রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত ভূতুড়ে হোটেল

বিশ্বের যত ভূতুড়ে হোটেল

ভ্রমণকারীরা কোথাও বেড়াতে গেলে রাতযাপনের জন্য ভূতুড়ে হোটেল এড়িয়ে চলেন। কিন্তু কিছু অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় মানুষ আছেন যারা এই অদ্ভুত জায়গার প্রতিই বেশি আকৃষ্ট। ভূতুড়ে হোটেলগুলোর কুখ্যাতির পেছনে জড়িয়ে আছে অনাকাক্সিক্ষত বিষাদময় ঘটনা।  তেমনি কয়েকটি ভূতুড়ে হোটেল নিয়ে আজকের রকমারি...

 

কুখ্যাত ভূতুড়ে হোটেলে

স্ট্যানলি হোটেল (যুক্তরাষ্ট্র)

পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত ভূতুড়ে হোটেলের তালিকা করা হলে সেখানে নিঃসন্দেহে এক নম্বরে থাকবে স্ট্যানলি হোটেল। হোটেলটি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের এস্টেস পার্ক শহরে অবস্থিত। ১৯০৯ সালে এই হোটেলটি নির্মাণ করেন ফ্রিলান অস্কার স্ট্যানলি। যার উদ্দেশ্য ছিল কলোরাডো ঘুরতে আসা তৎকালীন আমেরিকান সোসাইটির উঁচু স্থানীয় লোকদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা। কিন্তু হোটেলটির নাম ছড়িয়েছে মূলত এখানে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক সব ঘটনার জন্য। কথিত আছে, স্ট্যানলি হোটেলের মালিকের স্ত্রী ফ্লোরা স্ট্যানলির ভূত হেঁটে বেড়ায় বিভিন্ন কামরায়। তবে ফ্লোরা স্ট্যানলির ভূত অদৃশ্য নয়, বিভিন্ন সময়ে চোখের সামনেই তাকে অনেকে দেখতে পেয়েছেন। ফ্লোরা স্ট্যানলি ভালো পিয়ানো বাজাতে পারতেন। স্ট্যানলি হোটেলে রাত কাটিয়ে আসা অনেকেই বলেছেন, তারা রাতের বেলা পিয়ানো বাজানোর আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। এই হোটেলের অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিখ্যাত থ্রিলার রাইটার স্টিফেন কিং ১৯৭৭ সালে লিখেছিলেন তার বেস্ট সেলার হরর উপন্যাস ‘দ্য সাইনিং’। এক রাতে স্টিফেন কিং সস্ত্রীক উপস্থিত হন স্ট্যানলি হোটেলে। ট্যুরিস্ট সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই সময় হোটেলটিতে আর কোনো অতিথি ছিল না। হোটেলের নিস্তব্ধ আঙিনা, লম্বা অন্ধকার করিডর, মনুষ্যবিহীন বিশাল ডাইনিং রুমসহ সবখানেই ভয়ের উপাদান ছড়িয়ে ছিল। স্টিফেন কিং রাতযাপন করেছিলেন হোটেলের ২১৭ নম্বর কামরায়। সারা রাত অদ্ভুত সব আওয়াজ, চিৎকার আর পায়ের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন তিনি। শেষ রাতে ঘুমিয়ে মারাত্মক দুঃস্বপ্ন দেখেন। এই বাস্তব অভিজ্ঞতাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন উপন্যাসের পাতায় পাতায়। ২০০৬ সালে টেলিভিশন শো ঘোস্ট হান্টারের একটি পর্ব নির্মাণ করা হয় স্ট্যানলি হোটেলের ওপর। এখনো স্ট্যানলি হোটেলে প্রতি বছর হাজারো অতিথি এসে ভিড় জমান।

 

শোনা যায় মানুষের আর্তচিৎকার

তাজমহল প্যালেস (ভারত)

