সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যক্তিগত দ্বীপের কাহিনি

ব্যক্তিগত দ্বীপের কাহিনি

বিশ্বের বেশ কিছু ধনী ব্যক্তি বিশাল ভূখন্ড নয়, আস্ত দ্বীপ কিনে নিয়েছেন। নিজেদের মতো করে অবসর কাটাবেন, বিনোদনের উপলক্ষ হিসেবেই দ্বীপ কেনেন তারা।  কালেভদ্রে সেখানে বেড়াতে যান। তেমনই কয়েকটি দ্বীপের কথা নিয়ে আজকের রকমারি-

 

রবিন্স আইল্যান্ড

নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের অদূরের সমুদ্রে অবস্থিত বরিন্স দ্বীপকে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও মূল্যবান দ্বীপ মনে করা হয়। এ দ্বীপের মালিক ওয়াল স্ট্রিটের ফাইন্যান্সার ৫৫ বছর বয়সী লুইস ম্যুর বেকন। তিনি দেউলিয়া আদালতের নিলাম থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলারে রবিন্স আইল্যান্ডটি কিনে নেন। অপরূপ সুন্দর এ দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে বৃক্ষ আমদানিসহ বিভিন্ন কাজে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন বেকন। তিনি ৪৪৫ একরের এ দ্বীপটিতে পূর্বাঞ্চলীয় কচ্ছপসহ বিভিন্ন বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলো সংরক্ষণের জন্য ন্যাচারাল কনজারভেন্সিকে ১১ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করেন। এ বিলিওনিয়ার দ্বীপটিতে তার পরিবারের জন্য অবকাশ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। এখানে একটি হেলিপ্যাডও রয়েছে।

 

লানাই

বিশ্বের ব্যয়বহুল দ্বীপগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে লানাই। এটি হাওয়াইয়ের ষষ্ঠ সর্ববৃহৎ দ্বীপ। বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী প্রযুক্তি জায়ান্ট ল্যারি এলিসন এ দ্বীপটির ৯৮ ভাগ ক্রয় করেন। তিনি আরেক বিলিওনিয়ার ডেভিড মরিডকের কাছ থেকে এটি ক্রয় করেন। ১৪১ বর্গমাইল আয়তনের আনারস খেতের জন্য প্রসিদ্ধ এ দ্বীপে তিন হাজার লোকের বাস। পর্যটকরা দ্বীপটি ভ্রমণ করেন। দুটি চার ঋতুর রিসোর্ট, গলফের মাঠ ও বিলাসবহুল বাড়ির জন্য এটি বিখ্যাত। দ্বীপের দুই শতাংশ ভূমি ও সম্পত্তির মালিক স্থানীয় জনগণ।

 

জেমস আইল্যান্ড

এ দ্বীপের মালিক মার্কিন টেলিকম বিলিওনিয়ার ক্রেইগ ম্যাককো। ম্যাককো ভ্যাঙ্কুভারের উপকূলের অদূরে সমুদ্রে অবস্থিত ৭৮০ একরের এ দ্বীপটি ছিল কানাডার এক্সপ্লেসিভস প্ল্যান্টের দ্বীপ। কিন্তু বছর বিশেক আগে এটিকে এক্সক্লুসিভ আইল্যান্ড রিট্রিট অর্থাৎ বিশেষ অবস্থানের দ্বীপে পরিণত করা হয়। ১৯৯৪ সালে এটিকে ১৯ মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করেন ক্রেইগ ম্যাককো। তিনি এ দ্বীপটিতে পাঁচ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি মূল বাসাবাড়ি, ছয়টি অতিথিশালা, একটি পুল, প্রাইভেট ডক, বিমান ঘাঁটি ও ১৮ হোলবিশিষ্ট গলফ ময়দান তৈরি করেছেন। এখানে একটি লাইব্রেরি, একটি ব্যায়ামাগার ও জেনারেল স্টোরও রয়েছে। এখানে দ্বীপের ভূগর্ভে বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচল করে। এখানে ধূমপান নিষিদ্ধ। সর্বশেষ অবশ্য ম্যাককো এটিকে বিক্রির চেষ্টা করছেন।

 

হর্স আইল্যান্ড

হর্স আইল্যান্ড। আয়ারল্যান্ডের উপকূল থেকে দূরে তিনটি সৈকত, সাতটি বাড়ি আর প্রাকৃতিক বনভূমির ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি দ্বীপ ৬.৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হয়। অজ্ঞাতনামা ইউরোপীয় এক ক্রেতা স্বচক্ষে না দেখেই কিনে নিয়েছেন দ্বীপটি। আয়ারল্যান্ডের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের ১৫৭ একরের এ দ্বীপটি হর্স আইল্যান্ড নামে পরিচিত। দ্বীপটি বিক্রির বেশিরভাগ কথাবার্তা সম্পন্ন হয় হোয়াটসঅ্যাপে। অজ্ঞাত এ ক্রেতা এক ভিডিও ট্যুরের মাধ্যমে দ্বীপটি পছন্দ করেন। করোনোর সময় তিনি শীর্ষ ধনকুবেরদের এ ধরনের উদ্যোগের তালিকায় যুক্ত হওয়া একজন।

 

বারলোক্কো আইল্যান্ড

স্কটল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত দ্বীপ। নাম বারলোক্কো। জনবসতিহীন ওই দ্বীপে একটি ডোবা রয়েছে যেটি বন্যার সময় জলে ভরে যায়। শীতের সময়টা সেখান থেকেই গবাদিপশু ও বাকি প্রাণীদের তৃষ্ণা নিবৃত্তি হয়। দ্বীপটিতে পৌঁছতে হলে একমাত্র উপায় নৌকা। নুড়ি বিছানো একটি সৈকতও রয়েছে। এ দ্বীপটি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হতে চলেছে গালব্রেইথ গ্রুপ অর্থাৎ যে সংস্থাটি এ দ্বীপ বিক্রির বিষয়টি দেখছে, তাদের প্রতিনিধি অ্যারন এডগার বলেন, ‘এখনো ব্যক্তিগত দ্বীপ কেনা নিয়ে রোমান্টিক একটা ভাবাবেগ রয়েছে, যেখানে প্রত্যেক দিনের চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে শান্তিতে কিছুটা সময় কাটানো যায়।’ বারলোক্কো দ্বীপ থেকে সবচেয়ে কাছের শহরটি অন্তত ৬ মাইল দূরে। নিকটতম রেল স্টেশনে পৌঁছতেও ঘণ্টাখানেক লাগে। লন্ডন এবং এডিনবরা প্রায় ৩৫০ মাইল ও ১০০ মাইল দূরে। প্রায় ২৫ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এ দ্বীপ। যেদিকে দুই চোখ যায়, ঘন সবুজ ঘাস। সৈকতের দিকে এগোলে অবশ্য পাথুরে জমির ভাগ বাড়তে থাকবে। অন্যতম বড় সি-বার্ড পপুলেশনও রয়েছে এখানে। যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালোবাসেন তাদের কাছে এ দ্বীপ অত্যন্ত বড় প্রলোভন। তা ছাড়া বিবিধ বন্যপ্রাণীর আস্তানা এটি। এখানে ‘ব্ল্যাক-বেকড গাল’ নামে এক ধরনের পাখির খোঁজ পাওয়া যায়। বস্তুত, এখানে এমন বিরল ‘ফ্লোরা’ এবং ‘ফনা’ পাওয়া যায় যে জায়গাটি ঘিরে আলাদা উৎসাহ রয়েছে ব্রিটেনে। সেই উৎসাহ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ওই দ্বীপকে এবার বিক্রির পথে সংস্থাটি।

 

নেকার আইল্যান্ড

ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসে অবস্থিত এ দ্বীপটি ভার্জিন গ্রুপের রিচার্ড ব্রানসনের। তিনি ১৯৭৮ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড দিয়ে এটি ক্রয় করেন। ব্রিটিশ ধনী ব্রানসন ১৯৮০ সালে ৭৪ একরের এ দ্বীপে একটি বিলাসবহুল রিট্রিট বা আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলেন। ইন্দোনিশয়ার বালি স্টাইলে নির্মিত এখানকার বাড়িগুলো দেখাশোনা করে ৬০ জন প্রাইভেট স্টাফ। রিসোর্টের প্রতিটি কক্ষের এক সপ্তাহের ভাড়া ৩৫ হাজার ডলার। এক রাতের জন্য গোটা দ্বীপের ভাড়া ৫০ হাজার ডলারেরও বেশি।

 

বিল গেটসকে ডিভোর্স দিয়ে যে দ্বীপ ভাড়া করেছিলেন মেলিন্ডা

বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হয়েছেন বিল গেটস। তার সঙ্গেও বনিবনা হয়নি স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের। ২৭ বছরের সংসারজীবন পার করে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন তিনি। বিচ্ছেদের ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে শুরু করেন মেলিন্ডা। একটি নির্জন ব্যক্তিগত দ্বীপ ভাড়া করেন। ক্যারিবিয়ানের গ্রেনাডার অন্তর্গত একটি ছোট দ্বীপ এটি। দ্বীপটির নাম ক্যালিভিগনি। ক্যালিভিগনির এ দ্বীপ মূলত ব্যক্তিগত সম্পত্তি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিত্তবানরা ছুটি কাটাতে এ দ্বীপে আসেন। মোটা অংকের টাকা ভাড়া দিয়ে কয়েক দিনের জন্য এ পুরো দ্বীপ উপভোগ করে যান তারা। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পারিবারিক ছুটি কাটানো সব কিছুর জন্যই ভাড়া নেওয়া যায় দ্বীপটিকে। সমুদ্রেঘেরা এ দ্বীপে যে রিসোর্টটি আছে তাতে ২০টি ঘর রয়েছে। শৌচাগার রয়েছে ১০টি। সুইমিং পুল, স্পা, নানা ধরনের খেলার জায়গা রয়েছে এ রিসোর্টে। বিনোদনের কোনো অভাব নেই এ দ্বীপে। পাশাপাশি প্রকৃতির কাছে থাকার সুযোগ তো রয়েছেই। মেলিন্ডা এ দ্বীপে থাকার জন্য প্রতিদিন ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার ভাড়া দেন। বিশ্বের প্রতিটি বিত্তবান মানুষের কাছেই এ দ্বীপটি জনপ্রিয়। গ্রেনাডা বিমানবন্দরের খুব কাছে রয়েছে দ্বীপটি।

সর্বশেষ খবর