রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বকাঁপানো বিয়ে বিচ্ছেদ

আবদুল কাদের

বিশ্বকাঁপানো বিয়ে বিচ্ছেদ

বিয়ে বিচ্ছেদ নানা কারণে সংবাদপত্রের শিরোনাম হতে পারে। কখনো কখনো অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তি কিংবা জনপ্রিয় সেলিব্রেটি দম্পতির কারণে শব্দটি বেশি উচ্চারিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক ও ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার বিচ্ছেদের খবরে আবারও শব্দটি আলোচনায় এলো।  বিল গেটস থেকে জেফ বেজোস, কেভিন কস্টনার থেকে কিম কার্দিশিয়ান বা ব্র্যাড পিটের মতো সেলিব্রেটিদের আলোচিত বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে আজকের রকমারি...

 

২৭ বছরের সংসারের পর বিচ্ছেদের পথে হাঁটলেন গেটস দম্পতি

খরচ এখনো অজানা

১৯৮৭ সালে মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মেলিন্ডা যোগ দেন। এক পার্টিতে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় গেটসের। তখন থেকে উড়ে এলো প্রেম। টানা সাত বছর প্রেমে হাবুডুবু খেলেন তারা। অবশেষে ১৯৯৪ সালে বিল গেটস ও মেলিন্ডা অ্যান ফ্রেঞ্চ বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ২৭ বছর পর ২০২১ সালের ৩ মে  হঠাৎ নিজেদের বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ধনকুবের বিল গেটস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। তিন সন্তানের জনক-জননী তারা। আকস্মিক এই ঘোষণায় বিশ্ববাসী হতবাক। আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ-সংক্রান্ত চুক্তি করেছেন তাঁরা। এক বিবৃতিতে বিল ও মেলিন্ডা জানান, বিচ্ছেদের পরও মানুষের সহায়তায় একসঙ্গেই গেটস ফাউন্ডেশনের কাজ এগিয়ে নেবেন তাঁরা। গেটস ফাউন্ডেশনের মোট সম্পদ ৪০ বিলিয়ন ডলার।  অন্যদিকে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫০ কোটি ডলার। তবে গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ চুক্তি কত? তা নিয়ে এখনো খোলাসা করেননি তারা।

 

 

উপস্থাপিকার প্রেমে মজে দীর্ঘদিনের সংসারের ইতি টানেন বেজোস

৩৬ বিলিয়ন ডলার

অনলাইনে বেচাকেনার বড় বাজার অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রথম কর্মী ছিলেন ম্যাকেনজি। তার সঙ্গেই পরিচয় ছিল আরও বছর চারেক আগে। অ্যামাজনের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে বেজোস-ম্যাকেনজির প্রেম। এক দশকের ব্যবধানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কাতারে নাম লেখান জেফ বেজোস। এরই মাঝে বিয়ে করেন ম্যাকেনজিকে। তাদের সংসারে চার সন্তান। ২০১৯ সালের এপ্রিলে দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসার ভেঙে যায় বিয়ে-বিচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে। নেপথ্যে নাকি জেফ বেজোসের পরকীয়া। ইংলিশ মিডিয়ায় বোমা ফাটল, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমে মজেছেন বেজোস। সন্তান, সংসার রেখে ফক্স টিভির এক উপস্থাপিকার কাছে ছুটে যাচ্ছেন প্রায়ই। ২০১৮ সালে জেফ বেজোস শীর্ষ ধনকুবের হিসেবে আলোচনায় ছিলেন। একইভাবে ২০১৯ সালে বিচ্ছেদের কারণেও তিনি ছিলেন আলোচনায়।  গণমাধ্যমগুলো জানায়, বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হলে ম্যাকেনজিকে ৩৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। এরপর বিশ্বের ধনী নারীতে পরিণত হন ম্যাকেনজি।

 

তৃতীয় বিয়ের খবর প্রকাশের কয়েক মাস আগেই শোয়েব-সানিয়া দম্পতির বিচ্ছেদ

সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। দীর্ঘ ১৩ বছরের সম্পর্ক ভেঙে গেছে সানিয়া মির্জা ও শোয়েব মালিকের। নেপথ্যের কারণ তৃতীয় বিয়ে। মূলত, শোয়েবের তৃতীয় বিয়ের খবর প্রকাশ্যে এলেই জানা যায়, কয়েক মাস আগে তালাক নিয়েছেন সানিয়া। আর বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ পেতেই গুঞ্জন উঠেছে কত টাকা সানিয়াকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হচ্ছে শোয়েবকে। শোয়েব-সানিয়ার মধ্যে ২০২২ সাল থেকেই সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করেছিল। যদিও ডিভোর্স নিয়ে এখনো পর্যন্ত কেউই স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করেননি। কিন্তু, শোয়েবের তৃতীয় বিয়ের পর শোনা যাচ্ছে ২০২২ সালেই সানিয়ার সঙ্গে নাকি তাঁর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল। এর আগেও প্রথম বিয়ে নিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন শোয়েব মালিক। ২০১০ সালে সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করার সময় আয়েশা সিদ্দিকী নামে এক মেয়ে নিজেকে শোয়েব মালিকের স্ত্রী বলে দাবি করেন। আয়েশার বক্তব্য ছিল ২০০২ সালে শোয়েবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। প্রমাণ হিসেবে তিনি সেই বিয়ের ভিডিও ক্লিপও প্রকাশ্যে আনেন। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে আয়েশা শোয়েবের থেকে শুধুমাত্র ডিভোর্স নিতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য জানা যায়, শোয়েব তাকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। যদিও শোয়েব এ বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু সানিয়ার সঙ্গে বিয়ের কয়েক দিন আগেই ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্স নিয়ে নেন। এই পরিস্থিতিতে আশা করা হচ্ছে, শোয়েবের প্রথম স্ত্রীর তুলনায় সানিয়া অনেকটা বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।

 

বিয়ের ১৮ বছর পর বিচ্ছেদের পথে এগোন কেভিন-ক্রিস্টিন

১৪৫ মিলিয়ন ডলার

দুজন দুই মেরুর তারকা। একজন হলিউড অভিনেতা কেভিন কস্টনার। অন্যজন মার্কিন ফ্যাশন ডিজাইনার ক্রিস্টিন বামগার্টনার। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেভিন কস্টনার তার কলোরাডোর খামারবাড়িতে বিয়ে করেন ডিজাইনার ক্রিস্টিন বামগার্টনারকে। হাতে হাত রেখে পার করেছেন দীর্ঘ ১৮ বছর। সম্পর্কে নানা টানা-পোড়েন, মান-অভিমান এবং দাম্পত্য জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করেছেন এই দম্পতি। তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে- দুই ছেলে কেইডেন (১৬) ও হেইস (১৪) এবং তাদের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে গ্রেস। কিন্তু ২০২৩ সালের মে মাসে অভিনেতা কেভিন কস্টনার ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিন বামগার্টনার বিচ্ছেদের আবেদন করেন। যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় আদালত পর্যন্ত। বিচারক বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য ১৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচের নির্দেশ দেন অভিনেতাকে। একপর্যায়ে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। এর আগে, অভিনেত্রী সিন্ডি সিলভার সঙ্গে ১৬ বছর সংসার করেছিলেন কস্টনার। অতপর, ১৯৯৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। আগের সম্পর্কে কেভিন কস্টনারের অ্যানি ও লিলি নামের দুই মেয়ে এবং জো ও লিয়াম নামের দুই ছেলে রয়েছে।

 

বিয়ের সাত বছর পর কার্দিশিয়ান ওয়েস্টের বিচ্ছেদের আবেদন

১০.১ মিলিয়ন ডলার

হলিউড তারকা যুগল কিম কার্দিশিয়ান এবং কেনি ওয়েস্ট। একজন পপ সংগীতশিল্পী, অন্যজন হলিউড অভিনেত্রী ও মডেল। ২০০৮ সাল থেকে দুজনে বন্ধু ছিলেন। একই বছর ক্রিস হামফ্রিজ এবং কিম কার্দিশিয়ানের বিয়ে বিচ্ছেদের পর ২০১১ সালে তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে। ২০১২ সাল থেকে ডেট করতে শুরু করেন ওই সেলেব জুটি। ২০১৪ সালের মে মাসে বিয়ে করেন কিম কার্দিশিয়ান-কেনি ওয়েস্ট। সাত বছর কাটিয়েছেন সংসার জীবন। এই জুটির সংসারে চার সন্তান রয়েছে। তাদের নাম যথাক্রমে- নর্থ, সেন্ট, শিকাগো এবং পাম। কিন্তু, ২০২১ সালে, এই তারকা যুগল বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। এমন সিদ্ধান্তের কারণ, কিম এবং কেনির মধ্যকার ঘন ঘন মতের অমিল, যা চেষ্টা করেও ঠিক করতে পারেননি তাঁরা। পাল্টা কিম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ও অসাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে খুব জটিল।’ অতপর ২০২২ সালের ২ মার্চ, আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কার্দিশিয়ানকে আইনত অবিবাহিত ঘোষণা করা হয়। কার্যকর হয় এই দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদ। আমেরিকার গণমাধ্যমের দাবি, কিম-কেনির সম্পত্তির পরিমাণ ২০.২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যা ভাগাভাগি হয়েছিল দুজনের মধ্যে।

 

অ্যালেক ও জোসেলিন ওয়াইল্ডেনস্টেইন

৩.৮ বিলিয়ন ডলার

ধনকুবের ব্যবসায়ী অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইন এবং জোসেলিন ওয়াইল্ডেনস্টেইনের সংসার নিয়ে অ™ভুুতসব ঘটনা জানা যায়। আকাশছোঁয়া টাকার পাহাড় ছিল অ্যালেকের। বিয়ে করেন জোসেলিনকে। সিনেমাপাড়ায় তারকাখ্যাতি ছিল তার। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী জোসেলিনের টাকা ওড়ানো দেখে এক কথায় হতভম্ব হয়ে যান অ্যালেক। তার পাগলামির চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পায় দুই মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্লাস্টিক সার্জারির পর। বিড়ালের মতো মুখায়ব তৈরি করেন। জোসেলিনের দাবি, তার স্বামী বিড়াল পছন্দ করে তাই তার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থাকতেই এ কাণ্ডটা করেছেন। ১৯৯৭ সালে স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া, অবাধ যৌনতার অভিযোগ এনে ডিভোর্স চান জোসেলিন। দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পর তাদের ডিভোর্স হয়। তবে এজন্য স্বামী অ্যালেকের পরিশোধ করতে হয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। এখানেই শেষ নয়। শোনা যায়, ডিভোর্সের ১৩ বছর পর আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের চেক পাঠিয়ে তবেই মীমাংসা হয়।

 

মিডিয়া মুঘল মারডক ও টোর্বের বিচ্ছেদ

১.২ বিলিয়ন ডলার

মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের বয়স এখন ৮৮। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়া- সব মহাদেশেই বড় বড় টিভি, পত্রিকার মিডিয়া হাউসগুলোর শাহেনশাহ তিনি। আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন একের পর এক বিয়ে, প্রেম আর ডিভোর্সে জড়িয়ে। চার বিয়ে কাণ্ডে তাকে নিয়ে হইচই কম হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংসার শুরু করেন, তারপর দ্বিগুণ টাকা ঢেলে ডিভোর্স দেন। তবে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে দ্বিতীয় বিয়ে বিচ্ছেদের সময়। বিয়ে করেছিলেন আনা টোর্বকে। আনা টোর্ব সাংবাদিকতা করতেন। ১৯৬৭ সালে টোর্বকে বিয়ের পরই মূলত মারডকের নাম-খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দ্য টেলিগ্রাফের সেই সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে টিকেছিল ৩০ বছর। মানসিক দূরত্বের কারণে আর সংসার করা হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে মারডক খরচ করেছিলেন প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা অন্যতম ব্যয়বহুল বিয়ে বিচ্ছেদের একটি।

 

ফর্মুলা ওয়ানের বাদশাহ ও মডেলের বিচ্ছেদ

১.২ বিলিয়ন ডলার

দুই জগতে দুজনই তারকা। একজন ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ে ৩০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গাড়ি ছোটান। আরেকজন টিভি পর্দায় অভিনয়, র‌্যাম্পে হেঁটে মডেলিং করেন। বলা হচ্ছে ফর্মুলা ওয়ান বা দ্রুতগতির গাড়ির রেসিং ব্যবসার বাদশাহ বার্নি একলেসটন আর সার্বিয়ান মডেল স্লেভিকার কথা। ফর্মুলা ওয়ান আবিষ্কার করে রেসিং ব্যবসায় একচ্ছত্র বাদশাহী রেখেছেন বার্নি। সংসারও সামলে নিয়েছিলেন ভালোমতো। অন্যদিকে মডেলিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্লেভিকা। আমেরিকার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তার দাপটও ছিল। তাদের সংসারে আসে দুই সন্তান। কিন্তু সাংসারিক বোঝাপোড়া না থাকায় দূরত্ব বাড়ে স্বামী-স্ত্রীর। দুজনকে ঘিরেই পরকীয়া প্রেমের কানাঘুষা চলে। একপর্যায়ে স্লেভিকাই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন। ২০০৮ সালে তিনি ডিভোর্স চাইলে ধনকুবের খুব একটা ঝামেলা করেননি। বিয়ে বিচ্ছেদে সম্মত হন দুই জগতের এই দুই তারকা দম্পতি। এজন্য ১.২ বিলিয়ন ডলার স্ত্রীকে দিতে হয় বার্নি একলেসটনকে।

 

হলিউড তারকা মেল ও রবিন গিবসন

৪২৫ মিলিয়ন ডলার

হলিউড তারকা জুটির বিয়ে বিচ্ছেদের কথা উঠলে প্রথমেই আসবে মেল গিবসন ও রবিন গিবসনের কথা। এই তারকা যুগলের বিয়ে নিয়ে যেমন তোলপাড় হয়েছিল তেমনি ডিভোর্স নিয়েই মিডিয়াপাড়া থাকত সরগরম। বিয়ে বিচ্ছেদের আগে বেশ নাটকীয় কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি ছিল স্ত্রীকে ছেড়ে আলাদা থাকার সময় এক ডেন্টিস্টের সঙ্গে গোপনে দেখা করতে ছুটে গিয়েছিলেন। বনিবনা না হওয়ায় ২৬ বছরের সংসারের ইতি টানতে আইনজীবী নিয়োগ করেন রবিন গিবসন। ২০০৬ সাল থেকেই তাঁরা দুজন আলাদা থাকতেন। মেল গিবসনের দুর্দান্ত ক্যারিয়ারে সিনেমা থেকে সাড়ে ৩০০ মিলিয়নের বেশি আয় ছিল। ডিভোর্স কার্যকর করতে গিয়ে দেখা গেল তাদের মধ্যে এমন কোনো চুক্তিই ছিল না। ফলে মেলের সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা এবং তার মুভিগুলোরও কিছু অংশ রবিনের ভাগে চলে যায়। স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ হিসেবে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার চাইলেও বিচারক ৪২৫ মিলিয়ন ডলারে তাদের ডিভোর্স কার্যকর করেন।

 

ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর দুই ডিভোর্স

১ বিলিয়ন ডলার

লাস ভেগাসের ধনাঢ্য এবং ক্যাসিনো ব্যবসায়ী স্টিভ ওয়েন। হোটেল, রিসোর্ট ব্যবসাতেও তার হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ২০১৫ সালে ফোর্বসের হিসেবে তার কাছে ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার। অঢেল টাকার মালিক স্টিভ কখনো থেমে থাকেননি। নতুন নতুন ব্যবসায় দেদার টাকা ঢালেন তিনি। ক্যাসিনো ব্যবসায়ীরা তাকে গুরু মানেন। ক্ষমতাধর ও ধনী এই ব্যবসায়ীর সাংসারিক জীবন বেশ গোলমেলে কেটেছে। এলিনা প্যাসকেলকে তিনি বিয়ে করেন ১৯৬৩ সালে। ১৯৮৬ সালে তাকে ডিভোর্স দিয়ে একা একা জীবন কাটান। কিন্তু আবারও দুজনের মধ্যে বোঝাপোড়া হয়। সেই এলিনা প্যাসকেলকেই দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন ১৯৯১ সালে। অবশ্য দ্বিতীয়বারের শুরুটাও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেনি। চলতে থাকে মতের অমিল। ২০১০ সালে আবারও দুজনের ডিভোর্স হয়। এবার বেশ বড় অঙ্কের ভরণপোষণ দিতে হয় স্টিভকে। যদিও বলা হয় ১ বিলিয়ন ডলারে তাদের মীমাংসা হয়েছে, বাস্তবে এর চেয়েও বেশি খরচ হয়েছে, দাবি বিশ্লেষকদের।

 

আম্বার-জনির বিচ্ছেদ গড়ায় আদালতে

৭ মিলিয়ন ডলার

২০০৯ সালে ‘দ্য রাম ডায়েরি’ সিনেমার সেটে দেখা হয়েছিল আম্বার হার্ড এবং জনি ডেপের। ২০১২ সালের প্রথম দিকে ডেটিং শুরু করেছিলেন হলিউড পাড়ার এই যুগল। ২০১৫ সালে, এই জুটি লসঅ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে বিয়ে করেছিলেন। যদিও তাদের এই বিবাহিত জীবনের স্থায়িত্ব ছিল ১৫ মাস। ২০১৬ সালে জনি ডেপের থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেন অ্যাম্বার হার্ড। বিচ্ছেদ নিষ্পত্তির পর তিনি পেয়েছিলেন ৭০ লাখ ডলার। পুরো অর্থই অবশ্য তিনি দান করে দিয়েছেন। তবে তাঁদের বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া মোটেও সুখকর ছিল না। দুজনেই একে অন্যের বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। ড্রাগ বা অ্যালকোহলের প্রভাব থাকাকালীন শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন আম্বার হার্ড। যদিও ডেপ তা অস্বীকার করেছিলেন। ২০২০ ও ২০২১ সালের প্রায় পুরোটাই তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করেছেন। যা ছিল একে অপরের বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা।

 

বেন-ক্রিস্টিনের বিয়ে-বিচ্ছেদের গল্প

বিচ্ছেদের খরচ অজানা

জনপ্রিয় দুই অভিনেতা বেন স্টিলার এবং ক্রিস্টিন টেলরের প্রথম দেখা ১৯৯৯ সালে একটি টেলিভিশন সিরিজের সেটে। অতপর তারা দ্রুতই একে অপরের প্রেমে ডুব দেন। এক বছরেরও কম সময়ে বিয়ে করেছিলেন এই প্রেমিক যুগল। ২০০০ সালের ১৩ মে কাউয়াইতে বিয়ে করেন বেন-ক্রিস্টিন। দীর্ঘ ১৭ বছর সংসার জীবন কাটিয়েছেন এই দম্পতি। তাদের সংসার আলোকিত করে ২০০২ সালে এলা অলিভিয়া এবং ২০০৫ সালে কুইনলিন ডেম্পসি পৃথিবীতে আসে। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ মে, তারা দুঃখের সঙ্গে নিজেদের বিবয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। যদিও এর আগ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যগুলোয় তাদের নিয়ে খুব একটা মাতামাতি হয়নি। বেন স্টিলার ও ক্রিস্টিন টেলর দম্পতির বিচ্ছেদের পরও একাধিকবার তাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দম্পতি ঘোষণা করেন যে, তারা আবার একত্রিত হচ্ছেন। সংসার বাঁধতে যাচ্ছেন।

 

পামেলা-কিড রকের বিয়ে বিচ্ছেদ

বিচ্ছেদের খরচ অজানা

পামেলা অ্যান্ডারসন এবং কিড রকের মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দারুণ সম্পর্ক ছিল। তবে এর মধ্যে তাদের মধ্যে হয়ে গেছে বাগদান, বিচ্ছেন, পুনর্মিলন এবং চার মাসের বিবাহিত জীবন ইত্যাদি। ‘বেওয়াচ’ তারকা মডেল ও অভিনেত্রী পামেলা আন্ডারসন এবং পপ সংগীতশিল্পী কিড রকের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল একটি কনসার্টে। ২০০১ সালের এক ডিভাস কনসার্টের ব্যাকস্টেজে তাদের পরিচয়। ২০০১ সালে এই জুটি প্রেমে আবদ্ধ হন এবং ২০০২ সালের এপ্রিলে তাদের প্রেমের সম্পর্ক বাগদানে রূপ নিতে যাচ্ছিল। কিন্তু পরের বছর, তারা এ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে এই যুগল একটি ইয়টে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেদিন নববধূ পামেলা একটি সাদা বিকিনি পরেছিলেন এবং বর রক পরেছিলেন সাদা টি-শার্ট। কিন্তু তাদের সংসার বেশিদিন টেকেনি। মাত্র ১২২ দিন পরই তারা  বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও রক পরে বলেছিলেন, ‘এটা এমন ছিল যে আমরা কখনই আলাদা ছিলাম না।’

 

এক যুগের পর ক্রিস্টি পিটারের বিচ্ছেদ

২.১ মিলিয়ন ডলার

আমেরিকান সুপার মডেল ক্রিস্টি ব্রিঙ্কলি এবং পিটার কুক। এই যুগল ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাত পর্যন্ত বিবাহিত জীবন পার করেন। এক যুগেরও বেশি সময়ের সংসারে, এই জুটি ছিলেন দুই সন্তানের জনক-জননী। কিন্তু ক্রিস্টি ব্রিঙ্কলি যখন জানতে পারেন যে, কুকের সঙ্গে ১৯ বছর বয়সী ডায়ানা বিয়াঞ্চির সম্পর্ক রয়েছে! তখন সিদ্ধান্ত নেন বিচ্ছেদের। অতপর, বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন ব্রিঙ্কলি। ২০০৮ সালে ক্রিস্টি ব্রিঙ্কলি এবং পিটার কুকের বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। বিচ্ছেদের সময় কুকের বয়স ছিল ৪৯ এবং ব্রিঙ্কলির বয়স ৫৪। বিয়ে বিচ্ছেদের মীমাংসার জন্য ২.১ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন কুক। যদিও কুক দাবি করেন যে, তার এই সংগ্রাম ছিল কেবল তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায়। ব্রিঙ্কলিকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার অধিকারও দেওয়া হয়েছিল। তবে, ব্রিঙ্কলি আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তাকে এবং তার পরিবারকে জানাতে চাই যে, আমি তাকে অনুভব করি। তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি।’

 

ব্র্যাড পিট এবং জেনিফার অ্যানিস্টনের বিচ্ছেদ

৬০ মিলিয়ন ডলার

হলিউডের জনপ্রিয় যুগল ব্র্যাড পিট ও জেনিফার অ্যানিস্টন, যারা অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে অবিশ্বাস্যভাবে সফল। এখানেই থেমে নেই তাদের হলিউডযাত্রা, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে সুন্দর ব্যক্তিদের তালিকায়ও তারা সদা উজ্জ্বল। ২০০০ সালে আর একটি কথা পাপারাজ্জিদের মধ্যে ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা হলো- তারা একে অপরের প্রেমে পাগল ছিলেন। ১৯৯৪ সালে ব্র্যাড পিট ‘ফাইট ক্লাব’ এবং জেনিফার অ্যানিস্টন ‘ফ্রেন্ডস’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর তারা ১৯৯৮ সাল থেকে ডেটিং শুরু করেন। ২০০০ সালের প্রথম দিকে এই নায়ক-নায়িকা তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু জনপ্রিয় এই জুটির বেশিদিন সংসার করা হয়নি। এই তারকা যুগল ২০০৫ সালের দিকে বিয়ে বিচ্ছেদ করেন। তাদের বিয়ে বিচ্ছেদে খরচ হয়েছে ৬০ মিলিয়ন ডলার। কারণটি ছিল মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথের সেটে অঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে পিটের প্রেমের গুঞ্জন। যদিও তা পরবর্তীতে সত্যি হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর