সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনো অমীমাংসিত রহস্য

এখনো অমীমাংসিত রহস্য

পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। এসব রহস্যের সমাধান করতে কম চেষ্টা করা হয়নি। তবু অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত যা শুধু প্রশ্ন রেখেই চলেছে, উত্তর নেই।  রহস্যগুলোর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়েছে সবাইকে। কিন্তু এটা সত্য যে, এমন অনেক রহস্য রয়েছে যা বিশ্লেষণ করা যায়নি। শুধুই নিখাদ রহস্যগুলো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মানুষের মধ্যে। তেমন কিছু রহস্যময় ঘটনা নিয়েই আজকের রকমারি-

 

হারানো বিমান

খোঁজ বিমান রহস্যের সমাধান করতে কম চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সমাধান হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল থেকে এই রহস্যের শুরু হলেও বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়। কী ঘটেছে সেসব বিমানের তা জানা যায়নি। তবে একটি ঘটনা বেশ রোমহর্ষক। কারণ বিমানটি শেষ যখন যোগাযোগ করেছিল তখন বিমানের পাইলট জানিয়েছিলেন, তাকে গোলাকার এক বস্তু তাড়া করছে। এ ধরনের উড়ন্ত বস্তুকে সাধারণত ইউএফও হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৮ সালে। সেদিন অক্টোবর মাসের ২১ তারিখ। একটি সেসেনা বিমান চালাচ্ছিলেন ২০ বছর বয়সী ফ্রেডরিখ। বিমানটি তখন অস্ট্রেলিয়ার কিং আইল্যান্ডের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বিমানসহ ফ্রেডরিখ উধাও হয়ে গেলেন। উধাও হওয়ার আগে রেডিওতে তিনি জানিয়েছিলেন, একটি অপরিচিত আকাশযান তিনি দেখেছেন। সেটি তার বিমানের গতিতেই তার দিকে ধেয়ে আসছে। এই তার শেষ যোগাযোগ পৃথিবীর কারও সঙ্গে। এরপর তিনি আকাশ থেকে বিমানসহ একেবারেই উধাও!

 

ইউএফও ঘিরে চাঞ্চল্য

ইউএফও তাড়া করে পাইলটসহ বিমান উধাও করে দেওয়ার ঘটনা শোনা গেলেও ইউএফওর পতনের কথা খুব কমই শোনা গেছে। তেমনি একটা ঘটনা ঘটেছিল কানাডায়। সাগ হারবার, নোভা স্কোটিয়া। ১৯৬৭ সালের ঘটনা। হঠাৎ করেই সেদিন এই এলাকার মানুষ এক অদ্ভুত বস্তু আকাশ থেকে সেখানে পড়তে দেখে। বস্তুটি কী ছিল সঠিক করে কেউ বলতে পারল না। কানাডার সরকারি অনেক সংস্থা এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে এমনকি সরকারিভাবে পানির নিচে সেই বস্তুটির খোঁজে অভিযান চালানো হয়। এমনকি আমেরিকার একটি ইউএফও স্টাডিজ থেকেও এ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। কিন্তু তবু এই রহস্যের কূলকিনারা করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে কানাডিয়ান সরকার ঘোষণা দেয়, অপরিচিত একটি আকাশযান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এই আকাশযানটি পৃথিবীর কোনো বস্তু নয়। এ ঘোষণার পর রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। তারপর এ নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্য কাজ করার কথা বলা হলেও সে অর্থে কোনো কিছু আর বের করা সম্ভব হয়নি।

 

ভেসে এলো যাত্রীবিহীন ইয়ট

ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। মাত্র তিনজন যাত্রী নিয়ে ২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল একটি প্রাইভেট ইয়ট সমুদ্রে নেমেছিল। তখন কেউ জানত না কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে সবার জন্য। যাত্রা শুরুর তিন দিন পরের কথা। ইয়টটি ফিরে এলো ঠিকই কিন্তু ইয়টের ভিতরে নেই কোনো মানুষ। এমন নয় যে, মানুষ ছাড়া এটি চলেছে। মানুষ কোথায় গেল কেউ জানে না। তবে ইয়টের কাছে গিয়ে দেখা গেল মানুষ ছাড়াই এটি দিব্যি চলছে। সমুদ্রের মাঝে সেই জায়গা থেকে বেশ দূরে টাউনসভিলেতে প্রায় ১৫০ কি.মি. দূরে এটি শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। তখন সবাই ভেবেছিল এর ভিতরে নিশ্চয়ই মানুষ আছে। কিন্তু এটি বন্দরে আসার পর বিস্ময়ের সঙ্গে সবাই লক্ষ্য করে যে, সেই ইয়টটিতে ইঞ্জিন তখনো চলছে। ভিতরে ঢোকার পর দেখা গেল, একটি ল্যাপটপ তখনো চালু হয়ে আছে। রেডিও ও জিপিএস ঠিক আছে এবং তিনজনের খাবার সাজানো টেবিলে। কিন্তু সেই যাত্রী তিনজনের কোনো অস্তিত্ব নেই আর। একেবারে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে সবাই। এমনকি লাইফ জ্যাকেটসহ সব ইয়টেই আছে। তদন্তকারীরা একটি ভিডিও ক্যামেরা আবিষ্কার করেন; যেখানে ইয়টটি আবিষ্কার হওয়ার কিছুক্ষণ আগের একটি ভিডিও আছে। সেখানে তিনজন মানুষ দেখা গেলেও হঠাৎ করে তারা কোথায় উধাও হয়ে গেল কেউ ভেবে কূলকিনারা করতে পারল না।

 

 অদ্ভুত কোড

এলিয়েন আছে কি নেই সে নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। অনেকেই অনেক যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন যে, এলিয়েন আছে। তখনই প্রশ্ন জাগতে পারে, এলিয়েন থাকলে তারা কেন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। অথবা মানুষই কেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই রহস্যের একটি সহজ উত্তর রয়েছে। আর সেই উত্তরই একটা রহস্য! ঘটনাটা ঠিক এ রকম। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা। ডক্টর জেরি এহমান ‘বিগ এয়ার রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে তার সিইটিআই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে তিনি খুব রেডিও সিগন্যাল পেতে শুরু করেন। অবাক হয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন কেউ একজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। তিনি দ্রুত ছুটে গেলেন কম্পিউটারের কাছে। রেডিও সিগন্যালে কী আসছে তা জানার সবচেয়ে উন্নত উপায় হচ্ছে সেটি দ্রুত প্রিন্ট করে ফেলা। তিনি তাই সিগন্যালটি প্রিন্ট করিয়ে নিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৭২ সেকেন্ডব্যাপী এই সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যায়। তিনি প্রিন্ট হাতে নিয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলেন এই সিগন্যালটি নেহাত কোনো কোড নয়। প্রিন্ট আউট কাগজটি হাতে নিয়ে তিনি লিখে রাখলেন ‘ডড়!ি’। তখন থেকেই এটি এই নামে পরিচিত। মহাকাশ নিয়ে সেই সময় গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন এই বিজ্ঞানী। অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল এই সিগন্যালটি ঠিক কোথা থেকে এসেছে সেটা বের করার জন্য। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি আজও।

 

ভৌতিক আলো

টেক্সাসের মারফি এলাকা। এখানে দেখা মেলে রহস্যময় আলো। অনেকে বলে থাকেন এই আলোগুলো আসলে ভৌতিক আলো। আলোগুলো এই জায়গাটিতে আকাশের ওপর ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এই ভৌতিক আলোর প্রথম দেখা পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালে। যদিও স্থানীয়রা বলে বেড়ান আরও অনেক আগে থেকেই এখানে এই আলোর দৌড় দেখা যেত। তবে মিডিয়ার কল্যাণে ১৯৫৭ সালের পর থেকে এ ঘটনা ছড়িয়ে যায়। কৌতূহলী মানুষ জানতে চেয়েছে কেন এই আলো এখানে ছোটাছুটি করে। তবে সেটা এখনো জানা যায়নি। আলোগুলোর আকার প্রথমে একটি বাস্কেটবলের সমান থাকে। ছয়টি রঙের আলোর দল এ পর্যন্ত দেখা গেছে সেখানে।

 

সমুদ্রতলে হারানো শহর

আটলান্টিস হলো পৌরাণিক উপকথার সমুদ্রতলে হারিয়ে যাওয়া একটি দ্বীপ। এ শহরটির কথা প্রথম শোনা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৬০ অব্দের প্লেটোর ডায়ালগ টাইমাউস অ্যান্ড ক্রিটিয়াসে। প্লেটোর মতে, প্রায় ৯ হাজার বছর আগে আটলান্টিস ছিল হারকিউলিসের পিলারের পাদদেশে একটি দ্বীপ। প্লেটোর এই ঘটনা কোনো পৌরাণিক কল্পকাহিনী অনুপ্রাণিত কি না এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদরা এখনো একমত হতে পারেননি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্লেটো প্রাচীন কিছু যুদ্ধের কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আটলান্টিস নিয়ে কাহিনি গড়েছেন।

আটলান্টিসের সম্ভাব্য অস্তিত্ব নিয়ে প্রাচীনকালে অনেক বিতর্ক হয়েছে। তবে অনেকেই খুঁজে যাচ্ছেন আটলান্টিসের জনপদকে। আজ পর্যন্ত অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার হয়েছে। তবে এগুলো যে হারানো আটলান্টিস তার কোনো জোরালো প্রমাণ নেই। প্রায় ১১ হাজার বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের কোনো এক দ্বীপনগরী ছিল আটলান্টিস। আটলান্টিসের খোঁজে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর অনুসন্ধান চলেছে। হারানো আটলান্টিসের হাজারো অবস্থান চিহ্নিত করেছেন অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু কেউই জোর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর