সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখা বাংলাদেশিরা

এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখা বাংলাদেশিরা

মুসা ইব্রাহিম

 

২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। মুসার এভারেস্ট বিজয়ের সহঅভিযাত্রী হিসেবে ছিলেন নেপালের লাল বাহাদুর জিরেল। সেদিন সকাল থেকেই গুঞ্জন ওঠে মুসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন। সেদিন নেপালের মুক্তিনাথ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোমল আরিয়াল বলেন, তিব্বত অংশ থেকে মুসা ইব্রাহীমের ট্যুর পরিকল্পনা করেছে হিমালয়ান গাইড। সংস্থাটির কর্মকর্তা ঈশ্বরী তিব্বত অংশের বেসক্যাম্প থেকে স্যাটেলাইট ফোনে জানতে পারেন, মুসা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন। মুসা ইব্রাহিমের হাত ধরেই পর্বতবিজয়ী দেশের তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের নাম। পর্বতবিজয়ী মুসা ইব্রাহীমের জন্ম ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাট জেলার মোগলহাটে। তিনি ঠাকুরগাঁও চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।

 

 

এম এ মুহিত

মোহাম্মদ আবদুল মুহিত সবার কাছে পর্বতজয়ী এম এ মুহিত নামে পরিচিত। তিনি ২০১১ সালের ২১ মে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেসক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিংয়ে অংশ নেন। এরপর ভারতের দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন সময় হিমালয়ের চুলু ওয়েস্ট (মে ২০০৭), মেরা (সেপ্টেম্বর ২০০৭), বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলুর (মে ২০০৮), সিংগু ও লবুজে শৃঙ্গে আরোহণ করেন তিনি। এভারেস্ট জয়ের আগে মুহিত ২০০৯ সালে এভারেস্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চো ওয়ো (৮,২০১ মিটার) জয় করেন। এছাড়া তিনি দুইবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিনডংয়ে আরোহণ করেছেন। ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরে তার জন্ম।

 

নিশাত মজুমদার

২০১২ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন নিশাত মজুমদার। এভারেস্টে ওঠার জনপ্রিয় পথ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে নেপালের আর দ্বিতীয়টি হলো তিব্বতের দিক দিয়ে। নেপালের দিকটা বেশ বিখ্যাত। এই পথ ধরেই তেনজিং ও হিলারি উঠেছিলেন। নিশাত মজুমদাররাও নেপালের দিক থেকে যাত্রা শুরু করে। আট দিন ট্র্যাকিং করে বেস ক্যাম্পে পৌঁছেন তারা। তারপর এক এক করে বিভিন্ন ক্যাম্প পার হয়ে ১৯ মে শনিবার নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি ২৯ হাজার ২৯ ফুট (৮,৮৪৮ মিটার) উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেন।  ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের মেরা পর্বতশৃঙ্গ (২১ হাজার ৮৩০ ফুট) জয় করেন। এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে পরের বছরের মে মাসে হিমালয়ের সিঙ্গুচুলি পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ৩২৮ ফুট) ওঠেন। নিশাত মজুমদারের জন্ম ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে। তিনি ঢাকার ফার্মগেটের বটমূলী হোম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন।

 

ওয়াসফিয়া নাজরীন

ওয়াসফিয়া নাজরীন দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। ২০১২ সালের ২৬ মে শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। এছাড়া সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করা প্রথম বাংলাদেশির খেতাবও তারই দখলে। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে সাতটি পর্বত জয়ের রেকর্ড করেন। ২০১১ সালে তিনি সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। সেভেন সামিটের অংশ হিসেবে ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড (স্থানীয় নাম পুনাক জায়া, ১৬ হাজার ২৪ ফুট উচ্চতা) চূড়া জয় করেন। এছাড়া ২০২২ সালের ২২ জুলাই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কে২-ও জয় করেন। কে-টু মাউন্ট এভারেস্ট থেকে প্রায় ৮০০ ফুট নিচে কিন্তু খুব খাড়া হওয়ার জন্য এতে আরোহণ করা এভারেস্টের থেকেও কঠিন। খুব কম মানুষই সফলভাবে এ চূড়ায় পৌঁছতে পেরেছে।

 

খালেদ হোসেন
এভারেস্টজয়ী খালেদ হোসেনকে অনেকে চেনেন সজল খালেদ নামে। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মৃত্যুবরণকারী প্রথম বাংলাদেশি তিনি। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট অভিযানে বের হন তিনি। নেপালের সাউথ ফেস দিয়ে ২০ মে সকাল আনুমানিক ১০টায় এভারেস্ট জয় করেন। এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করে নেমে আসার পথে সাউথ সামিটে (উচ্চতা প্রায় ২৮,৭৫০ ফুট) পৌঁছার পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থানকালে মৃত্যু হয় তাঁর। সে সময় নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাস জানায়, ‘খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে বিকালে এই পর্বতারোহী মারা যান। ওই দলে আটজন সদস্য ছিল।’ শিক্ষাজীবনে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক এবং ফিল্ম স্টাডিজে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। খালেদ এর আগে সিকিমের ফ্রে পর্বত (২০০৬), নেপালের মাকালু (২০০৯), হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক (২০১০), অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সিংগুচুলি পর্বত (২০১১) জয় করেন।

 

বাবর আলী

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন বাবর আলী। রবিবার ১৯ মে ২০২৪ বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেন এ অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক। এ বছর ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন চট্টগ্রামের বাবর আলী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। সেখানে অবস্থান করেন সপ্তাহখানেক। ট্রেকিং পর্ব শেষ করে পৌঁছেন এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হয় সেখান থেকে। পর্বতের চূড়ায় উঠতে সময় লাগে প্রায় দুই মাসের মতো। পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গে সফলভাবে আরোহণ করে সেখান থেকে নেমে তিনি লোৎসে পর্বত আরোহণের পথে থাকার খবর মিলেছে গতকাল। ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এ জন্য একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করেছেন বাবর। ১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে তার যাত্রা শুরু হয় চূড়া অভিমুখে। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে যান ক্যাম্প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠে যান ক্যাম্প ৩ এবং ১৯ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’। ১৯ মে ভোরের আলোয় ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা। বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন। বয়স মাত্র ৩৩ বছর। লেখাপড়া শেষে চিকিৎসা পেশা শুরু করেছিলেন তিনি। ঘোরাঘুরির আগ্রহ ছিল তার। তাই চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ভ্রমণে মন দেন। ২০১৯ সালের পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর