সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিচিত্র রোবট

রকমারি ডেস্ক

বিচিত্র রোবট

নেকড়ে রোবট

রোবট নেকড়েটি তৈরি করেছে ওলফ কামুয়ি নামের একটি প্রযুক্তি কোম্পানি। প্রথমে এটি গ্রামাঞ্চলে খেত-খামার থেকে ভালুক, হরিণ ও বানরের মতো প্রাণী তাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। সম্প্রতি দেশটির কিছু শহরে ভালুকের উৎপাত বেড়ে যায়। তাই রোবট নেকড়ে এখন সেখানেও ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের শরৎকালে জাপানের তাকিকাওয়া শহরে প্রথমবারের মতো রোবটটি কাজে লাগানো হয়। সে বছরই এটিকে ভালুক তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক শিনসুকে কোইকে বলেন, ‘জাপানে শহুরে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম এখন আর গ্রামে থাকতে চায় না। তারা শহরে চলে আসায় গ্রামে রয়ে গেছেন কেবল বয়স্ক লোক। বয়স্ক লোকদের পক্ষে কৃষিকাজ করা কঠিন। কৃষি খামারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও কঠিন।’ আরও জানান, আগে কৃষিজ ভূমি ও পার্বত্য বনভূমির মধ্যে একটি বাফার জোন ছিল। এখন তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বন থেকে প্রায়ই ভালুকসহ বিভিন্ন প্রাণী নেমে এসে কৃষি খামারের ক্ষতি করছে। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং খাদ্যসংকটের কারণে তারা লোকালয়ে চলে আসছে। জাপানে ২০২১ সালেই চারজন নিহত হয়েছেন ভালুকের হামলায়। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাই বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে এমন রোবটের চাহিদা।

 

শিক্ষার্থীর হয়ে ক্লাস করবে রোবট

জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুমামোতো শহরের স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে কার্যত উপস্থিত দেখাতে রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এক মিটার লম্বা রোবটগুলো স্বয়ংক্রিয় হবে। শিক্ষার্থীরা বাসা থেকেই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করা রোবটের মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে। এই রোবট ওই অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবে। জাপানের এই শহরে বিষণ্ণতা ও অপদস্থ করার কারণে স্কুল পালানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে শহর কর্তৃপক্ষ স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ভার্চুয়ালি উপস্থিত রাখতে প্রতিনিধি হিসেবে রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। আগামী নভেম্বরেই কুমামোতো শহরের স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষে এ রোবট ব্যবহার শুরু হওয়ার কথা। মাইক্রোফোন, স্পিকার ও ক্যামেরাযুক্ত এসব রোবট দ্বিমুখী যোগাযোগ করবে। শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুরা স্কুলে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী রোবটগুলোকে ডিভাইসের মাধ্যমে বাসা থেকেই ব্যবহার করতে পারবে।

 

কোম্পানির সিইও

বিশ্বে এই প্রথমবার কোম্পানির সিইও পদে ‘রোবট’ রোবটের নির্দেশে চলবে মানুষ। মোবাইল গেম প্রস্তুতকারী চীনা কোম্পানি নেটড্রাগন ওয়েবসফট এমন অবিশ্বাস্য ব্যাপারকে বাস্তবে পরিণত করেছে। কোম্পানিটি সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) একটি ভার্চুয়াল মানুষকে (রোবট) জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। হিউম্যানয়েড ওই রোবটটির নাম ‘ট্যাং ইউ’। নিয়োগের পর মিস ট্যাং ইউ ফুজিয়ান নেটড্রাগন ওয়েবসফটে তার কাজ শুরু করেছেন। কোম্পানিটির বিবৃতিতে জানা গেছে, কোম্পানির দৈনন্দিন কর্মকান্ডে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে এ রোবট। এভাবে ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে আরও বেশি কার্যকরী করতে কাজ করবে ট্যাং ইউ। এ ছাড়া কোম্পানির বোর্ডের জন্য রিয়াল-টাইম ডেটা সেন্টার ও অ্যানালিটিক্স টুল হিসেবেও কাজ করবে এ রোবট।

রোবট যখন নায়িকা

একটি জাপানি ছবিতে কাজ করেছে রোবট। ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় করে অ্যান্ড্রয়েড রোবটটি। রোবটের নাম জেমিনয়েড এফ। আর ছবির নাম ‘সায়োনারা’। এই প্রথম কোনো মানুষ নায়কের বিপরীতে রয়েছে রোবট নায়িকা। জাপানের পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে ছবি এগিয়েছে রোবট ও তানিয়া নামের এক মহিলার সম্পর্ক নিয়ে। রোবটের সংস্পর্শে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তানিয়া। এর আগে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ওপর স্পেশাল এফেক্টসে ছবিতে তৈরি হয়েছে রোবট। পরিচালকের কথা শুনে কৃত্রিম বুদ্ধির সাহায্যে কাজ করে লিওনা। জাপানি পরিচালক কোজি ফুকাদা, নাট্যকার ওরিজা হিরাতা এবং ওসাকা ইউনিভার্সিটির ইন্টেলিজেন্ট রোবোটিকস ল্যাবরেটরির অধ্যাপক হিরোশি ইশিগুরো এ ছবি তৈরি করেছেন। ২৮তম টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে এ ছবি। আরও রয়েছে সুন্দরী মডেল কন্যা হিউম্যান সাইবারনেটিক। হিউম্যান সাইবারনেটিক এইচআরপি রোবটটি অবিকল মানুষের মতো দেখতে। এর মুখাবয়বে জাপানি মেয়ের চেহারা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাকে দেখে আপনার মনে হতে পারে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী কোনো মেয়ে।  এটি সুন্দর মুখাবয়ব এবং কাঁধ পর্যন্ত চুলের অধিকারী এক অপরূপ সুন্দরী নারী রোবট। এ রোবটটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একটি মডেল কন্যা।

 

রোবট করছে জাদুঘরের কাজ

জাদুঘরকর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে এক রোবট। আর তাকে নিয়েই বিশ্বজুড়ে চলছে হইচই। ঘটনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। সম্প্রতি দেশটির দ্য মিউজিয়াম অব ফিউচারে আমেকা নামের এক মানবসদৃশ রোবটকে জাদুঘরে চাকরি দিয়েছে। রোবটটি দর্শনার্থী এলে তাকে স্বাগত জানাতে পারে। কোথায়, কোনদিকে কীভাবে যেতে পারে সে পথও দেখিয়ে দিতে পারে। কথাও বলতে পারে একাধিক ভাষায়। দেখতে মানুষের মতো হলেও আমেকা নামের এ রোবটটি হাঁটাচলা করতে পারে না। রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আমেকা যাতে চলাচল করতে পারে, এমন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে তারা। জাদুঘরে নিয়োগ হওয়ার পর থেকেই রোবটটি অন্য কর্মীদের মতো দর্শনার্থীদের সাহায্য করবে। পাঁচ দিন আগে জাদুঘরের ফেসবুক ও টুইটার পাতায় একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ওই জাদুঘরের আয়া নামের এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলছে রোবট আমেকা। ভিডিওটি পোস্ট করে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ লিখেছে- আমেকা মানুষের মতো দেখতে যেসব রোবট বিশ্বে আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত। জাদুঘরের ওই কর্মীর সঙ্গে আমিরাতের ভাষায় কথা বলতে শোনা যায় রোবট আমেকাকে। এখন থেকে দর্শনার্থীরা ওই জাদুঘরে গেলে আমেকাকে দেখতে পারবেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট হওয়া ওই ভিডিওটি প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দেখেছে। প্রতিক্রিয়া এসেছে দেড় হাজারের বেশি। একটি রোবটের জাদুঘরকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার খবরে যারা বিস্মিত হয়েছেন, মন্তব্যের ঘরে অভিমত জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যে কত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, তা বোঝার জন্য এই ভিডিও যথেষ্ট। আমি ভাবছি, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে মানুষ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, এটা একই সঙ্গে আশ্চর্যজনক ও ভীতিকর। তিনি আরও লিখেছেন, ‘২০৭১ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই ও রোবট-সংক্রান্ত প্রযুক্তি কতটা এগিয়ে যাবে, আমি সেটাই ভাবছি।’ তৃতীয় একজন লিখেছেন, আমেকাকে জাদুঘরকর্মী হিসেবে দেখা একই সঙ্গে গা ছমছমে ও দারুণ।

 

শেষকৃত্য পরিচালনায়

শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্যও রয়েছে রোবট। পুরোহিত রোবট তৈরির কাজটি করেছে জাপানের রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংক। রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ‘পিপার’ নামের একটি রোবটের প্রদর্শন করে যা বৌদ্ধ ধর্মানুসারে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সক্ষম। শুধু বৌদ্ধ ধর্মানুসারে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পরিচালনাই নয়, এর পাশাপাশি জাপানি রীতিনীতির প্রতিও সমান খেয়াল রাখবে সফটব্যাংকের ‘পিপার’। রোবটটি যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের মন্ত্র উচ্চারণ করছে, তা তৈরি করছে জাপানি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান নিসেই ইকো। এরই মধ্যে জাপানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘পিপার’।

 

রান্নায় এক্সপার্ট

একদম পাকা রাঁধুনির মতো পায়েলা নামের একটি খাবার রান্না করে দেখিয়েছে এক রোবট। রোবটের হাতে স্প্যানিশ রান্নার স্বাদ ছিল দারুণ। পাশে রান্নার উপাদান রেখে দিলে রোবট তার হাত দিয়ে নিখুঁতভাবে রান্না করতে পারে। হোটেল এবং রেস্তোরাঁর পাশাপাশি একটি জাপানি সংস্থাও রোবটটির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। রোবটটি বানিয়েছে ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি মিমকুক। উদ্ভাবকরা জানিয়েছেন, মানুষ যাতে সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দিতে পারে সে জন্যই এমন রোবট বানিয়েছেন তারা। এটা কফি বা জুস মেশিনের মতো।

 

সর্বশেষ খবর