ভারতের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল হোটেলগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে তাজমহল প্যালেস হোটেল। মুম্বাইয়ের কোলাবা অঞ্চলে ১৯০৩ সালে হোটেলটি নির্মাণ করেন জামশেদজি টাটা। সে সময় মুম্বাইয়ের ওয়াটসন হোটেল ছিল ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন হোটেল। একবার জামশেদজি টাটা ওয়াটসন হোটেলে উঠতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় ক্রুুদ্ধ হয়ে জামশেদ টাটা হোটেল তাজমহল প্যালেস নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। হোটেলের নির্মাণ পরিকল্পনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ব্রিটিশ নির্মাণ প্রকৌশলী ডব্লিউ এ চ্যাম্বারস-এর ওপর। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো তাজমহল প্যালেস হোটেল জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পর চ্যাম্বারস-এর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। কথিত আছে, চ্যাম্বারস যেভাবে তাজমহল প্যালেস হোটেলের নকশা এঁকেছিলেন, নির্মাণকর্মীরা তা পুরোপুরি অনুসরণ করেননি। ফলে হোটেলের নির্মাণ চ্যাম্বারস-এর মনের মতো হয়নি। এই ঘটনায় তিনি এতই কষ্ট পান যে, হোটেলের পঞ্চম ফ্লোরের  বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তারপর থেকেই তাজমহল প্যালেস হোটেলের নানা ভূতুড়ে কাজ-কারবারের কথা লোকমুখে শোনা যায়।

দীর্ঘদিন ধরে অনেক মানুষের মুখে শোনা গেছে, তারা হোটেলের পঞ্চম ফ্লোরে ওই ব্রিটিশ প্রকৌশলীর মতো সাদা চুল-দাড়ির অধিকারী একটি অবয়ব ঘুরতে দেখেছেন। তবে তাজমহল প্যালেস হোটেলের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়টি লেখা হয় ২০০৮ সালে। মুম্বাইতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলায় হোটেলটি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

তিন দিনের খন্ডযুদ্ধে মারা যায় প্রায় ১৬৭ জন। তারপর থেকে এখানে রাতযাপনকারী অনেকেই বলেছেন তারা রাতে ঘুমানোর পর স্বপ্নে দেখেন, চারদিকে প্রচ- গোলাগুলি হচ্ছে আর শোনা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের আর্তচিৎকার।

 

ভূতুড়ে কর্মকান্ডে সাক্ষী অনেক

উত্তর কাপুনডা (অস্ট্রেলিয়া)

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভীতিকর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে উত্তর কাপুনডা হোটেল। হোটেলটি নির্মিত হয় ১৮৪৯ সালে নর্থ কাপুনডা আর্মস নামে। পরে ১৮৫৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নর্থ কাপুনডা হোটেল। তখন তামা খনিতে কাজ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে খনি শ্রমিকরা এসে কাপুনডা শহরে বসবাস করত। তাদের থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যেই কাপুনডা হোটেলটি নির্মাণ করা হয়। হোটেলটি গত এক শতাব্দীজুড়ে শহরের মানুষের প্রধান মিটিং পয়েন্ট হিসেবে খ্যাত। কাপুনডা শহরের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এর নাম। ১৮৫৯ সালে কাপুনডা শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। তৎকালীন পুলিশ সুপার মিস্টার কুয়েলি কাপুনডা হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের উদ্দেশে বিশেষ দাঙ্গা আইন পড়ে শোনান। কথিত আছে, সে সময় খনি শ্রমিকরা হোটেলের নিচ দিয়ে বেশ কিছু টানেল নির্মাণ করেন যা স্থানীয় বিভিন্ন খনির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। টানেলে আটকা পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু ও পতিতাদের ধরে এনে নির্যাতন করে মেরে ফেলাসহ এখানে আরও অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায়। কোলাহলমুখর এই হোটেলটিতে একসময় শুরু হয় নানা ভূতুড়ে কর্মকান্ড

যার চাক্ষুষ সাক্ষী আছে অনেকেই। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এই হোটেলে মৃত্যুবরণকারী সমস্ত অধিবাসীর আত্মা এখনো বাস করছে এখানে। এদের মধ্যে আছে হোটেলের এক সময়কার মালিক, খনি শ্রমিক, রাজনীতিবিদ, রূপসী মেয়েসহ আরও অনেকে। টিভি সিরিজ হন্টিং অস্ট্রেলিয়া এর একটি এপিসোডে উত্তর কাপুনডা হোটেলের এসব উদ্ভট ব্যাপারগুলো নিয়ে তদন্ত করা হয়। তাদের তদন্ত থেকে জানা যায়, হোটেলের যত ভুতুড়ে ঘটনা তার সবই হোটেলের একটা অব্যবহৃত অংশে ঘটে থাকে।

 

প্রায় ৯০০ বছরের ইতিহাস

স্কিরিড মাউন্টেইন (ওয়েলস)

ওয়েলসের মনমাউথশায়ার অঞ্চলের ল্যানফিহাঙ্গেল ক্রুকর্নি গ্রামে অবস্থিত স্কিরিড মাউন্টেইন হোটেল হচ্ছে ওয়েলসের সবচেয়ে পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। এই হোটেলটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো ইতিহাস। ১১০০ সালের অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকলেও যার উল্লেখ আছে। হোটেলটি কে বা কারা বানিয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে জানা যায় যে, শুরুতে এটি ছিল শুধু একটি মদের দোকান। পরে খদ্দেরের আনাগোনা অনেক বেশি দেখে একে হোটেলে পরিণত করা হয়। তবে হোটেলের নিচের ফ্লোরটি কোর্টরুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে সামান্য ভেড়া চুরির অপরাধেও মৃত্যুদন্ডের মতো কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো বলে জনশ্র“তি আছে। এই স্কিরিড মাউন্টেইন হোটেলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বিপ্লবের ইতিহাস।

১৪০০ সালের দিকে ওয়েলসের অধিবাসীরা ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ হেনরির (Henry IV) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নামে। বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে প্রায় ১৮০ জন বিদ্রোহীকে বন্দি করে স্কিরিড মাউন্টেইন হোটেলে এনে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। এ হোটেলের যেসব কড়িকাঠগুলোতে ফাঁসির দড়ি ঝুলানো হয়েছিল, সেসব জায়গায় এখনো দড়ির দাগ লক্ষ্য করা যায়। এরপর থেকে হোটেলটিকে ঘিরে নানা অতিপ্রাকৃত ঘটনার কথা শোনা যায়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, স্কিরিড মাউন্টেইন হচ্ছে কয়েকটি ভূতের আবাসস্থল। এখানে রাতযাপনকারী অনেকেই নানা সময়ে ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা আচমকা হোটেলের বিভিন্ন কড়িকাঠে ফাঁসিতে ঝুলতে থাকা মানুষের লাশ দেখেছেন! অনেকে বলেন, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ অনুভূতি হয়- কেউ যেন অদৃশ্য দড়ি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরেছে। আইটিভির ‘এক্সট্রিম ঘোস্ট স্টোরিস’ নামের ডকুমেন্টারি টিভি সিরিজেও স্কিরিড মাউন্টেইনের অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলি তুলে আনা হয়েছে।

 

হোটেলকে অনেকেই ক্যারোসটা জেলখানা নামে চেনে

ক্যারোসটা হোটেল [লাটভিয়া]

লাটভিয়ার লাইপেজা শহরে অবস্থিত ক্যারোসটা হোটেলকে অনেকেই ক্যারোসটা জেলখানা নামে চেনে। এর কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই হোটেলটিকে জার্মানির নাৎসি বাহিনী কারাগার হিসেবে ব্যবহার করত। ১৯০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয় সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে।

পরবর্তীতে সোভিয়েত মিলিটারি ক্যারোসটাকে বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলখানাটির দখল নিয়ে নেয় হিটলারের অনুসারীরা। ওই সময় এখানে শতাধিক বন্দি মারা যায়, যাদের বেশির ভাগ গুলি করে মারা হয়েছিল। জীবিত বন্দিদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। তাই জেলখানা থেকে বের হওয়ার ফটকের ওপর অনেক মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদি লাটভিয়ান ভাষায় লিখে গেছেন- ‘নরক হতে মুক্তি’।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই জেলখানা বেশ কিছুকাল অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে এটিকে একটি হোটেলে রূপ দেওয়া হয়। হোটেলটির ঐতিহাসিক ভ্যালুকে কাজে লাগিয়ে কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এক অভিনব কায়দায় অতিথিদের আপ্যায়ন করে থাকে। হোটেলের কক্ষগুলোকে অনেকটা বন্দিশালার মতো করে নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিটি কক্ষে আছে লোহার খাট, ছোট্ট একটা ড্রেসার আর টয়লেট। যারা হোটেলে থাকতে আসে, তাদের সঙ্গে জেলখানার কয়েদিদের মতো আচরণ করা হয়। তবে ক্যারোসটা হোটেলের আরও একটি পরিচয় আছে। লোকজন মনে করে, হোটেলটি অভিশপ্ত, এখানে মৃত বন্দিদের আত্মারা ঘুরে বেড়ায়।

হোটেলের ভিজিটররা অনেকেই বলেছেন তারা রাতের বেলা করিডরে পা টেনে টেনে হাঁটার শব্দ, আচমকা চিৎকার, এমনকি বন্দুকের আওয়াজ পর্যন্ত শুনেছেন। হোটেলের স্টাফরা বলেন, এখানে প্রায়ই অকারণে বাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, শিকলে শিকলে বাড়ি খাওয়ার প্রচ- শব্দ, আপনা আপনি বিভিন্ন সেলের দরজা খুলে যাওয়া ইত্যাদি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে থাকে।

 

ইউরোপের বিলাসবহুল হোটেল

ড. হোমস (নরওয়ে)

ড. হোমস হোটেল হচ্ছে একটি রিসোর্ট হোটেল; যার অবস্থান দক্ষিণ নরওয়ের বিখ্যাত স্কি-রিসোর্ট শহর গেইলোতে। ১৯০৯ সালে একজন শ্বাসযন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ হোমস হোটেলটি তৈরি করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল রোগীদের জন্য পশ্চিমের পাহাড় থেকে আসা সতেজ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। পরবর্তীকালে ড. হোমস হোটেলটিকে বাণিজ্যিকভাবে রিসোর্ট হোটেল হিসেবে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ড. হোমস হোটেল শুধু নরওয়ের নয়; গোটা ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল হোটেলগুলোর মধ্যে একটি। ৭ হাজার স্কয়ার মিটার বিস্তৃত, ১২৭ কক্ষবিশিষ্ট এই হোটেলের আছে চারটি ফ্লোর। ভিতরে আছে দুটি সুইমিংপুল, একটি সূর্যঘড়ি, বিশাল জিমনেশিয়াম, বিউটি পারলার, বেবি সিটিং সার্ভিসসহ আরও অনেক অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। তবে হোটেলটি মূলত পরিচিতি পেয়েছে এখানকার ভূতুড়ে কর্মকান্ডের জন্য। কথিত আছে, ১৯২৬ সালে হোটেলটিতে এক অল্পবয়সী দম্পতি অতিথি হিসেবে ওঠে। স্বামী এই হোটেলেই বাসকারী আরেক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। স্বামীর প্রতারণার খবর জানতে পেরে অল্পবয়সী মেয়েটি হোটেলের রুম নম্বর ৩২০-এ দড়িতে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর সময় তার পরনে ছিল সাদা রঙের বিয়ের গাউন। তারপর থেকেই সেই মহিলার সাদা গাউন পরা অতৃপ্ত আত্মাকে এই হোটেলের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ৩২০ নম্বর কক্ষে যারা রাতযাপন করেছেন তারা অদ্ভুত সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন। এখানে রাতের বেলা আসবাবপত্র টেনে এলোমেলো করা, বাইরে থেকে বাথরুমের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বন্ধ জানালা খুলে যাওয়া এমন বিচিত্র সব ঘটনা ঘটে বলে জনশ্র“তি আছে। তাই এই কক্ষটিকে এখন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

 

ভূতুড়ে কাজকারবার চলছেই

ব্যানফ স্প্রিং (কানাডা)

কানাডার আলবার্টা রাজ্যের ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত ব্যানফ স্প্রিং হচ্ছে কানাডার সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলগুলোর একটি। ব্যানফ স্প্রিং হোটেলের নির্মাণ পরিকল্পনা করেছিলেন আমেরিকান আর্কিটেক্ট ব্র“স প্রিন্স। ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৮ সালের মধ্যে কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হয়। তবে ব্যানফ স্প্রিং হোটেলের আর একটি পরিচয় হচ্ছে এটি কানাডার সবচেয়ে ভূতুড়ে স্থানগুলোর মধ্যে একটি। হোটেলটিকে ঘিরে নানা অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাক্ষী আছেন অনেকেই। কথিত আছে, হোটেলটির সিঁড়িঘরে দুর্ঘটনায় একজন বিয়ের কনের মৃত্যুর কারণে এটি অভিশপ্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। মেয়েটি বিয়ের সাদা গাউন পরা অবস্থায় তার স্বামীর আগমন পথের সিঁড়িতে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল। হঠাৎ একটা মোমের আগুন লেগে যায় মেয়েটির গাউনে।

সে আতঙ্কিত অবস্থায় সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় এবং মাথায় প্রচ- আঘাত পেয়ে তার মৃত্যু হয়। তারপর থেকে বিয়ের গাউন পরা অবস্থায় তার আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় হোটেলের বিভিন স্থানে। হোটেলটিকে ঘিরে আরও একটি ঘটনা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হোটেলটির ৮৭৩ নম্বর রুমে বাস করত একটি পরিবার। কে বা কারা যেন একদিন এসে তাদের সবাইকে ওই রুমে খুন করে ফেলে রেখে যায়। পুলিশি তদন্তে কোনো ফলাফল হয়নি। তারপর থেকেই ওই রুমে অদ্ভুত সব কান্ড  ঘটত। রাতে আসবাবপত্র টানাটানির আওয়াজ, ছোট বাচ্চার কান্না, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া! মানুষজন কেউ সেই রুমে বাস করার সাহস পেত না। তাই বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ দেয়াল তুলে এই কক্ষে ঢোকার পথ আটকে দিয়েছে, জানালাগুলোর কপাটও ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। হোটেলটিতে ভূতুড়ে কাজ কারবার চলছেই, যার ব্যাখ্যা আজও কেউ দিতে পারেনি।

 

হোটেলটি তৈরি ১৭০০ শতাব্দীতে

বেলিগালি ক্যাসেল (আয়ারল্যান্ড)

উত্তর আয়ারল্যান্ডের আনট্রিম কাউন্টির অধীন বেলিগালি গ্রামে ১৬২৫ সালে নির্মিত হয় বেলিগালি ক্যাসেল; যা বর্তমানে হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি আয়ারল্যান্ডে ১৭০০ শতাব্দীতে তৈরি হওয়া একমাত্র ভবন; যা এখনো মানুষের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৬২৫ সালে জেমস শ নামে একজন স্কটিশ এই অঞ্চলে বসবাস করতে এসে তৎকালীন আর্ল অফ আনট্রিমের কাছ থেকে ২৪ পাউন্ডের বিনিময়ে একটি জমি ভাড়া নিয়ে বেলিগালি ক্যাসেল নির্মাণ করেন। ক্যাসেলটি সম্পূর্ণ স্কটিশ স্টাইলে নির্মিত। ১৯৫০ সালের পর হেস্টিংস হোটেলস গ্রুপ বেলিগালি ক্যাসেলের মালিকানায় একে হোটেলে রূপান্তর করে। হোটেলটি পরিচিতি পেয়েছে স্থানীয় মানুষের মাঝে প্রচলিত ভূতুড়ে কাহিনিগুলোর কারণে। মানুষের ধারণা, এই হোটেলে থাকতে এসে যারা মারা গেছেন, তাদের প্রায় সবারই আত্মা এই হোটেলে রাতের বেলায় ঘুরে বেড়ায়। লেডি ইসোবেল শ এর কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। লেডি ইসোবেলের একটা অদ্ভুত স্বভাব ছিল। তিনি প্রায়ই অন্য বাসিন্দাদের দরজায় টোকা দিয়ে পালাতেন। এ কারণে বিরক্ত হয়ে সবাই ইসোবেলের স্বামীর কাছে অভিযোগ জানায়। ইসোবেলের স্বামী রাগান্বিত হয়ে তাকে একটা কামরায় বন্দি করে রাখেন। কিন্তু অভিমানী ইসোবেল তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে তার আত্মা এই হোটেলেই স্থায়ী বসত গেড়ে আছে। এখনো হোটেলে রাতের বেলা দরজার গায়ে টোকার শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু দরজা খুলে দেখা যায় কেউ নেই!  ম্যাডাম নিক্সন নামে আরও একজন মহিলা এই হোটেলে মারা যান উনিশ শতাব্দীর শুরুতে। হোটেলের অন্ধকার করিডরে এখনো তার সিল্কের ড্রেস পরে হেঁটে যাওয়ার খসখস আওয়াজ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও নানা অতিপ্রাকৃত ঘটনার কারণে হোটেলের দক্ষিণ দিকের গম্বুজের নিচের ছোট রুমটিকে বলা হয় ‘দ্য ঘোস্ট রুম’।

 

অবরেয় গ্র্যান্ড হোটেল

কলকাতা

কলকাতায় ভূতের হোটেল নামে বেশ আলোচিত গ্র্যান্ড হোটেল। গোটা কলকাতার উচ্চাভিলাষী হোটেলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ভ্রমণের অন্যতম হোটেলটি বর্তমানে অবরেয় গ্র্যান্ড নামেই পরিচিত। কলকাতার বুকে জওহরলাল নেহরু রোডের ওপর এর অবস্থান। তবে এর প্রাচীন নাম ছিল চৌরঙ্গী রোড। হোটেলটির মালিক হলেন অবরেয় হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস। এটি ব্রিটিশ যুগের মার্জিত ভবন এবং কলকাতায় একটি বিখ্যাত বিল্ডিং। গুজব হোক আর সত্যিই হোক জনপ্রিয় গ্র্যান্ড হোটেল ভূতুড়ে হোটেল। গুজব বলা হলেও বছরের পর বছর এই হোটেলে ভূতের আনাগোনা নিয়ে মানুষের আতঙ্ক আর কৌতূহলের কমতি নেই। রাত হলেই হোটেলের লবিতে ভূতুড়ে কান্ডকারখানা দেখার ঘটনা নেহাত কম নয়। এ ছাড়া ১৯৪০ সালের টেডি বেদাফোর নামের কিংবদন্তি যিনি পিয়ানো বাদক ছিলেন; ১৯৪৫ সালে তিনি বেড়াতে এসে কোনো এক অদ্ভুত কারণে কলেরায় মারা যান। আরেকবার হোটেলবয় রাতের আঁধারে হোটেলের লবিতে ক্লিনার ভূতের দেখা পান। এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেল সুইটের পাশের ঘর থেকে অচেনা নারীর কান্না ও মানুষের পদচারণার শব্দ শুনতে পাওয়ার কথাও শোনা যায়। কে বা কারা কক্ষের বাইরে ছোটাছুটি করে তা এখনো মানুষের কাছে রহস্যময়। এ রকম অসংখ্য ভৌতিক ঘটনা এখানকার নিত্যদিনের সঙ্গী। হোটেলে আগত অতিথিরা এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তেমন কোনো ক্লু খুঁজে পাননি। বরং এসব নেহাতই মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভয় উড়ে যায়নি। কারণ ভূতুড়ে কান্ড থেমে থাকেনি। পাশের ঘরে ফিসফাস আলাপ হওয়া, কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ দমকা বাতাস ঘরে ঢুকে পড়া, কোনো রকম নাড়াচাড়া ছাড়াই টেবিল থেকে গ্লাস মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো অদ্ভুত ঘটনা এতবারই ঘটেছে যে, এসবকে আর গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না!

সর্বশেষ খবর