বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইতিহাস কাঁপানো যোদ্ধার দল

আবদুল কাদের

ইতিহাস কাঁপানো যোদ্ধার দল

পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই যুদ্ধের ইতিহাস চলে আসছে। এক জাতি অন্য জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে রাজ্য বা সাম্রাজ্য দখল করায় ছিল ব্যস্ত। আর সেই ইতিহাসের দুটি দারুণ বিষয়- একটি প্রাচীন ইতিহাস ও অন্যটি তখনকার যুদ্ধের সময়ের যোদ্ধার দল। এদের মধ্যে কিছু জাতি বা জনগোষ্ঠী ছিলেন, যারা দৃঢ় মনোবল আর কৌশলী যুদ্ধে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। এ যোদ্ধারা ময়দানে নির্ভীক আর সাহসিকতার কারণে এবং অসাধারণ কলাকৌশলের জন্য অমর হয়ে আছেন। পৃথিবী সৃষ্টির জš§লগ্ন থেকে শুরু করে ইতিহাসের পাতায় পাওয়া এমন কিছু পরাক্রমশালী জাতি ও যোদ্ধাদের নিয়েই আজকের আয়োজন

 

মাওরিরা ভয়ানক যোদ্ধার দল, যারা শত্রুকে হত্যা করে মাথা সংরক্ষণ করত

মাওরিদের উৎপত্তি পূর্ব পলিনেশিয়ায়। তারা ছিল নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী। এরাই প্রথম নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী, যারা ছিল ভয়ংকর এবং আক্রমণাত্মক। মাওরিরা বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, এ কারণে তারা নিজস্ব যোদ্ধা সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠে। তাদের নিজস্ব ভাষা এবং পুরাণ আছে। প্রাচীন ইতিহাসে এদের ভয়ানক যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাদের দেশে অনুপ্রবেশকারীদের হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করত না, যার নির্মমতা দেখা গিয়েছিল প্রায় ১৮০০ শতক পর্যন্ত। শুধু কি হত্যা করেই ক্ষান্ত। না, এরা এতটাই জঘন্য ছিল যে, হত্যার পর তাদের মাংস দিয়ে ভোজন উৎসবে মেতে উঠত। তারা বিশ্বাস করত- শত্রুর মাংস খেলে নাকি আরও শক্তিশালী এবং যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করা যায়। এরা সাধারণত ১০০-এর কম যোদ্ধা (‘হাপু’) দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করত। এদের সাধারণ যুদ্ধের কৌশলই ছিল- অতর্কিত হামলা এবং অদ্ভুত সব অস্ত্রের ব্যবহার। মাওরি যোদ্ধাদের শরীরে বড় বড় ট্যাটু ছিল, যা অত্যন্ত ভয়ানক দেখাত। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ১২৫০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা একটি উপজাতি গোষ্ঠী গঠন করে এবং পরবর্তীতে এই জনগোষ্ঠী থেকে উত্থান ঘটে শক্তিশালী যোদ্ধাদের। মাওরির অন্যতম সেরা ও ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে ‘হঙ্গি হিকা’-এর নাম আছে সবার ওপরে। সম্ভবত ১৭৭৮ সালে হঙ্গি হিকার জন্ম। সর্বপ্রথম তারা ১৮০৯ সালে প্রথম ইউরোপে আসা জাহাজে আক্রমণ করে। কারণ ইউরোপিয়ানরা মাওরি প্রধানের বড় ছেলেকে অপমান করে। অপমানের বদলা হিসেবে জাহাজের ৬৬ নাবিকের ওপর হামলা চালায় এবং কিছু নাবিককে হত্যা করে।

 

মঙ্গোলিয়ানরা ইতিহাসের বর্বর ও ভয়ংকর যোদ্ধা দল যারা ছিল অত্যন্ত নির্মম

মঙ্গোলিয়ানরা পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। চেঙ্গিস খানের অধীনে তাদের সাম্রাজ্য এশিয়া এবং ইউরোপে বিস্তার লাভ করেছিল। মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধারা ছিল জঘন্যতম বর্বর। ভয়ংকর এ বিজেতার প্রতিষ্ঠিত মঙ্গোল বাহিনীর যুদ্ধবিগ্রহের করুণ ইতিহাস আজও মানব সভ্যতায় কাঁপন ধরায়। তারা অত্যন্ত নির্মম ও ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত, যারা তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি কখনোই কোনো দয়া দেখায়নি। ১৫ বছরের বেশি বয়সী সব ছেলের সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি তাদের মঙ্গোলিয়ান সৈনিক হিসেবে চাকরিও করতে হতো। ইউরোপ থেকে এশিয়া সর্বত্রই এদের বিচরণ ছিল। তবে জাতি হিসেবে মঙ্গোলিয়ানরা ছিল ভবঘুরে। তারা অত বেশি শক্তিশালীও ছিল না, যত দিন না চেঙ্গিস খান তাদের নেতৃত্বে এসেছিলেন। চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলিয়ানরা অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তিনি ছিলেন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার, যিনি ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তারা ছিল ঐক্যতার জন্য সেরা এবং রণক্ষেত্রে অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধাদের ঘোড়াগুলো সাধারণত ছোট প্রকৃতির হতো। এই ঘোড়ার সুবিধা হলো যোদ্ধারা খুব সহজেই তাদের ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধারা ঘোড়ার পিঠে চড়েই ভয়ংকর তীর আর ধনুকের ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে করতে পারত। তারা ধারালো বল্লমের মাধ্যমে তীর-ধনুক চিরে ফেলতে পারত। এ ছাড়া বর্শার আকৃতির তলোয়ারের মতো অস্ত্র অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারত। তারা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।

 

জাতি হিসেবে স্পার্টানরা ছিল যোদ্ধা অর্থাৎ তারা ছিল হিংস্র যোদ্ধা

প্রাচীন গ্রিসের বিশেষ যোদ্ধার দল স্পার্টান। ধারণা করা হয়, প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার সেরা যোদ্ধা জাতি স্পার্টান ছিল ভয়ংকর যোদ্ধার দল। ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এরা গ্রিসের প্রভাবশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়। সে সময় শক্তিশালী পুরুষরা স্পার্টান হিসেবে বিবেচিত হতো। প্রাচীন গ্রিসের হলেও এরা ছিল গ্রিক সম্প্রদায় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। স্পার্টান যোদ্ধারা ছিল খুবই হিংস্র। এরা সবসময়ই ক্ষিপ্রগতিতে চলত। তাদের গায়ে থাকত লাল রঙের বিশেষ আলখাল্লা। মাথায় লম্বা চুল। যুদ্ধের সময় তারা বিশেষ ঢাল ব্যবহার করত। স্পার্টান পুরুষদের যোদ্ধা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ (‘অ্যাগোজ’) দেওয়া হতো। স্পার্টান শব্দের শাব্দিক অর্থ নির্ভীক। তাদের মূল বাণী ছিল- যদি জয়ী হও তবেই ফেরত এসো। অর্থাৎ এরা নিজেদের নীতিতে অত্যন্ত কঠোর, এমনকি এরা রণক্ষেত্রে কখনো পেছনে ফিরে তাকাত না। তারা জন্মগতভাবেই ছিল যুদ্ধবাজ জাতি। তাদের সময়ে তারাই ছিল পৃথিবীর সেরা যোদ্ধা। যুদ্ধই ছিল তাদের মূলমন্ত্র। বলা হয়, সেকালের সবচেয়ে ভয়ংকর যোদ্ধা ছিল এই স্পার্টান্স জাতি। এদের জীবনটাই ছিল যুদ্ধ, তাই ছেলেবেলা থেকেই এদের ছেলেদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। আর প্রশিক্ষক হিসেবে থাকত জš§দাতা পিতা। ‘স্পার্টান্স’ অর্থ হচ্ছে ‘আত্মবিসর্জন’ এবং ‘সোজা জীবন যাপন।’ এরা সাদামাটা জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। তবে যুদ্ধ ছাড়া এই জাতি আর কিছুই বুঝত না। তাই মৃত্যু অবধি এরা লড়াই চালিয়ে যেত।

 

নাইটদের মূল বাণী ছিল- যদি জয়ী হও তবেই ফেরত এসো

নাইটরা ছিল মধ্যযুগের সৈন্যদল। তারা তৎকালীন অশ্বারোহী বীর যোদ্ধা। এরা সে সময়ের একমাত্র ভারী সাঁজোয়া যোদ্ধা, যারা অশ্বারোহে লড়াই চালিয়ে যেত। প্রাচীনকালের এই বীর যোদ্ধাদের কাহিনি নিয়ে নির্মাণ করা হয় ব্লকবাস্টার মুভি। ‘নাইট’ যোদ্ধারা মূলত ব্রিটিশ যোদ্ধা এবং এদের সবচেয়ে দক্ষতাসম্পন্ন অশ্বারোহী বীর যোদ্ধা বলা হয়। এদের সারা শরীর বর্ম দিয়ে ঢাকা থাকত। এরা ছিল ধনী ও সবচেয়ে সম্মানিত যোদ্ধা। নিজেদের মিশন সম্পন্ন করার জন্য তাদের ছিল ঘোড়া, আর্মার ও অস্ত্রশস্ত্র। তাদের হত্যা করা অনেক কঠিন ছিল। নাইটদের সারা জীবন কাটত প্রশিক্ষণ নিয়ে। মূলত তিন ধাপে এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তারা অল্প বয়স থেকেই নাইট সৈন্য হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিত। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২১ বছর বয়সে পূর্ণ নাইট যোদ্ধায় পরিণত হতো। আর এ জন্য নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হতো। প্রশিক্ষণে তারা ঘোড়ায় চড়ে, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করত। দীর্ঘ জীবনের প্রশিক্ষণের পর তারা পূর্ণ বয়সে একেকজন বীর নাইট যোদ্ধা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করত। আর সে যোদ্ধার ধার যাচাই করা হতো যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ইতিহাসে এরাই সবচেয়ে ধনী, দক্ষ ও সম্মানিত যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত। নাইট যোদ্ধারা যুদ্ধের মিশন সম্পন্ন করতে ব্যবহার করত ঘোড়া, ফুলবডি আর্মার ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। রাজার আদেশে এরা গোয়েন্দা হিসেবেও কাজ করত, এমনকি রাজার নিরাপত্তার দিকটাও নাইটরাই দেখত।

 

ঢাল-তলোয়ারে রোমান সাম্রাজ্যের সৈন্যরা দক্ষ যোদ্ধার দল

রোমান সাম্রাজ্য হলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। আর যুদ্ধে, কলাকৌশলে রোমানরা ছিল তৎকালীন ভয়ংকর যোদ্ধার দল। এক সময়ে রোমান সম্প্রদায় পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ শাসন করত। এমন কি ঈসা (আ.) জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে ওতাপ্রোতভাবে জড়িত এই রোমান সাম্রাজ্য। রোমান সৈনাবাহিনীর মূল ভিত্তি হলো অতুলনীয় নেতৃত্বদানের দৃঢ়তা। তারা ছিল বর্ম আর ঢালে আবৃত সৈন্যবাহিনী যা প্রাচীন গ্রিক অস্ত্রের মধ্যে ছিল অনেক উন্নত। যদিও নাকি বর্তমানে এই রোমান সাম্রাজ্যেও কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে পশ্চিম ইউরোপে রোমানরা এখনো টিকে আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে এই রোমান সাম্রাজ্যের অনেক নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে- ‘গণতন্ত্র’ বা ‘সংসদ’ ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছিল এই রোমান সাম্রাজ্য থেকেই। এরা ছিল ঢালের সঙ্গে তলোয়ার-বর্শায় দক্ষ যোদ্ধার দল। রোমান সৈনিকরা ছিল অনেক বিত্তশালী ও তারা তাদের যুদ্ধের পোশাক তৈরি করত অস্ত্র ও বর্মবেষ্টিত করে। তারা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সশস্ত্র এবং তাদের উন্নত রণকৌশল তাদের সাম্রাজ্য বা রাজত্বকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। রোমান সাম্রাজ্যের নেতৃত্বের মধ্যে যে দৃঢ়তা ছিল তা মূলত অনেকটাই রোমান সৈন্যবাহিনীর জন্যই। রোমানরা ঢাল-তলোয়ার, বর্শার মাধ্যমে অনায়াসেই শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে পারত। অস্ত্রবিদ্যার কৌশল, তাদের সাম্রাজ্য অতিক্রম করতে পাহাড় সমান বাধা অতিক্রম করতে হতো।

 

ভাইকিং যোদ্ধাদের বলা হয় প্রাচীন ইউরোপের ত্রাস ও সন্ত্রাস!

ভাইকিং মারাত্মক ভয়ংকর যুদ্ধবাজ জাতির নাম। যোদ্ধা হিসেবে ভাইকিংদের সুখ্যাতি ছিল চতুর্দিকে। এই যোদ্ধাদের সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই কমবেশি ধারণা আছে, এরা মূলত সমুদ্রভ্রমণ প্রিয় উত্তর জার্মানির আদিবাসী। এদের ইতিহাসের সঙ্গে সমুদ্রের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রপথে যাত্রাকারী এই যোদ্ধাদের একসঙ্গে ভাইকিং বলা হয়। এরাই প্রাচীন বিশ্বের ভয়ংকর যোদ্ধা। বলা হয়ে থাকে, ভাইকিং যোদ্ধাদের বলা হয় প্রাচীন ইউরোপের ত্রাস ও সন্ত্রাস! তারা লুটপাত চালাত। সমগ্র ইউরোপ চষে বেড়াত ভাইকিং যোদ্ধার দল। এরা ছিল নিষ্ঠুর ও বিশাল দেহের অধিকারী। তাদের ধর্মই ছিল যুদ্ধ। এই জাতির বিশ্বাস, তারা মারা গেলে আরেকটি যুদ্ধে যোগ দেবে। অর্থাৎ এদের যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। তারা কেবল সৈনিক হতে চাইত। তারা ছিল হিংস্র ও তাদের দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী অস্ত্র ব্যবহার করত, যে যত বড় দেহের অধিকারী তার তত বড় অস্ত্র। তারা অনেক ধাঁরালো কুড়াল, তলোয়ার, বর্শা ও বল্লম ব্যবহার করত। তাদের সামনে যারা পড়ত তাদের কোনো রেহাই ছিল না এমনকি পথে পড়ে যাওয়া শহরের পর শহর তারা ধ্বংস করে দিত। ভাইকিংদের সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র ছিল তা হচ্ছে তাদের খুনের মানসিকতা। এরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশ-বিদেশ চষে বেড়াত। এরা ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে বেশি পরিচিত, তারপরও এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ী, গোয়েন্দা অনুসন্ধানের কাজে বিভিন্ন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াত। প্রায় ১১ শতকের দিকে এরা ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আটলান্টিক দ্বীপের দিকে আসা শুরু করে। এরা খুবই যুদ্ধপ্রিয় মানুষ ও নিজেদের সীমানা নিয়ে সর্বদাই ছিল জাগ্রত এক জাতি। যুদ্ধের প্রতি এদের কোনো অনীহা ছিল না বরং যুদ্ধ করতে না পারলে এদের মন খারাপ হতো। তারা সৈনিক হতে চাইত, যার প্রমাণও তারা অনেক যুদ্ধক্ষেত্রেই রেখে গেছে।

 

অ্যাপাচিরা আমেরিকান উপজাতির মধ্যে অত্যন্ত ভয়ংকর

অ্যাপাচিরা ছিল আমেরিকার অধিবাসী। এদের আমেরিকার নিনজাও বলা হয়। তারা অনেকটা জলদস্যুর মতো। তারা এতটাই গোপনে আসবে যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকবে না এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে। তারা অনেক ধূর্ত ছিল। তারা নিঃশব্দে শত্রুর পেছনে গিয়ে কিছু বোঝার আগেই গলা কেটে হত্যা করত। রেড ইন্ডিয়ানদের মতো এই জাতিও আমেরিকার আদিবাসী। কিন্তু এরা অন্যান্য আমেরিকান আদিবাসীর মতো এত সহজে নিজেদের ভূমি বা দলের মেয়েদের অন্যদের হাতে তুলে দিত না। এরা আদিম কাঠ, পশুর হাড় ব্যবহার করে নিজেদের জন্য বেশির ভাগ অস্ত্র তৈরি করত। এ্যাপাচি যোদ্ধা হিসেবে এরা ছিল অনেক ধূর্ত এবং চালাক প্রকৃতির। প্রতিপক্ষকে সব সময় লুকিয়ে হামলা করত। হঠাৎ করে প্রতিপক্ষের পেছনে গিয়ে এরা এক টানে ছুরি দিয়ে গলা কেটে ফেলত। এতে প্রতিপক্ষের কিছুই বোঝার উপায় থাকত না। তারা ছিল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ছুরি-যোদ্ধা এবং কুঠার নিক্ষেপে খুবই পারদর্শী। এরা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমে লুটপাট, হামলা করত এবং তাদের উচ্ছেদ করতে সামরিক বাহিনীকেও অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছিল। তারা গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে অত্যন্ত প্রখর এবং তাদের উত্তরাধিকাররা আজও আধুনিক দিনের স্পেশাল ফোর্সকে হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বর্তমানে এদের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক কম হলেও আমেরিকার আর্মিতে যুদ্ধের মাঠে সব থেকে বেশি সফল এই জাতিগোষ্ঠীর উত্তরাধিকাররা। তাই আমেরিকান বিশেষ আর্মি ফোর্সে এদের অবস্থান অনেক বেশি।

 

শাওলিন যোদ্ধাদের ইতিহাস প্রাচীন সভ্যতার মতোই পুরনো

মার্শাল আর্ট নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে ‘শাওলিন কুংফু’ নামটি সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর। শাওলিন নিয়ে অগণিত কাল্পনিক এবং পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। ধারণা মতে, এখান থেকে সর্বপ্রথম মার্শাল আর্টের প্রচলন হয়েছিল। বিশেষ এ কুংফুর যাত্রা শুরু হয়েছিল বুদ্ধভদ্র নামের একজন ভারতীয় সন্ন্যাসীর হাত ধরে। এর আবার রয়েছে একটি দারুণ ইতিহাস যা অনেকেরই অজানা, আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ থেকে এক বৌদ্ধ সন্নাসী চীনে যান রাজার সঙ্গে দেখা করার জন্য, চীনা ভাষায় সেই সন্ন্যাসীর নাম ছিল ট্যামো। সেই সময় চীনের সাওয়ালিন মন্দিরে সরাসরি রাজার তত্ত্বাবধানে বৌদ্ধ ধর্মের বাণীগুলো সংস্কৃত থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। একটা সময় চীনা রাজার সঙ্গে ট্যামোর বিরোধ ঘটে। তখন থেকেই ট্যামো একটি গুহায় ধ্যান শুরু করেন। কথিত আছে- এই ধ্যানের মাধ্যমেই তিনি অলৌকিক কিছু দেখাতে পারেন যা পরে সাওয়ালিন নামে রূপ নেয়। সন্ন্যাসীদের শক্তি এবং সাহস বৃদ্ধির জন্য এক বিশেষ ধরনের শরীরচর্চার কৌশল উদ্ভাবন করে যা কি না কিছু প্রাণীর চালচলন অনুকরণে করা হয়েছিল। আস্তে আস্তে ট্যামোর প্রচলিত শরীরচর্চার এই কৌশলগুলো তারা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করা শুরু করল। এর মূল ধারণা হলো- মানবদেহকে শক্তিশালী ও প্রাণনাশক অস্ত্রে পরিণত করা। এভাবেই মূলত মার্শাল আর্টের উদ্ভব হয়, প্রথম দিকে এরা অস্ত্র ব্যবহার না করলেও পরে লাঠি, বর্শা, চেইনের মতো অস্ত্রের ব্যবহার করে।

 

ইতিহাসবিদরা মনে করেন, প্রকাশ হওয়া নিনজাদের অনেকেই কাল্পনিক চরিত্র

নিনজাদের নিয়ে গড়ে ওঠা লোককথা এবং গালগল্পে হারিয়ে গেছে পুরো ইতিহাস। রক্ত-মাংসে গড়া শক্তিশালী এই মানুষগুলো ছিল অতিমানবীয়। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পরিচয় গোপন রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুবাদে বিখ্যাত নিনজারাও থেকে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে তার মধ্য থেকেও কিছু বিখ্যাত নিনজার পরিচয় প্রকাশ হয়েছে। যদিও তাদের নিয়ে প্রচারিত হয়েছে বহু উপকথা, রূপকথা। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন প্রকাশ হওয়া নিনজাদের মধ্যে অনেকেই কাল্পনিক চরিত্র। নিনজারা গোপনে কাজ করত। তারা ছিল কৃষক। সামুরাইদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যই তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। মূলত তারা খুন ও গুপ্তহত্যায় বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করেছিল। নিনজাদের দক্ষতা নিখুঁত হতো। মার্শাল আর্ট বাদেও তাদের বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করতে হতো। দর্শন, আবহাওয়াবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, অভিনয়, গুপ্তচরবিদ্যা এবং সমরবিদ্যাও রপ্ত করতে হতো। পরিস্থিতি বুঝে তারা হালকা ও উপযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করত। যেমন- ওপরে ওঠার যন্ত্র। ব্লেড, চেন, দড়ি, বিষ ও পাউডার ইত্যাদি সঙ্গে রাখত। নিনজাদের পোশাক কালো হলেও রাতে অভিযানের জন্য নেভি ব্লু রঙের পোশাক পরত। পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাদের চোখ ছাড়া সবকিছু আবৃত থাকত। তাদের ‘শ্যাডো ওরিওরস অব দ্য নাইট’ বলা হয়। তারা তড়িৎগতিতে হত্যা ও পালিয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছিল।

সর্বশেষ খবর