শিরোনাম
রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মরু রহস্য

তানভীর আহমেদ

মরু রহস্য

মরুভূমিতে অমীমাংসিত বহু রহস্য লুকিয়ে আছে। এখনো নিত্যনতুন রহস্যের খোঁজ মিলছে মরু গহিনে। এসব মরুভূমির উপরিতলের রহস্য। বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলোর তো কোনো কূলকিনারাই হয়নি। কৌতূহলী মানুষ এই রহস্যের পেছনে ছুটছে। দেখা মিলেছে লবণের পাহাড়ের, যেখানে বৃষ্টি হয়নি গত ৪০০ বছরেও। আবার অল্প বৃষ্টিতে কোথাও রঙিন ফুলে ছেয়ে যায় গোটা মরুপ্রান্তর।  কোথাও ছাই হয়ে ১৫০ বছর ধরে বেঁচে আছে মরুগাছ। নীল মানুষ এখনো মরুর বুকে জীবন কাটায়। এমনই রোমাঞ্চেভরা মরুভূমি নিয়ে আজকের রকমারি-

 

রহস্য বৃত্ত

রহস্য বৃত্ত বা ফেইরি সার্কেল রয়েছে নামিবিয়াতে। নামিবিয়ার প্রত্যন্ত এক মরুভূমিতে পথ চলতে গিয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যান পর্যটকরা। কারণ আর কিছুই নয়। সেখানে দেখা মিলল বালুর ছোট ছোট বৃত্ত। কোনো কারণ ছাড়াই কেন এই মরুভূমির বালুকণা সম্মিলিতভাবে এই বৃত্তাকার ধারণ করে আছে সে এক অমীমাংসিত রহস্য। ২ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারা এই গোলাকৃতির জিনিসগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ফেইরি সার্কেল। কারণ এই সার্কেল বা চক্রের প্রান্তে এক ধরনের ঘাস জš§াতে দেখা গেলেও এর মধ্যখানে কোনো ধরনের গাছ, ঘাস বা কোনো কিছুই জš§ায় না। এমনকি অনেক যত্ন ও সার পাওয়ার পরেও না। বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত প্রাকৃতিক এই গোল চক্রগুলোর কোনো রহস্য ভেদ করতে পারেননি। এদের বয়স সর্বোচ্চ ৭৫ বছর হয়ে থাকে। ৭৫ বছর পর এমনিতেই অদৃশ্য হয়ে যায় গোল চক্রগুলো। তবে তার আগে কী করে এগুলোকে নাই করে দেওয়া যায় সেটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে সবার কাছে। নামিবিয়ার মরুভূমির ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটারজুড়ে এদের দেখা পাওয়া যায়।

 

নাইট্রেড পাহাড়

আটাকামা নাইট্রেট আসলে মরুভূমির বুকে আশ্চর্যজনকভাবে জমা হওয়া নাইট্রেট বা লবণের স্তূপ। অনেকেই বলে থাকেন এটি নাইট্রেটের পাহাড়। আদতে পাহাড় না হলেও মরু নির্জনে কীভাবে এই নাইট্রেট এসে জমল তা জানা যায়নি। তবে এটি প্রাকৃতিকভাবেই জড়ো হয়েছে, এ বিষয়ে সবাই একমত। এমনিতেই দক্ষিণ আমেরিকার মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে পরিচিত। যেখানে কেউ ছিল না এবং কেউ থাকেও না। বলা হয়, ১ মিলিলিটার বৃষ্টি এখানে হলেও সেটা এর জন্য অনেক। কিন্তু সাধারণত সেটাও হয় না। কিন্তু পানি ও সেই ব্যাকটেরিয়া যেটা দিয়ে নাইট্রেট তৈরি হয়- এগুলোর কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই এই মরুভূমির ভিতরে স্তূপ হয়েছে এবং হচ্ছে ৭০০ কি.মি. লম্বা ও ২০ কি.মি. চওড়া নাইট্রেট। আটাকামা মরুভূমি নামে পরিচিত এই মরুভূমির এই আটাকামা নাইট্রেটের জš§ প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো এক স্থান থেকে মনে করা হলেও আদতে এই মরু রহস্যের এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

 

প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ

মরুভূমির সবটা আমাদের জানা হয়নি। এখনো নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদের চমকে দেয়। চমকের একটি সিরিয়ায় পাওয়া ধ্বংসাবশেষ। সিরিয়া মরুভূমিতে পাওয়া এই ধ্বংসাবশেষের বয়স পিরামিডের চেয়েও বেশি। মিসরীয় সভ্যতারও আগের কোনো সভ্যতার পরিচয় বহন করা এই ধ্বংসাবশেষ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এই ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলে ২০০৯ সালে। রবার্ট ম্যাসন সিরিয়ায় মরুভূমিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কিছু দালানকোঠার নজির আর নানানরকম ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন তিনি। গিজার পিরামিডের বয়স ৪৫০০ বছর। আর এই ধ্বংসাবশেষের বয়স হিসাব করা হয় ৬ থেকে ১০ হাজার বছর। বেশ কিছুদিন খোঁড়াখুঁড়ি চলে সেখানে। তবে আজ পর্যন্ত জানা যায়নি মরুভূমির ভেতরে কে এমন দালানকোঠা বানিয়েছিল আর কেন সেটা নষ্ট হয়ে গেল। এখানে দেখা পাওয়া যায় ‘ডেসার্ট কাইটস’। রয়েছে পাথুরে ফাঁদ। অনুমান করা যায়, হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা শেষ চেষ্টা চালিয়েছিল।

 

অদ্ভুত সমাধিস্থল

মরুভূমির বুকে মানুষ সভ্যতার প্রসার করেনি। কিন্তু তবুও যুগে যুগে মানুষ মরুভূমির বুকে হেঁটে চলেছে। মরুভূমির ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো ছিল জীবন বাজি রেখে শহর পাড়ি দেওয়ার শামিল। অনেকে আবার প্রাণভয়ে এই পথ দিয়ে পালিয়ে গেছে। মরুভূমিতে তাই মানুষের সলিল সমাধির ঘটনা নেহাত কম নয়। তবে মরুভূমির বুকে যদি সুবিশাল সমাধিস্থলের দেখা পাওয়া যায় তবে বিস্মিত হতেই হয়। এমনি এক সমাধিস্থলের দেখা মেলে ২০০৫ সালে। তুতেন খামেনের সমাধিস্থলের পাশেই পাওয়া যায় এমন আরেকটি সমাধিস্থল। সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে ভেতরে ঢোকে মরুর বুকের এই সমাধিস্থলে। কিন্তু কিছু স্রেফ খালি কফিন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি কবরটিতে। কোনো মানুষের দেহও নয়। কফিনগুলো পাত্র, অলংকারসহ নানানরকম জিনিসে ভর্তি থাকলেও একটার ভেতরে ছিল আরেকটি কফিন। মনে করা হয় তখনকার কবর চোরদের থেকে বাঁচতে এই নকল কবর বানানো হয়েছিল। তবে এটিকে রাজকীয় সমাধিস্থল বলেই ধারণা করা হয়।

 

ফুলেল মরুভূমি

মরুভূমির বুকে আবহাওয়া গাছের জন্য অনুকূল নয়। উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অভাব এর মূল কারণ। তবুও মরুভূমিতে অনেক গাছ জš§ায়। এই গাছগুলোর কোনো কোনোটিতে ফুলও ধরে। এই মরুভূমিগুলোর মধ্যে আটাকামা মরুভূমি প্রকৃতির একটি অন্যতম নিদর্শন। ১০০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে মরুভূমি, যেখানে সব সময় শুধু বালি এবং বড় বড় পাথর। মরুভূমিতে অল্প বৃষ্টি থেকে ঝরা পানি নতুন জীবনের সঞ্চার করে। এই মরুভূমি একটি বড় গালিচায় রূপান্তরিত হয়। বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফুল ফোটার সময়ের পরিবর্তন হয়। সাধারণত এই ফুল ফোটা আগস্টের শেষ থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর বা এমনকি ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বছরখানেক অপেক্ষার পর এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির ফুল দেখা যায়। শীতে অল্প পরিমাণে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। খুব সামান্য বৃষ্টি বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য সঠিক জলবায়ু হিসেবে উপলব্ধি করা হয়। উষ্ণ দিন একটি পূর্ণ পুষ্প জšে§র জন্য এক ভালো সূচক। আবহাওয়া সাহায্য করলে ফুলে সেজে ওঠে মরু।

 

মরু বিচিত্র

পৃথিবীর বিচিত্রতার শেষ নেই। এখনো অনেক রহস্যে ডুবে আছে মানুষ। এগুলোর কোনোটির সমাধান হলেও এখনো বহু রহস্য রয়ে গেছে যেগুলোর হয়তো সমাধান আদৌ পাওয়া যাবে না। আকাশ, সমুদ্র আর মরুভূমির বুকে থাকা রহস্যগুলো মানুষকে সব সময়ই টেনেছে। পৃথিবীর পরিচিত মরুভূমির কথা বললে অনেকেই হয়তো বলবেন, সাহারা, তাকলামাকান, গোবি, কালাহারি- এসব মরুভূমির কথা। কিন্তু এমনও কিছু মরুভূমি আছে যেগুলোর বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলো মানুষকে যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করেছে। এই মরুভূমিগুলো প্রত্যেকটির একেক বিচিত্রতা রয়েছে। সালার ডে ইউনি বা নামিবের মতো মরুসাগরে আবহাওয়ার খেয়ালখুশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতি তার বর্ণময়তা নিয়ে কত সুন্দরভাবে হাজির হয়েছে। আবার কোথাও বালির মধ্যে সূর্যের আলো এমনভাবে প্রতিফলিত হয় যে, মরুভূমি হয়ে ওঠে আয়না, কোনো বালির সমুদ্র আবার হিংস্র পশুদের আস্তানা। পৃথিবীর যেসব জায়গায় বছরে গড়ে ২৫০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবন বেশি হয়, তাকেই আমরা বলি মরুভূমি। পৃথিবীর দীর্ঘতম মরুভূমি সাহারা আয়তনে এত বড় যে, তার মধ্যে গোটা ইউরোপ মহাদেশটাই ঢুকে যেতে পারে। এই মরুভূমিতে একটু দূরে দূরেই দেখা যায় স্যান্ড ডিউনস (বালির স্তূপ)। উচ্চতম স্তূপটি ৯০ মিটার উঁচু। শুষ্ক সাহারায় দিনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও বেশি থাকে। এই বালির সমুদ্রেও বেশ কিছু অংশে খরা প্রতিরোধকারী গাছ লাগিয়ে চাষবাস করা হচ্ছে। ৫০০-এরও বেশি প্রজাতির গাছের সমাবেশ রয়েছে এখানে। আফ্রিকার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মরুভূমি কালাহারি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার উঁচু এই মরুদেশ সাহারার মতো শুকনো নয়, কিছু অংশে ভালোই বৃষ্টিপাত হয়। আফ্রিকার অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট কালাহারি বিখ্যাত তার অ্যানিমেল সাফারির জন্য। এখানকার আদিবাসী বুশম্যানরা প্রায় ২০ হাজার বছর ধরে মরুভূমিতে বসবাস করছে। আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত নামিব মরুভূমি সাহারার মতো বড় না হলেও বৈচিত্র্যময়। এর ৩০০ মিটার উঁচু সসুভেলই স্যান্ড ডিউনটি পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম। শুধু তাই নয়, নামিবই একমাত্র মরুভূমি যেখানে হাতির দেখা মেলে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় মরুভূমি গোবি ও চীনের বৃহত্তম মরুভূমি তাকলামাকানের তাপমাত্রা কখনো মাইনাস ২০ ডিগ্রির নিচে, আবার কখনো ৪০ ডিগ্রিরও ওপরে থাকে। দুই জায়গায়ই প্রচ- তুষারপাত হয়। রয়েছে আটাকামা। পেরু থেকে চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত আটাকামা মরুভূমির যে অংশটুকু চিলির অন্তর্ভুক্ত, তা পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল। এর কোনো কোনো অংশে প্রায় ৪০০ বছর ধরে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। বলিভিয়ার সালার ডে ইউনি পৃথিবীর দীর্ঘতম লবণাক্ত মরুভূমি। এখানে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন লবণ সঞ্চিত আছে এবং বছরে ২৫ হাজার টন লবণ এখান থেকে তুলে নেওয়া হয়।

 

পোড়া গাছ বাঁচে সহস্র বছর

মরুভূমির বুকে প্রাণী বৈচিত্র্যের যেমন শেষ নেই তেমনি গাছের ক্ষেত্রেও। অদ্ভুত প্রজাতির সব গাছ মরুভূমির বুকে টিকে আছে। এগুলোর বেশির ভাগেরই কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মরুভূমিতে নিয়মিত বৃষ্টি হয় না- তাই এ গাছগুলো খুব অল্প পানি পেয়েও বেঁচে থাকার বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। মরুভূমির বিচিত্র গাছের মধ্যে ওয়েলউইসিয়া মাইরেবিলস বেশ কৌতূহল জাগানো। এর কারণ আর কিছুই নয়। এটি দেখতে ছাইয়ের মতো। মনে হবে গাছটি মরে গেছে বহু আগেই। রোদে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া পাতা দেখে এটিকে সজীব ভাবার কোনো কারণই নেই। অথচ এ গাছটি শুধু জীবিতই নয়, এভাবেই টিকে থাকে বছরের পর বছর। মরুভূমির এ আশ্চর্য গাছটিকে নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল লম্বা গবেষণা পরিচালনা করে। জেনে অবাক হতে হয়, এ গাছটি প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর বেঁচে থাকতে পারে। গাছটি মাটির নিচে জমে থাকা খুব সামান্য পানি টেনে নিয়ে আসতে পারে বলেই এত দীর্ঘ জীবন লাভ করে। মরুভূমির কঠিন ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় এ গাছটি বেশ মানিয়ে নিয়েছে।

 

সাহারার নীল মানব

মরুভূমিতে ছুটে চলা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। যাযাবরদের বড় একটি অংশই মরুভূমির বুকে অবস্থান করে। এদের নিয়ে অনেক গবেষণা করা হলেও এখনো অনেকটাই জানা বাকি। খুব বেশি দিন হয়নি এমনি এক যাযাবর দলের সন্ধান পাওয়া যায় উত্তর আফ্রিকার সাহারায়। এদের নীল রঙের প্রীতি চোখ এড়ায়নি গবেষকদের। পুরুষ, নারী সবাই নীল রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। এ কারণে এ যাযাবর মানুষকে নীল মানুষ নামেই ডাকা হয়ে থাকে। এরা আসলে তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের মানুষ। এদের সমাজ বিশ্লেষণে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। তুয়ারেগ নামের এ উপজাতি সম্প্রদায়ের পুরুষরা সারা শরীর ঢেকে যায় এমন ভারী পোশাক পরলেও নারীদের ক্ষেত্রে এতটা বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবার দেখাশোনা ও সম্পদে মেয়েদের কর্তৃত্বই শেষ কথা। গবেষকরা দাবি করেন, চতুর্দশ শতাব্দীর রানি তিন হিনানের মাধ্যমে এ উপজাতি গোষ্ঠীর সূচনা হয়েছে। এই সম্প্রদায়ের পুরুষরা ‘সাহারার নীল মানব’ নামে পরিচিত। এরা নীল রঙের ভারী পোশাক পরে শরীর ঢেকে রাখে। এমনকি মুখও ঢেকে রাখে। ফটোসাংবাদিক হেনরিয়েতা বাটলার ২০০১ সালে মরু অঞ্চলে প্রথম এ ধরনের উপজাতির দেখা পায়। তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে অনেকেই ভুল তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন। যেমন- এদের গায়ের রং নীল। বাস্তবে অনেক কালো চামড়ার মানুষও এ দলে রয়েছে। নাইজার, মালি, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, লিবিয়া অঞ্চলেরও অনেকে এ যাযাবর দলে রয়েছে। এদের আনুমানিক সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন।

 

 

মরুর জাহাজ

মরুভূমিতে বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর দেখা মিললেও উটের কথা আলাদা করে বলতে হয়। উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই মরুভূমি পাড়ি দিতে উটের ওপর নির্ভরশীল। মরুভূমির কঠিন পরিবেশে উট কীভাবে টিকে থাকে এটি কয়েক যুগ আগেও রহস্য হয়ে ছিল। আসলে মরুভূমি অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকে। আবার সেখানে পানি পাওয়াও খুব সহজ ব্যাপার নয়। তাই উটকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ পানি ছাড়া থাকতে হয়। পানি ছাড়া থাকতে হয় বলে উটের তেমন বড় রকমের কোনো সমস্যা হয় না। পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য উটের দেহে রয়েছে এক আশ্চর্য ব্যবস্থা। গরমের সময় না ঘেমেই দেহের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করাতে পারে এরা। হয়তো দিন শুরু করল ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট দিয়ে, আর শেষে তাপমাত্রা দাঁড়াল ১০৫ ডিগ্রি। তাপমাত্রা খুব বেশি উঠে গেলে তখনই কেবল উট ঘামতে থাকে। এতে উটের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। উটের পশম উটকে মরুভূমির অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে। তাদের মরুভূমির বালিতে হাঁটতে কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ উটের চওড়া পায়ের নিচের অংশ উটকে বালিতে হাঁটতে সাহায্য করে। উটের দেহ মরুভূমিতে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। অনেকেই বিশ্বাস করেন, উটের কুঁজে পানি থাকে। আসলে কিন্তু তা নয়। উটের কুঁজে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা থাকে, যা পরে উট খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।

সর্বশেষ খবর