শিরোনাম
রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান

দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান

তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছেন। দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক নানা অর্জনের মাধ্যমে নিজ দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। রেখেছেন দেশের উন্নয়নের স্বাক্ষর। এমনকি তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘকালীন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শীর্ষ তালিকায় আসীন হয়েছেন।  তাঁদের নিয়ে আমাদের আজকের রকমারি আয়োজন... লিখেছেন- আবদুল কাদের

শেখ হাসিনা  [বাংলাদেশ]

২০ বছর, [প্রথম মেয়াদে পাঁচ ও পরের তিন মেয়াদে ১৫ বছর]

দেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী তিনি। টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও তাঁর। ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। দেখেছেন অনেক সংকট, পেরিয়েছেন চড়াই-উতরাই। ছুঁয়েছেন সাফল্যের চূড়া। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁকে স্বাগত জানান। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন চার দশকেরও বেশি সময় বিস্তৃত। আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় থেকে টানা তিন মেয়াদে (২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সাল) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।  দেশের ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ৩৯তম, ২০১৯ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ২৯তম, ২০১৮ সালে ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদের তালিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন।

ইন্দিরা গান্ধী  [ভারত]

১৫ বছর [প্রথমবার দুই মেয়াদে ১০ ও পরের মেয়াদে পাঁচ বছর]

পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের ইতিহাসে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন ১৫ বছরের কিছু বেশি সময়। প্রথমবার দুই মেয়াদে অর্থাৎ ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৭-এর মার্চ টানা ১০ বছর ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৮০ সালের ১৪ জানুয়ারি আবার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন ভারতের এই স্বর্ণকন্যা। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের তৃতীয় এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ছাত্রজীবন কেটেছে সুইজারল্যান্ডে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। শৈশবে তিনি ‘বাল চড়কা সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৪ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর দুই বছর পর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসেন। ইন্দিরাকেও বাবার মতো একই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল। বিরোধীরা ইন্দিরাকে কর্তৃত্ববাদী বলে সমালোচনা করলেও ব্যাপক সামাজিক কর্মসূচির কারণে তিনি দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৬৪-৬৬ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ছিলেন। এরপর ১৯৬৭-১৯৬৯ পর্যন্ত সামলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ১৯৬৭-১৯৭৭ পর্যন্ত পরমাণু শক্তিবিষয়ক দফতরের মন্ত্রী পদে কাজ করেন। ১৯৭০-১৯৭৩ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯৭২-১৯৭৭ পর্যন্ত মহাকাশ দফতরের মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি যোজনা কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।  ১৯৬০-৬৪ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কোর ভারতীয় প্রতিনিধি দলেও তিনি ছিলেন। রাষ্ট্রসংঘের সদর দফতরে তাঁর উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। এমনকি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিদেশি ব্যক্তিটি এই ইন্দিরা গান্ধী।

ভিগদিস ফিনবগাদত্তির  [আইসল্যান্ড]

১৬ বছর (টানা চার মেয়াদে)

১৯৭৫ সালের ২৪ অক্টোবর আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকাভিকের সমান অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মহিলা। যাদের মধ্যে ছিলেন ভিগদিস ফিনবগাদত্তিরও; যিনি পরে আইসল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হন এবং তিনি ১৬ বছর আইসল্যান্ডের ক্ষমতায় ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন রেইকাভিক থিয়েটার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর। সে সময় তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি একাই সন্তান প্রতিপালন করছিলেন। সেই ভিগদিস ফিনবগাদত্তিরই ১৯৮০ সালে আইসল্যান্ডের প্রথম নারী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সেবার নির্বাচনে তিনি ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। সেবার ভিগদিস শুধু আইসল্যান্ডের নন; বরং বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এমনকি ইউরোপেরও প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি ছিলেন ভিগদিস। ভিগদিস আইসল্যান্ডে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, পরবর্তীতে নির্বাচনের দৌড়ে তিনি তিনবার পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে দুবার সম্পূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং শেষবার ৯৬ শতাংশের বেশি ভোটে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব রাজনীতিতে ভিগদিস খুব বেশি আলোচিত নন। তবে আইসল্যান্ডের ম্যাগ থেকে জানা যায়, ভিগদিসই প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি শিশু দত্তক নিয়েছিলেন। ভিগদিস ফিনবগাদত্তির ছিলেন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচিত নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং সমকামিতাকে অনুমোদন দেওয়া আইসল্যান্ডের একমাত্র নারী রাষ্ট্রপতি। তাঁর শাসনামলে দেশ-বিদেশে দেশটির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল। দেশটির ইতিহাসে আরেকজন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন- তাঁর নাম জোহানা সিজুরগাদাতির।

অ্যাঞ্জেলা মেরকেল  [জার্মানি]

১৬ বছর, (টানা চার মেয়াদে)

অ্যাঞ্জেলা মেরকেল; একজন লৌহ মানবী। যিনি প্রাক্তন পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠেন। শিক্ষাজীবনে রসায়ন নিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং বার্লিন প্রাচীর ভাঙার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তবে সে সময় তিনি ছিলেন একজন গবেষণা বিজ্ঞানী। যখন অ্যাঞ্জেলা মেরকেল জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট কোহলের মন্ত্রিসভায় কাজ করতেন, তখন হেলমুট কোহল কখনো কখনো তাঁকে ‘মেইন মাডচেন’ (আমার মেয়ে) বলে ডাকতেন। জার্মান গণমাধ্যম তাঁকে ‘কোল গার্ল’ বলে সম্বোধন করতে থাকে। ২০০০ সালে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ)-এর নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে অল্প ব্যবধানে তাঁর দল জয়ী হয় এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোট করে কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্বে আসেন। তিনি হন জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। এমনকি তিনি ছিলেন জার্মানির নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ চ্যান্সেলর। টানা ১৬ বছর ছিল তাঁর ক্ষমতার কার্যকাল- ২০১৭ সালে চতুর্থ মেয়াদে জিতেছিলেন এবং ২০১৮ সালে মেরকেল ঘোষণা করেন যে, তিনি পঞ্চমবারের মতো চ্যান্সেলর হতে লড়বেন না। এটিই হবে তাঁর শেষ মেয়াদ। ওলাফ শলৎস নতুন চ্যান্সেলর হলেও সেবার নির্বাচনের প্রধান তিন প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়তায় তিনিই এগিয়ে ছিলেন।   মেরকেলকে ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল, শক্তিশালী দেশ এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চ্যান্সেলর থাকা অবস্থায় তিনি চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট, চার ফরাসি প্রেসিডেন্ট, পাঁচ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, আট ইতালি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি চ্যান্সেলর থাকাবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ করেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, ইউরোপের ঋণ ও শরণার্থী সংকট, সর্বশেষ করোনা মহামারির মতো সংকট মোকাবিলা করেছেন।

ম্যারি ম্যাকলিস [আয়ারল্যান্ড]

১৪ বছর, (টানা তিন মেয়াদে)

বেলফাস্টের জাতীয়তাবাদী অরডোয়েন এলাকায় বেড়ে ওঠেন মেরি ম্যাকলিস। ১৯৭০ সালে যেখান থেকে আধা-সামরিক বাহিনীর সহিংসতার কারণে তাঁর পরিবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন মেরি ম্যাকলিস। পরবর্তীতে বেলফাস্টের কুইনস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা এবং ১৯৭৪ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ইনস অফ কোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেন। মেরি হয়ে ওঠেন আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। যিনি ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর ক্ষমতাকাল ছিল ১৩ বছর ৩৬৪ দিন। তিনি আইরিশ প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে মেরি ম্যাকলিস রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ করেন। দীর্ঘ সময় দেশটির শাসনক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানের পর তিনি ২০১১ সালের নভেম্বরে ক্ষমতা ত্যাগ করেন। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি আইরিশদের প্রশংসায় ভাসেন। ব্যাপক জনপ্রিয় একজন নারী রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন ম্যারি। তাঁর সাফল্যময় কর্মজীবনে তিনি সবসময় ভেবেছেন যে, কীভাবে দেশ ও দশের উন্নয়ন করা যায়। নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষে মানুষে সমঅধিকার, সামাজিক ব্যবধান দূরীকরণে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন এই নারী রাষ্ট্রপ্রধান। পরবর্তীতে তিনি কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসেন বিভাগীয় পরিচালক পদে। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম নারী হিসেবে কুইনস কলেজের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পান।

 

মার্গারেট থ্যাচার  [ইংল্যান্ড]

১১ বছর, (টানা দুই মেয়াদে)

সাধারণ পরিবারে ব্রিটিশ এই লৌহ মানবীর বেড়ে ওঠা। পরিবারের মুদি দোকানের ওপরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করতেন। সেখান থেকে অক্সফোর্ডে এবং রাজনীতিতে যোগদান। তবে রাজনীতিতে যোগদানের আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য রসায়নবিদ ছিলেন। যমজ সন্তানের মা, অক্সফোর্ড থেকে দু-দুটি অনার্স ডিগ্রিধারী মার্গারেট থ্যাচার চ্যালেঞ্জ পছন্দ করতেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি কনজারভেটিভ দলের মধ্যে তখন একটা বিভেদ চলছিল। তার সুযোগ নিয়ে ১৯৭৫ সালে তিনি দলের নেত্রী পদে জয়ী হলেন। চার বছর পর ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ ইতিহাসের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন মার্গারেট থ্যাচার। তখন তিনি ২০ বছর ধরে ডানপন্থি কনজারভেটিভ দলের এমপি- যেটা সে সময় ছিল বিরল। তখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে হাতেগোনা যে কয়েকজন নারী ছিলেন তাঁদের ‘ব্যতিক্রমী’ বলে গণ্য করা হতো। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পশ্চিমা দেশের নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী ছিলেন তিনি। তিনি ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক সংস্কার এনেছিলেন। মুক্ত-বাজার নীতির প্রচার করেছিলেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়নকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন কঠোর। তাই সোভিয়েত প্রেস তাঁকে ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। ১৯৭৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১১ বছরের কর্মজীবন তাঁকে বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের একজন করে তোলে। নারীপ্রধানদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান পেলেও দীর্ঘ ক্ষমতায় মন্ত্রিসভায় মাত্র একজন নারী মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্যারোলাইন একটি বই লিখেছেন- ‘পিপল লাইক আস-মার্গারেট থ্যাচার অ্যান্ড মি’।

 

চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা  [শ্রীলঙ্কা]

১৫ বছর, [প্রথম দুই মেয়াদে ১০ ও পরের মেয়াদে পাঁচ বছর]

চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা; শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। তিনি শ্রীলঙ্কার সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। মা সিরিমাভো বন্দরানায়েক যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি তখন ভূমি সংস্কার কমিশনের পরিচালক এবং ওয়াসা কমিশনের চেয়ারপারসন ছিলেন। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা শেষ করা চন্দ্রিকা ১৯৯৩ সালে দেশটির মূল-ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির সক্রিয় কর্মী হিসেবে মহিলা লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭২-৭৬ সালে তিনি ভূমি পুনর্গঠন কমিশনের প্রধান পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে জনভাষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ১৯৭৬-৭৯ মেয়াদে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর বাইরেও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ছিলেন শ্রীলঙ্কার পঞ্চম রাষ্ট্রপতি। ১১ বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৪ এবং ১৯৯৯ সালে তিনি নির্বাহী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুবার নির্বাচিত হন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চন্দ্রিকা শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) দলীয় প্রধান ছিলেন। শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি ত্যাগ করে স্বামী বিজয় কুমারাতুঙ্গার দল শ্রীলঙ্কা মহাজন পার্টিকে সমর্থন দেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দেশত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান ও জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমুখী অর্থনীতি গবেষণা বিশ্ব সংস্থায় কাজ করেন। দেশের দীর্ঘ সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা সলোমন বন্দরনায়েক ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।

 

এলেন জনসন সারলিফ  [লাইবেরিয়া]

১২ বছর, (টানা তিন মেয়াদে)

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রি নেওয়া এলেন জনসন সারলিফ ফিরে আসেন জন্মভূমি লাইবেরিয়ায়। উদ্দেশ্য, জনসেবা এবং কর্মজীবন শুরু করা। ১৯ শতকে স্বাধীন মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ দাসরা আফ্রিকার জনবিরল এই দেশটি প্রতিষ্ঠা করেন। লাইবেরিয়ার জনপ্রিয় এই নেত্রী, দেশটির দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় কেনিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন পার করেন। সে সময় তিনি পশ্চিমে ক্যারিবিয়ান এবং লাতিন আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হয়ে কাজ করেছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘেও কাজ করেছিলেন। ২০০৫ সালে, সারলিফ যুদ্ধ-পরবর্তী লাইবেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সেবারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এই নারী নেত্রী পুরুষ প্রার্থীদের লজ্জাজনক হার উপহার দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিকভাবে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী ভোটারের সমর্থন নিয়ে সারলিফ আফ্রিকার দেশটির প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। এই সাফল্য তাঁকে দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় আরোহণ, জাতীয় শান্তি প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ঋণমুক্তি এবং লাইবেরিয়ার অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত লাইবেরিয়ার ২৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এলেন জনসন সারলিফ ২০১১ সালে নারী অধিকারের পক্ষে কাজ করার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। যদিও লাইবেরিয়ার এই রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ ক্ষমতার জীবনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল (তিনি তাঁর তিন ছেলেকে শীর্ষ সরকারি পদে নিয়োগ করেন) এবং চলমান সরকারি দুর্নীতির জন্য সমালোচনায় পড়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর