রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজপরিবারের রহস্যময় হত্যাকাণ্ড

আবদুল কাদের

রাজপরিবারের রহস্যময় হত্যাকাণ্ড

সময়ের পরিক্রমায় রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্রের চর্চা বাড়লেও এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তে রাজতন্ত্র রয়ে গেছে। বিশ্বের কয়েকটি ধনী ও ক্ষমতাধর দেশে রাজতন্ত্রের চর্চাও রয়েছে। এর বাইরে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলেও শত শত ঐতিহ্যবাহী শাসকদের বসবাস। যাদের কোনো সাংবিধানিক ভূমিকা নেই কিন্তু সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের সম্মান করেন। এসব রাজা কিংবা রাজপরিবারের সদস্যরা হন হত্যাকান্ডের শিকার। এমন সব রাজা এবং রাজপরিবারের ঘটনা নিয়ে এই আয়োজন...

 

নাইজেরিয়ার রাজার রহস্যময় হত্যাকান্ড

নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোয়ারা রাজ্যের কোরো শহরে একদল বন্দুকধারীর গুলিতে ঐতিহাসিক শাসক- রাজা সেগুন আরেমু কোল নিহত হয়েছেন। বন্দুকধারীরা প্রকাশ্যে রাজার নিজ প্রাসাদে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে। রাজা সেগুন আরেমুকে হত্যার পর রানিকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বন্দুকধারীরা। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোয়ারা রাজ্যের কোরো শহরে সন্ধা ৭টায় এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।

প্রথাগত এই রাজা আরেমু ছিলেন নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল। পূর্বপুরুষদের প্রথা অনুযায়ী সেগুন আরেমু  রাজা উপাধি ধারণ করেছিলেন। কোয়ারা রাজ্যে তার আনুষ্ঠানিক উপাধি কোরোর ওলুকোরো। নাইজেরিয়া শত শত ঐতিহ্যবাহী শাসকের আবাসস্থল। যাদের কোনো সাংবিধানিক ভূমিকা নেই কিন্তু সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের সম্মান করেন। তাদের প্রায়ই স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কী কারণে এমন হত্যা তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা ও রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রাজা সেগুন আরেমুর ওপর হামলাকারী বন্দুকধারী কারা বা তারা রানিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় অপহরণের ঘটনা মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারির দাবি ওঠে। সুশীল সমাজের ৫০টি সংগঠন প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর কাছে জরুরি অবস্থা জারির দাবি জানিয়েছে। এমনকি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাইজেরিয়ার জনসাধারণের মাঝে অপহরণের শঙ্কা বেড়েছে। জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে জঘন্যতম এই হত্যাকান্ড ঘটেছে।

রাজা আরেমুর হত্যাকান্ডকে বেপরোয়া, মর্মান্তিক ও জঘন্য বলে অভিহিত করেছেন গভর্নর আবদুল রহমান আবদুল রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় দায়ীদের আটক করবে কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত বন্দুকধারী বৃহস্পতিবার রাতে রাজাকে তার প্রাসাদে গুলি করে হত্যা করে এবং তার স্ত্রীসহ আরও দুজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শহর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে এবং অপহৃতদের মুক্ত করার পাশাপাশি  অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। শহরের গভর্নর আরও উদ্ধৃত করে বলেছেন, আমরা অবশ্যই অপরাধীদের ধরতে পারব। নিশ্চিত করব যে, এটি মানবতার বিরুদ্ধে নাইজেরিয়ার সংগঠিত শেষ অপরাধ। গভর্নরের প্রধান প্রেস সেক্রেটারি রাফিউ আজকায়ে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে, আমরা দুঃসময়ে সর্বদা ভুক্তভোগীদের পাশে রয়েছি।

শহরের পুলিশ কমিশনার জনসাধারণকে শান্ত, সজাগ এবং সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরাধের বিষয়টি উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচারিক আদালতে দাঁড় করানোর জন্য পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। জীবন ও সম্পদ রক্ষায় পুলিশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদিকে কোয়ারা রাজ্য বিধানসভার স্পিকার, ইয়াকুবু দানলাদি-সালিহু, ইলোরিনের আমির এবং ঐতিহ্যবাহী শাসকদের স্টেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আলহাজি ইব্রাহিম সুলু-গাম্বারি এই হত্যার নিন্দা করেছেন। পৃথক বিবৃতিতে তারা ঘটনাটিকে উদ্বেগজনক ও দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন।

 

নাইজেরিয়ায় দাপুটে যত অপহরণ!

নাইজেরিয়ায় গেল সপ্তাহে অনেক সাধারণ মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও যাদের অনেকের কোনো সন্ধানই পাওয়া যাচ্ছে না। এই সপ্তাহের শুরুতে অপহরণকারীরা নিকটবর্তী একিটি রাজ্যে পাঁচ স্কুলছাত্র এবং চার শিক্ষককে ধরে নিয়েছিল। তাদের মুক্তির জন্য ১০০ মিলিয়ন নাইজেরিয়ান নাইরা (১ লাখ ১০ হাজার ডলার অথবা ৮৭ হাজার ৫০০ পাউন্ড) মুক্তিপণ দাবি করেছিল। এর আগে দেশটির এই অঞ্চলে- একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়। এ ছাড়াও ছয় বোনকে একসঙ্গে অপরহরণ করে তাদের বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছে দুর্বৃত্তরা। মুক্তিপণ দিতে দেরির কারণে ওই ছয় বোনের একজনকে মেরে ফেলা হয়। সম্প্রতি আরেক শহরতলি কুবওয়ার চিকাকোরি এলাকায় দুই মেয়েকেও অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা তাদের মুক্তির জন্য প্রায় ২৫ হাজার ডলার দাবি করেছে। সর্বশেষ প্রথাগত রাজা সেগুন আরেমু হত্যা এবং স্ত্রীসহ দুজনকে অপহরণে স্থানীয়দের মাঝে ভয় ও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আলোচিত এই অপহরণের পর এখন পর্যন্ত কেন কোনো ধরনের মুক্তিপণের দাবি ওঠেনি, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। 

মুক্তিপণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাইজেরিয়ায় রাস্তার যাত্রী, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গ্রামীণ ও শহুরে এলাকার বাসিন্দাদের অপহরণ এবং সশস্ত্র দলগুলোর কর্মকান্ড ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ২০২৩ সালের  মে মাসে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি মানুষ অপহৃত হয়েছে। নাইজেরিয়ার ঝুঁকি পরামর্শদাতা এসবিএম ইন্টেলিজেন্স বলেছে, অপহরণের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার জনের দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

 

আজও রহস্যে আবৃত নেপালের রাজপরিবার হত্যাকাণ্ড

নেপালের রাজপরিবারের নৃশংস হত্যাকান্ড পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়েছিল। ২০০১ সালের ১ জুন। নিজ প্রাসাদে মর্মান্তিকভাবে খুন হন নেপালের দশম রাজা বীরেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব। তাকে খুন করেই থামেনি ঘাতকরা। একে একে খুন করা হয় রানি ঐশ্বরিয়া, যুবরাজ নিরাজন, যুবরানি শ্রুতি রাজ্যলক্ষ্মী এবং ভাই ধীরেন্দ্রসহ রাজপরিবারের আরও ছয় সদস্যকে। এত বড় হত্যাকান্ডের পরও পার পেয়ে যায় খুনিরা। রাজাকে কে খুন করেছে- এই প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।

নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীরবিক্রম থাকতেন রাজধানী কাঠমান্ডুর নারায়ণহিতি রাজপ্রাসাদে। সেই প্রাসাদ এখন জাদুঘর বানানো হয়েছে।

এই হত্যাকান্ডের পর তদন্ত কমিটি বানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের তদন্তে সন্তুষ্ট নন অনেকেই। যারা ধারণা করেন এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে রাজপরিবারের অন্য কেউ জড়িত তারাও শক্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন না। রাজা বীরেন্দ্র নেপালে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। যে কক্ষে রাজা খুন হন সেখানে লেখা আছে বুলেটবিদ্ধ হওয়ার ইতিহাস। এর সামনেই খোলা মাঠের মতো একটি সবুজ ঘাসে ঘেরা জায়গায় যুবরাজ ও যুবরানিসহ অন্যদের খুন করা হয়। কয়েকজনকে খুন করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় রাজপ্রাসাদের ড্রেনে। যুবরাজ দীপেন্দ্রকে পাওয়া যায় সেই ড্রেনের ভিতরে। সেই সবুজ চত্বরে লেখা আছে তাদের বুলেটবিদ্ধ হওয়ার ইতিহাস। সেদিন যারা খুন হয়েছিলেন তারা হলেন- রাজা বীরেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব, রানি ঐশ্বরিয়া রাজ্যলক্ষ্মী রানা শাহ দেব, যুবরাজ দীপেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব, যুবরানি নিরজন, প্রিন্সেস শ্রুতি রাজ্যলক্ষ্মী, রাজার ছোট ভাই ধীরেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব, রাজার বোন শান্তি ও শারদা, শারদার স্বামী কুমার খাদগা এবং রাজার চাচাতো বোন জয়ন্তী।

আহত হন রাজা বীরেন্দ্রর বোন শোভা, যুবরানি শ্রুতির স্বামী কুমার গোরখ, রাজার ভাই জ্ঞানেন্দ্রর স্ত্রী কমল ও ছেলে পরশ এবং রাজার চাচাতো ভাই কেটাকি চেস্টার। যাকে খুনের জন্য দায়ী করা হয়েছিল- রাজা বীরেন্দ্রর ছেলে দীপেন্দ্রও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কোমায় থাকা দীপেন্দ্রকে বীরেন্দ্রর মৃত্যুর পর রাজা ঘোষণা করা হয়েছিল।   কিন্তু চার দিন পর তিনি মারা যান।   এরপর সিংহাসনে বসেন বীরেন্দ্রর বেঁচে থাকা একমাত্র ভাই জ্ঞানেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, ১৯৭২ সালে রাজা মহেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব মারা যাওয়ার পর বীরেন্দ্র নেপালের রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ২০০১ সালের ১ জুন খুন হওয়ার দিন পর্যন্ত প্রায় ২৯ বছর নেপাল শাসন করেন বীরেন্দ্র। 

রাজার হত্যাকান্ড তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কেশব প্রসাদ উপাধ্যায় ও প্রতিনিধি সভার স্পিকার তারানাথ রানাভাটকে নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।   অসম্পূর্ণ তদন্ত শেষে কমিটি জানায়, বিয়ে নিয়ে জটিলতায় ক্ষিপ্ত হয়ে যুবরাজ দীপেন্দ্র মাতাল অবস্থায় সেই রাতে রাজপ্রাসাদের ডিনার পার্টিতে মেশিনগান দিয়ে মা-বাবা, ভাইবোন, চাচা, ফুফুসহ সবাইকে গুলি করে হত্যা করেন এবং পরে নিজেকেও গুলি করে আত্মাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করেন।  চার দিন পর তিনিও হাসপাতালে মারা যান। 

ইংল্যান্ডে পড়ার সময় যুবরাজ দীপেন্দ্র প্রেমে পড়েন রানা দিব্যানির। তাকে বিয়ে করার কথা পরিবারকে জানালে মা রানি ঐশ্বরিয়া অমত দেন।  এ নিয়ে রাজপরিবারে অসন্তোষ ছিল। তবে এই ভাষ্য মানতে পারেননি নেপালের বেশির ভাগ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা।

অনেকে বলেন, জ্ঞানেন্দ্র রাজা হওয়ার জন্য বীরেন্দ্রকে সপরিবারে খুন করেছেন। এমন নানা অভিযোগের অন্ত নেই। তবে শেষ কথা হলো- এই নেপাল ট্র্যাজেডির পেছনের রহস্য আজও উন্মোচন হয়নি।

 

সপরিবারে হত্যার শিকার রাশিয়ার জার

১৮৯৪ সালে  দ্বিতীয় নিকোলাস তার বাবা তৃতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন। বিয়ে করেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়ার আদরের নাতনি আলেকজান্দ্রাকে। আলেকজান্দ্রা ও  নিকোলাসের ঘরে জন্মায় তাদের চার কন্যা ওলগা, তাতিয়ানা, মারিয়া ও আনাস্থাসিয়া। সবার শেষ পুত্রসন্তান আলেক্সেই। কিন্তু ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার বিপ্লব শুরু হয় জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর এক মাসের মাঝেই। রাশিয়ার তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসকে উৎখাত করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। বলশেভিক দলের লোকেরা জারকে তার পরিবারসহ গৃহবন্দি করে। যদিও জার পরিবারকে কোথায় বা কীভাবে বন্দি রাখা হবে সেই নিয়ে বিপ্লবীদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ ছিল। কেউ কেউ তাদের নির্বাসনে পাঠাতে চাইলেন, কেউবা চাইলেন হত্যা করতে।

উদ্দেশ্য একটাই, আর কোনোদিন যেন একনায়কতন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের পাঠানো হলো ইয়েকাতেরিনবার্গে। এটি ছিল তৎকালীন রাশিয়ার সবচেয়ে খারাপ আশ্রয়স্থল। যেখানকার মানুষের কাছে জার শাসকরা ছিল চক্ষুশূল। জার পরিবারকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল ‘ইপাতিয়েভ হাউস’ নামের এক বিশাল বাড়িতে। এই বছরের ১৬ জুলাই মধ্যরাতে পরিবারের সব সদস্যকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর হত্যার সিদ্ধান্ত মস্কোতে লেনিনের কাছে পৌঁছায় টেলিগ্রামের মাধ্যমে। রাত দেড়টায় জার পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হয়। সে সময় বাইরে বিদ্রোহ চলছিল। তাই তাদের নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয় ‘ইপাতিয়েভ হাউস’-এর বেসমেন্টে। বেসমেন্টে এনে তাদের মৃত্যুদন্ডাদেশ পড়ে শোনানো হয়। সবাইকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে জারের চার সহকারীকেও সেদিন হত্যা করা হয়। হত্যার পর দেহগুলোকে বেয়নেট দিয়ে নৃশংসভাবে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল।

 

 কেমন ছিল শেষের সে দিনগুলো? চলুন, জেনে নিই।

দ্বিতীয় নিকোলাস তার বাবা তৃতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ১৮৯৪ সালে সিংহাসনে বসেন। বিয়ে করেছিলেন রানী ভিক্টোরিয়ার আদরের নাতনি আলেকজান্দ্রাকে। বিয়েটা ছিল প্রেমের। তখনকার দিনে অন্য সব রাজপুরুষ যখন রাজ্যের সীমা বাড়াতে বা কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য বিয়ে করে যাচ্ছেন, তখন নিকোলাসের ভালোবাসা সেটিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। বউকে নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তাকে। আলেকজান্দ্রা যে পরিবেশে বড় হয়েছেন, তার একেবারেই মেলে না রাশিয়ার সাথে। বহু সাধনা করে রাশিয়ান ভাষা শিখতে শুরু করলেও উচ্চারণের আড়ষ্টতা ছিল স্পষ্ট। ফরাসি ভাষার মাথামু-ুও বুঝতেন না। ফলে রাশিয়ার জার পরিবারের জারিনা হিসেবে তার সবার সাথে হেসে হেসে হ্যান্ডশেক করে কথা বলার দায়িত্বে ভাঁটা পড়ল। বাইরের লোকজন তো দূরের কথা, নিজের শাশুড়িও আলেকজান্দ্রার আচরণ পছন্দ করতেন না। এসব থেকে তাকে বাঁচিয়েেিছ্লন নিকোলাস। নিকোলাস পারিবারিক ছিলেন বটে, তারচেয়ে বেশি ছিলেন অযোগ্য শাসক। গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেওয়ার সময়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। এসব নিয়ে দরবারে হাসিঠাট্টাও চলত। স্বভাবতই কঠিন সময়ে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা জারের ছিল না। ১৯০৪ সালে জাপানের বিরুদ্ধে হারার পর ১৯০৫ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নিজ দেশেই বিপ্লবের মুখোমুখি হন জার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের সাথে অসংখ্য চাষীকেও যুদ্ধে পাঠান। লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। এতে দেশের সম্পদ কমতে থাকে, জনমনে বাড়ে ক্ষোভ। এতকিছুর পরেও জার নিজেকে ক্ষমতাশালী ও জনপ্রিয় ভাবতে থাকেন। তার ধারণা ছিল, ঈশ্বর তাকে ও তার উত্তরাধিকারীকে দেশ শাসনের দায়িত্ব দিয়েছেন।

 

আলেক্সেইয়ের নির্ভরতা তাকে পরিবারের ঘনিষ্ঠ করে তুলল; Image Source: The Great Courses Plus

আলেকজান্দ্রা-নিকোলাসের ঘরে জন্মায় ওলগা, তাতিয়ানা, মারিয়া ও আনাস্থাসিয়া। সবার শেষ সন্তান আলেক্সেই পুত্রসন্তান, অর্থাৎ জারের উত্তরাধিকারী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আলেক্সেই জন্মেছিল হিমোফিলিয়া নিয়ে, যা তার মা উত্তরাধিকারসূত্রে বয়ে বেড়াচ্ছিল। হিমোফিলিয়া বংশগত রোগ, এই রোগের ফলে রক্ত ঠিকমতো জমাট বাঁধে না। ফলে কোথাও অল্প একটু কেটে গেলেও প্রাণনাশের আশঙ্কা থেকে যায়। আলেক্সেইর যেন কোনো দুর্ঘটনা না হয়, সেজন্য প্রাসাদের সব কাজের লোক সহ তার বাবা-মাকে ব্যস্ত থাকতে হতো। তখনকার সময়ে রাজপরিবারের শিশুরা বাবা-মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতো না। কিন্তু আলেক্সেইয়ের নির্ভরতা তাকে পরিবারের কেন্দ্র করে তুলল। ওদিকে প্রজারা ভাবী জারের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

আলেক্সেই মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ত। তখন এল গ্রেগরী রাসপুতিন। সাইবেরিয়ায় জন্ম নেওয়া রাসপুতিন নিজেকে বিশেষ কিছু ক্ষমতার অধিকারী বলে ভাবতেন। যেভাবেই হোক, আলেক্সেইয়ের অসুখের কষ্ট কিছুটা উপশম করতে পেরেছিলেন তিনি। এভাবে জার পরিবার রাসপুতিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। রাসপুতিন জারকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আলেক্সেইর স্বাস্থ্যের সাথে তাদের শাসনকালের দৈর্ঘ্যের সম্পর্ক। আর যেহেতু আলেক্সেইকে সুস্থ রাখতে রাসপুতিনকে দরকার, প্রাসাদে তার জায়গা পাকাপাকি হয়ে গেল। জারের পরামর্শকও ছিলেন তিনি।

 

ক্যামব্রিজের একটি সমীক্ষায় রাজকীয় হত্যাকাণ্ড

‘১৬ শতকের পর রাজার হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সংঘটিত করা ছিল খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা’...

-অধ্যাপক ম্যানুয়েল আইজনার

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্রিমিনোলজিস্টের একটি নতুন সমীক্ষা প্রকাশ করে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, আধুনিক যুগের আগে ইউরোপে রাজা হওয়া কতটা বিপজ্জনক ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬৪৯ সালে চার্লস-১ কে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোয়াইট হলে হত্যা করা হয়। জনসম্মুখে প্রকাশ্যে রাজা চার্লস-১ এর মাথা কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্রিমিনোলজিস্টে প্রথমবারের মতো নথিভুক্ত করা হয়েছে যাতে ইউরোপীয় রাজাদের দুর্ভাগ্য এবং সহিংস পরিণতির বিস্ময়কর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ম্যানুয়েল আইজনার এটি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সে যুগে রাজা হওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যখন যারা রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতায় দাঁড়িয়েছিল, তাদের দ্রুত হত্যার শিকার হতে হতো। ৩১ জানুয়ারি সোমবার ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্রিমিনোলজির ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত কিলিং কিংস নামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে ৪৫টি ইউরোপীয় রাজতন্ত্রে ১ হাজার ৫১৩ জন রাজার মৃত্যুর পরিসংখ্যানগত গবেষণা তথ্য পাওয়া গেছে। এসব রাজকীয় মৃত্যুর প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২২ শতাংশ) ছিল রক্তাক্ত-দুর্ঘটনা, যুদ্ধে মৃত্যু এবং হত্যা। তবে এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল সরাসরি হত্যাকান্ড। যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোয় হত্যার হারের চেয়েও অনেক বেশি। অধ্যাপক ম্যানুয়েল আইজনার বলেন, এটি ঐতিহাসিক ইউরোপীয় রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য তীব্র হিংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতার নানা সাক্ষ্য প্রদর্শন করে।

একজন ক্রিমিনোলজিস্ট হিসেবে অধ্যাপক আইজনার রাজকীয় হত্যাকান্ডের  পরিসংখ্যানকে চার ভাগে উপস্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে শীর্ষে উত্তরাধিকারের উপায় হিসেবে হত্যা। যেখানে শাসক রাজাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বীকে সিংহাসনে বসানো হয়। উদাহরণস্বরূপ ৯৬৯ সালে বাইজান্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় নাইকেফোরস তার শয়নকক্ষে স্ত্রী থিওফানো এবং তার প্রধান সেনাপতি জন টিজিমিসের হাতে হত্যার শিকার হয়েছিলেন। হত্যার পর থিওফানো প্রেমিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে সম্রাট হিসেবে মুকুট লাভ করেছিলেন।

পরবর্তী তালিকায় রয়েছে- প্রতিবেশী শাসক দ্বারা আক্রমণের শিকার এবং হত্যাকান্ডের পর সামরিকভাবে পরাজয়। ১৩৬২ সালে গ্রানাডার সুলতান মুহাম্মদ-৬ষ্ঠ ক্যাস্টিলের রাজার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হন এবং ক্যাস্টিলের পিটার ও এর নির্দেশে সেভিলের বিশ্বাসঘাতকতায় হত্যার শিকার হন এবং রাজ্য হারিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, অন্য শাসকের মাধ্যমে ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি পরিস্থিতিকে তৃতীয় স্থানে রেখেছেন অধ্যাপক আইজনার। ১৩০৮ সালে জার্মানির প্রথম অ্যালবার্ট সোয়াবিয়ার তার ভাগ্নে প্রকাশ্যে জোহান এবং অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে এক ভোজসভা থেকে বাড়ি ফেরার সময় খুন হয়েছিলেন। যেখানে তিনি সরাসরি জোহানের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

সবার শেষে রয়েছে বহিরাগত হত্যা। ১১৭২ সালে ভিনিসিয়ান ডোজ ভিটালে মিশেল এক বিক্ষুব্ধ সদস্যের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৩৫৪ সালে গ্রানাডার শাসক ইউসুফ-১ মসজিদে নামাজ পড়ার সময় একজন পাগলের হাতে নিহত হয়েছিলেন।

তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হলো- লন্ডন টাওয়ারে তরুণ যুবরাজ এডওয়ার্ড-৫ম এবং তার ছোট ভাই রিচার্ডের হত্যাকান্ড। কিছু ক্ষেত্রে হত্যার নিরবচ্ছিন্ন তরঙ্গ আবারও নতুন কোনো হত্যার জন্ম দিয়েছে। ইউরোপের এমন হত্যাকান্ডের স্পটগুলো আজকের দিনে অসম্ভাব ঠান্ডার স্থানে পরিণত হয়েছে। যার অন্যতম সাক্ষী নরওয়ে ও নর্থামব্রিয়া।

