রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ফোর্বস-এর চোখে ২০২৪ তালিকা

যেভাবে তারা বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেন

যেভাবে তারা বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেন

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্যানুসারে, গেল বছর মাত্র ছয়জন টাইকুন (অত্যন্ত ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি) ছিলেন; যারা ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ গড়েছিলেন। তবে চলতি বছর এই তালিকায় সংখ্যাটা ১৪ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।  যাদের মোট সম্পদের মূল্য ডলারে অন্তত ১২ ডিজিটে গিয়ে ঠেকেছে। আজ জানব তাদের ধনী হওয়ার গল্প...

 

ফোর্বসের শীর্ষ ধনী ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্যানুসারে, গত বছর মাত্র ছয়জন টাইকুন (অত্যন্ত ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি) শত বিলিয়ন ডলারের  বেশি সম্পদ গড়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছিলেন। তবে ২০২৪ সালে এই তালিকায় আরও নতুন আটজন যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ শত বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে জায়গা হওয়া ধনবানের সংখ্যা এখন ১৪ জন। শুধু তাদের মোট সম্পদের মূল্য ডলারে অন্তত ১২ ডিজিটে গিয়ে ঠেকেছে। শত বিলিয়ন (১০০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে, একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারের দিকে তাকাতে হবে। জিডিপি হলো একটি দেশে উৎপাদিত সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার সমষ্টি। অর্থাৎ বোঝাই যায় এই তালিকার একেকজন কোনো কোনো দেশের জিডিপির সমান বা তারও বেশি সম্পদ নিয়ে আছেন। শত বিলিয়ন ডলারের তালিকায় থাকা ১৪ জন ম্যাগনেটের অনেকের ব্যক্তিগত সম্পদ পানামা, উরুগুয়ে, কোস্টারিকা বা বলিভিয়ার মতো দেশের জিডিপিও ছাড়িয়ে গেছে। ফোর্বস জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে ২ হাজার ৭৮১ জনে দাঁড়াবে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৪১ জন বেশি এবং ২০২১ সালের আগের রেকর্ডের চেয়ে ২৬ জন বেশি। অভিজাতরা আগের চেয়ে বেশি ধনী হবে এবং তাদের কাছে ১৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ জমা হবে। শীর্ষ ধনীর তালিকায় মার্কিনিদের পর সবচেয়ে বেশি আছেন চীনারা। দেশের হিসাবে তালিকায় বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যার তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। ২০২৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, শত বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে সবার শীর্ষে রয়েছেন- ফ্রান্সের বার্নার্ড আর্নল্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন টেসলা ও স্পেস এক্সের কর্ণধার ইলন মাস্ক। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। পঞ্চম স্থানে মার্কিন ব্যবসায়ী ল্যারি এলিসন। ষষ্ঠ অবস্থানে ওয়ারেন বাফেট। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন। নবম ও দশম স্থানে যথাক্রমে রয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি এবং ইন্টারনেট উদ্যোক্তা ল্যারি পেজ। পরবর্তী তালিকায় রয়েছেন সের্গেই ব্রিন, মাইকেল ব্লুমবার্গ, আমানসিও ওর্তেগা এবং কার্লোস স্লিম।

 

১ - বার্নার্ড আর্নল্ট  [ সম্পদের পরিমাণ : ২২৩ বিলিয়ন ]

