সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্থাপত্যে বিস্ময়

 ল্যুভর মিউজিয়াম

পৃথিবীর বিখ্যাত সব জাদুঘরের তালিকায় ওপরের সারিতেই থাকবে ল্যুভর মিউজিয়ামটি। পৃথিবীর সেরা স্থাপত্য সৌন্দর্যের মধ্যেও এটি সেরাদের তালিকায় রয়েছে। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম, যাতে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ও মহামূল্যবান অনেক চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য। প্যারিসের সিন নদীর তীরে অবস্থিত এ বিশাল স্থাপনা আজকের সমকালে এক মহাকালের ধারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। প্যারিস শহরটা গড়ে উঠেছে সিন নদীর তীর ঘেঁষে। অনেকটা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত এ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে ল্যুভর। ১২০০ সালে নির্মিত যে ভবন ঘিরে এটি প্রথমে গড়ে ওঠে তা ছিল ফরাসি সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপের রাজকীয় দুর্গ ও প্রাসাদ। শিল্প সংগ্রহশালা হিসেবে ল্যুভরের সার্বিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে মোট ২০০ বছর। ল্যুভর হচ্ছে নানা ভবনের এক বিশাল সমাহার। ১৫৪৬ সালে এর পশ্চিম দিকের ভবনের কাজ শুরু হয় সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিসের নির্দেশে। শুরুতে এতে কেবল বিভিন্ন রাজকীয় দ্রব্যসামগ্রী প্রদর্শনের জন্য রাখা হতো। সম্প্রসারিত ভবনগুলোর কাজ শুরু হয় ১৬২৪ সালে সম্রাট ত্রয়োদশ লুইয়ের আমলে। শিল্প সংগ্রহশালা হিসেবে ল্যুভরের ভবনগুলোর সামগ্রিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের আমলে। ল্যুভরের স্বর্ণযুগ সম্রাট প্রথম নেপোলিয়নের শাসনামল। তার নেতৃত্বে সপ্তদশ শতাব্দীজুড়ে সমগ্র ইউরোপে ফ্রান্সের প্রাধান্য বিস্তৃত হলে ল্যুভরের সংগ্রহসম্ভার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তার পতনের পর এসবের অনেক কিছুই বিজিত দেশগুলোকে আবার ফেরত দেওয়া হয়। ফলে ফরাসি দেশপ্রেমিক ও বিশ্বের শিল্পানুরাগী ব্যক্তিদের দানে ল্যুভর ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৮৪৮ সালে ল্যুভর রাষ্ট্রের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বর্তমানে এতে ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগসহ পৃথক গ্যালারিতে গ্রিক, রোমান, মিসরীয় ও প্রাচ্য দেশীয় অসংখ্য শিল্পনিদর্শন রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যযুগ, রেনেসাঁস এবং আধুনিককালেরও বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প এবং ভাস্কর্যকর্ম রয়েছে। বিশ্বনন্দিত শিল্পীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রেম্বান্ট, রুবেন্স, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ও টিশিয়ানের নাম। দ্য ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘মোনালিসা’ রয়েছে এখানেই।

 

সিডনি অপেরা হাউস

সিডনি অপেরা হাউস। অপেরা হাউসটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে অবস্থিত। এটি নৌকার পাল আকৃতির ন্যায় দেখতে। বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে এ সিডনি অপেরা হাউস। অপেরা হাউসটি মহাসাগরের এক প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে, যা দেখতে অনেকটা উপত্যকার মতো। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এটিকে ২০০৭ সালে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমান অপেরা হাউসটি বেনেলং পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে, যা একসময় ম্যাককুইরি বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৮১৭ সালে বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৯০১ সালে বিলুপ্ত করা হয়। ১০ আগস্ট, ১৯০২ সালে ম্যাককুইরি বন্দরে ট্রাম রক্ষণাগার তৈরি করে ১৯৫৮ সালে ভেঙে ফেলা হয়। এ একই জায়গায় ১৯৫৯ সালে সিডনি অপেরা হাউসের নির্মাণকাজ শুরু হয়। জান আডজেন নামীয় ড্যানিশ স্থাপত্যবিদ সিডনি অপেরা হাউসের নকশা প্রণয়ন করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি অপ্রত্যাশিত ও বিতর্কিতভাবে নকশা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। পুরস্কারের মূল্যমান ছিল ৫ হাজার মার্কিন ডলার। ১৯৫৭ সালে প্রকল্পের তত্ত্বাবধান ও সহায়তার জন্য তিনি সিডনিতে আসেন। ফেব্র“য়ারি, ১৯৬৩ সালে তিনি সিডনিতে তার অফিস স্থানান্তরিত করেন। ফেব্র“য়ারি, ১৯৬৬ সালে আডজেন প্রকল্পের কাজ ফেলে রেখে চলে যান। এর প্রধান কারণ ছিল সরকারের অর্থ প্রদানে অস্বীকৃতি। ২০০১ সালে আডজেন অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রিত হয়ে অবকাঠামোটির নকশাকে পরিবর্তন করে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। ১৯৫৭ সালে অপেরা হাউসের প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় ছিল ৭ মিলিয়ন। সরকার থেকে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখের অস্ট্রেলিয়া দিবসে নির্মাণকাজ শেষের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটি দশ বছর বিলম্বিত হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ মাশুল গুনতে হয় এবং তা শেষ করতে চৌদ্দ গুণেরও অতিরিক্ত অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০ অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম পদচিহ্ন সিডনি অপেরা হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

 

মারিনা বে স্যান্ডস

মারিনা বে স্যান্ডস এ সময়ের অন্যতম বিস্ময়কর স্থাপনা। এটি সিঙ্গাপুরে অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে ব্যতিক্রমী স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর শহর অবশ্যই অগ্রদূত। আর সেদিক থেকে বিবেচনা করলে মারিনা বে স্যান্ডস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ শহরটি অভিজাত খাবার এবং স্থাপত্যশৈলীর কারণে সুপরিচিত। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা সিঙ্গাপুরে অবস্থিত। দ্য মারিনা বে স্যান্ডসের ৫৭ তলায় অবস্থিত বন্দরমুখী পর্যবেক্ষণ ডেক হোটেলের মেহমানদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান। ভূমি থেকে ২০০ মিটার ওপরের এ তলায় রয়েছে একটি ইনফিনিটি পুল। দুটি সুবিশাল হোটেল টাওয়ারের মোট খরচ ৬ বিলিয়ন ডলার।

 

বুর্জ খলিফা

বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল, ১৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত ‘বুর্জ খলিফা’। একুশ শতকের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি রয়েছে দুবাইতে। রকেটের মতো দেখতে এ ভবনটি ২ হাজার ৭১৭ ফুট উঁচু। ৬০ মাইল দূর থেকেও ভবনটি দেখা যায়। ভবনের ৭৬ তলায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত সুইমিংপুল ও ১৫৮ তলায় সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত মসজিদ। নির্মাণের সময় নাম ছিল বুর্জ দুবাই। তবে আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে ভবনের নাম বুর্জ দুবাইয়ের পরিবর্তে বুর্জ খলিফা রাখা হয়েছে। ৬ লাখ বর্গফুটবিশিষ্ট এ ভবনে একসঙ্গে ১২ হাজারেরও বেশি লোকের সমাবেশ হতে পারে। বুর্জ ভবনে ৫৪টি এলিভেটর বা লিফট আছে।

 

আইফেল টাওয়ার

এখনো বিস্ময়ের এক অনন্য স্থাপনা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার। প্যারিস শহরে অবস্থিত সুউচ্চ একটি লৌহ কাঠামো, যা ফ্রান্সের অন্যতম একটি প্রতীক। গুস্তাভো আইফেল নির্মিত ৩২০ মিটার তথা ১০৫০ ফুট উচ্চতার এ টাওয়ারটি ছিল ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরবর্তী ৪০ বছর ধরে পৃথিবীর উচ্চতম টাওয়ার। গুস্তাভো আইফেল রেলের জন্য সেতুর নকশা প্রণয়ন করতেন এবং টাওয়ারটি নির্মাণে তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৮, ০৩৮ খন্ড লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে এ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। ৩০০ শ্রমিক এ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতি বছর আইফেল টাওয়ার দেখতে ছুটে আসেন লাখো পর্যটক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর