বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা রোধে এসব খাবারকে ‘না’ বলুন

সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা রোধে এসব খাবারকে ‘না’ বলুন

সূক্ষ্ম রেখা বা বলিরেখা সাধারণত বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ। এর প্রভাবমুক্ত থাকতে কটি কৌশল রপ্তই যথেষ্ট। কসমোলজিস্টরা এ জন্য প্রসাধনীর ব্যবহার, খাবারের ধরন, এমনকি ত্বক পরিচর্যার অনুশীলন সম্পর্কে বাতলে দেন। যা ত্বকে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ত্বককে সূক্ষ্ম রেখা বা বলিরেখামুক্ত রাখতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন...

 

১. সয়া সস

‘লবণ স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ’, এটা  কারও অজানা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণ শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এটি ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে, শরীরের পানি বের করে দেয়। ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়, বলিরেখা দেখা দেয়। সয়া সস- প্রথম সারির নোনতা খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতি ১০০ গ্রাম সয়া সসে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম। যদিও এটি খাবারের স্বাদ বাড়ায়, তবুও সয়া সস পরিমিত পরিমাণেই খাওয়া উচিত।

 

২. ইএফএ সমৃদ্ধ খাবার

খুব কম লোকই জানেন ইএফএ সমৃদ্ধ খাবার কী। এগুলো হলো- অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টস (AGEs), যা শরীরের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত রাসায়নিক যৌগ। কিন্তু যখন খাবার উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয় তখন এর উপস্থিতি বাড়ে। ফলে দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, প্রদাহ দেখা দেয়। এর কারণে অনেক ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার রোগও হতে পারে। যা ধীরে ধীরে বার্ধক্যের সৃষ্টি করে। ভাজাপোড়া, ভাজা মাংস, ভাজা শাকসবজি ইত্যাদিতে বেশি ইএফএ (EFA) থাকে। তাপমাত্রা ২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেখে রান্না করুন।

 

৩. ভাজা, চিনিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার   

ভাজা, চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার বিকল্প নেই, যদি আপনি ত্বককে সূক্ষ্ম রেখা বা বলিরেখামুক্ত রাখতে চান।

♦  উচ্চ তাপমাত্রায় তেলে ভাজা খাবার ফ্রি র‌্যাডিকেল মুক্ত রাখে, যা কোষের পুনর্নবীকরণ ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাকে প্রভাবিত করে।

♦  অনুরূপভাবে চিনি AGE-র গ্লাইকেশনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। উচ্চ গ্লাইসেমিকযুক্ত খাবার যেমন- মিষ্টি বা সাদা রুটি, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ গ্লুকোজ কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ফাইবারের চারপাশে আবদ্ধ থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায় এবং ভেঙে যায়, ফলে ত্বকে বলিরেখা তৈরি করে।

♦  প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্বকের জন্য খুবই খারাপ। কারণ সেগুলো সালফাইট এবং প্রিজারভেটিভ দিয়ে প্যাক করা হয়। তন্মধ্যে প্রিজারভেটিভ প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে, যা কোলাজেন উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। তাই বার্ধক্যকে রুখে দিতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি, অ-চর্বিযুক্ত খাদ্যের পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

৪. মার্জারিন

মাখনের বিকল্প খাবারটি হাইড্রোজেনেটেড তেল দিয়ে তৈরি, যা ‘ট্রান্স ফ্যাট’ (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড)-এর প্রধান উৎস। বলা হয়, এটি এপিডার্মিসকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি আরও সংবেদনশীল, যা ত্বকের ইলাস্টিন এবং কোলাজেনের জন্য ক্ষতিকারক। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা ত্বকের বার্ধক্যের প্রথম লক্ষণগুলোর অন্যতম।

 

৫. দুধ

দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা অকাল বার্ধক্যের কারণ। দুধে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত গ্রোথ হরমোন, বিশেষ করে গরুর দুধ শরীরের ওএঋ১-এর মাত্রা বাড়াতে পারে। যা প্রদাহ বাড়ায়, স্বাভাবিক সেলুলার নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন করে, কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের ক্ষতি করে। দুর্ভাগ্যবশত এটি এপিডার্মিস ত্বরান্বিত করে বার্ধক্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে, বলিরেখার উপস্থিতি বাড়ায় এবং ত্বকের দৃঢ়তা হ্রাস করে।

 

৬. সাদা পাস্তা

সাদা পাস্তা কার্বোহাইড্রেট হিসেবে শরীরে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বলিরেখা তৈরি করতে পারে। সহজভাবে বললে, কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবারে স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির (ভিটামিন, খনিজ) অভাব থাকতে পারে, যা বলিরেখার চেহারা বাড়িয়ে দেয়। এটি ভারসাম্যহীন খাদ্য- যা ত্বককে নিস্তেজ, শুষ্ক, কম স্থিতিস্থাপক করে। সুতরাং সাদা পাস্তা খাওয়া কমিয়ে দিন।

 

৭. কোমল পানীয়

কোমল পানীয় যেমন- সোডা বা এনার্জি ড্রিংকসে থাকা উচ্চ চিনি বলিরেখার অন্যতম কারণ। এটি কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের মতো প্রয়োজনীয় উপাদানের ক্ষতি তরে। প্রোটিনের গ্লাইকেশন বাড়িয়ে দেয়। এতে উপস্থিত ফসফরিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে, ত্বকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কিছু কোমল পানীয়তে উপস্থিত ক্যাফেইন ত্বককে ডিহাইড্রেট করে, সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখার উপস্থিতি বাড়ায়। সর্বোপরি, এই পানীয় সেবনে অকালে বলিরেখা তৈরি করতে পারে।

–লেখা : সাদিয়া সারা

সর্বশেষ খবর