দেউলিয়া হওয়া কোম্পানি কিনে বিলিয়নিয়ার

টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। সম্পদের নিরিখে শীর্ষে থাকলেও অন্যান্য ধনকুবেরের মতো তিনি অতটা পরিচিত নন। অঢেল সম্পদের মালিক হলেও অনেকটা আড়ালেই থাকতে পছন্দ করেন তিনি। আর্নল্টের সম্পদ ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ২২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্বীকৃতি পান। তার বিলাসবহুল সমন্বিত ব্যবসা এলভিএমএইচের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। তিনি একাধারে লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর এবং সেফোরার মালিক। ১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের উত্তরে রুবেইক্সে জন্মগ্রহণ করেন আর্নল্ট। পড়াশোনা শেষে পারিবারিক ব্যবসায় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু হয় তার। ব্যবসায় ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে পারিবারিক নির্মাণসামগ্রীর কোম্পানি ফেরেট-স্যাভিনেলের চেয়ারম্যান হন তিনি। এর বছর ছয়েক পরে, আর্নল্ট ফরাসি সরকারের কাছ থেকে দেউলিয়া ঘোষিত টেক্সটাইল কোম্পানি বুসাক সেন্ট-ফ্রেস কিনে নেন। দেনায় জর্জরিত গ্রুপটি আর্নল্টের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে তীরে উঠতে শুরু করে এবং এক সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়। লুই ভুটন, ক্রিশ্চিয়ান ডয়ের, হাবলট, লে পার্সিয়ানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আর্নল্টের প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের অন্তর্ভুক্ত। শুধু ইউরোপ নয়, ১৯৯২ সালে চীনের বেইজিংয়ে লুই ভিটনের শোরুম খুলে এশিয়ার বৃহত্তম বাজারেও নিজের আধিপত্য জানান দেন ইউরোপের এই ধনকুবের। ব্যক্তিজীবনে বার্নার্ড আর্নল্ট দুবার বিয়ে করেছেন। তার পাঁচ সন্তান রয়েছে।

 

২ - ইলন মাস্ক   [ সম্পদের পরিমাণ : ১৯৫ বিলিয়ন ]

সবাই বলতেন পাগল, এখন তিনিই প্রযুক্তি বিশ্বের বাদশাহ

ইলন মাস্ক বেশ কয়েকবার ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী’ খেতাব জিতেছেন এবং বেশ কয়েকবার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়েছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাস্ক এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তার বয়স ১৮ হওয়ার আগেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। অনেক রকম কাজ করে তিনি প্রথমে অন্টারিওর কুইনস ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। এরপর যান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০০ সালে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠা করা অনলাইন ব্যাংক এক্সডটকম-এর সঙ্গে একই রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান একত্রকরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন পেপাল। ২০০২ সালে ইবে এটি ১৪০ কোটি ডলারে কিনে নেয়। ওই বছরেই তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে এল সেগান্ডোতে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। ২০০৪ সালে তিনি টেসলায় বিনিয়োগকারী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। মাস্ক ২০০৮ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী হন। দুই বছর পরে তিনি বাজারে কোম্পানির শেয়ার ছাড়েন। ২০২০-২১ সালে কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্ক শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন। তার স্পেসএক্স, টেসলা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স (সাবেক টুইটার) প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে।

 

৩- জেফ বেজোস [সম্পদ : ১৯৪ বিলিয়ন]

লোকে বলতেন, আর যাই হোক তার অনলাইন ব্যবসা হবে না

১৯৯৪ সালে বাড়ির গ্যারেজে তিনি অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে নিউইয়র্কে হেজফান্ড কোম্পানি ডি. ই. শ-তে কাজ করতেন। অ্যামাজনের শুরু অনলাইনে বই বেচার মাধ্যমে। কিন্তু লোকেরা তখন অনলাইন ব্যবসায় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতেন না। কেননা তখন খুব কম মানুষই অনলাইনে পণ্য কিনতেন। অনেকে তো বলে বসেন, এই লোককে দিয়ে আর যাই হোক- অনলাইন ব্যবসা হবে না। তিনি কোনো কিছুই পরোয়া করেননি। এরপর অ্যামাজন ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবসায় ঢোকে। পরে আসে সিনেমা এবং বিভিন্ন সিরিয়াল তৈরির ব্যবসা, যা দেখানো হয় অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে। শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ব্লু অরিজিন। বেজোস ২০১৭ সালে বিল গেটসকে সরিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হন। ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন। ২০১৯ সালে বেজোসের সঙ্গে স্ত্রী ম্যাককেনজির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর তাদের সম্পদ ভাগাভাগি হয়।

 

৪- মার্ক জাকারবার্গ [ সম্পদ : ১৭৭ বিলিয়ন ]

হার্ভার্ডে পড়াশোনা বাদ দিয়ে গড়ে তোলেন ফেসবুক

মার্ক জাকারবার্গের জন্য গেল বছর বেশ সংকটপূর্ণ ও জটিল ছিল। মেটার শেয়ারের মূল্য ২০২১ সালে তার সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে এক লাফে ৭৫ শতাংশ পড়ে যায়। তা সত্ত্বেও জাকারবার্গ তার স্থানে ছিলেন অটল। এর মধ্যে তিনি বেশ কিছু দূরদর্শী কাজে হাত দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো- মেটাভার্স। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও থ্রেডস অ্যাপ মেটার অন্তর্ভুক্ত। গত বছরে আবার এই শেয়ারের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭৭ বিলিয়ন ডলার।

জাকারবার্গের জন্ম ১৪ মে ১৯৮৪ সালে। তিনি একজন আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার। জাকারবার্গ এবং তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখনই পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রযুক্তির বিস্ময়ে ডুব দেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই জাকারবার্গ টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বছরের সেরা ব্যক্তিত্বরূপে নির্বাচিত হন।

 

৫ - ল্যারি এলিসন   [ সম্পদ : ১৪১ বিলিয়ন ]

পড়াশোনা শেষ না করেও শীর্ষ ধনী

মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকল করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন নিজের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ। ১৯৭৯ সালে এরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওরাকল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি ওরাকলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও (সিইও) ছিলেন। পরবর্তীতে ওরাকল বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি কিনে নেয়।

এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম। এটি তারা কেনে ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান। এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪ সালের ১৭ আগস্ট এই মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়স, আরবানা-শ্যাম্পেইন এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন কিন্তু কোনো ডিগ্রি নেননি।

 

৬ - ওয়ারেন বাফেট   [ সম্পদ : ১৩৩ বিলিয়ন ]

তিনি পৃথিবীর উদার ধনবান ব্যক্তি

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। জনহিতকর কার্যে দানের ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী একটি বড় নাম ওয়ারেন বাফেট। তিনি পরিচিত ‘ওরাকল অব ওমাহা’ বা ওমাহার দৈববক্তা হিসেবে। ওয়ারেন বাফেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন বিনিয়োগকারী।  তার বিনিয়োগকৃত কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। যাদের মালিকানায় আছে বেশ অনেক কোম্পানি। তন্মধ্যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গেইকো, ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ডিউরাসেল এবং রেস্তোরাঁ চেইন ডেইরি কুইন অন্যতম।

মার্কিন এক কংগ্রেস সদস্যপুত্র ছিলেন বাফেট। তার জীবনের প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে, আর প্রথমবারের মতো কর দেন ১৩ বছর বয়সে। বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে মিলে তিনি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গিভিং প্লেজ’। তারা কোটিপতিদের কাছে আহ্বান জানান, তারা যেন অন্ততপক্ষে তাদের সম্পদের অর্ধেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেন। বাফেট বলেছিলেন, তিনি তার সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করবেন। এখন পর্যন্ত গেটস ফাউন্ডেশন এবং তার নিজের বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৫ হাজার ১৫০ কোটি ডলার দামের শেয়ার দান করেছেন। যা তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে উদার ধনবানের মর্যাদা দিয়েছে।

 

৭ - বিল গেটস  [ ১২৮ বিলিয়ন ]

কম্পিউটার জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি

কিশোর বয়সেই গেটস কম্পিউটার প্রোগাম নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। গেটস দীর্ঘ ২৫ বছর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কোম্পানির পরিচালনা পর্যদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান ২০২০ সালে। তাঁর অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, যার একটি রিপাবলিক সার্ভিসেস।

এ ছাড়া আমেরিকায় যাদের হাতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে, তিনি তাদের একজন। ফোর্বস গেটসকে বিলিয়নিয়ার হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৭ সালে। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১৯৯৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৩ বছর সময়ের মধ্যে ১৮ বার বিশ্বের শীর্ষধনী  ছিলেন। তার বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও- প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা, ২০২১ সালে এক ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তার অনুদানের কারণে গেটস তালিকা থেকে নেমে গেছেন।

 

৮ - স্টিভ বলমার  [ ১২১ বিলিয়ন ]

সফলভাবে মাইক্রোসফট পরিচালনাকারী তিনি

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন বলমার। এমবিএ কোর্স থেকে ঝরে পড়ার পর তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ৩০ নম্বর কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ডট-কম সংকটের পর মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বলমার ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ডট-কম সংকট হলো নব্বই দশকের শেষে প্রযুক্তির স্টক হঠাৎ বাড়তে শুরু করে, তখন অনেকে তাতে বিনিয়োগ করে। পরে এই স্টক হঠাৎ পড়েও যায়।

যার প্রভাবে অনেক ডট-কম স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের ব্যবসার মূলধন খুইয়ে ফেলে। অনেকেই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যায়। স্টিভ বলমার সফলভাবে মাইক্রোসফট পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১২১ বিলিয়ন ডলার। মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টিম কিনে নিয়েছিলেন। যে কোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড। আজ এটি এনবিএর পঞ্চম সবচেয়ে মূল্যবান দল।

 

৯ - মুকেশ আম্বানি  [ ১১৬ বিলিয়ন ]

সম্পদে ভারতের সবাইকে পেছনে ফেলেছেন তিনি

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। যিনি সম্পদের নিরিখে ভারতের সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৬ বিলিয়র মার্কিন ডলার। তার ব্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিকম ও খুচরা পণ্য বিক্রয় খাত। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় রয়েছে নেটওয়ার্ক ১৮, ফোর্বস মিডিয়ার লাইসেন্স এবং নিউইয়র্কের ম্যান্ডারিন অরিয়েন্টাল হোটেল।

আম্বানির সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার সমন্বিত কোম্পানি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে। কোম্পানিটি পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিযোগাযোগ, রিটেল এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোয় বিনিয়োগ করেছে। প্রায় ১৪ বছর তিনি ভারতের শীর্ষ ধনী ছিলেন। ২০২২ সালে গৌতম আদানি তাকে টপকে ভারতের শীর্ষ ধনী হন। তবে এক বছর পরে ২০২৩ সালে তিনি আবারও ভারতের শীর্ষ ধনীর মুকুট ফেরত পান। বেশ কয়েক বছর আম্বানি ফোর্বসের পৃথিবীর সেরা ১০ ধনীর তালিকায় ছিলেন।

 

১০ - ল্যারি পেজ  [ ১১৪ বিলিয়ন ]

অ্যালফাবেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা আজকের তালিকায়ও সেরা

দশম অবস্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড সদস্য ল্যারি পেজ। সের্গেই ব্রিন এবং তিনি এই প্রযুক্তি জায়ান্টের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়ে গেছেন। ১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে জন্মগ্রহণ করেন লরেন্স অ্যাডওয়ার্ড পেজ যিনি ল্যারি পেজ নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন বাবা কার্ল ভিক্টর পেজ এবং মা গ্লোরিয়া পেজের দ্বিতীয় সন্তান।

বাবা ছিলেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অধ্যাপক। বড় কোম্পানির সিইওরা যেখানে সুপারস্টারদের মতো চলাফেরা করেন, ল্যারি পেজ সেখানে ব্যতিক্রম। তাই তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সবার থেকে দূরেই রাখেন। ২০০৭ সালে বিয়ে করেন রিসার্চ সায়েন্টিস্ট লুসিন্ডা সাউথওর্থকে। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে পেজ থাকেন পালো আল্টোতে।

সর্বশেষ খবর