আইজনার জানিয়েছেন যে, রাজাদের হত্যা ইউরোপীয় ইতিহাসে ১ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। যদি কোনো একজন রাজাকে অপসারণ করা গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বহন করে কিংবা কেউ প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে রাজনৈতিক অভিজাত লোকেরা তাকে হত্যার মাধ্যমে শাসন পরিবর্তনের পথ খুঁজে বের করত। যেহেতু আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা বিভাজন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর তাদের দখলকে শক্তিশালী করত, হত্যাকান্ড ছিল একটি কৌশলগত হাতিয়ার। সর্বোপরি রাজাদের ঐশ্বরিক অধিকারের মতবাদ, যা প্রথম জেমসের হাত ধরে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল। এর অর্থ হলো- রাজারা ঈশ্বরীয় মর্যাদা উপভোগ করতেন এবং জবানবন্দি দেওয়া ছিল একটি পবিত্র কাজ। তা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। অধ্যাপক ম্যানুয়েল আইজনার বলেন, ষোড়শ শতাব্দীর পরে এক রাজার হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সংগঠিত খুবই অস্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নেয়।

 

আরও যত জঘন্য হত্যাকাণ্ড

প্রকাশ্যে রাজা চার্লস-১ এর শিরন্ডেদ!

 ১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজা চালর্স-১ কে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোয়াইট হলে প্রকাশ্যে একটি বারান্দায় মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সেদিন হোয়াইট হলের সামনে সমবেত হয়েছিল বিশাল জনতা। মিলিশিয়াদের দল প্রকাশ্যে তার শিরন্ডেদ করেছিলেন; যা দেখতে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তার কাটা মাথা নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং তার চুল কেটে দেওয়া হয়েছিল। রাজকীয় সেই সভায় মিলিশিয়ার দল তার রক্তে তাদের তলোয়ার লাল করে ফেলেছিলেন। একটি রাজ্যসভা কতটা ভয়ংকর আর দুর্ভাগ্যের পরিণতি বরণ করতে পারে, রাজা চার্লস-১ তার অন্যতম উদাহারণ।

 

জুলিয়াস সিজার [৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ]

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ছিলেন না জুলিয়াস সিজার। একজন উজ্জ্বল সামরিক কৌশলী, রাজনীতিবিদ এবং নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায়  অনেক রোমান অভিজাত ব্যক্তিরা তার প্রতি প্রচ- রকমের বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষ করে যখন তিনি রোমের একনায়ক হয়েছিলেন। ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৫ মার্চ, গাইউস ক্যাসিয়াস লঙ্গিনাস, ডেসিমাস জুনিয়াস ব্রুটাস অ্যালবিনাস এবং মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাসের নেতৃত্বে একদল সিনেটর সিজারকে ২৩ বার ছুরিকাঘাত করেছিলেন। তার রাজত্ব এবং জীবন উভয়ই শেষ করেছিলেন সেদিন। যা ইতিহাসে ‘মার্চের আইডস’ হিসেবে পরিচিত। সিজার হত্যাকান্ডের পর বেশ কয়েকটি গৃহযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ফলে তার দত্তক পুত্র অক্টাভিয়ান (সিজার অগাস্টাস নামে পরিচিত) রোমের প্রথম সম্রাট হন।

 

নাভার-এর ব্লাঞ্চ-২ [১৪৬৪ খ্রিষ্টাব্দ]

১৪২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন নাভার-এর ব্লাঞ্চ-২। তিনি ছিলেন আধুনিক ফ্রান্স এবং স্পেনের মধ্যে একটি ছোট রাজ্য নাভার-এর সিংহাসনের ঔজ্জ্বল্য উত্তরাধিকারী। ১৪৬৪ সালে তার বাবা ও বোনের অসন্তোষের পর ব্লাঞ্চ ১৪৬৪ সালে নাভারের রানি হয়েছিলেন। মূলত ব্লাঞ্চের বিবাহবিচ্ছেদের পরে তার বাবা ও বোন তাকে বন্দি করে রেখেছিলেন। ১৪৬৪ সালে তিনি মারা যান। ধারণা করা হয়, কোনো এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ব্লাঞ্চের শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। ব্লাঞ্চের মৃত্যুতে তার বোন এলিয়েনর নাভার-এর রানি হওয়ার অনুমতি পায়, যা তার বাবাকে রাজ্যে আরও ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করেছিল।

 

দ্য প্রিন্সেস ইন দ্য টাওয়ার [১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দ]

ওয়ার অব দ্য রোজেসের তীব্র অশান্তির সময় জন্ম নিয়েছিলেন রাজা এডওয়ার্ড-৪। এলিজাবেথ উডভিলের ছেলেরা তাদের পিতার মৃত্যুর পরে আরও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল। ১৪৮৩ সালে এডওয়ার্ড-৪ এর মৃত্যুর ফলে তার ভাই ডিউক অব গ্লুসেস্টার (পরে রিচার্ড-৩) তার ছেলে এবং উত্তরাধিকারী, ১২ বছর বয়সী এডওয়ার্ড ৫-এর লর্ড প্রোটেক্টর হয়েছিলেন। একই বছর, ডিউক অবিলম্বে লন্ডনের টাওয়ারে তার ভাগ্নেকে নিয়োগ করেছিলেন। কথিত আছে, সুরক্ষা বলয় শক্তপোক্ত করার জন্য তিনি এমনটা করেছিলেন। যদিও তাদের আর দেখা হয়নি। শেকসপিয়রের মতো নাট্যকাররা পরবর্তীতে রিচার্ড-৩ কে একজন খুনি খলনায়ক হিসেবে অমর করে রেখেছিলেন। জল্পনা ছিল যে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ১৬৭৪ সালে একদল শ্রমিক হোয়াইট টাওয়ারের সিঁড়ির নিচে একটি কাঠের ট্রাঙ্কে প্রায় একই বয়সের দুটি ছেলের কঙ্কাল আবিষ্কার করে।

 

মেরি কুইন অব স্কটস [১৫৮৭ খিষ্টাব্দ]

রাজা হেনরি সপ্তম-এর প্রপৌত্রী হিসেবে স্কটস-এর মেরি কুইন ইংরেজ সিংহাসনের দাবি করেছিলেন। ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ প্রথমে মেরিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কিন্তু মেরি এলিজাবেথকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অনেক ইংরেজ ক্যাথলিক এবং স্প্যানিশদের চক্রান্ত করতে থাকেন। তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৫৮৬ সালে ১৯ বছর কারাবাসের পর এলিজাবেথকে হত্যার বড় ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়া যায়। মেরিকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাকে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৫৮৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি স্কটসের মেরি কুইন ফদারিংহে ক্যাসেলে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য তার শিরন্ডেদ করা হয়। তার ছেলে স্কটল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জেমস তার মায়ের মৃত্যুদন্ড মেনে নেন এবং পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজা হন।

 

ষোড়শ লুই এবং রানি মারি অ্যান্টোইনেট  [১৭৯৩ সাল]

একজন সিদ্ধান্তহীন এবং অপরিণত রাজা লুই-১৬ আন্তর্জাতিক ঋণ (আমেরিকান বিপ্লবে অর্থায়নসহ) নিয়ে ফ্রান্সের জন্য অবদান রেখেছিলেন, যা দেশটিকে আরও ঋণের মধ্যে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে যা ফরাসি বিপ্লবকে আরও গতিশীল করে। ১৭৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশটি দেউলিয়া হওয়ার কাছাকাছি যায়। যা রাজাকে অজনপ্রিয় আর্থিক সংস্কারের সমর্থনে পরিচালিত করতে থাকে। ইতোমধ্যে লুই ও তার স্ত্রী রানি মারি অ্যান্টোইনেট বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলেন। ফ্রান্সের জনসাধারণের সমস্যার কোনো সমাধান করছিলেন না। ১৭৯২ সালের আগস্টে রাজতন্ত্রের পতন হয়। ১৭৯৩ সালে লুই-১৬ ও মেরি অ্যান্টোইনেটকে জনসম্মুখে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর