বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উধাও হওয়ার যত অদ্ভুত ঘটনা

পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক ঘটনার প্রমাণ মেলে যেখানে এক বা একাধিক মানুষ একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। পরে তাদের কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ঘটনাগুলোর কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা নিয়েই এ রকমারি-

উধাও হওয়ার যত অদ্ভুত ঘটনা

গ্রাম উধাও

কেউ যদি গুম বা গায়েব হয়ে যায় তবে নানাভাবেই এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। কিন্তু একটি গ্রামই যখন উধাও হয়ে যায় তখন আর কী বলা যায়! এমন ঘটনা ঘটেছে ১৯৩০ সালে উত্তর কানাডায়। প্রায় ২ হাজার মানুষ বসবাসকারী একটি গ্রাম সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেল। উত্তর কানাডার আনজিকুনি গ্রামে জো লেবেল নামে এক ব্যক্তি আসেন। ইতঃপূর্বেও বেশ কয়েকবার তিনি বিশেষ কাজে গ্রামে এসেছিলেন এবং সেখানকার মানুষের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। কিন্তু সব সময়ের চেয়ে এবারের যাত্রায় এসে তিনি অবাক! পুরো গ্রামটি যেন একটি শ্মশানঘাট। গ্রামে লোকজন থাকবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু জনমানব শূন্য গ্রামই বরং অস্বাভাবিক। জো ফিরে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। একদল বিশেষজ্ঞ বিষয়টির তদন্ত করেন। এমন কোনো বাড়ি বা ঘর ছিল না যেখানে অভিযান হয়নি কিন্তু কোনো মানুষের দেখা মেলেনি। এমনকি পায়ের ছাপও মেলেনি! কয়েকটি কুকুরকে মৃত পাওয়া গেল ১২ ফুট গভীর বরফের নিচে। বসবাসকারীরা না খেতে পেয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করা হলেও গুদামগুলোতে প্রচুর খাবার দেখা যায়। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়- গ্রামের কিছু পুরনো কবরের কফিনে সংরক্ষিত মরদেহও গায়েব!

 

 

অলিভার লার্চ

অনেক অদ্ভুতুড়ে ঘটনার একটি অলিভার লার্চের ঘটনা। অলিভার লার্চ রাসের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, কোনো এক শীতের সন্ধ্যায় লার্চ গিয়েছিল কুয়ো থেকে জল আনতে। জল নিয়ে ফেরার পথে দুজন দাঁড়িয়ে থাকা লোকের সামনে থেকে সে উধাও হয়ে যায়। লার্চের আর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে আসায় তার যে পায়ের ছাপ পড়ছিল তা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে হঠাৎ থেমে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল উনিশ শতকের শুরুর দিকে উত্তর ওয়েলসের ইন্ডিয়ানায়। সে সময়কার অনেক বই-পুস্তকে ঘটনাটির উল্লেখ আছে। এ নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করলেও অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান এবং অনেকের লেখায় বিষয়টির উল্লেখ থাকায় সন্দেহাতীতভাবে এই উধাওয়ের ঘটনাটি রহস্যময় ঘটনা হিসেবে আলাদা স্থান দখল করে আছে।

 

বাতিঘর রক্ষী গায়েব

বাতিঘর বা চার্চ যাই হোক না কেন, নিরাপত্তারক্ষী থাকবে আর সে পাহারা দেবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু সেই নিরাপত্তারক্ষীই যদি গায়েব হয়ে যায় বিষয়টি কেমন যেন অস্বাভাবিক। ১৯০০ সালের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের ফ্লানান দ্বীপপুঞ্জের বাতিঘরে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী একসঙ্গে তাদের নিরাপত্তার কাজ করছিল; কিন্তু হঠাৎই সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। পড়ে থাকে শুধু তাদের বাতিঘরে ব্যবহারের জিনিসপত্রগুলো। এই অলৌকিক ঘটনার পর অনেক তল্লাশি চালানোর পরও তাদের কোনো হদিস পাওয়া গেল না। কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, হঠাৎ করে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ এসে তাদের হয়তো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাদের যদি ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাহলে তাদের জিনিসপত্রগুলো কেন পড়ে থাকবে?

 

বিকলাঙ্গ ব্যক্তি

বিকলাঙ্গ ব্যক্তি যার নিজেরই চলতে কষ্ট হয় সেই ব্যক্তি কী করে উধাও হয়! ওয়েন পারফিট নামের তেমনি এক ব্যক্তি গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায় ১৭৬৩ সালে। ওয়েন একটি বিরাট আঘাতে নিজের অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়। ঘটনাটি ১৭৬৩ সালের জুন মাসের। কোনো এক সন্ধ্যায় ওয়েন তার বোনের সঙ্গে বাড়ির বাইরে বসে কথা বলছিল। ষাট বছর বয়সী প্যারালাইজড ওয়েনের যেখানে নড়াচড়া করার মতো শক্তি নেই। সেই বয়স্ক ব্যক্তিটিই হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। পাশের একটি কারখানা থেকে একজন শ্রমিক ওয়েনের বোনের ডাকে এগিয়ে আসে। তারা দুজনই দেখলো ওয়েনের পরনের পোশাকটি ছাড়া আর কিছুই সেখানে নেই। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, প্রায় দুইশ বছর পর এই উধাও হওয়ার ঘটনাটির তদন্ত করা হয়; কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।

 

নিউজার্সি সুড়ঙ্গ

ঘটনাটি অবশ্য খুব বেশি দিন আগের নয়। এই তো ১৯৭৫ সালের ঘটনা। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের।

সে বছর জ্যাকসন রাইট নামে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিউজার্সি থেকে নিউইয়র্কে আসছিলেন। পথে তাদের লিংকন টানেল পার হতে হয়। টানেলের ভেতর সে দিন বেশ খানিকটা অন্ধকার ছিল। জ্যাকসন রাইট দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে টানেল পার হয়ে এলেন। কিন্তু টানেল থেকে বের হয়ে এসে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে পাশের সিটে কেউ নেই। তার স্ত্রী মার্থা রাইট বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে! পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তিনি তার স্ত্রীকে খুঁজে পাননি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গাড়ির দরজা কিংবা উইন্ডো সবই ভেতর থেকে লক করা ছিল!

 

সেনাদল গায়েব

দেশরক্ষার কাজে নিয়োজিত সেনাদল যদি গায়েব হয়ে যায়, তাহলে কেমন হয় বিষয়টি। অবাক হওয়ারই কথা! ১৯১৫ সালে তিনজন সেনার দাবি, চোখের সামনে থেকে গোটা একটা সেনাদল উধাও হয়ে যায়। সেনা তিনজন নিউজিল্যান্ডের বিশেষ সামরিক বাহিনী রয়্যাল নরফোক রেজিমেন্টের সদস্য। তুরস্কের সুভলা উপসাগরের পাশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ মিশনে তারা এসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী সেনারা দল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন বলে তারা বেঁচে যান। গন্তব্যে পৌঁছে দেখেন, সেনাদের সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়নটি গায়েব হয়ে গেছে!

 

 

 বেলিংটান ত্রিভুজ

উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে বেশ কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনার উদ্ভব হয়। ১৯২০-১৯৫০ সাল এ সময়ের মধ্যে ভারমন্টের বেনিংটনে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটে। অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে ১৯৫০ সালের অক্টোবর মাসে। পল জেপসন নামের একটি বাচ্চা খামার থেকেহারিয়ে যায়। পলের মা তার ছেলেকে শূকরছানা চরানোর জন্য মাঠে রেখে আসেন। কিন্তু ফিরে এসে ছেলেটির দেখা আর পাননি। শূকরছানাগুলোরও কোনো হদিস মেলেনি! পরে এদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

স্টোনহ্যাঞ্জ

আজব সব পাথরের জন্য স্টোনহ্যাঞ্জ মানুষের কাছে সব সময়ই অন্যরকম বিস্ময়। কিন্তু ১৯৭১ সালের আগস্টের একটি ঘটনা আরও রহস্যের ধূম্রজাল তৈরি করে দেয়। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের স্টোনহ্যাঞ্জে ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। স্টোনহ্যাঞ্জে সাধারণের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। একদল হিপ্পি স্টোনহ্যাঞ্জে ঘুরতে এলো। রাতের বেলা তারা ক্যাম্প ফেলল শহরের উপকণ্ঠে। ক্যাম্প ফায়ারের আশপাশে বসে তারা চা-সিগারেট পান করছিল আর চলছিল উদ্দাম গান বাজনা। আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটল রাতে। হঠাৎ করে কোথাও প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ল, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকে আলোকিত হয়ে উঠল গোটা অঞ্চল। একজন পুলিশ ও অপর একজন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তারা দেখল পুরনো পাথরের মূর্তি থেকে অদ্ভুত এক ধরনের উজ্জ্বল নীল রঙের আলো এসে পড়েছে হিপ্পিদের ক্যাম্পের ওপর। সেই আলো এতই প্রখর ছিল যে, সবাই চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হলো। আলো কমে যাওয়ার পর দেখা গেল সমস্ত ক্যাম্প খালি পড়ে আছে এবং কোথাও হিপ্পিদের দেখা নেই। একদল মানুষ যেন বাতাসেই মিলিয়ে গেছে।

 

ডিপ্লোম্যাটিক উধাও

১৮০৯ সালের ঘটনা। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে একটি অদ্ভুত উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সে বছর অস্ট্রিয়া থেকে হামবুর্গে ফেরার পথে একজন ব্রিটিশ ডিপ্লোম্যাট রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান। সেই ব্রিটিশ ডিপ্লোম্যাটের নাম ছিল বেঞ্জামিন বারথাস্ট।

এই কূটনৈতিক অস্ট্রিয়া থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ফিরছিলেন।

পথে রাত হয়ে যায়। এরপর রাস্তাতেই তিনি একটি রেস্তোরাঁয় তার রাতের খাবার সেরে নেন। রাতে খাবার শেষ করার পর আবার শুরু হয় যাত্রা। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর পর গাড়ির কোচোয়ান দেখল ঘোড়ার গাড়ির ভেতরটা খালি। আসার পথে গাড়ি থেকে কেউ নামেনি, তাহলে সেই ব্রিটিশ ডিপ্লোম্যাট গেল কোথায়?

 

ডেভিড ল্যাং কিংবদন্তি

ডেভিড ল্যাংয়ের গায়েব বা গুম হওয়ার বিষয়টি অনেকটা অলিভার থমাসের মতোই। অবিস্মরণীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৮০ সালের দিকে। টেনেসার গালাটিন নামক এলাকার একটা ফার্ম হাউস ছিল। ডেভিড ল্যাং ও তার সহধর্মিণী এমা একদিন বাড়ির সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের দুই সন্তান সারাহ ও জন বাড়ির উঠোনে একসঙ্গে খেলা করছিল। ডেভিড কি এক কাজে সামনে এগিয়ে যান। বাড়ির সামনেই বেঁধে রাখা কয়েকটি ঘোড়ার কাছে সে এগিয়ে আসেন। ঠিক সে মুহূর্তে বাড়িতে প্রবেশ করেন তার পারিবারিক বন্ধু জাজ অগাস্ট পিক। ডেভিড ঘোড়ার কাছে দাঁড়িয়ে অগাস্ট পিককে দেখে হাত নাড়ে। কি যেন একটা বিশেষ কিছু দেখান। বন্ধু জাজ একটু এগিয়ে তার কাছে আসতেই সবার সামনেই ডেভিড হঠাৎই উধাও হয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে সবাই অবাক হয়ে যান এবং সবাই দৌড়ে আসে ডেভিডের দাঁড়িয়ে থাকার স্থানে। কিন্তু ডেভিড ল্যাংয়ের কোনো চিহ্নও পাওয়া গেল না! এতগুলো লোকের সামনে থেকে একটি জলজ্যান্ত মানুষ গায়েব হয়ে গেলেন অথচ উধাও হওয়া জায়গাটিতে ঘাসের ওপর শুধু একটি বৃত্ত খুঁজে পাওয়া গেল!     

 

 

 

সর্বশেষ খবর