রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোহিনুর হীরার দুর্গ গোলকুন্ডা

কোহিনুর হীরার দুর্গ গোলকুন্ডা

কোহিনুর, জ্যাকব, হোপ, নীলম এই বহু মূল্যবান হীরাগুলো মিলেছিল ভারতের হায়দরাবাদের গোলকুন্ডা দুর্গ থেকে। হাজার বছরের ইতিহাস প্রতিটি পরতে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই দুর্গ। ৪৮০ ফুট উঁচু এই দুর্গ থেকে পাখির চোখে দেখা যায় প্রায় গোটা হায়দরাবাদ শহর। ভারত সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সুযোগ হয়েছিল ঐতিহাসিক এই গোলকুন্ডা দুর্গ ঘুরে দেখার। দুর্গ ঘুরে এসে পাঠকদের জন্য বিস্ময়কর এই দুর্গের অজানা অধ্যায় তুলে ধরেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জয়শ্রী ভাদুড়ী ও নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী; কাজী শাহেদ

 

রহস্যের অন্তর্জালে গোলকুন্ডা

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। দুর্গের গায়ে হেলান দিয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সূর্য। কালের সাক্ষী গোলকুন্ডা দুর্গের প্রতিটি পরতে জমে রয়েছে ইতিহাস, গল্প আর মিথ। ঢিমেতালে সিঁড়ি ভেঙে গল্প বলে চলছেন দুর্গের গাইড শেখ বাবা। তার গল্পে যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল ইট-পাথরের দুর্গকে। হাজার বছর পেরিয়ে আসা সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল দর্শনার্থীর সামনে। দুর্গের প্রবেশ ফটকে ঢুকতেই চোখে পড়ে দুটি সদর দরজা। যার একটি দিয়ে হাতি ঘোড়া নিয়ে প্রবেশ করতেন বাদশা আর অন্য দরজাটি ছিল সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য। এই দুর্গের প্রথমে নাম ছিল মাটফোর্ট। স্থানীয় ভাষায় বলা হতো গোল্লাকুন্ড, গোল্লা অর্থ গোলাকার ও কুন্ড অর্থ পাহাড়। বাহমানি সুলতান কুতুব শাহ এই দুর্গ নির্মাণ শুরু করেন, যা সম্পন্ন হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৬২ বছর। সুলতান অবশ্য তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি এই দুর্গ। দুর্গ নির্মাণে ইট, বালু, সুড়কির সঙ্গে মেশানো হয়েছিল ওড়ুত অর্থাৎ অড়হর ডাল। যাতে শক্তিশালী হয় দুর্গের প্রাচীর; মোকাবিলা করতে পারে শত্রুপক্ষের আক্রমণ। দুর্গের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে এগিয়ে চলতে থাকে গল্প। দেখা মেলে চৌকোনা দুটি ঘরের, যাতে নেই কোনো দরজা-জানালা; আছে শুধু চারকোনায় চারটি পেরেক। গাইড জানান, এই পেরেকে ভারী পর্দা টাঙিয়ে আলাদা করা হতো দুটো ঘরকে। এখানে বসতেন বাদশাহর হিসাবরক্ষক দুই ভাই মান্দানা ও আকান্না। এই গল্পের মাঝে বারবার মনে উঁকি দিচ্ছিল কোহিনূর হীরার খোঁজ। জানা যায়, গোলকুন্ডার অদূরে বিজয়বরার কুত্তুর গ্রামের এক বয়স্ক নারী পেয়েছিলেন এই হীরা। হীরাটি পরে উপহার হিসেবে বাদশাহকে দিয়েছিলেন সেই বয়স্ক নারী। এরপর এই কোহিনূর হীরার জায়গা হয় গোলকুন্ডার নাগিনা গার্ডেনে। এরপর বহুবার বহিঃশত্রুর আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে গোলকুন্ডা আর লুট হয়েছে কোহিনূর হীরা। হাঁটতে হাঁটতেই জিজ্ঞাসু মনে প্রশ্ন জাগে কীভাবে এই সুউচ্চ দুর্গে মিলত পানীয় জল? জানা যায়, ২০-২৫ জন লোক ৪৮০ ফুট দূর থেকে চরকা ঘুরিয়ে সুউচ্চ এই দুর্গে তুলত পানীয় জল। হাঁটতে হাঁটতেই হাতের দুই পাশে দেখা মেলে সেই আমলের দুটি লন্ড্রির, যার একটি রাজপরিবারের নারী সদস্যদের জন্য ছিল আর অন্যটি ছিল বাদশাহ ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য। দুর্গ থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য ছিল গুপ্ত রাস্তা। যদিও তা পরে বন্ধ করে দেয় সরকার। এই দুর্গের সর্বোচ্চ চূড়ায় আছে মহাকালী ও জগদম্বা মন্দির, যা হায়দরাবাদের প্রথম মন্দির হিসেবে মনে করা হয়। দুর্গের ভিতরে তিনটি মসজিদ রয়েছে। আরও রয়েছে হাবশি কামান, উটের আস্তাবল, নাগিনা বাগ, বিশাল অস্ত্রাগার এবং সেই সময়ের হীরা ব্যবসায়ীদের বাজার। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়, কতটা উন্নতমানের স্থাপত্য কৌশলে গড়ে তোলা হয়েছে দুর্গটিকে। দুর্গে বেড়াতে এসেছিলেন পানগাঁওর অসিত কুমার, যার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নিজ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করে দিতে নিজ সন্তানদের নিয়ে এসেছেন তিনি। দুর্গের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটক বেড়াতে আসেন তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদের বহু প্রাচীন এই দুর্গে।

