বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিজ্ঞানীদের ভয়ংকর আবিষ্কার

আবদুল কাদের

বিজ্ঞানীদের ভয়ংকর আবিষ্কার

প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদরা যুদ্ধের মারাত্মক আবিষ্কার এবং উন্নতকরণে সাহায্য করে আসছেন। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে পারমাণবিক বোমা তৈরির ম্যানহাটন প্রজেক্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে যার ভয়াবহতা দেখেছে বিশ্ববাসী। মানব সভ্যতার শুরু থেকে অনেক বিজ্ঞানী স্বেচ্ছায় অস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেছেন। যদিও সামরিক এসব মারণাস্ত্রের জন্য সভ্যতার এমন করুণ পরিণতি তারা কখনোই চাননি। রইল কয়েকজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর মারণাস্ত্র তৈরির গল্প। যাঁরা এসব অস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন...

 

আর্কিমিডিস

২৮৭ খ্রিস্টপূর্ব [ ইতালি ]

পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। প্রাচীন গ্রিকের এই গাণিতিক ও বিজ্ঞানী জন্মেছিলেন ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সিসিলির সাইরাকিউস নামে একটি ছোট্ট রাজ্যে। পাটিগণিত, জ্যামিতি ও হাইড্রলিক্সে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বেশি স্মরণীয়। বিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত মারণাস্ত্র রোমানদের আক্রমণ থেকে নিজেদের শহরকে রক্ষায় ব্যবহার করা হতো। এ রকম একটি অস্ত্র- ক্যাটাপল্ট। যার মাধ্যমে ৭০০ পাউন্ড ওজনের পাথর শত্রুপক্ষের দিকে ছুড়ে দেওয়া যেত। পাশাপাশি এর মাধ্যমে তীরও ছোড়া যেত। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আর্কিমিডিস হয়তো এর প্রথম আবিষ্কারক নন। কারণ, মার্সেলাসের অধীনস্থ রোমান সেনাবাহিনীর কাছেও বড় পরিসরে ক্যাটাপল্ট চালানোর ব্যবস্থা ছিল। সে যাই হোক, আর্কিমিডিসের আরেকটি আবিষ্কার ছিল আতস কাচ। যা সমুদ্রের পাশে অন্ধচন্দ্রকারে সাজিয়ে সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে রোমানদের যুদ্ধ জাহাজের পালে আগুন ধরিয়ে দেওয়া যেত। এই আসত কাচ গল্পের নেপথ্যে ছিলেন সাইরাকিউসের রাজা হায়রো। রাজা খবর পেলেন রোমানরা রাজ্য আক্রমণ করার জন্য সমুদ্রপথ থেকে আসছে। রাজার আদেশে আর্কিমিডিস গবেষণায় বসে পড়লেন। আর্কিমিডিস-এর নজরে ছিল এমন এক অস্ত্র যার মাধ্যমে শত্রুপক্ষের জাহাজ উল্টে দেওয়া সম্ভব। আর্কিমিডিস রোমান জাহাজে আগুন লাগানোর জন্য সূর্যের আলোর প্রতিফলনকারী একটি বিশালাকার আয়না তৈরি করেছিলেন। যা তৎকালীন যুদ্ধে ব্যাপক সফলতা পেয়েছিল।

 

গ্যালিলিও

১৫৬৪-১৬৪২ [ ইতালি ]

মধ্যযুগের জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন্মেছিলেন ইতালির পিসা নগরীতে। কথিত আছে, গ্যালিলিও হল্যান্ডের জনৈক কাচ ব্যবসায়ীর কাচের লেন্স হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে নিজের অজান্তে দুরবিন আবিষ্কার করে ফেলেন। আর সেই দুরবিন দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন, চাঁদের পর্বতমালা, বৃহস্পতি-শুক্র-শনি গ্রহ, সূর্যের কলঙ্কবিন্দুসহ আরও অনেক কিছু। জানলে অবাক হবেন, গ্যালিলিওর এই আবিষ্কারের বাইরে দুরবিন মারণাস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল। এর পেছনের গল্পটা হলো- এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী যখন উন্নত টেলিস্কোপের নকশা করেছিলেন, তখন কেবল মহাকাশের দিকে তাকানোই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। তার টেলিস্কোপটি তৎকালীন তো বটেই, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়েও দ্বিগুণ শক্তিশালী ছিল। কীভাবে? আসলে প্রাচীনকালে সমুদ্রপথই একমাত্র মাধ্যম ছিল যার মাধ্যমে কোনো দেশে বা রাজ্যে হামলা চালানো যেত। আর সেখানে টেলিস্কোপের মাধ্যমে ভেনিসীয় সৈন্যরা তাদের শত্রুপক্ষ কোথায় অবস্থান করছে, তা দেখার বাড়তি সুবিধা পেত। গ্যালিলিও ভেনিসের ডোজকে লিখেছিলেন, তিনি তার বাহিনীর জন্য টেলিস্কোপ চান কি না! ডোজ সেগুলো চাননি, তবে গ্যালিলিওকে তাঁর কাজের জন্য পুরষ্কৃত করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দুরবিনের সঙ্গে কম্পাস জুড়ে দেন, আর তৎকালীন সৈন্যরা তখন কামানের আগুনের নির্ভুলতা বাড়াতে দুরবিনের ব্যবহার করেছিল।

 

ম্যারি কুরি

১৮৬৭-১৯৩৪ [ পোল্যান্ড ]

ইতিহাসখ্যাত নারী বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি। যে সময়টাতে সারা পৃথিবীতেই মেয়েরা ছিল অনেক পিছিয়ে, সে সময় ম্যারি কুরি বিশ্ববাসীকে এনে দিয়েছেন অসংখ্য অর্জন। পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ম্যারি দুটি উপাদানের আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। তবে প্রথমবার নোবেল পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে। রেডিয়োঅ্যাক্টিভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য। মাত্র ৮ বছর পর দ্বিতীয় নোবেল পেলেন রসায়নে। এক. রেডিয়াম এবং দুই. পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য। আর এই দুটি উপাদানই সামরিক যানসহ ঘড়ি, বিমানের সুইচ এবং যন্ত্রের ডায়ালগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয়ে থাকে। তৎকালীন লোকেরা ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে এটি ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয় যখন তারা বুঝতে পেরেছিল, এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। এই আবিষ্কারে ম্যারি কুরি ও তাঁর স্বামী পেয়েরি কুরিও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। আর রেডিয়াম আবিষ্কারের কোনো পেটেন্ট করেননি তাঁরা। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের বিনামূল্যে জানিয়ে দেন রেডিয়াম সংগ্রহের উপায়। পোলোনিয়াম তাঁর অন্য আবিষ্কার। যা ২১ শতকে মানুষ হত্যায় ব্যবহার হয়। এটি শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে মারাত্মক বিকিরণ সৃষ্টি করে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটানো যায়।

 

টমাস আলভা এডিসন

১৮৪৭-১৯৩১ [ আমেরিকান ]

টমাস আলভা এডিসনের জীবন খুবই সমৃদ্ধিশালী। তাঁর মতো সফল মানুষ ইতিহাসে বিরল। বৈদ্যুতিক বাতি, সাউন্ড রেকর্ডিং, ভিডিওগ্রাফির মতো আবিষ্কারসহ মোট ১ হাজার ৯৩টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে এই বিজ্ঞানীর নামে। এডিসন এমন একজন উদ্ভাবক ছিলেন যে, তাঁর অনেক ধারণার মধ্যে অস্ত্র খুঁজে পাওয়া খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়, যার মধ্যে বিখ্যাতভাবে আলোর বাল্ব, ফোনোগ্রাফ এবং মোশন-পিকচার ক্যামেরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমেরিকা তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানানোর পর তাঁকে নৌ-পরামর্শ বোর্ডের প্রধান করা হয়। এর আগে এডিসন স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধে নৌবাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন। বোর্ড সশস্ত্র বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া ধারণাগুলো পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে থাকে। সেই সঙ্গে তাদের নিজস্ব অবদান রাখে। ব্যক্তিগতভাবে এডিসন যুদ্ধে প্রায় ৪৯টি ধারণা নিয়ে কাজ করেছিলেন। সে সময় অনেকে প্রতিরক্ষামূলক এবং শত্রু শনাক্তকরণে মনোযোগী হলেও এডিসন এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রে শত্রুর ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে। এ ছাড়া তিনি সেনাবাহিনীর জন্য আর্টিলারি শেল তৈরি করেন, যা বাতাসে বিস্ফোরিত হয়, আরও ধ্বংসাত্মক করে তোলে।

 

আলফ্রেড নোবেল

১৮৩৩-১৮৯৬ [ সুইডেন ]

এখন আলফ্রেড নোবেলের নামে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার আজকের দিনের যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। কারণ, তাঁর এবং তাঁর বাবার কারবারই ছিল গোলাবারুদ, বোমা, ডিনামাইট তৈরি। আলফ্রেডের বাবা যখন ক্রিমিয়া যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রথম সামুদ্রিক খনি আবিষ্কার করেছিলেন, পরে তা ডিনামাইট হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। এরপর ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের উভয় পক্ষের সৈন্যরা এই বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার করেছিল। আলফ্রেড নোবেল নিজেও একাধারে একের পর এক বিস্ফোরক ও যুদ্ধাস্ত্রের উপাদান আবিষ্কার করেছেন, সারা ইউরোপে বিরাট বিরাট কারখানা গড়ে তুলে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উপার্জন করেছেন। তবে এই বিজ্ঞানীর ভাষ্য, যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার নাকি অনিচ্ছাকৃত! ১৮৮৮ সালে ব্যালিস্টাইট তৈরির সময় তিনি ভালো কোনো অজুহাত খুঁজে পাননি। আলফ্রেড বলেছিলেন, এটি ধোঁয়াবিহীন গানপাউডার, যা তিনি বিক্রি করতেন। তিনি দাবি করেছিলেন, সৈন্যদের সাহায্যের জন্য তিনি এতে কাজ করেননি। তবে বাস্তবতা হলো- তিনি বেঁচে থাকলে আরও গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতেন।

 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

১৪৫২-১৫১৯ [ ইতালি ]

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এক দুর্দান্ত শিল্পী যিনি মোনালিসা ও লাস্ট সাপারের মতো ছবি এঁকেছিলেন। তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে, তিনি একজন প্রতিভাবান প্রকৌশলী; যিনি প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রের পরিকল্পনাও করেছিলেন। যদিও তৎকালীন মিলানের ডিউকের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি এটি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, তাঁর জীবদ্দশায় ইতালি ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসেবে কম এবং বিরোধপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বেশি পরিচিত ছিল। সে হিসেবে যুদ্ধ তখন অস্বাভাবিক ছিল না। তাঁর উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে ট্যাঙ্কের উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে আটজন ক্রু কয়েকটি কামান নিয়ে অবস্থান করছিল। এটি যেদিকে সরে যাবে, সেখানেই গুলি করতে পারবে। মনে করা হয়, ভিঞ্চি এই যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে ইচ্ছাকৃত ত্রুটি রেখে নকশা করেছিলেন। ফলে এটি কম সরানো যেত এবং কম ধ্বংসাত্মক ছিল। যাই হোক, তাঁর নকশাকৃত আরও একটি অস্ত্র সম্ভবত যুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ছিল দ্রুততার সঙ্গে আগুন ছড়ানোর জন্য নকশা করা একটি ট্রিপল-ব্যারেল কামান। যদিও এটি সৈন্যদের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছিল। তবে মনে করা হয়, এটি আধুনিক মেশিনগানের অগ্রদূত।

 

রবার্ট এইচ. গডার্ড

১৮৮২-১৯৪৫ [ আমেরিকা ]

রবার্ট এইচ. গডার্ড ছিলেন আমেরিকান পদার্থবিদ এবং উদ্ভাবক, যিনি আধুনিক রকেটের জনক হিসেবে বিবেচিত। তবে এর শুরুটা হয়েছিল ১৯০৭ সালে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বেজমেন্টে রকেট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন গডার্ড। রকেট থেকে তীব্রভাবে বেরিয়ে আসা গুঁড়ো জ্বালানির ফলে তৈরি ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল বেজমেন্ট। কর্তৃপক্ষ টের পেয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- কর্তৃপক্ষ তাঁকে বের করে দেয়নি। বরং উৎসাহ দিয়েছিল রকেট নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে। পরবর্তীতে ১৯১২ সালে গডার্ড সর্বপ্রথম তরল জ্বালানির রকেট প্রস্তুত করেন। এতেই শুরু হয় রকেটের আধুনিক কাল। উদ্দেশ্য, মহাকাশে রকেট যানে আধিপত্য বিস্তার। এর আগে শুধু কঠিন পদার্থই কেবল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯১৪ সাল নাগাদ, গডার্ড রকেটের নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ২০০টিরও বেশি রকেটের নকশা প্রস্তুত করে গেছেন। ১৯২৬ সালে গগার্ড তরল-জ্বালানিযুক্ত রকেটের ধারণাটি প্রমাণ করেছিলেন। তাঁর এই পরীক্ষায় রকেটযানটি ৪১ ফুট (১২.৫ মিটার) পৌঁছেছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালের মধ্যে তাঁর রকেটগুলো বাতাসে ৯ হাজার ফুট (২,৭৪৩ মিটার) ওপরে উঠতে পারে। গগার্ড তাঁর ধারণাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সে সময় তাঁর এই প্রচেষ্টায় সাড়া পাননি। অন্যদিকে জার্মানরা গডার্ডের গবেষণায় গভীর আগ্রহ দেখায় এবং পরবর্তীতে তারাই ভি-২ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোয় এই ধারণা বাস্তবায়ন করে।

 

লুই ফিজার

১৮৯৯-১৯৭৭ [ আমেরিকা ]

লুই ফিজার এবং তাঁর স্ত্রী ম্যারি ছিলেন জৈব রসায়নবিদ। প্রকৃতিতে বিদ্যমান যৌগ নিয়েই তাঁদের সার্বক্ষণিক গবেষণা। তাঁদের কৃতিত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে- কর্টিসোন, স্টেরয়েড হরমোন এবং ভিটামিন কে আবিষ্কার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লুই-মেরি দম্পতি কুইনাইন একত্রীকরণের চেষ্টা করেছিলেন, যা রক্তে মিশে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। সে সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় সৈন্যদের জন্য এটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তা কাজে লাগেনি। তবে ফিজারের আরেকটি প্রকল্প ছিল, যা অত্যন্ত সফলতা পায়। আর তাই তো ১৯৭২ সালে লুই ফিজার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে তাঁর আবিষ্কারকে নিষিদ্ধ করার জন্য চিঠি লিখেছিলেন। কারণ এটি ছিল ন্যাপথেনেট এবং পামিটেটের সংমিশ্রণ, যা একত্রিত হলে শক্তিশালী অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে ফেলে। ফিজার এর নাম দিলেন ন্যাপলম। তার দাবি, এটি কৌশলগতভাবে ভবন এবং কাঠামো পুড়িয়ে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, বিংশ শতাব্দীতে আমেরিকান সংঘাতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আর সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল ভিয়েতনামে।

 

নিকোলা টেসলা

১৮৫৬-১৯৪৩ [ সার্বিয়ান-আমেরিকান ]

নিকোলা টেসলার নাম জানেন না- এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। জীবনের শেষ সময়, টেসলা অলটারনেটিং কারেন্ট ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে সফলতা পেয়েছিলেন। তবে তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী আবিষ্কার ছিল ‘মৃত্যুরশ্মি’। ১৯১৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের এক শিরোনামে এই প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এই সমরাস্ত্রে থরের মতো শক্তির বোল্টগুলোকে গুলি করবে কিন্তু বিদ্যুতের পরিবর্তে এতে ২ লাখ ৭০ হাজার মাইল বেগে ধাতব আয়রন বিম তৈরি করবে। টেসলা এই রশ্মির নাম দিয়েছিলেন ‘শান্তির রশ্মি’। টেসলা দাবি করেছিলেন যে, এটি ২৫০ মাইল (৩৮৬ কিলোমিটার) দূর থেকে বিমান ধ্বংস করতে পারবে। বিশ্লেষকদের মতে, পৃথিবী গোল না হয়ে সমতল হলে এই রশ্মি পৃথিবীর পরিধি ভেদ করে যেতে পারত সুদূরে; আর এর সামনে যা পড়ত, সবই ধূলিসাৎ হয়ে যেত। মার্কিন সরকার ভেবেছিল, এটি তাদের সাহায্য করতে পারে। টেসলাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় এবং ১৯৪৩ সালে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আজও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আয়রন বিম তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর