সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোথায় আছে গুপ্তধন

 কোথায় আছে গুপ্তধন

গুপ্তধন। এই শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একরাশ ধাতব স্বর্ণমুদ্রা, দুর্লভ রত্ন, মানিকের ছবি। গুপ্তধনের খোঁজে যুগে যুগে বহু অনুসন্ধানী  পেছনে ছুটেছেন, পাড়ি দিয়েছেন অনেক কষ্ট, দুর্দশা আর বিপদ।  অনেকেই হাতের নাগালে পেয়েছেন সাধের রত্নভান্ডার। অনেকে আবার বৃথাই খুঁজে মরেছেন। তবে যাই হোক গুপ্তধনের খোঁজ থেমে নেই আজও। অনেক প্রাচীন পুঁথি থেকে জানা যায় অনাবিষ্কৃত অনেক গুপ্তধনের কথা। সেসব গুপ্তধন খুঁজে পেতে মরিয়া অনেকেই। তেমনই কয়েকটি গুপ্তধন রহস্য নিয়ে আজকের রকমারি - তানভীর আহমেদ

 

ট্রেজার আইল্যান্ড

কোকোস দ্বীপের গুপ্তধন। হারানো গুপ্তধন হিসেবেও জানে অনেকে। এই দ্বীপের গুপ্তধন নিয়ে কম রহস্য ঘনীভূত হয়নি। দাবি করা হয়ে থাকে এই দ্বীপের অন্তত ছয় জায়গায় লুকানো আছে গুপ্তধন। এই কাহিনি শুরু হয় ১৫৩২ সালে। ইতিহাস বলে সে সময় স্পেনের ফ্রান্সিসকো পিজারো পেরু দখল করে নেন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চাপা অসন্তোষের আগুন। দেশের এখানে সেখানে বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ গড়ে উঠতে থাকে। পেরুতে বসবাসকারী স্পেনীয়রা তখন বিপদের মধ্যে পড়ে যায়। ওই সময় পেরুর রাজধানী লিমায় অনেক ধনবান স্পেনীয় বাস করত। তারা সবাই একজোট হয়ে স্কুনার মেরিডিয়ান নামের একটা জাহাজে চড়ে স্পেনের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল অনেক হীরা, পান্না, সোনাসহ অনেক মূল্যবান সম্পদ। এমনিতেই এই যাত্রা ছিল বিপজ্জনক। চারদিকে তখন খন্ডাকারে যুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহীদের পাশাপাশি আছে জলদস্যুদের ভয়। কিন্তু তখন বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল স্বয়ং জাহাজের ক্যাপ্টেন আর নাবিকরা। স্কুনার মেরিডিয়ানের সব যাত্রীকে আক্রমণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। অসহায়ভাবে তাদের হাতে প্রাণ দেয় ধনবান স্পেনীয় ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। যুদ্ধাবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাদের এই পরিভ্রমণে সঙ্গে প্রতিরোধ করার মতো কোনো অস্ত্রও ছিল না স্পেনীয়দের কাছে। তাদের হত্যা করার পর আক্রমণকারীরা সব ধনরত্ন লুকিয়ে রাখে কোকোস দ্বীপে। সেই ধনসম্পত্তির কথা থেকেই যুগে যুগে এই হারানো গুপ্তধন খুঁজে ফিরে অনুসন্ধানীরা।

 

ইনকাদের স্বর্ণ পাহাড়

পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ইনকা সভ্যতা। এই সভ্যতার বহু নিদর্শন মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে চলেছে আজও। এই সভ্যতাকে ঘিরে বহু মিথ রচিত হয়েছে। ইনকা সভ্যতায় কি গুপ্তধনের রহস্য রোমাঞ্চ রয়েছে? এই প্রশ্নে উত্তরটি হলো- হ্যাঁ। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই সে রহস্য ভেদ করতে মরিয়া গুপ্তধন অনুসন্ধানীরা। ইনকা সভ্যতায় স্বর্ণের ব্যবহার খুবই সাধারণ দৃশ্য। আর সে কারণেই তাদের সভ্যতায় স্বর্ণের ব্যবহারে দেখা যায় মন্দির, মন্দিরের অভ্যন্তরের মূর্তি। এসবই নির্মিত হয়েছে খাঁটি সোনা দিয়ে। স্বর্ণসমৃদ্ধ ইনকাদের নিত্যব্যবহার্য তৈজসপত্রও সোনার তৈরি ছিল। বিগত ৪০০ বছর ধরে পুরোতত্ত্ববিদ এবং স্বর্ণ সন্ধানীরা ইনকাদের গুপ্তধন খুঁজে বেরিয়েছেন। বেশির ভাগ অনুসন্ধানী ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বলে যে কিছুই মেলেনি তা কিন্তু বলা যাবে না। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পেরু এবং বলিভিয়ার মাঝামাঝি আন্দিজ পর্বতের শীর্ষে অবস্থিত এক হ্রদের গভীরে ইনকারা ডুবিয়ে রেখেছিল তাদের সব সোনা। এ ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে কোথায় গেল সে সব স্বর্ণ। তা খুঁজে পেতেই আগ্রহী গুপ্তধন অনুসন্ধানীরা। সেই স্বর্ণের খোঁজে অনেক ডুবুরি বছরের পর বছর ধরে ছেঁকে ফেলেছেন সেই হ্রদের বরফ পানি। কিন্তু দেখা মেলেনি সেই স্বর্ণের। বছরকয়েক আগে কয়েকজন বিজ্ঞানী ও পুরোতত্ত্ববিদ ইনকাদের গুপ্তধন রহস্যের জাল খুলতে সক্ষম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি সূত্র তাদের গুপ্তধনের কথার প্রমাণ দেয়। ইনকাদের লিখিত ভাষা দড়ির গেরোর কথা শোনা যায়। সে সব সূত্র এখনো রহস্যাবৃত রয়েছে। দড়ির গেরোর মাধ্যমে লেখা ইনকাদের গুপ্তধনের খোঁজ মিললেও মিলতে পারে। এছাড়া আর কোনো লিখিত সূত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন। ‘গিট’ পদ্ধতির মাধ্যমেই তারা এ কাজটি রপ্ত করেছিল, শত শত বছরের অভ্যাসে।

এই দড়িগুলোর নাম ছিল কুইপো। কুইপো দিয়ে তারা গুপ্তধনের সে ঠিকানা হয়তো বলে গেছে শত সহস্র বছর আগে। ইনকাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যে দড়ির বদলে সোনার সুতা ব্যবহার করতেন। সেই ব্যক্তিটি হলো ইনকাদের শেষ সম্রাট আতাহু আল্পা। জেনারেল ফ্রান্সিসকো পিজারোর বন্দি থাকাকালীন ইনকা সম্রাট আতাহু আল্পা এই সোনার সুতা তৈরি করেছিলেন। স্পেনীয় দস্যুরা তাকে হত্যা করেছিল মর্মান্তিকভাবে। তাই মৃত্যুর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সম্রাট আতাহু আল্পা। কোনোমতেই ওই লোভী দস্যুদের হাতে তুলে দেবেন না, ইনকাদের পবিত্র ধন। তেরো গিটের সোনার সুতাটিতে ইনকাদের জন্য তার নির্দেশ ছিল সব সোনা একত্র করে যেন এলসিঞ্জির পদতলে সোপর্দ করা হয়। এই রহস্য থেকে স্পষ্ট হয় ইনকা সভ্যতার বিশাল গুপ্তধনের কথা। এই গুপ্তধনের খোঁজ পেতে আধুনিক সময়ে বহু অনুসন্ধানী বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছেন। কেউ কেউ ছোটখাট অনাবিষ্কৃত রহস্যের সমাধান করতে পারলেও পাহাড় ডোবানো স্বর্ণের দেখা মেলেনি এখনো। এই গুপ্তধন রহস্য এখনো এক বড় রহস্য হয়ে আছে।

 

চীনের গুপ্তধন

প্রাচীন চীনে বহু মিথ জড়িয়ে আছে গুপ্তধনের কথা। সে সময়ের গুপ্তধনগুলো মাটিচাপা নয়তো পাথরচাপা দিয়ে রাখা হতো। আর এমনই একটি গুপ্তধনের খোঁজ পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এই গুপ্তধন ছিল ধাতবমুদ্রার। যার মোট ওজন ৩.৫ টন। চীনের উত্তরাঞ্চলে অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন মুদ্রা পেয়েছে, যার মোট ওজন ৩.৫ টন। এই বিপুল পরিমাণ মুদ্রা একসঙ্গে পাওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন এটা কোনো গুপ্তধনের সন্ধানই বটে। এ গুপ্তধন পাওয়া যায় চীনের হোলোচাইদেনে (বর্তমানের ওর্দোস শহর) প্রাচীন দুর্গের জায়গায় খনন কাজের সময়। স্বায়ত্তশাসনের সাংস্কৃতিক স্মরণিক ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, খুঁজে পাওয়া মুদ্রাগুলোর বেশির ভাগই ‘হোজইউয়ান’ ধরনের, চীনে যার প্রচলন ছিল হান বংশের রাজত্বকালে।

সর্বশেষ খবর