শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঘর পালানো বিখ্যাতরা

ঘর পালানো বিখ্যাতরা

নিজের চারপাশকে পছন্দ না হলে সেখান থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করে না এমন মানুষ কমই আছে। ভাবনাটা মনে মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু খুব কম মানুষই পারে। পরিচিতদের থেকে দূরে গিয়ে থাকাটা সবার জন্যই কঠিন।  তবে শৈশবে পালিয়ে যাওয়া বিখ্যাত মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তেমন কজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়েই রকমারি...

 

 

হ্যারি হুডিনি

বিখ্যাত জাদুকর হুডিনির নাম শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যেভাবেই আটকে রাখা হোক তাকে, দড়ি কিংবা শিকল দিয়ে, ঠিক তা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতেনই তিনি। আর এটাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে হুডিনির সবচেয়ে বড় জাদুর কৌশল। একবার তো এক পুলিশকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেন হুডিনি। পুলিশ তাকে হাতকড়া পরায় আর সেখান থেকেও নিজেকে ছাড়িয়ে নেন হুডিনি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে হুডিনির নাম। ১৯০৪ সালে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত এই জাদুকরের বিশেষ হাতকড়া থেকে মুক্তির চ্যালেঞ্জ, দম না নিয়ে সর্বোচ্চ সময় থাকার চ্যালেঞ্জসহ তার অভিনীত ব্যবসা না করা ছবি- এতসব কিছুর খবর জানলেও অনেকেই জানেন না যে, এই বিখ্যাত জাদুকর ছোটবেলায়ই ঘর থেকে পালিয়েছিলেন। তখন হুডিনি বেশ ছোট। নাম তখনো হুডিনি হয়নি তার। রাব্বি মেয়ার স্যামুয়েল ওয়েসজ ও সিসিলিয়া ওয়েসজের ছেলে এরিক ওয়েসজ ছিলেন তিনি তখন। মিলওয়েকে থেকে হাঙ্গেরিতে বাসা বদলাচ্ছিল হুডিনির পরিবার। সে সময় প্রথম নিজের উধাও হওয়ার খেলা দেখান হুডিনি। এক্কেবারে উধাও হয়ে যান ১২ বছর বয়সে। চড়ে বসেন এক মালবাহী গাড়িতে। পাড়ি দেন শত শত মাইল আর হয়ে যান অনেক দিনের জন্য হাওয়া। পালিয়ে থাকার এই সময়টা তার কীভাবে কেটেছিল সেটা জানা না গেলেও এতটুকু জানা যায় যে, ওই সময়টা কানসাসে কাটিয়েছিলেন তিনি। পরে নিউইয়র্কে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন হুডিনি আর সাহায্য করতে শুরু করেন তাদের। এক চিত্রগ্রাহকের সহকারীসহ আরও কিছু ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন তিনি। রবার্ট হুডিনি বেশ বড় জাদুকর ছিলেন তখন। তার পথ অনুসরণ করেই নিজের নাম হ্যারি হুডিনি করে ফেলেন হুডিনি আর ঢুকে পড়েন জাদুর জগতে।

 

সেমাজ বুকার

শৈশবে কত কিছুই ভালো লাগে। আর তেমনি ছোট্টবেলা থেকেই ভিডিও গেম খেলতে খুব পছন্দ করত ছেলেটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এক মনে খেলে যেত ভিডিও গেম। আর সেটা আর কোনো খেলা নয়। গাড়ির খেলা। জোরসে গাড়ি চালানো, অন্যের গাড়ি ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া- এসবই ছিল ছেলেটার নিত্যদিনের কাজ। তবে সে সবটাই টিভি পর্দায়। কিন্তু খুব বেশিদিন আর টিভি পর্দার ভিতরে থাকল না সেটা। সেদিন হুট করে বাইরে বেরিয়ে সত্যি সত্যিই একটা গাড়ি ছিনতাই করে পালাল সে। ছেলেটির নাম সেমাজ বুকার। ২০০৭ সালে ৯ বছর বয়সী বুকার তখন ওয়াশিংটনে থাকত। একদিন এই ছোট্ট মানুষটার খুব ইচ্ছা করল টেক্সাসে থাকা তার দাদাকে দেখতে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো হবে না। করতে হবে সেই মতো কাজও। নাহলে ইচ্ছা পূরণ হবে কী করে? যেই ভাবা সেই কাজ! বেরিয়ে গেল বুকার বাড়ি থেকে আর একটা গাড়ি চুরি করে ফেলল। তারপর সেই গাড়িতে ছুটে যেতে লাগল দাদার কাছে। তবে একটু বেশিই হয়তো তাড়ায় ছিল বুকার। খুব সহজেই তাই তার অতিরিক্ত দ্রুত চলা গাড়িটি নজরে পড়ে গেল এক পুলিশ অফিসারের। ধাওয়া করলেন তিনি গাড়িটিকে। আটক হলো বুকার। তবে শিশু বলে সেবার ছেড়ে দেওয়া হলো তাকে। একটা চেষ্টা বিফল হলো। কিন্তু তাতে কি? হার না মেনে পরদিনই আবার চেষ্টা চালাল সে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা বাসে উঠে পড়ল। তারপর ভুয়া নাম দিয়ে একটা প্লেনের টিকিট বাগিয়ে চড়ে বসল প্লেনে। ডালাসে তাকে ধরল সেবার পুলিশ। ফের বাড়িতে পৌঁছল বুকার। তবে এটাও কিন্তু শেষ নয়। পুলিশের সঙ্গে ২০১০ সালে ১৩ বছর বয়সে আবার দেখা হয়েছিল বুকারের। তবে এবার পালানোর জন্য নয়, এক খেলনা চুরির দায়ে।

 

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

নানা গুণে গুণান্বিত বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। ছোটবেলা থেকেই ভাই জেমসের কাছে কাজ শিখতে শুরু করেন। সেখানেই ছবি আঁকার কৌশল রপ্ত করে নেন। পরে তিনি একটা খবরের কাগজ প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে যোগ দেন বেনও। খুব ইচ্ছা ছিল তার নিজের লেখা ছাপার হরফে কাগজের ওপরে দেখার। কিন্তু তার লেখা কখনোই মনোনীত হয়নি। ফলে একটা সময় ছদ্মনামে লিখতে শুরু করেন তিনি আর বেশ জনপ্রিয়তাও পান। তবে এতসবের ভিতরে খানিকটা তার ব্যঙ্গাত্মক লেখা আর ভাই জেমসের কাজকর্মের জন্য একটা সময় জেমসকে জেলে যেতে হয়। সে সময় জেমসের আটকের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক কিছু চিঠি পত্রিকায় লেখেন তিনি। আর তার পরই সব কাজকর্ম ছেড়ে পালিয়ে আসেন অন্য দেশে। ১৭ বছর বয়সেই ঘর থেকে পালিয়ে ফিলাডেলফিয়ায় চলে আসেন। নতুন শহরে শুরু করেন নিজের জীবন। জীবিকা নির্বাহের জন্য এ সময় ছাপাখানায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু অনেক পরিশ্রমের পরও মনটা ফাঁকা রয়ে যেত বেনের। কোনো কাজেই যেন সন্তুষ্টি মিলত না। কিছু মাস বাদেই পেনসিলভেনিয়ার গভর্নর স্যার উইলিয়াম কেইথের আশ্বাসে নতুন করে ফিলাডেলফিয়ায় খবরের কাগজ প্রকাশ করার স্বপ্ন নিয়ে যন্ত্রপাতি কিনতে লন্ডনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন বেন। তবে সেসব পরিকল্পনার কোনোটাই শেষ অব্দি সফল হয়নি। লন্ডনের স্মিথফিল্ড এলাকার চার্চ অব সেইন্ট ব্রথমেলোউ দ্য গ্রেটের কাছেই একটি ছাপাখানায় কাজ করা শুরু করেন বেন। আর কিছুদিন পর ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে এসে কাজ করতে শুরু করেন নতুন মালিকের জন্য। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে বেন হয়ে ওঠেন পরবর্তী সময়ের বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। খবরের কাগজ প্রতিষ্ঠা, গুপ্ত সংঘ প্রতিষ্ঠা, পাঠাগারসহ নানানরকম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মাধ্যমে নিজেকে ইতিহাসের ঘরে জায়গা করে দেন একদা ঘর ছেড়ে আসা বেন।

 

বারবারা ম্যাকভে

বারবারার বাবা তখন ব্রিটিশ বিমান বাহিনীতে কাজ করছিলেন। বাল্টিমোরে নিজের বাসায় বসে প্রায়ই একটা ভাবনা উঁকি দিয়ে যেত ১৭ বছরের মেয়েটার মাথায়, কেমন হয় যদি ইংল্যান্ডে চলে যাওয়া যায়? ইংল্যান্ডের ছেলেগুলোকেও বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছিল তখন কিশোরী বারবারার। তাছাড়া দেখা করার ব্যাপারটা তো আছেই। কাউকে কিছু না বলে তাই একদিন বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। কিন্তু বেরোলেই তো হয় না। ইংল্যান্ড পর্যন্ত যেতে কারও না কারও সাহায্য লাগবে তার। কিন্তু কার? সে সময়ই একটা ব্রিটিশ ডুবোজাহাজ ওয়ালরাস বাল্টিমোর হয়ে ফের ব্রিটেনে ফেরত যাচ্ছিল। যেই ভাবা সেই কাজ। সোজা সেখানে উঠে লুকিয়ে পড়ল বারবারা। তবে ১৬০০ টনের ডুবোজাহাজটিতে খানিক বাদেই কার্বন মনোক্সাইডের জন্য দুর্বল লাগতে লাগল তার। লুকোনো জায়গা থেকে ১ ঘণ্টা পর তাই বেরিয়ে পড়ল সে।

আর সামনে পড়ে গেল জাহাজের মানুষগুলোর। তারা আর খানিক বাদেই বারবারার লুকোনো জায়গাটিতে পানি দিয়ে ভরিয়ে দিতে যাচ্ছিল। আরও কিছুক্ষণ বারবারা সেখানে থাকলে কী হতো ভেবে শিউরে ওঠে পুরো জাহাজের মানুষগুলো। তাড়াতাড়ি বারবারাকে সুস্থ করে তোলে তারা আর নিজেদের জাহাজের নাক ফের ঘুরিয়ে দেয় বাল্টিমোরের দিকে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল মেয়েটাকে সাঁতরে পার হতে বলা হবে পুরো জায়গাটা। কিন্তু বারবারার শরীরের অবস্থা দেখে পরিকল্পনাটি বাতিল করে দেওয়া হয়। বাল্টিমোরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় তাকে। এতদূর পর্যন্ত এত কষ্ট সহ্য করে টিকে থাকার পরেও আবার ঠিক নিজের ঘরেই ফিরে যেতে হয় বারবারাকে। 

 

ফ্রাঙ্ক আবাগনাল জুনিয়র

ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান ছবিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত সেই কিশোরটির কথা মনে আছে? এই সত্যিকার অত্যন্ত চালাক প্রকৃতির ছেলেটির অপরাধের খাতা খুলে গিয়েছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সেই।

সেবার প্রথম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান ছেলেটি। এরপর কি করেননি? কখনো ডাক্তার সেজেছেন, আবার কখনো উকিল সেজেছেন। এমনকি সেজেছেন বিমানের চালকও। আর তাও কেবল বিনা পয়সায় ভ্রমণের জন্য। যে সময়েই যেটা হওয়ার দরকার পড়েছে সেটাতেই নিজেকে রূপান্তরিত করেছেন ফ্রাঙ্ক আবাগনাল জুনিয়র। নিজের জন্য নানা সুবিধা নিয়েছেন, তাও নিজের বুদ্ধির জোরে। আর ঠকিয়েছেন হাজার হাজার মানুষকে। এগিয়ে গেছেন রাস্তায় সামনের দিকে আর পেছনে ফেলে  গেছেন হাজার হাজার অপরাধের নজির। ফ্রাঙ্ককে ধরাটা শুধু কঠিনই ছিল না; ছিল অনেক বেশি অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলে পুলিশ একসময়। ধরে ফেলে তাকে আর অনেক দিনের জন্য তাকে থাকতে হয় ফ্রান্স আর সুইডেনের জেলে। সেখান থেকে অবশ্য একটা সময় আমেরিকায় চালান করা হয় তাকে। তবে সেটার শুরুটা ঠিকঠাকভাবে হলেও বেশিক্ষণ তাকে ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ। আমেরিকায় প্লেনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ফ্রাঙ্ককে। যাত্রার মাঝপথেই হঠাৎ করে পুরো প্লেনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ফ্রাঙ্ক আর পালিয়ে যায় খুব সহজেই। পরবর্তীতে আবার ধরে তাকে পুলিশ এবং এবার ১২ বছরের সাজা হয় ফ্রাঙ্কের। আগেরবারের মতো পালানোর চেষ্টা করলেও এবার ব্যর্থ হয় ফ্রাঙ্ক আর পাঁচ বছরের সাজা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয় সে জেলে। এরপর সে পুলিশকে ঠক আর প্রতারকদের খুঁজতে সাহায্য করবে বলে কথা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। নিজের কথা রেখেছে ফ্রাঙ্ক। এফবিআইকে অনেক সাহায্য করে সে পরবর্তীতে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক একজন কোটিপতি।

 

লিটল ম্যাকগাইভার

ছোটবেলায় নিজের মতো আলাদা একটা গোপন জায়গা রাখতে পারার ইচ্ছা কার ছিল না? সবাই সবসময় চায় নিজের মতো করে থাকতে। সে বড় হোক কিংবা ছোট। আর এ গোপন জায়গা রাখা আর নিজের মতো করে থাকা- এ দুটোকে এক করেই আমাদের এ ছোট্ট ম্যাকগাইভার বানিয়েছিল তার পরিকল্পনা। ১৯৮২ সালে দ্য মিলওয়েক জার্নাল ও দ্য টেলিগ্রাফ হেরাল্ডের পাতায় ছাপা হওয়া নাম না প্রকাশ করতে আগ্রহী এ ছেলেটির বাবা ১৯৮০ সালে পুলিশের কাছে আভিযোগ করেন তার ১৩ বছর বয়সী ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ অনেক খোঁজে লোকটার ছেলেকে। কিন্তু কোনো হদিস মেলে না তার। এর ঠিক দুই বছর পরের কথা। কানেক্টিকাটের নিউ হ্যাভেনের ক্রাউন কোর্ট অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের অভিযোগে ছুটে যায় পুলিশ সেখানে। অভিযোগ ছিল তিনটি। প্রথমত, এক ছিঁচকে চোরকে প্রায়ই দেখা যায় তাদের এখানে। দ্বিতীয়ত, তাদের এলিভেটর অদ্ভুত রকমের আচরণ করছে অনেক দিন ধরে। আর শেষ অভিযোগ ছিল খাবারের গন্ধের। হট ডগের গন্ধে নাকি প্রায়ই ডুবে থাকে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট। কিন্তু কেন? আর এ কেনর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পুলিশ খুঁজে পায় দুই বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই ছেলেটিকে। তাও আর কোথাও নয়, এলিভেটরের যাতায়াত পথের পাশে নিজের মতো করে সাজানো এক গোপন ঘরে। একে একে পাওয়া যায় সব প্রশ্নের উত্তর। দুই বছর আগে ঘর থেকে পালিয়ে নিজের মতো করে থাকার কোনো জায়গা না পেয়ে এলিভেটরে জায়গা নেয় ছোট এ ম্যাকগাইভার। রাতের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে চলাফেরা করত বলে ওখানকার বাসিন্দারা ছিঁচকে চোর ভেবে বসেছিল ছেলেটাকে। অথচ নিজের আলাদা আর গোপন ঘরে বেশ আরামেই ছিল সে। কী ছিল না সেখানে? বিছানা, রেডিও, স্টিরিও, আলো- সবকিছুই পরিপাটিভাবে সাজানো ছিল সেখানে। আরও ছিল বৈদ্যুতিক চুলা। যেখান থেকে ভেসে আসা খাবারের গন্ধই ভাবিয়ে তুলেছিল সবাইকে। আর এতসব বিদ্যুতের জোগাড় ম্যাকগাইভার করত জরুরি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থেকে।

 

মাইকেল ম্যাকনেম

১৯৫৩ সাল। ছেলেটার মন খুব খারাপ। স্কুলের ফল দিয়েছে। আর কেউ হলে মার খাওয়ার ভয়ে হয়তো কলমের কালিতে ডি শব্দটাকে বি করে দিত কিংবা লুকিয়ে থাকত কোনো জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য। কিন্তু সেটা আর কেউ ছিল না। ছিল মাইকেল। ছোটবেলা থেকেই বড় বড় ব্যাপার নিয়ে ভাবতেই ভালোবাসত সে।

ভালোবাসত অনেকের চেয়ে খানিকটা আলাদা করে ভাবতে। আর তাই সেই ভাবনা থেকেই সেদিন স্কুলের রেজাল্ট কার্ডটা নিয়ে বাড়ির পথ না ধরে সোজা রেলস্টেশনে চলে গেল সে। চড়ে বসল ট্রেনে। পকেটে তখন তার মাত্র ৩৫ সেন্ট। ৩৫ সেন্ট পকেটে নিয়ে ১১ বছর বয়সী ছেলেটা সারা আমেরিকা ঘুরে বেরিয়ে শেষমেশ ২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শিকাগো এসেই এক দৌড়ে আগের ট্রেন থেকে ছুটে উঠে পড়ল স্প্রিংফিল্ডের ট্রেনে। ওর মাথায় তখন কেবল ছিল তার জেনে খালা ওখানেই কোথাও গান গাইতে এসেছে।

কিন্তু এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হলো না। শেষ পর্যন্ত টিকিট না দিতে পেরে ধরা পড়ল মাইকেল আর সোজা মনে নিজের সমস্যার কথা সবাইকে বুঝিয়ে বলল সে। দেখাল নিজের ফলাফলের কাগজ।

 

ফিলিপ ডেভিডসন

একবার নয়, দুবার নয়, মোট ৪৬ বার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ফিলিপ। ১৯৭১ সালে ১৬ বছরের ফিলিপকে ট্যাম্পা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরতে দেখে সন্দেহ করে পুলিশ। ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক ছিল না। এমন বিমানবন্দরে মানুষ ঘুরতে আসতেই পারে। সমস্যাটা ছিল একটা জায়গায়। আর সেটা হলো ফিলিপ ছিল ইংল্যান্ডের নাগরিক। কিন্তু কী করে সেখানে থেকে? জবাবে মোট চার রকমের গল্প শোনায় ফিলিপ। কোনো রকম টিকিট বা পাসপোর্ট না থাকায় পুলিশ ধরে নিয়ে আসে তাকে। জেরা করা শুরু করে আরও ভালোভাবে। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো উপায় না করতে পেরে শেষে ডাকে ফিলিপের বাবাকে। প্রথমে পুলিশের মনে হয়েছিল ফিলিপের বাবা অনেক বেশি অমনোযোগী তার সন্তানের প্রতি। কিন্তু আদতে ব্যাপারটা তা ছিল না। প্রমাণস্বরূপ ফিলিপের বাবা পুলিশকে একটা রসিদ দেখান যেটা তিনি খরচ করেছিলেন ফিলিপের পেছনে তাকে সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর সেটাও ছিল মাত্র কিছুদিন আগেই। তিনি পুলিশকে জানান, কিছুদিন পরপরই এভাবে পালিয়ে যায় তার ছেলে বাড়ি থেকে। 

সর্বশেষ খবর