস্তৃত। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর ভাগে ছড়িয়ে রয়েছে বনটি। বনের প্রায় ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিল ছাড়াও পেরু, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্জ গায়ানা অ্যামাজন বিস্ময়ে ডুবে রয়েছে। ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এ বনের অনেক স্থানেই এখনো মানুষের পা পড়েনি। অ্যামাজনে বিশ্বের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি গাছপালা আছে। পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন আসে অ্যামাজন থেকে। এর জন্য একে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। অ্যামাজন নদী বেশির ভাগ নদীর উৎস। এ ছাড়াও অ্যামাজনে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। পাশাপাশি অ্যামাজন নদীতে ৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী আছে। রেইন ফরেস্ট অ্যামাজনে মাত্র দুটি ঋতু রয়েছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা। গরমপ্রধান এ বনে ছয় মাস গ্রীষ্ম ও বর্ষা থাকে। এ বনে গুমোট গরম আবহাওয়া কখনোই সরে যায় না। প্রায় সব সময় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকায় এ বনে পথচলা খুবই কষ্টের।

 

আফ্রিকার ফুসফুস

কঙ্গোলিয়ান রেইন ফরেস্ট বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন। আফ্রিকার ফুসফুস বলা হয় কঙ্গোর রেইন ফরেস্টগুলোকে। কারণটা খুব সহজ, কঙ্গো বেসিন অ্যামাজনের চেয়েও বেশি কার্বন শোষণ করে নেয়।  ক্যামেরুন, গ্যাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি অঞ্চলগুলো নিয়ে এ রেইন ফরেস্টের অবস্থান। এ বনের ওপর নির্ভরশীল আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এখান থেকেই মেলে বিপুল পরিমাণ শস্য ও খাবার।

 

অর্কিডের বাহার

প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর নিউগিনির রেইন ফরেস্ট। এর আয়তন ২ লাখ ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউগিনিজুড়ে রয়েছে এ বন। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানে অর্কিডের বেশি প্রজাতি পাওয়া যায়। এ বনে প্রায় ২০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৭৫০ প্রজাতির পাখির বসবাস। অনুমান করা হয়, মানুষের জানাশোনা গাছের যত প্রজাতি আছে তার মধ্যে ৫ থেকে ৭ ভাগ পাওয়া যাবে এ বনে। বিরল গাছপালার পাশাপাশি বিশালাকার প্রজাপতি, দীর্ঘতম টিকটিকি, কবুতর ও সবচেয়ে ছোট তোতা এ বনে রয়েছে। খনি খনন, কাঠের জন্য বন উজাড় এবং কলকারখানা স্থাপন করতে গিয়ে এ বনের অস্তিত্ব এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে।

 

যে বনের বয়স ১৮ কোটি বছর

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট ডায়িনট্রি। ব্লু মাউন্টেনস ন্যাশনাল পার্কের সঙ্গে সংযুক্ত এ রেইন ফরেস্টটির আয়তন ২ লাখ ২২ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। মধ্য উপকূলীয় নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ড পর্যন্ত প্রসারিত এ বন। নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এ বনভূমি। এ রেইন ফরেস্টে গেলে দেখা মিলবে বালির পাথর, জলাশয়, ইউক্যালিপটাস বন এবং বিরল সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিরল প্রজাতি। এ বনের বয়স প্রায় ১৮ কোটি বছর।

 

প্রাচীন এক বন ভালদিভিয়ানা

চিলি ও আর্জেন্টিনাজুড়ে অবস্থিত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট ভালদিভিয়ানা। এটি বিশ্বের সর্ব দক্ষিণের বৃহত্তম বন। এর আয়তন ২ লাখ ৪৮ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। ভালদিভিয়ানা বনটি দক্ষিণ  আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যও সুন্দর। ফার্ন, বাঁশ এবং চিরসবুজ অ্যাঞ্জিওস্পার্ম গাছের ঘন বন এটি। এখানে আছে অলিভিলো গাছ। এগুলো ৪০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এ বনে গাছের এমন কিছু প্রজাতি রয়েছে যেগুলো হয়তো বরফ যুগের শেষ স্মৃতিচিহ্ন।

 

সুমাত্রায় যেন সবই আছে

ইন্দোনেশিয়ার বড় অংশে রয়েছে রেইন ফরেস্ট। দেশটিতে ১৭ হাজার ৫০০টিরও বেশি দ্বীপ থাকলেও বেশির ভাগ রেইন ফরেস্ট দেখা যায় সুমাত্রা, বোর্নিও, সুলাওয়েসি এবং নিউগিনিতে। তবে আলাদা করে বলতে হয় সুমাত্রার কথা। সুমাত্রার ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট হেরিটেজ তিনটি জাতীয় উদ্যান নিয়ে গঠিত। সুমাত্রা রেইন ফরেস্ট বিশ্বের একমাত্র বন যেখানে বাঘ, ওরাংগুটান, গন্ডার এবং হাতি সবই রয়েছে।

 

গ্রেট বিয়ার রেইন ফরেস্টে প্রাণিবৈচিত্র্য

এ রেইন ফরেস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সমুদ্র এবং বনের মেলবন্ধন। প্রাচীন বনের সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে তুষারস্রোত। বিরল প্রজাতির প্রাণীদের বাসস্থান এখানে। আমেরিকার বৃহত্তম জাতীয় বন এবং কানাডার গ্রেট বিয়ার রেইন ফরেস্টে গেলে দেখা মিলবে স্পিটি বিয়ার, কালো ও সাদা ভাল্লুকের বিরল রূপ। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে ১০০ বছর ধরে এ বনটি সংকটের মুখে পড়েছে। প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বনকে পৃথিবীর ‘বিরলতম ও সমৃদ্ধ বন’ বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রশান্ত মহাসমুদ্রের উপকূল ও ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রায় ৬.৪ মিলিয়ন হেক্টরজুড়ে এ বন বিস্তৃত। এ বনেই রয়েছে হাজার বছর পুরনো প্রজাতির গাছ রেড সিডার।

 

হার্ট অব বোর্নিও

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই নিয়ে এ রেইন ফরেস্টের অবস্থান। বোর্নিও রেইন ফরেস্টের বয়স প্রায় ১৪০ মিলিয়ন বছর পুরনো বলে অনুমান করা হয়। বোর্নিও রেইন ফরেস্ট কাঠ, পামতেল, সজ্জা, রাবার এবং খনিজের কারণে উজাড় হচ্ছে। এর ফলে বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যেমন- ওরেঙ্গুটান এবং হাতি ঝুঁকির মধ্যে আছে। বোর্নিওর রেইন ফরেস্টের জীববৈচিত্র্য দারুণ সমৃদ্ধ। এ বনে ১৫ হাজারের বেশি উদ্ভিদের প্রজাতি রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, এ বনে প্রতি ১০ হেক্টর জমিতে ৭০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে।

 

এখনো বড় অংশ অনাবিষ্কৃত

 

নিকারাগুয়ার প্রায় ৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্টটি। ১৯৯৭ সাল থেকে এ রেইন ফরেস্টটি ইউনেস্কোর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বোসাওয়াসের বোটানিক্যাল বৈচিত্র্য অনেক বেশি। এখানে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ কীটপতঙ্গের প্রজাতি বাস করে। এ বনের বড় অংশ এখনো  অনাবিষ্কৃত।

 

সর্বশেষ খবর