বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীর্ষ ধনীদের কার কত সম্পদ

পৃথিবীর বুকে সফল উদ্যোক্তা এবং বিত্তশালী হওয়ার দৌড় প্রতিযোগিতা ছিল একাল-সেকাল সবকালেই। প্রাচীনকালে তো বটেই, সাম্প্রতিককালে বিশ্ববাসী এমন সব ব্যক্তির দেখা পেয়েছেন, যারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন।  তারা সবাই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতায় সমাজে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছেন। এরা যুগে যুগে একচেটিয়াভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনকুবের ব্যক্তিদের তালিকায় তাদের সাফল্য রেখেছেন; যা মোটেও ছোট কোনো কীর্তি নয়

 

যেভাবে পাঁচ ধনীর সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ

বিশ্বের অতিধনীদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ছেই। সম্প্রতি অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত বার্ষিক বৈষম্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে ২০২০ সালের পর শীর্ষ পাঁচ ধনীর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ এই সময়ে হওয়া মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে তাদের বিত্ত তিনগুণ দ্রুত বেড়েছে। ঠিক এই সময়ে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এবারের আসর বসার আগে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে এ ধনীদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। গত বছর তা ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে, বিশ্বব্যাপী প্রায়  ৫০০ কোটি মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে, যাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ-সংঘাত ও জলবায়ু সংকটের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল আরও জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ধনী-গরিবের সম্পদের ব্যাপক বৈষম্যের এই অবস্থায়, বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে দারিদ্র্যদূরীকরণে প্রায় ২৩০ বছর সময় লাগবে।

বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং জনহিতৈষী কর্মকান্ডে শীর্ষ ধনকুকেবররা বড় ভূমিকা পালন করে। এই প্রতিবেদন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। দারিদ্রবিরোধী প্রতিষ্ঠান অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের অসমতাবিষয়ক প্রতিবেদনে ধনী-গরিবের সম্পদের এমন বৈষম্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি কোম্পানির মধ্যে অন্তত সাতটি কোম্পানি পরিচালনা করছেন বা তার প্রধান শেয়ারহোল্ডার একজন শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার। অক্সফামের প্রতিবেদনে যে পাঁচজন শীর্ষ শতকোটিপতির কথা বলা হয়েছে, তাদের সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের মাধ্যমে। এই শতকোটিপতিরা হলেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক, এলভিএমএইচের প্রধান বানার্ট আর্নল্ট, ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন, অ্যামাজনের প্রধান জেফ বেজোস এবং বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের। ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ৭৩৭ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ফরাসি বিলাসবহুল পণ্য জায়ান্ট লুই ভিঁতো (এলভিএমএইচ) চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট এবং তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ১১১ শতাংশ বেড়েছে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ১০৭ শতাংশ বেড়েছে। তালিকায় রয়েছেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট, যার মোট সম্পদ ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও মার্কিন বিলিয়নিয়ারদের (যাদের মধ্যে অনেকে তাদের নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলোর শেয়ার মালিকানা থেকে সম্পদ অর্জন করেন) সম্পদ ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

অক্সফামের আনুমানিক হিসাব, ২০২০ সালের পর গত তিন বছরে বিশ্বের ১৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার মুনাফা করেছে।  যা আগের তিন বছরের গড় মুনাফার চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফা পেলেও তাদের লাখো কর্মী জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সংকটে পড়েছেন।

 

শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, সম্পদের হিসাবে সবার ওপরে এই ধনকুবের

ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা, মহাকাশ অনুসন্ধান সংস্থা স্পেসএক্স, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সসহ (সাবেক টুইটার) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। টেসলা, পেপ্যালসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইলন মাস্কের নাম। অর্থ আদান-প্রদানের জনপ্রিয় মাধ্যম পেপ্যালের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা সবচেয়ে দ্রুতগতির হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চগতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থারও উদ্ভাবক। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইলন মাস্কের সম্পদ কলম্বিয়া, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান, চিলি ও পর্তুগালের মতো দেশগুলোর জিডিপির চেয়ে বেশি। ফোর্বসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাস্ক সম্পদ আহরণের দিক দিয়ে নতুন সীমায় নিয়ে গেছেন নিজেকে। আমেরিকার বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার ২৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। শীর্ষ এই ধনকুবেরের সম্পদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই টেসলার সাফল্যের সঙ্গে জড়িত। ২০২২ সালের অক্টোবরে ইলন মাস্ক ৪৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনেছিলেন। এর আগে ২০১০ সালে তিনি টেসলার শেয়ার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাজার মূলধনে উল্লেখযোগ্য মুনাফা লাভ করে। ফলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির শীর্ষ অবস্থানে চলে আসেন। একই বছরের নভেম্বরে তার ভাগ্য বদলে যায়। ইলন মাস্ক হয়ে ওঠেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তখন তার সম্পদ ৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। যদিও ২০২২ সালটি ছিল মাস্কের সম্পদমূল্য কমার বছর। তবে ২০২৩ সাল তার জন্য আশীর্বাদই। কারণ এ বছর তার সম্পদমূল্য কয়েক শ কোটি ডলার পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর পেছনে রয়েছে স্টক মার্কেটে শেয়ার। ২০২৩ টেসলার শেয়ারের দাম ১০৭ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্কের মোট সম্পদের মূল্য ১৩৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৩২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। তবে এর আগে ২০২১ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৭৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

 

বার্নার্ড আর্নল্ট এবং তার পরিবারের মোট সম্পদ ১১১ শতাংশ বেড়েছে

তালিকায় থাকা ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট, বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। তিনি বিলাসবহুল পণ্য জায়ান্ট লুই ভিঁতোর (এলভিএমএইচ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও চেয়ারম্যান। বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল পণ্য প্রতিষ্ঠান- যা প্রায় ৭০টি বিখ্যাত ফ্যাশন এবং প্রসাধনী ব্র্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লুই ভিটন, হেনেসি, মার্ক জ্যাকবস, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি এবং সেফোরা। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, আর্নল্ডের বেশিরভাগ সম্পদ আসে ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের অংশীদারিত্ব থেকে; এটি এলভিএমএইচের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ মালিকানা বা শেয়ারের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এলভিএমএইচ ১৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান টিফ্ফানি অ্যান্ড কোং অধিগ্রহণ করেছিল। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, বার্নার্ড আর্নল্টের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ১১১ শতাংশ বেড়েছে। যদিও এলভিএমএইচ এখন ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান নয়, তবুও তার সম্পদমূল্য বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আর্নল্টের পাঁচ সন্তান এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরের দায়িত্বে আছেন।

 

জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ১৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে

আর্নল্টের পরেই রয়েছেন বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। ১৯৯৪ সালে আমেরিকায় অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। পৃথিবীর প্রথম ‘ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি’ হলো অ্যামাজন। বিশ্বের এই শীর্ষ ধনকুবেরের আশা, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টকেও ছাড়িয়ে যাবে অ্যামাজন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে তিনি অ্যামাজনের চেয়ারম্যান হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখে ই-কমার্স পাওয়ার হাউস অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। একই মাসে জেফ বেজোস ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে রকেটে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণের ব্যবসা চালু করেছিলেন। ব্লু অরিজিন একটি বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান সংস্থা; যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অ্যামাজনের জেফ বেজোস এবং এজন্য তিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছিলেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় জেফ বেজোস ছিলেন ৬ নম্বরে। সে সময় তার সম্পদের মূল্য ছিল ১০৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০২৩ সালে জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

 

শীর্ষ পাঁচ ধনীর তালিকায় ওয়ারেন বাফেট

‘ওয়ারেন বাফেট : ফিউচার ইনভেস্টর’। তাকে সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারী বলে মানা হয়। ওয়ারেন বাফেট কেবল বিনিয়োগ নয়; তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনহিতৈষীদের একজন। তিনি তার সম্পদের ৯৯ শতাংশই দানের ঘোষণা দিয়েছেন। কেবল ঘোষণা দিয়ে থেমে থাকেননি, সবশেষ চারটি পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে বার্কশায়ার হাথাওয়ের প্রায় ৮৭ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার দান করেছিলেন বিশ্বের এই পঞ্চম শীর্ষ ধনী। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪২০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বছর না পেরেতেই তার সম্পদের পরিমাণ যার ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে তিনি এখন বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনীর একজন। বিনিয়োগকারী বাফেট জীবনের প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে। ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন। একসময় হকারের কাজ করতেন। সংবাদপত্র, বই বিক্রি করতেন। এমনকি কাজ করেছেন মুদি দোকানেও। সেখান থেকে ব্যবসার পথচলা। ধীরে ধীরে বনে যান বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী। তিনি এখন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৬৫ সালে ডুবতে থাকা এই প্রতিষ্ঠান কিনেছিলেন। এখন প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ৭০ হাজার ২০৯ কোটি ডলারের। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫টি।

 

ল্যারি এলিসনের সম্পদ বেড়েছে ১০৭ শতাংশ

ওয়ারেন বাফেট এবং বিল গেটসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হয়েছেন ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স অনুসারে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ১০৭ শতাংশ বেড়েছে। এই প্রথম এলিসন ব্লুমবার্গের তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এসেছেন। ওরাকল সত্তরের দশকের শেষের দিকে নিম্ন ও মধ্য-পরিসরের ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি ডাটাবেজ বিক্রেতা হিসেবে বিস্তার লাভ শুরু করে। এলিসন ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পদে থাকার পর পদত্যাগ করেন কিন্তু নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে রয়ে যান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাম্প্রতিক অগ্রগতির অংশ হিসেবে ওরাকলের শেয়ারের মূল্য ৪১ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তাই বিলিয়নিয়ারদের লিডারবোর্ডে এলিসনের দৃঢ় পদচারণা।

 

শীর্ষ ধনীর তালিকায় বিল গেটস ষষ্ঠ অবস্থানে

এক সময়ের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। টানা ১৩ বছর একই স্থান ধরে রেখেছিলেন তিনি। এই মানুষটির হাত ধরেই আধুনিক বিশ্ব দেখেছিল কম্পিউটিং সফটওয়্যার মাইক্রোসফট। ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। দানবীর হিসেবেও ব্যাপক খ্যাতি তার। আমেরিকার দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও বিল গেটস। তার সম্পদমূল্য বাড়লেও তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়ে গেছেন মাইক্রোসফটের এই প্রতিষ্ঠাতা। আগের দুই বছরও ছিলেন চতুর্থ স্থানে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স অনুসারে, ২০২৩ সালে তার সম্পদমূল্য ১০৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

 

এ বছর চমক দেখালেন মার্ক জাকারবার্গ

শীর্ষ ধনীর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ২০২২ সালে তিনি শীর্ষ ২০ জনের মধ্যেও ছিলেন না। অথচ পরের বছরই সেরা ১০-এ জায়গা করে নেন। ২০২৩ সালের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তার অবস্থান সপ্তম। ২০২২ সালে তার সম্পদমূল্য ছিল ৪৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা এখন ১২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। মার্ক জাকারবার্গ, মেটা প্ল্যাটফরমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ২০০৪ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার ফ্ল্যাগশিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১২ সালের মে মাসে ফেসবুক জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। মাত্র চার বছর পরেই ২০১৬ সালে জাকারবার্গ হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের একজন। সে সময় ফোর্বসের তালিকায় তিনি ১০তম স্থানে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেসবুকের ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

 

সম্পদের হিসাবে সেরা ১০-এ ল্যারি পেজ

তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। তিনি ২০২২ সালে ছিলেন ১০ম স্থানে। তখন তার সম্পদের মূল্য ছিল ৮৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।  ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, যা এখন ১২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ল্যারি পেজ তার সহকর্মী স্ট্যানফোর্ড পিএইচডিধারী ছাত্র সের্গেই ব্রিনকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৮ সালে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে পেজ ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর পদে বহাল ছিলেন। পরে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একই পদে পুনরায় অধিষ্ঠিত হন। বর্তমানে ল্যারি পেজ গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি পেজ অ্যালফাবেটের একজন প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ওপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে চলেছেন।

 

নবম স্থানে রয়েছেন সের্গেই ব্রিন

গুগলের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ১২০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে ৭৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ সম্পদ নিয়ে তিনি ছিলেন তালিকার ১১ নম্বরে। ১৯৯৮ সালে ব্রিন তার স্ট্যানফোর্ডের বন্ধু ল্যারি পেজের সঙ্গে গুগল সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠায়  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন একাধিক প্রযুক্তি উদ্যোগের নিয়ন্ত্রক কোম্পানি হিসেবে অ্যালফাবেট প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর গুগল ও তাদের অন্যান্য কোম্পানি অ্যালফাবেটের অধীনে চলে যায়। রাশিয়া বংশোদ্ভূত সের্গেই ব্রিন প্রাথমিকভাবে গুগলের প্রযুক্তি বিভাগের সভাপতির পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিশেষ প্রকল্পগুলোয় কাজ করেন। যার মধ্যে রয়েছে- গুগল গ্লাস এবং স্মার্ট চশমা।

সর্বশেষ খবর