বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশে দেশে অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট

তানভীর আহমেদ

দেশে দেশে অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেস্টুরেন্ট

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেস্টুরেন্টটি রয়েছে ইতালিতে। ইতালিতে ভিন্নধারার এই রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে মাত্র দুজন খেতে পারেন। এটি এতটাই ছোট পরিসরের যে, একই সময়ে দুজনের বেশি গ্রাহকসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রেস্টুরেন্টটির নাম ছড়িয়েছে শুধু দুজনের রেস্টুরেন্ট হিসেবে। আর তাই এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট হোটেল। ইতালির বেকনে অবস্থিত হোটেলটির নাম স্থানীয় ভাষায় ‘সলো পার দো’। এতে খাবার খেতে হলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। এতে একটি টেবিল ও দুটি চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুতরাং একই সময়ে দুজনের বেশি গ্রাহকের খাওয়া-দাওয়া করা সম্ভব নয়। সেখানে যেতে হলে আগে থেকেই ই-মেইল করে ও ফি দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। রেস্টুরেন্টটি আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। সেখানে প্রতিটি খাবারের আইটেমে রয়েছে বিশেষত্ব। বিশেষ করে হার্টের আকৃতির বিশেষ এক ধরনের চকোলেট রয়েছে, যা গ্রাহকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। মালিক রেমো দ্য ক্লডিও নিজেই গ্রাহকদের অভ্যর্থনা জানান ও সেবা দিয়ে থাকেন।  সেখানে যেতে হলে প্রতিজনকে ২৫০ ইউরো খরচ করতে হবে। তবে কেউ যদি মদ ও শ্যাম্পেইন সেবা নিতে চান তবে তাকে তার জন্য আলাদা খরচ গুনতে হবে।

 

অদ্ভুত গুহা রেস্টুরেন্ট

অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট বানাতে গিয়ে গুহা রেস্টুরেন্টের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় আফ্রিকায়। আফ্রিকার দক্ষিণ মোম্বাসার ডায়ানি সমুদ্রসৈকতে আলিবাবার গুহা রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। গুহাটি পাঁচ লক্ষাধিক বছর আগের বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সবটুকু গুহাই প্রবাল চুনাপাথরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করাই ছিল। পরে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এর আকার-আকৃতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছিল। গুহা রেস্তোরাঁর ইচ্ছা থেকে এখানে প্রবেশের কমপ্লেক্স মাকুতি পামগাছের শাখায় তৈরি ছাদে আবৃত যা একটি পামন্ডট্রি ধরে রেখেছে। গুহা রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকা আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। এই বিশেষত্বের কারণে আপনি যা খেতে চান সেটার তালিকা দিয়ে রাখতে হবে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে। এই রেস্টুরেন্টের পরিবেশ এতটাই গুমোট, এখানে গরম খাবারের পরিবর্তে ঠান্ডা খাবারের জনপ্রিয়তাই বেশি।

 

পানির নিচে রেস্টুরেন্ট

মাটির ওপর বিচিত্র সব রেস্টুরেন্টই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে মালদ্বীপে। পোলিশ আর্কিটেকচারাল এবং ডিপ-সি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ডিপ ওশেন টেকনোলজি এই রেস্টুরেন্টের প্রাথমিক কাজ করেছিল। তবে পানির নিচে রেস্টুরেন্ট এটাই প্রথম নয়। এই রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা সবকিছুকেই যেন ছাড়িয়ে যায়। মালদ্বীপে নির্মিত রেস্টুরেন্টটি আন্ডার ওয়াটার হোটেলের ধারণাটাকেই পাল্টে দিয়েছে। স্পেসশিপ আকৃতির এই রেস্টুরেন্ট এখনো চালু না হলেও আলোচিত সারা দুনিয়াতেই। প্রাথমিক নির্মাণ কাজে অনেকটা ফ্লাইং সসার বা ইউএফও আকৃতির এই রেস্টুরেন্ট সবাইকে আকর্ষণ করছে। বিলাসবহুল এই রেস্টুরেন্টটি হোটেল হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। দুটি বিশাল ডিস্ক আকৃতির লাউঞ্জ নিয়ে হোটেলের সুবিধাগুলোও যোগ করা হয়েছে। একটি পানি থেকে সাত মিটার ওপরে পাঁচটি পিলারের ওপরে অবস্থিত। গ্লাস টানেল দিয়ে পানির তলদেশে অন্যটিতে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

 

গাছের মাথায় ঝুলছে

বিচিত্র রেস্টুরেন্টের খোঁজ করলে জাপানের নাহা জারবার ডিনার রেস্টুরেন্টের নামটি সবার আগেই আসে। গাছের মাথায় যে রেস্টুরেন্ট ঝুলতে পারে সেটা হয়তো দেখে অনেকেই চমকে উঠবেন। বাস্তবেই তাই, শহরের সেরা আকর্ষণে পরিণত হয়েছে এই গাছের ওপর রেস্টুরেন্টটি। এটি যে গঠনগত দিক থেকেই চমকে দেওয়ার মতো তাই শুধু নয়, খাবার পরিবেশনায়ও রয়েছে চমক। একটি বুড়ো গাছের বেড়ে ওঠা শক্ত শাখাগুলোর ওপর বানানো এই রেস্টুরেন্ট মাটি থেকে প্রায় ২০ ফুট ওপরে। রেস্টুরেন্টটির নামকরণেই পুরো এলাকাকেই এখন ‘বানায়ান টাউন’ বলে চেনে সবাই। এই অসাধারণ আকৃতির রেস্টুরেন্টটিকে বলা হয় জাপানের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব রেস্টুরেন্ট। সারা বছরই ভিড় লেগে থাকা এই রেস্টুরেন্টে খাবারে খরচ খুবই কম। রেস্টুরেন্টটি শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি নয়। আসলে গাছের সঙ্গে মানুষের সেতুবন্ধ জুড়ে দিতেই রেস্টুরেন্টটির আসল উদ্দেশ্য। এত উঁচুতে ওঠার কী ব্যবস্থা আছে- যারা এমনটি ভাবেন তারা অবশ্য আরেকটি চমকের মধ্যেই পড়েন। কারণ অনেকেই ভেবে থাকেন এটা সত্যিকারের বটগাছ। কিন্তু তা নয়। বেশ পুরনো কাঠের ভিত দিয়ে দাঁড় করানো এই রেস্টুরেন্টটির পেছনের দিকে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়ে ওঠাও বেশ রোমাঞ্চকর। কারণ সিঁড়িগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যেন সেটা বেয়ে আপনি আসলে গাছের পেটের ভিতরেই ঢুকছেন বলে মনে হবে। কখনো ঘুটঘুটে অন্ধকারে পৌঁছে মনে হবে গাছের ভিতরের সার কাঠের ঘ্রাণে পোকামাকড়ের ঘরবসতিতে এসে পড়েছেন। তবে গাছের পেট থেকে বের হয়ে এলেই ওপরে ওঠার পথটি দেখা যাবে। সেখান থেকে সোজা গাছের মাথায় চড়লেই রেস্টুরেন্ট। এর বিশাল জানালা দিয়ে স্বচ্ছ আর পরিষ্কার বাতাস এলে যে লোভনীয় পরিবেশ তৈরি করে সেটা বিলাসবহুল অনেক রেস্টুরেন্টেই পাওয়া যাবে না। প্রকৃতির এতটা কাছে এসে পেট ভরে খাওয়ার পাশাপাশি মনটাও যে ভরবে সেটা আশা করাই যায়। তবে ভিতরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনও কম চোখ ধাঁধানো নয়। প্রথমবার যারা এই রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন তারা দ্বিতীয়বার যাওয়ার জন্যই এই চমকগুলোর ব্যবস্থা। তবে ডিনার শেষে অনেকে মজা করে সিঁড়ি বেয়ে নামার বদলে গাছ বেয়েই নামেন। কারণটা খুব সহজ, এত সুন্দর পরিবেশে এসে গাছে চড়া উপভোগ না করে ঘরে ফেরা নয়।

 

সবচেয়ে উঁচুতে ‘অ্যাটমোস্ফিয়ার’

দুবাইয়ের অ্যাটমোস্ফিয়ার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেস্টুরেন্টের খেতাব পেয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় নির্মিত রেস্টুরেন্টটি দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফার ১২২তম তলায়। বোঝাই যাচ্ছে, এত উঁচুতে রেস্টুরেন্টের ‘ভিউ অব সিনারিও’ কতটা দৃষ্টিনন্দন। মাটি থেকে ৪৪২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটির আগে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় অবস্থিত রেস্টুরেন্ট ছিল কানাডার টরন্টোতে। কানাডার সিএন টাওয়ারের ঘূর্ণায়মাণ সেই রেস্টুরেন্টটিকে হারিয়ে দিয়েছে অ্যাটমোস্ফিয়ার। ৮২৮ মিটার উচ্চতার বুর্জ আল খলিফার মূল টাওয়ারের করপোরেট স্যুট লবি থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য নিজস্ব লিফ্ট রয়েছে। এর লাউঞ্জে একসঙ্গে ২১০ জন লোক বসতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে রেস্টুরেন্ট থেকে আমিরাতের চমৎকার আকাশ দেখার অভাবনীয় সুযোগ। তবে এত উঁচুতে উঠে যদি পকেট ভারী না থাকে তাহলে কিছু না খেয়েই ফিরতে হবে মানে এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। ধনীদের জন্য লাঞ্চ আর ডিনারের প্রতিটি সেট যদি খেতেই হয় তাহলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য তাকে গুনতে হবে কমপক্ষে মাথাপিছু ১৭৮ মার্কিন ডলার। এখানে শুধু বৈকালিক চা পানের বিল আসবে ১০০ ডলারের কাছাকাছি। লাউঞ্জ এরিয়াতে হালকা নাশতা এবং ড্রিংকসের জন্য খরচ করতে হবে মাথাপিছু ৫৪.৪৫ ডলার। চারদিক কাচের দেয়ালে ঘেরা রেস্টুরেন্টটি এক হাজার ৩০ বর্গমিটার এলাকা দখল করে আছে। তবে এই রেস্টুরেন্টের আরেকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে এতটা জনপ্রিয় হয়নি। প্রিয় মানুষকে বিয়ের প্রপোজাল দেওয়ার জন্য খুব জনপ্রিয় এই রেস্টুরেন্ট। অনেক খ্যাতনামা জুটির বিয়ের ও প্রেমের প্রপোজাল এসেছে এই রেস্টুরেন্টে খেতে এসেই। তবে সবকিছুর পরও পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেস্টুরেন্টের খ্যাতিই সবাইকে ছাড়িয়ে যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর