সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিচিত্র রেস্টুরেন্ট

তানভীর আহমেদ

বিচিত্র রেস্টুরেন্ট

সবচেয়ে উঁচুতে ‘অ্যাটমোস্ফিয়ার’

দুবাইয়ের অ্যাটমোস্ফিয়ার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেস্টুরেন্টের খেতাব পেয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় নির্মিত রেস্টুরেন্টটি দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফার ১২২তম তলায়। বোঝাই যাচ্ছে এত উঁচুতে রেস্টুরেন্টের ‘ভিউ অভ সিনারিও’ কতটা দৃষ্টিনন্দন। মাটি থেকে ৪৪২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ রেস্টুরেন্টটির আগে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় অবস্থিত রেস্টুরেন্ট ছিল কানাডার টরন্টোতে। কানাডার সিএন টাওয়ারের ঘূর্ণায়মান সেই রেস্টুরেন্টটিকে হারিয়ে দিয়েছে অ্যাটমোস্ফিয়ার।

৮২৮ মিটার উচ্চতার বুর্জ আল খলিফার মূল টাওয়ারের করপোরেট স্যুট লবি থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য নিজস্ব লিফট রয়েছে। এর লাউঞ্জে একসঙ্গে ২১০ জন লোক বসতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে রেস্টুরেন্ট থেকে আমিরাতের চমৎকার আকাশ দেখার অভাবনীয় সুযোগ। তবে এত উঁচুতে উঠে যদি পকেট ভারী না থাকে তাহলে কিছু না খেয়েই ফিরতে হবে মানে এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। ধনীদের জন্য লাঞ্চ আর ডিনারের প্রতিটি সেট যদি খেতেই হয় তাহলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য তাকে গুনতে হবে কমপক্ষে মাথাপিছু ১৭৮ মার্কিন ডলার। এখানে শুধু বৈকালিক চা পানের বিল আসবে ১০০ ডলারের কাছাকাছি। লাউঞ্জ এরিয়াতে হালকা নাস্তা এবং ড্রিংকসের জন্য খরচ করতে হবে মাথাপিছু ৫৪.৪৫ ডলার। চারদিক কাচের দেয়ালে ঘেরা রেস্টুরেন্টটি এক হাজার ৩০ বর্গমিটার এলাকা দখল করে আছে। তবে এ রেস্টুরেন্টের আরেকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে এতটা জনপ্রিয় হয়নি। প্রিয় মানুষকে বিয়ের প্রপোজাল দেওয়ার জন্য খুব জনপ্রিয় এ রেস্টুরেন্ট। অনেক খ্যাতনামা জুটির বিয়ের ও প্রেমের প্রপোজাল এসেছে এ রেস্টুরেন্টে খেতে এসেই। তবে সবকিছুর পরও পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেস্টুরেন্টের খ্যাতিই সবাইকে ছাড়িয়ে যায়।

 

আছে পানির নিচেও

মাটির ওপরে বিচিত্র সব রেস্টুরেন্টই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে মালদ্বীপে। পানির নিচের এ রেস্টুরেন্ট বিজ্ঞানের কল্প-কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। পোলিশ আর্কিটেকচারাল এবং ডিপ-সি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ডিপ ওসেন টেকনোলজি এ রেস্টুরেন্টের প্রাথমিক কাজ করেছিল। তবে পানির নিচে রেস্টুরেন্ট এটিই প্রথম নয়। এ রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা সবকিছুকেই যেন ছাড়িয়ে যায়। মালদ্বীপে নির্মিত রেস্টুরেন্টটি আন্ডার ওয়াটার হোটেলের ধারণাটাকেই পাল্টে দিয়েছে। স্পেসশিপ আকৃতির এ রেস্টুরেন্ট এখনো চালু না হলেও আলোচিত সারা দুনিয়াতেই। প্রাথমিক নির্মাণ কাজে অনেকটা ফ্লাইং সসার বা ইউএফও আকৃতির এ রেস্টুরেন্ট সবাইকে আকর্ষণ করছে। বিলাসবহুল এ রেস্টুরেন্টটি হোটেল হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। দুটি বিশাল ডিস্ক আকৃতির লাউঞ্জ নিয়ে হোটেলের সুবিধাগুলোও যোগ করা হয়েছে। একটি পানি থেকে সাত মিটার উপরে পাঁচটি পিলারের উপরে অবস্থিত। গ্লাস টানেল দিয়ে পানির তলদেশে অপরটিতে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। উপরের ভাগে রেস্টুরেন্ট, স্পা করার ব্যবস্থা, হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাড, বাগান রাখা হয়েছে। অতিথিরা উপর থেকে ভৌগোলিক আবহাওয়ার স্বাদ নিতে পারবেন আবার একই সঙ্গে পানির তলদেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতাও উপভোগ করতে পারবেন। পানির তলদেশের ৩০ মিটার নিচের অংশটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সাবমেরিনসদৃশ হোটেল বারও থাকছে এতে। পানির নিচের এ রেস্টুরেন্টে খাদ্য তালিকায় থাকছে সামুদ্রিক সব মাছ। তবে খাবারের মেন্যু হাতে নিয়ে আশপাশে চোখ বুলালে সেই মাছগুলোকেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাবে।

 

অদ্ভুত গুহা রেস্টুরেন্ট

অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট বানাতে গিয়ে গুহা রেস্টুরেন্টের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় আফ্রিকায়। আফ্রিকার দক্ষিণ মোম্বাসার ডায়ানি সমুদ্র সৈকতে আলী বাবার গুহা রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। এ গুহাটি পাঁচ লক্ষাধিক বছর আগের বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সবটুকু গুহাই প্রবাল চুনাপাথরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করাই ছিল। পরে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এর আকার-আকৃতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছিল। তবে এখানে গুহা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ ও ব্যবহারের উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিক জর্জ বারবোঁরও কিছু ভূমিকা রয়েছে।

গুহা রেস্তোরাঁর ইচ্ছা থেকে এখানে প্রবেশের কমপ্লেক্স মাকুতি পাম গাছের শাখায় তৈরি ছাদে আবৃত যা একটি পাম ট্রি ধরে রেখেছে। গুহা রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকা আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। এ বিশেষত্বের কারণে আপনি যা খেতে চান সেটার তালিকা দিয়ে রাখতে হবে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে। এ রেস্টুরেন্টের পরিবেশ এতটাই গুমোট যে, এখানে গরম খাবারের পরিবর্তে ঠান্ডা খাবারের জনপ্রিয়তাই বেশি। তবে গুহা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় আপনাকে দেওয়া হবে একটি বিল পেপার যেটা দেখে মাথা ঘুরিয়ে যাবে। কারণ এখানকার খাবারের উচ্চমূল্য।

খাবারের এত দাম রাখার কারণ এ রেস্টুরেন্টের মেইনটেন্যান্স খরচ। এমনিতেই প্রায় ভঙ্গুর দেয়ালের কারণে গুহা রেস্টুরেন্টে অতিথিদের আনাগোনা কম। যারাই আসেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি রাখা হয় সবার আগে। এ জন্য এ রেস্টুরেন্টে খেতে আসা সবাইকে আগে থেকে দেওয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে টিকতে না পারলে এখানে ডিনারের জন্য খেতে আসার অনুমতি নেই। অদ্ভুত গুহা রেস্টুরেন্টে অনেকেই খেতে আসেন এ অদ্ভুত অনুভূতির জন্য। মনে হবে যেন ফিরে গেছেন সেই প্রাচীন আমলে। গুহার ভিতরের গুমোট পরিবেশের সঙ্গে ক্যান্ডেল ডিনারের জন্য ইতোমধ্যেই বেশ বিখ্যাত হয়েছে এ গুহা রেস্টুরেন্ট।

 

ভাসমান দ্য সল্ট অ্যান্ড স্টিল

ভাসমান রেস্টুরেন্টের কথা অনেকেই হয়তো শুনেছেন। অবাক করা এ রেস্টুরেন্টটি রয়েছে সুইডেনে। সুইডেনের ভাসমান রেস্টুরেন্ট ‘দ্য সল্ট অ্যান্ড স্টিল’ একটি ২৩ কক্ষের বার্জ। এখানে সেরা সামুদ্রিক খাবার বিশেষভাবে হেরিং ও তাজা স্থানীয় খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে আলাদা আউটডোর, বসার জায়গা। তবে এর মূল সুইটের একটি আলাদা সুবিধা রয়েছে। সেটা হচ্ছে ছাদের উপরিভাগে জাকুজ্জি। রেস্টুরেন্টটি একটি হ্রদে অবস্থিত। এর ধারে-কাছের উপকূলে থাকার আর কোনো বাড়িঘর নেই।

ভাসমান এ রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্পিডবোটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে স্পিডবোটকে দিতে হবে না কোনো ভাড়া। একেবারেই বিনামূল্যে তারা হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এখানের খাবারের মান নিয়ে একটি ঐতিহ্য আছে যে, আজ পর্যন্ত কেউ তাদের খাবার নিয়ে অভিযোগ করেনি। প্রতিবারই দেওয়া হয় একদম ফ্রেশ একটি ডিস। এ রেস্টেুরেন্টের আউটডোর থেকে বিশাল জলরাশি পেরিয়ে দেখা মিলবে কাছেই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তেড়ে আসা পানির স্রোত। ঢেউ ভেঙে আসা পানির ফেনার চমৎকার দৃশ্য দেখার জন্যও অনেকে এ রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন। ভাসমান এ রেস্টুরেন্ট দেখা যায় অনেক দূর থেকেও। লঞ্চের ডেকের মতো দেখালেও আসলে পুরো বাড়ির সব কিছুই এখানে রয়েছে। অনেকে এটাকে হোটেল ভেবে ভুল করলেও আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট।

 

অবাক জলপ্রপাত রেস্টুরেন্ট

জলপ্রপাতের সামনে রেস্টুরেন্টের প্রিয়জনকে নিয়ে লাঞ্চ অথবা ডিনার করার কথা ভাবলে ফিলিপাইনে যেতে হবে। ফিলিপাইনের ওয়াটার ফল রেস্টুরেন্ট বা জলপ্রপাত রেস্টুরেন্ট ডিলা এস্কুডেরো দেশটির কুইজন প্রদেশে অবস্থিত। রেস্টুরেন্টটি লামাসন নামের জলপ্রপাতের পাদদেশে অবস্থিত। যদিও এ রেস্টুরেন্টে উষ্ণ ও আরামদায়ক কক্ষ রয়েছে তবুও পর্যটকরা রেস্টুরেন্টের বাইরে চেয়ার-টেবিলে বসে জুতা-মোজা খুলে জলপ্রপাতের পানিতে পা ভিজিয়ে নানা প্রকার ফিলিপিনো খাবার খেতে পছন্দ করেন। জলপ্রপাতের পানির ধারা তাদের পায়ের পাতা ও গোড়ালি ভিজিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে জলপ্রপাতের ঠিক নিচে অবস্থান করা বিপজ্জনক হলেও পর্যটকরা তা উপভোগ করেন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হিসেবেই।

সর্বশেষ খবর