শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশে দেশে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বিপর্যয়

দেশে দেশে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বিপর্যয়

বিশ্ব ইতিহাসে রাষ্ট্র ধারণা জন্মের পর থেকেই রাজনৈতিক পালা বদলের সূত্রপাত। সময় আর যুগের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টে যায় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা।  এক সময় যে দল আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ক্ষমতায় আসীন থাকে, তারাই আবার কালের আবর্তে হারিয়ে যায়। ধস নামে তাদের জনপ্রিয়তায়। বিশ্বজুড়ে এমন অনেক দেশেই বড় বড় রাজনৈতিক দল পড়েছে রাজনৈতিক বিপর্যয়ে। কারও ক্ষেত্রে এ বিপর্যয় সাময়িকের আবার অনেক দলের ক্ষেত্রে রীতিমতো তৈরি করেছে অস্তিত্বের সংকট। ইন্টারনেট অবলম্বনে এমন সব রাজনৈতিক দলের আদ্যোপান্ত নিয়ে রকমারির এ আয়োজন-

 

নানা দলে বিভক্ত ব্রিটিশ-ভারতের সেই মুসলিম লীগ

১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের বাঙালি বিকল্প হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দলটি পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন অর্জন করে এবং শেষ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য-চেতনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্ব দেয়

১৯০৬ সালের প্রেক্ষাপট; তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যারা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরন্তর সংগ্রাম করেছিল। পরবর্তীতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ হিসেবে দলটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। ভারতবর্ষের মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় গঠিত দলটি তাদের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশ অর্জনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। দলটির মূল লক্ষ্যই ছিল মুসলমানদের ইমান আকিদা রক্ষার মাধ্যমে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের মতো গণমানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর এ দলটির মূল উত্তরসূরি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৫৮ সাল (১১ বছর) পর্যন্ত দলটি পাকিস্তান শাসন করে। কিন্তু পাকিস্তানে সামরিক আইন জারির পর বদলে যায় প্রেক্ষাপট। তৎকালীন পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খান মুসলিম লীগ (পাকিস্তান) ভেঙে দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দলটি কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ নামক দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতারা জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনকে সমর্থন করেছিলেন, অন্যদিকে কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতারা আইয়ুববিরোধী হিসেবে আবির্ভূত হন। কয়েক বছরের মধ্যেই মুসলিম লীগ বহু দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। তন্মধ্যে ১৯৬২ সালে তারা কনভেনশন মুসলিম লীগ, ১৯৭০ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম), ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে মুসলিম লীগের আধিপত্যের বাঙালি বিকল্প হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যে দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। এখানেই থেমে থাকেনি মুসলিম লীগ। এরপর পাকিস্তানে তিন ভাগে বিভক্ত হয় দলটি।  ১৯৯৩ সাল ২০০৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (জে), ১৯৯৫ সাল ২০০৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগ (জিন্নাহ) এবং ২০০৯ সাল ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান পিপলস মুসলিম লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে।

 

শক্তিশালী কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবির যত ইতিহাস

ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির ইতিহাস ঘাঁটলে বড় বিপর্যয়ের উদাহরণ মিলবে। ডানপন্থি এ দলটির লক্ষ্য সংসদীয় আইন পালনে  কঠোরতা। ঐতিহাসিকভাবে দলটির পথচলা শুরুর পর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিসর বাড়ানোর দিকে নজর ছিল। সে সময় তারা দেশের সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিও প্রাধান্য দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উইনস্টন চার্চিলের নামের সঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টির নাম গোটা বিশ্বে উচ্চারিত ও পরিচিত হতে থাকে। এর আগে কনজারভেটিভ পার্টি ১৮৯২ থেকে ১৮৯৫ এবং ১৮৯৫ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত দুবার ক্ষমতায় ছিল। দেশটির শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও শুল্ককরের ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে দলের নেতাদের মধ্যেই বড় মতবিরোধ দেখা দেয়। নীতিগত এ বিরোধের কারণে ভরাডুবি হয় দলটির। যে কারণে দীর্ঘ সময় তারা ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অ্যান্ড্রু বোনার লয়ের নেতৃত্বে ১৯২২ সালে ক্ষমতায় ফেরে দলটি। এর মাঝে দলে যোগ দিয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল। তিনি কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল পার্টি- দুটি দলের হয়ে রাজনীতি করেছেন। ১৯০০ সালের পরপরই তিনি ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে আলোচিত হতে থাকেন। দেশটির শক্তিশালী কনজারভেটিভ পার্টির এমপি নির্বাচিত হন তিনি। শুরুতে কনজারভেটিভ পার্টিতে তিনি প্রভাব বিস্তার করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নিজ দলের লোকদের সঙ্গেই তাঁর তর্ক বেধে যায়। তিনি শুল্কের বিরুদ্ধে এবং দরিদ্রদের জন্য সামাজিক পরিবর্তনের সমর্থনে বক্তৃতা দিয়ে জনপ্রিয়তা পান। কিন্তু দলের অনেক নেতা তা মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে সংকট দেখা দেয় দলের ভিতরেই। মতবিরোধের কারণে তিনি কনজারভেটিভ পার্টি ছেড়ে দেন। ১৯০৪ সালে তিনি যোগ দেন লিবারেল পার্টিতে।

১৯০৫ সালে লিবারেল পার্টি জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে। এবার চার্চিল হন সংসদ সদস্য। ১৯১৭ সালে চার্চিলকে যুদ্ধের মন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়। নানা ঘটনাপ্রবাহের পর চার্চিল পুনরায় কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। উইনস্টন চার্চিল ১৯৪০ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয় লাভের পর তিনি যেমন আলোচিত হয়েছেন তেমনি হয়েছেন সমালোচিত। ১৯৪৩ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। চার্চিলের ভুল নীতির মারাত্মক খেসারত দিতে হয় দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া মানুষকে। প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করে তার। ১৯৪৫ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে বড় ধাক্কা খান চার্চিল। পরাজিত হন তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবির পর কিছুটা মধ্যপন্থি প্রগতিশীল ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের নীতিতে ঝুঁকে পড়ে দলটি। ব্রিটেনের প্রভাবশালী এ দলটি বারবার উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।  বারবার হারিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ১৯৯৭ সালে ফের ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তারা। ক্ষমতায় ফিরতে দলটির অপেক্ষা করতে হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত।

 

সেই বামফ্রন্ট এখন প্রধান বিরোধী দলও হতে পারছে না

ছয়ের দশকের সময়কার ওপার বাংলার জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ‘বামফ্রন্ট’। যারা অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে ‘সর্বহারা শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী’ বাম সংগঠনগুলোর জোট হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। যাদের এ জয়যাত্রা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে। ওপার বাংলার বিভিন্ন প্রদেশ শাসন করা এবং স্বাধীনতার আগে ও পরের প্রায় এক শতাব্দী ধরে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জীবনে জড়িয়ে থাকা কমিউনিস্ট দলটি এক সময় আসনশূন্য হয়ে যায়। এই তো! ২০১১ সালের নির্বাচনের ঘটনা সবারই জানা।

সেবার পশ্চিমবঙ্গে ভোট বিপর্যয়ের পর দলটি দ্বিতীয় স্থানও ধরে রাখতে পারেনি। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরেই তারা তাৎপর্যহীন হয়ে পড়ে। যত নির্বাচন আসছে, তাদের অবক্ষয় কেবল আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ২০১১ সালের পর, পশ্চিমবঙ্গের দুটি নির্বাচনে তাদের জনসমর্থন ৩০ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসে।

 

জার্মান সাম্যবাদী দলের সঙ্গে একীভূত হতে বাধ্য হয় এসপেডে

জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপেডে) পৃথিবীর অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল। মূলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যই দলটি তৈরি হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ছিল খুবই সীমিত, তখন জার্মানির একদল লোক এটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। পরবর্তীতে তারাই সঙ্গবদ্ধ হয়ে রাজনীতি শুরু করে। এর রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের ইতিহাস। কখনো নিষিদ্ধ হয়েছে, কখনো ভেঙেছে। প্রতিষ্ঠার সময় এটি ছিল মার্কসবাদ দ্বারা প্রভাবিত অন্যতম রাজনৈতিক দলগুলোর একটি। সময়ের পরিক্রমায় এটি হয়ে ওঠে জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। ১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে নাৎসি দলের ক্ষমতায় আরোহণের পর সামাজিক গণতন্ত্রী দল ছিল একমাত্র দল যেটি রাইখসটাগে ১৯৩৩ সালের ক্ষমতায়ন আদেশের বিরোধিতা করে। এরপর দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর সেটি নির্বাসনে থেকে পরিচালিত হতে থাকে। তবে দলটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। সে সময় দলটি যুদ্ধের পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামাজিক গণতন্ত্রী দলটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্ব জার্মানিতে এটিকে জার্মান সাম্যবাদী দলের সঙ্গে একীভূত হতে বাধ্য করা হয়। তখন দল দুটি একত্রে মিলে জার্মানির সমাজতন্ত্রী ঐক্য দল গঠন করে। ১৯৫৯ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী দল মার্কসবাদ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করে। জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দলের পুরো চিত্রটাই বদলে যায়। শুরু হয় নতুন রূপে তাদের পথচলা।

 

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভেঙে যায় শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএলপি)। প্রভাবশালী এ রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পটপরিবর্তনের ইতিহাস। ক্ষমতায় গিয়ে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সমালোচনার মুখেও পড়েছে দলটি। দলটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে ক্ষমতা হারিয়ে বড় সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একপর্যায়ে ভেঙে যায় শ্রীলঙ্কার ফ্রিডম পার্টি। ষাটের দশকে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন ডন আলউইন রাজাপাকসে। তখন এর নেতৃত্বে ছিলেন এসডব্লিউআরডি বান্দারানায়েক। তিনিও এসএলএলপির আরেকজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৫৬ সালে দলটি প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের মর্যাদা পায়। ১৯৫৯ সালে তাকে হত্যার পর তার স্ত্রী সিরিমাভো দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে এসএলএফপি নতুন সংবিধান প্রবর্তন করে। দেশের নাম সিলন থেকে শ্রীলঙ্কা রাখে ও শ্রীলঙ্কাকে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৬ সালে জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের সভাপতি হন সিরিমাভো। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার সরকার ভালোই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বিশেষ করে অর্থনীতি ও দুর্নীতির কারণে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে এসএলএফপির জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়ে। যে কারণে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে এসএলএফপির ভরাডুবি হয়। এ পরাজয়ের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও বড় আকার দেখা দেয়। ১৯৮২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হেক্টর কোব্বেকাদুয়া এসএলএফপির প্রার্থী হন। কিন্তু তার সঙ্গে দলের দূরত্ব বেড়েই চলে। একই বছর সংসদ নির্বাচন ছয় বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দলটিতে বেশ বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়। ১৯৯৪ সালে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা এসএলএলপির দায়িত্ব নেন। নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ভেঙে যায় শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি। তৈরি হয় শ্রীলঙ্কা পিপলস পার্টি। এ দলে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির কিছু নেতা যোগ দিলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরনো দলটি। সিরিমাভোর কন্যা ও ভবিষ্যতের দল নেতা চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা দলে ভাঙন সৃষ্টি করে শ্রীলঙ্কা পিপলস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সালে জাতিগত তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশের ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোয় দলটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু এবারও দুর্নীতির কারণে জনরোষে পড়ে দল ও তার নেতারা। বন্দর নির্মাণে চীনের কাছ থেকে ঋণ নেন। এ প্রকল্পে ঋণ পরিশোধ করা শ্রীলঙ্কার জন্য প্রায় অসম্ভব। এরপর অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, শ্রীলঙ্কাকে দেশটির ইতিহাসে বৃহত্তম কর হ্রাসের মধ্যে ঠেলে দেয়। যা দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলে। পরে মহামারিতে দেশটির পর্যটন খাতে ব্যাপক ধস নামে। ২০২১ সালে রাসায়নিক সার আমদানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিলে বাধ্য হন গোতাবায়া। আর সে সময় বৈশ্বিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও তেলের দাম বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ এবং খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কলম্বোর রাস্তায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, প্রেসিডেন্ট পালাতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন। দুর্নীতির কারণে শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় এই ফ্রিডম পার্টি ইমেজ সংকটে পড়েছে।

 

ক্ষমতা থেকে ছিটকে যাওয়া ফ্রান্সের সোশ্যালিস্ট পার্টি

ফ্রান্সের সোশ্যালিস্ট পার্টি ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে এর নাম ছিল ফ্রেন্স সেকশন অব দ্য ওয়ার্কার্স ইন্টারন্যাশনাল। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে এর নাম বদলে হয়ে যায় সোশ্যালিস্ট পার্টি। এ দলটি সামাজিকভাবে ধনী-গরিব সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই গড়ে উঠেছিল। ১৯৮১ সালে দলটি প্রথম ক্ষমতায় আসে। দেশটির সাধারণ নির্বাচনে এ দল থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় সেবার। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ দলটি একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখে। কিন্তু ১৯৯৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলটি আধিপত্য হারায়। হেরে যায় সোশ্যালিস্ট পার্টি। বিপর্যয়ের শুরু এখান থেকেই। বারবার প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনে পরাজয়ের মুখে পড়ে দলটি। ঘুরে দাঁড়ানোর শত চেষ্টা বিফলে যায়।  তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে ২০১১ সালে। ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার আঞ্চলিক পর্যায়ে দারুণ ফলাফল করে দলটি। সিনেটে শক্ত অবস্থান তৈরি হয়। ২০১২ সালে দলের অবস্থা বেশ ভালো বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরো উল্টে যায়। ২০১৭ সাল থেকে ক্ষমতা থেকে ছিটকে যায় এ দল।

সর্বশেষ খবর