সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশে দেশে প্রাকৃতিক বিস্ময়

তানভীর আহমেদ

দেশে দেশে প্রাকৃতিক বিস্ময়

রঙিন হ্রদ [চীন]

রঙিন হ্র্রদ [চীন]

ইউহুয়া হেই। এটি একাধিক হ্রদের সমাহার। তবে সবাই চেনে পাঁচ ফুলের হ্রদ হিসেবে। এটি রয়েছে চীনে। চীনের জিওজাইগন ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এ হ্রদটি মানুষের মনকে মুগ্ধ করবে অস্বাভাবিক রঙের খেলায়। হ্রদটিতে ক্ষণে বদলায় পানির রং। এ অভূতপূর্ব দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল। এ কারণেই এ হ্রদটি এত আলোচিত। পুরো এলাকাটি ছেয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন গাছের গুঁড়িতে। এ হ্রদের পানিতে সূর্যালোক পড়া মাত্রই এ রঙের খেলা শুরু হয়। একেক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এ হ্রদের পানির রং একেকরকম দেখায়। ওপর থেকে দেখলে পানি নীল মনে হবে, কখনো ভেসে উঠবে গাঢ় সবুজ রং। মাটি থেকে দেখলে কখনো মনে হবে হলুদ ও কমলা। লোককথা অনুযায়ী এ বিভিন্ন রঙের হ্রদটি তৈরি হয়েছে যখন একজন দেবী তার প্রেমিকের দেওয়া আয়নাটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। ওই আয়নাটি ভেঙে ১০৮ টুকরো হয়ে ১০৮ রঙের এ হ্রদটি তৈরি হয়েছে।

 

গুরুনগুরু [তানজেনিয়া]

তানজেনিয়ার গুরুনগুরু খাদটি রয়েছে দ্য গার্ডিয়ানের করা তালিকায়। দ্য গুরুনগুরু ছেয়ে ২৬০ বর্গকিলোমিটারব্যাপী অঞ্চলে। ৬১০ মিটার গভীর এ খাদটি পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণ ও বিস্ময়। পৃথিবীর দীর্ঘ এ গিরিখাতটিতে বন্য জীবজন্তুর নিরাপদ আবাসস্থল। আবার মাসাইদের পালিত জন্তুদের চারণস্থল। এর পাশেই একসময় ছিল ভয়ানক আগ্নেয়গিরি। যার কারণে এখানে মাটি হয়ে উঠেছে উর্বর। কিন্তু এ খাদে মানুষের চলাচল নেই একেবারেই। ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এটি। এখানে গুল্ম উদ্ভিদের সমাহার রয়েছে। মানুষের অগোচরে থাকা এ দীর্ঘতম খাদটি এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিস্ময়। পৃথিবীর যে জায়গাগুলো মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায় তার একটি এটি। এ স্থানটির অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে গত কয়েক দশকে এখানে প্রাণীবৈচিত্র্য এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি।

 

পাথরের ব্লক [উত্তর আয়ারল্যান্ড]

ছয় কোণবিশিষ্ট ৪০ হাজার পাথরের ব্লক সাজানো উত্তর আয়ারল্যান্ডে। দেখে মনে হবে পরিকল্পিতভাবে কেউ সাজিয়ে রেখেছে এগুলো। কিন্তু সত্যিটা হলো এ পাথরের ব্লকগুলো প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে। ৪.৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্লকগুলো সাজানো রয়েছে। ১৯৮৬ সালে এ অঞ্চলটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারপর থেকেই এ অঞ্চলটি মানুষের চোখে পড়ে। এখানে বেড়াতে এসে পর্যটকদের চোখ কপালে উঠেছে পাথরের এ সারি দেখে। পাথরের ব্লকগুলোর নিখুঁত গড়ন দেখে সবাই মেনে নিয়েছেন কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাবে এ ব্লকগুলো সাজানো রয়েছে। তবে বিজ্ঞান এর ভিতরের খবর খুঁজে বের করেছে। নির্দিষ্ট  রাসায়নিক বিক্রিয়া ও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই প্রাকৃতিকভাবে এগুলো তৈরি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। এ ছাড়া রয়েছে উঁচু উঁচু থাম যা বিস্ময়ের চূড়ান্ত।

 

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত [জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে]

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। পৃথিবীর যতগুলো জলপ্রপাত রয়েছে তার মধ্যে একটি এটি। বিশ্বের সেরা আকর্ষণীয় জায়গা এটি। এই জলপ্রপাতটি রয়েছে জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের মাঝখানে জাম্বেজি নদীর ওপর রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এর নামকরণ করেন অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন। কিন্তু স্থানীয়রা এটাকে ‘মসি ওয়া তুনইয়া’ নামে ডাকে যার অর্থ হচ্ছে- ‘যে ধোঁয়া বজ্রধ্বনি করে’। ১০৮ মিটার গভীর এ জলপ্রপাতটি এমন কুয়াশার সৃষ্টি করে যা ২০ কিমি. দূর থেকে দেখা যায়। এটি উচ্চতায় ১০৮.৩ মিটার এবং প্রস্থে ১,৭০৩ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩৩,০০০ ঘনফুট (৯৩৫ ঘনমিটার) জল পতিত হয়। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করলে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত প্রায় দ্বিগুণ প্রশস্ত ও দ্বিগুণ গভীর। ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জলপ্রপাতটিকে উভয় নামেই তালিকাভুক্ত করেছে। জলপ্রপাতের উভয় অংশকে সংযুক্ত করতে ভিক্টোরিয়া ফলস (জাম্বেজি) সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

 

মালভূমি [তুরস্ক]

খড়খড়ে শুকনো মালভূমি। এ মালভূমিটি রয়েছে তুরস্কে। এখানকার পাথরের চাঁই দেখতে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক। এ অনুর্বর মালভূমি তুরস্কের কাপাডোসিয়াতে অবস্থিত। এখানে একটি ভূগর্ভস্থ শহর ছিল যেখানে অনেক লম্বা লম্বা চিমনি পাওয়া যায়। সেই শহরটিকে ঘিরে রয়েছে মিথ। এ শহরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ। শহরের জনপদ নিয়ে খুব রোমাঞ্চকর তথ্যও মিলেছে ইতোমধ্যে। সে শহরের মানুষজন ঠিক কী কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তা আজও জানা যায়নি। তবে এ মালভূমিটি টিকে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যকে সঙ্গী করে। পাথরের ছোট ছোট গুহাগুলোও দেখার মতো। এখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী মালভূমি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এটি। পৃথিবীর সেরা ১০ প্রাকৃতিক বিস্ময়ের একটি এটি।

 

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন [যুক্তরাষ্ট্র]

যুক্তরাষ্ট্রের অলংকার হিসেবে ধরা হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাতকে। কলোরাডো নদীর কথা বললে অনেকেই চিনে থাকবেন। সেখান থেকেই এক সময় বয়ে যেত প্রবল স্রোতের এ নদী। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাত দেখতে এখানে ছুটে যান বহু মানুষ। এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রায় ২৭৭ মাইল বা ৪৪৬ কিলোমিটার লম্বা। আর কিছু কিছু জায়গায় এ গিরিখাত প্রায় ১৮ মাইল বা ২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা প্রায় ১ মাইল (৬০০০ ফিট বা ১৮০০ মিটার)! এ গিরিখাত কোনো কোনো জায়গায় ১.৬ কি.মি. গভীর আবার ২৯ কি.মি. প্রশস্ত। এটির এ প্রকাণ্ডতাই এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম গিরিখাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ গিরিখাত একসময় পানির নিচে ছিল। প্রায় ২ বিলিয়ন বছর আগে থেকে এটি জন্মানো শুরু হয়েছে।

 

ডেথভ্যালি [যুক্তরাষ্ট্র]

ডেথভ্যালি বা মৃত্যু উপত্যকার এ অংশটি পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চল। বাটির মতো দেখতে এ উপত্যকাটিকে ভয়ংকর বা বিপজ্জনক কিছু একটা বলা যেতে পারে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এখানে ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অসহ্য গরমে অধিবাসীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলকেও হার মানায় এখানকার তাপমাত্রা। উপত্যকাটি লম্বায় প্রায় ২২৫ কিলোমিটার আর চওড়া ৮ থেকে ২৪ কিলোমিটার। পশ্চিম গোলার্ধের সব থেকে শুকনো নিম্নভূমি এটি। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ৫ সেন্টিমিটার। জায়গাটির বিভিন্ন স্থানে যে সামান্য জলাশয়ের সৃষ্টি হয় তাও ভীষণ লবণাক্ত। সমগ্র উপত্যকাটি বালুতে পরিপূর্ণ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের এ ডেথ ভ্যালি দেখতে।

সর্বশেষ খবর