 

চাকরি চাইলে তুলতে হবে লোহার বিম

দুর্গের প্রধান ফকট পেরিয়ে হাতের বামে বিভিন্ন গাছ-গাছালির ছায়া। বাগানের মাঝে মাটিতে পুঁতে রাখা লোহার বিম ঘিরে সবাইকে গোল হয়ে দাঁড়াতে বলেন গাইড শেখ বাবা। সবাই থিতু হলে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন, এই লোহার দন্ডের ওজন কত হতে পারে? আন্দাজ করেন। একেক জন একেক রকম ওজন বললো। গাইড হেসে বললো, ‘নাহ, আপনাদের চাকরি হলো না।

এর ওজন প্রায় ২৪০ কেজির মতো।’ আগের দিনে রাজা-মহারাজার কাছে চাকরি চাইলে দিতে হতো শক্তি পরীক্ষা। বাদশার সামনে তুলে দেখাতে হতো এই মজবুত বিম। যে বিম তুলতে পারত তার চাকরি পাকা। অকৃতকার্য হলে ওখান থেকেই বিদায়।

 

রামদাসের খাস জেলখানা

রামদাস বন্দিখানা, এমন একটি কারাগার যেখানে রামদাস, ভগবান রামের প্রবল ভক্ত বন্দি ছিলেন। কথিত আছে রামদাস আবুল হাসান তানা শাহ, অষ্টম কুতুবশাহী শাসকের দরবারের কালেক্টর ছিলেন। ভদ্রাচলমে ভগবান রামমন্দির নির্মাণের জন্য কর ব্যবহার করেছিলেন। এ জন্য রামদাসকে সব টাকা শোধ না করা পর্যন্ত এ কারাগারে রাখা হয়।

ভারতের হায়দ্রবাদের গোলকুন্ডা ফোর্ডের গাইড শেখ বাবা এক এক করে বিভিন্ন স্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিলেন। কারাগারটির সামনে এসে সবাইকে উঁকি দিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। সবাই এক এক করে উঁকি দিয়ে দেখলেন কারাগারটি। এরপর শুরু হলো কারাগারের বর্ণনা।

গাইড বলে চললেন, রামদাস ভদ্রাচলমে রাম-লক্ষণের মন্দির নির্মাণের চিন্তা করেন। ওই সময় ছয় লাখ মহর (তখনকার দিনে অর্থ হিসেবে ব্যবহৃত স্বর্ণমুদ্রা) ব্যয় করার চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু রামদাসের মনে চিন্তা আসে, মন্দির তো বানাবো, কিন্তু অর্থ তো রাজার। বিনা অনুমতিতে তো খরচ করতে পারি না। রামদাস একটি পত্র লিখে তার শ্যালকের হাতে দিলেন। বললেন, এটি বাদশাহকে দিয়ে দাও। বাদশাহ পড়ে সব বুঝে যাবেন। তার শ্যালক ওই চিঠি বাদশাহর কাছে পৌঁছাননি। পথে কোথাও ফেলে দেন। রামদাস ভাবলেন, আমার লোক তো বাদশাহর কাছে চলে গেছে, আমি কাজ শুরু করি। এই ভেবে তিনি মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন। পুরো মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যায়। বাদশাহ বিষয়টি জানতে পারেন। সৈনিক পাঠিয়ে বাদশাহ ধরে আনলেন রামদাসকে। রাজ দরবারের সভায় দাঁড় করিয়ে অর্থ চাইলেন। রামদাস বললেন, হুজুর আমার কাছে তো অর্থ নেই। অর্থ খরচ করে ভগবানের মন্দির বানিয়েছি। বাদশাহ বললেন, তুমি অর্থ খারাপ কাজে খরচ করনি। কিন্তু অর্থ তো আমার। আমার অনুমতি ছাড়া কেন খরচ করলা? রামদাস তখন বলেন, আমি মন্দির বানানোর কথা জানিয়ে আপনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। বাদশাহ বললেন, কার মাধ্যমে? তখন রামদাস তার শ্যালকের কথা বলেন। সভায় রামদাসের শ্যালককে ডেকে আনা হয়। কিন্তু রামদাসের শ্যালক চিঠির কথা অস্বীকার করে। তার ধারণা ছিল, রামদাস সাজা পেলে তার শ্যালক চাকরিটা পাবে। বাদশাহ বললেন, রামদাস তোমার লোক বলল তুমি কোনো চিঠি দাওনি। তখন রামদাস বললেন, আপনি বাদশাহ, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনি যে সাজা দেবেন, দিতে পারেন। তখন রামদাসের ১২ বছরের সাজা দেন বাদশাহ।

সেটি জেল ছিল না। ছিল খাদ্যগুদাম। রামদাস বাদশাহর খাস লোক ছিলেন বলেন সাধারণ জেলে রাখা হয়নি। ওইখানকার গুদামের মজুদ খাদ্য অন্য গুদামে রেখে সেখানে রামদাসকে ১২ বছর বন্দি রাখা হয়। এখন সেই কারাগারে ঢুকতে যে ফটক দেখা যায়, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভিতরে পূজা করার মতো কিছু ছিল না। পাথর দিয়ে পাথরে আঘাত করে গণেশ মূর্তি বানায় পূজা করার জন্য।

যখন এখান থেকে রামদাসকে মুক্তি দেওয়া হয়, তখন রাম-লক্ষণ বাদশাহর স্বপ্নে এসেছিলেন। তারা বাদশাহকে বলেন, আপনি আপনার অর্থ নেন, আমার ভক্তকে মুক্তি দেন। বাদশাহ যেমনি স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠেন, অর্থ দেখেন, কিন্তু রাম-লক্ষণকে দেখতে পাননি। বাদশাহ নিজে সৈনিকদের নিয়ে উপরে আসেন। দেয়াল ভেঙে তাকে মুক্তি দেন এবং ক্ষমা চান। এরপর বাদশাহ বলেন, আপনার যা চায়, আমার খাজাঞ্চি থেকে নেন। রামদাস বলেন, আমার কিছু চাই না। মুক্তি দিয়েছেন, সেটিই বড়। এখান থেকে যাওয়ার পর ভদ্রাচলমে মন্দির নির্মাণ করেন। সেখানে কিছুদিন মন্দিরের সেবা করেন। এরপর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। রামদাসের যে আসল নাম ছিল তা হলো কাঞ্চারলে গোপাননা নামধে। গোলকুন্ডা ফোর্টে দেখা মিলবে এই কিংবদন্তি জেলের পিছনের গল্প।

 

দুর্গের ওপরে মহাকালী জগদম্বা মন্দির

ভারতের হায়দরাবাদের গোলকুন্ডা ফোর্টের ইতিহাস ১৩ শতকের প্রথম দিকে নিয়ে যায়। যখন এটি কাকাতিয়াদের মাধ্যমে শাসিত হয়েছিল। পরে কুতুবশাহী রাজারা ১৬ এবং ১৭ শতকে এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। দুর্গটি ১২০ মিটার উঁচু একটি গ্রানাইট পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। বিশাল ক্রেনেলেটেড প্রাচীরগুলো এই কাঠামোটিকে ঘিরে আছে। গোলকুন্ডা পাহাড়ে উঠতে আপনার ব্যস্ত সময়সূচি থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় নিন। এরপর ঘুরতে থাকুন। আপনি পেয়ে যাবেন তেলেঙ্গানার প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর একটি। গোলকুন্ডা ফোর্টের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলে মিলবে চত্বরের মতো জায়গা। পাশে ছোট গুহায় অবস্থিত জগদম্বা মন্দিরটি। এটি হায়দরাবাদের প্রাচীনতম মন্দির। ১১৪৩ সালের দিকে মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা কাকাতিয়া প্রতাপ। তখন মন্দিরটি ছোট ছিল। বাদশাহ ইব্রাহিম খলিল কুতুব শাহ মন্দিরটি বড় করেন। তার পাশেই মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার ও শনিবার এখানে পূজা-অর্চনা হয়। এটি কাকাতিয়া যুগের প্রথম দিকের। কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন, মন্দিরটি চাণক্য রাজাদের সময়কালের, যা কাকাতিয়া রাজবংশের পূর্ববর্তী। তেলেঙ্গানায় দেড় হাজারের বেশি পুরনো মন্দির আছে। কিন্তু হায়দরাবাদে (গোলকুন্ডা) একটি মাত্র মন্দির আছে, যেটি প্রায় ৯০০ থেকে হাজার বছরের পুরনো। কাকাতিয়া শাসনামলে মানকাল বা মঙ্গলাভরম নামে পরিচিত গোলকুন্ডা ছিল কাকাতিয়া শাসকদের আউটপোস্ট। কুতুবশাহীরা বর্তমানের বিশাল দুর্গটি নির্মাণের আগে এখানে একটি মাটির দুর্গ ছিল। জগদম্বা মন্দিরটি মাটির দুর্গে সৈন্যদের দেব-দেবীর প্রার্থনার জন্য নির্মিত হতে পারে। ইব্রাহিম মসজিদ ও রাজার প্রাসাদের পাশেই এই ঐতিহাসিক মন্দির।

 

চরকা ঘুরিয়ে তোলা হতো পানি

কুতুবশাহী যুগের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রকৌশল দক্ষতা বোঝা যায় গোলকুন্ডা দুর্গের পানি, পাইপ এবং কূপের মাকড়সার জাল থেকে স্পষ্ট। দুর্গের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বসানো হয়েছিল মাটির পাইপ। পানি তোলা হতো চরকা ঘুরিয়ে।

গাইড শেখ বাবা গোলকুন্ডা দুর্গের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে জানালেন, মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি নির্মাণ করেছিলেন বাদশাহ কুতুব শাহ। সুরক্ষিত জায়গায় নির্মাণ করেছিলেন খাদ্যগুদাম ও পানির ট্যাংক। শত্রু আক্রমণ করলেও খাদ্য সংরক্ষণে রাখা যাবে এই ভেবে। এরপর ৩০০ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল পানির তিনটি ট্যাংক। পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেই ট্যাংকে নেওয়া হতো পানি। সরাসরি পানি ট্যাংকিতে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই চরকা ঘুরিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই পানি নেওয়া হতো ট্যাংকিতে। পাহাড়ে সে সময় পাইপ লাইন বসানো হয়েছিল, এটি বড় বিস্ময়।

হায়দরাবাদের পশ্চিমাঞ্চলের গোলকুন্ডা দুর্গের দর্শনার্থীরা সেখানে পৌঁছানোর অনেক আগেই হাততালির পোর্টিকোর কথা শুনতে পান। তারা ময়ূর দ্বারা নির্মিত গেটওয়ে দিয়ে প্রবেশ করার পরে, একটি উন্মত্ত হাততালি এবং চিৎকার হয়। গোলকুন্ডা দুর্গের ধ্বনিবিদ্যা একটি বিস্ময়কর হতে পারে। কিন্তু পায়ের তলায় থাকা একটি বড় আশ্চর্য অদেখা থেকে যায়। গোলকুন্ডা দুর্গে পানি সরবরাহ করতে মাটির পাইপ ও ড্রেনগুলো আছে। যা এখন মাকড়সার জাল দিয়ে ঢেকে গেছে। প্রথমটি প্রবেশপথের ডানদিকে, যা প্রবেশদ্বারের ডানদিকে হাম্মামে পানি বহন করে। হাম্মাম দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নয়। এতে গোসলের জন্য গন্ধযুক্ত ঠান্ডা এবং গরম পানি মেশানোর জন্য বিভিন্ন স্তরে পাইপ ছিল। হাম্মাম সম্পর্কে ইতিহাসবিদরা অবশ্য বিভক্ত। তাদের মতে, এটি নারীদের একচেটিয়া ব্যবহারের জন্য ছিল, নাকি দাফনের আগে এটি আনুষ্ঠানিক অজুর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল- এ নিয়ে বিতর্ক আছে।

 

হাততালিতে মিলবে শত্রুর সংকেত

প্রবেশ ফটক পেরিয়ে ভিতরে যেতেই দেখা মেলে এক তেলেসমাতি কান্ডের। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন গাইড শেখ বাবা। দুই হাতে করজোড়ে তালি দিলে ওপরের মহল থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসে প্রতিধ্বনি, যে কৌশল সে সময় ব্যবহার করা হতো শত্রুপক্ষের আনাগোনা মহল পর্যন্ত সিপাহিদের কানে পৌঁছাতে। দুর্গকে নি-িদ্র করতে সুকৌশলে বিভিন্ন জায়গায় কামান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধান ফটকের সামনের অংশ এতই সংকীর্ণ রাখা হয়েছে যাতে হাতির বাহিনী গতি না পায়। দুর্গের ভিতরে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন। কথিত আছে দুর্গের ভিতর থেকে চারমিনার পর্যন্ত সুড়ঙ্গ রয়েছে। পরবর্তীতে এটি বন্ধ করে করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর