সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

এ কে এম শহীদুল হক

একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

গণহত্যার প্রচলিত ইংরেজি শব্দ হলো- Genocide| Genocide দুটি শব্দের সংযুক্ত রূপ। গ্রিক শব্দ ‘genos’ এবং ল্যাটিন শব্দ ‘caedo’ মিলে হয়েছে ‘genocide’। genos+caedo=genocide। ‘genos’ অর্থ race ev people| caedo অর্থ act of killing। সুতরাং genocide অর্থ killing of mass people। পোল্যান্ডের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ রাফায়েল লেমকিন ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত তার লেখা বই ‘Axis Power Rule in Occupied Europe-এ genocide শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সে সময় থেকে mass killing ঘটনাকে genocide হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই রাফায়েল লেমকিনকে genocide  শব্দের জনকও বলা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি, ইতালি ও জাপান জোটকে বলা হতো Axis Power। এ জোট জার্মানি, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপ দেশগুলোর ইহুদিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যাকান্ড চালায়। ইতিহাসে এ হত্যাকান্ডকে Holocaust হিসেবে পরিচিত। রাফায়েল লেমকিন এ নির্যাতন ও গণহত্যার বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করেন। জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে লেমকিনের গণহত্যার বিশ্লেষণের কিছু বিষয় গণহত্যার মানদন্ড বা criteria হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

লেমকিনের মতে, কোনো একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে সে জাতি বা গোষ্ঠীর জনগণের ওপর ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালানো হলে সে কর্মকান্ডকে গণহত্যা বলা হবে। গণহত্যার মূল উদ্দেশ্য হলো-কোনো প্রতিক্রিয়াশীল মহল ও শক্তি কর্তৃক অন্য কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই জাতি বা গোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ঘটানো, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, অর্থনীতি, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যক্তি নিরাপত্তা ইত্যাদির ওপর অব্যাহত আঘাত হানা এবং তা ধ্বংস করা।

প্রাচীন আমল থেকেই বিশ্বে বিভিন্ন দেশে ও জনপদে গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দি পলিটিক্যাল টাস্ক ফোর্সের গবেষণায় ১৯৫৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিশ্বে ৪৩টি গণহত্যার সংঘটিত হয়েছে এবং গণহত্যায় পাঁচ কোটি লোক নিহত হয়। UNHCR-এর মতে, ২০০৮ পর্যন্ত গণহত্যায় আরও পাঁচ কোটি লোক গৃহহারা হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

গণহত্যায় অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা ও পশুত্বের কাছে মানবতা পদদলিত হয়েছে। বিশ্বে সব দেশে নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও মানবতার শত্রু এর কুৎসিত ও ভয়ংকর রূপ নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো বিভিন্ন দেশে গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল গাজায় বোমা মেরে প্রতিদিন শত শত প্যালেস্টাইনি নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। এটা কি গণহত্যা নয়? বিশ্ব বিবেক কেন নীরব?

১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘে ‘The Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide (CPPCG) গৃহীত হয় এবং ১৯৫১ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকরী হয়। ওই কনভেনশনে গণহত্যার সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কনভেনশনের ২নং আর্টিক্যাল মোতাবেক গণহত্যার সংজ্ঞা নিম্নরূপ :

কোনো জাতি বা জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় কোনো গোষ্ঠীকে নির্মূল করার অভিপ্রায়ে নিম্নবর্ণিত পাঁচটি কাজের যে কোনো একটি করলে তা গণহত্যা বা জেনোসাইডের অপরাধ হবে- জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের ব্যাপক হারে হত্যা করলে জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন করলে কোনো জাতি গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে কিংবা আংশিকভাবে ক্ষতিসাধন করার মানসে সুকৌশলে কোনো কর্ম পরিচালনা করলে সদস্যদের প্রজনন ক্ষমতা বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ। শিশুদের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন কিংবা নিজ জাতিগোষ্ঠী থেকে অন্যত্র সরিয়ে রাখা।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ও তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আন্দোলন করছিলেন তখন ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে সশস্ত্র পাক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর যে ক্র্যাকডাউন করেছিল তার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের হত্যা ও নির্যাতন করে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে নিভিয়ে দেওয়া। তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কমী, সমর্থক ও আওয়ামী লীগ ভাবধারার প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে পঙ্গু করে চিরদিনের জন্য নিশ্চিহ্ণ করে দেওয়া। ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী প্রায় ৫০ হাজার লোককে হত্যা করেছে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত নয় মাসে পাক বাহিনী ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে।

আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনস, জাতিসংঘ এবং ওয়্যার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, বাংলাদেশ পাক বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরোচিত নির্যাতনের অনেক তথ্য-প্রমাণ ও দলিলাদি সংগ্রহ করেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পাক বাহিনীর এ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে। জেনোসাইড ওয়াচ ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন- The International Coalition of Sites of Conscience Ges International Association of Genocide Scholars ইতোমধ্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালিদের হত্যা ও নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা জাতিসংঘকে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনকে অবিলম্বে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভিকটিমদের প্রতি সম্মান জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন। তারা দোষীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার মধ্যে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন Lemkin Institute for Genocide Prevention বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে পাক বাহিনীর নির্যাতনকে গণহত্যা বা জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতদসত্ত্বেও জাতিসংঘ এখনো পাক বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে স্বীকৃতি আদায়ের কার্যকর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টারও ঘাটতি রয়েছে। বিদেশে এ সংক্রান্তে প্রচার প্রচারণা তেমন একটা হয়েছে বলে মনে হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর যেসব সরকার দেশ পরিচালনা করেছিলে তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অধিকন্তু জিয়া ও এরশাদ সরকার পাকিস্তানপন্থি ছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ২০১৭ সালে ২৫ মার্চকে জেনোসাইড ডে বা গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। তখন থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে। সরকার ও সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ফোরামে গণহত্যার স্বীকৃতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সিভিল সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রবাসী বাঙালিরা এডভোকেসি সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা ইত্যাদি উদ্যোগের মাধ্যমে গণহত্যার পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-’৭১ শুরু থেকেই পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনকে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘গণহত্যা’ ঘোষণার জন্য সোচ্চার আছে। তারা আলোচনা সভা, সেমিনার, বক্তৃতা-বিবৃতি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রকাশনা ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে গণহত্যার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জেনোসাইড মিউজিয়াম, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম ও প্রজন্ম-’৭১ (মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংগঠন) ইত্যাদি সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গণহত্যার স্বীকৃতির পক্ষে জনমত তৈরির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের বাংলাদেশীয় দোসরদের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতেই হবে। এ গণহত্যার স্বীকৃতি শুধু দাবি নয়, এটা বাঙালিদের এক ধরনের যৌক্তিক অধিকার। গণহত্যা চালাবে আর তার স্বীকৃতি মিলবে না এটা তো হতে পারে না। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের গণহত্যার পক্ষে সমর্থন দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব।

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে বিশ্ববাসী পাকিস্তানিদের চরিত্র জানতে পারবে, স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আত্মত্যাগ জানতে পারবে। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আত্মোৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব বেড়ে যাবে। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে যারা গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে গণহত্যার ঘটনা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হলে বাংলাদেশ সরকার ও সর্বমহলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এককভাবে বাংলাদেশ দাবি করলে হবে না। অন্য রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনকে সমর্থন দিতে হবে। তাই বহির্বিশ্বে গণহত্যার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের এ ব্যাপারে সক্রিয় ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে রাষ্ট্রদূতগণ সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশেষ ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে যারা মানবাধিকার ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করেন তাদের নিমন্ত্রণ করবেন এবং ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের চিত্রের বর্ণনা অডিও-ভিডিওয়ের মাধ্যমে তুলে ধরে গণহত্যার পক্ষে জনমত তৈরি করতে পারেন।

দেশের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনকেও তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে হবে এবং তা বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার কাছেও পৌঁছে দিতে হবে। বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি যখন অন্যান্য দেশ সমর্থন দেবে তখনই জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেবে। জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেলেই তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হবে। সে দিন আর বেশি দেরি নেই যে দিন জাতিসংঘ ১৯৭১ সালের বাঙালি নিধনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

 

লেখক : সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ ও সহসভাপতি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম

সর্বশেষ খবর