রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্ধর্ষ যোদ্ধার দল

আবদুল কাদের

দুর্ধর্ষ যোদ্ধার দল

প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীতে চলে আসছে যুদ্ধবিগ্রহ। এক জাতি অন্য জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে রাজ্য বা সাম্রাজ্য দখলে হরহামেশাই ব্যস্ত থাকত। এই যোদ্ধা দলের ইতিহাস অনেক প্রাচীন সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করা। সভ্যতার কালক্রমে কত জাতির সাম্র্রাজ্য ধ্বংস হলো আর কত যে জাতির উদ্ভব ঘটল তার কোনো হিসাব নেই। প্রাচীনকাল থেকেই ভালোমন্দের লড়াইয়ে যুদ্ধের প্রচলন। কিন্তু কিছু কিছু জাতি বা জনগোষ্ঠী ছিল যারা তাদের মনোবল আর যুদ্ধের কলাকৌশলের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করত। যুদ্ধের ময়দানে এরা ছিল নির্ভীক ও বলীয়ান...

 

আর্যটেস ভয়ংকর যোদ্ধাশিবির

যুদ্ধের ইতিহাসে অনেক দেশের অনেক জাতিই আছে, যারা অনেক ভয়ানক যোদ্ধাদের তালিকায় রয়েছে। তেমনি আর্যটেস যোদ্ধারা ভয়ংকর যোদ্ধাশিবির হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। আর্যটেস যোদ্ধারা অনেক প্রাচীনকালের একটি শক্তিশালী জাতি যারা যুদ্ধের ময়দানে অত্যন্ত নির্মমতার জন্য ছিল বিখ্যাত। আর্যটেসরা ছিল বিখ্যাত সৈন্যদল এবং যুদ্ধের ময়দানে তারা ছিল অন্যসব জাতির যোদ্ধাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও কঠোর মনোবলের। তারা সাধারণত ঈগল বা জাগুয়ার মতো পোশাক পরিধান করত। তাদের প্রধান অস্ত্র ছিল তীর-ধনুক-বর্শার মতো আদিম অস্ত্র কিন্তু তারা এসব সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র খুবই কার্যকারিতার সঙ্গে ব্যবহার করত। শত্রু আসার খবর পাওয়া মাত্র সময় নষ্ট করত না। খুব দ্রুত তারা তৈরি হয়ে যেত এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তারা কখনোই পেছনের দিকে ফিরে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করত না। ‘শর্ন ওনিস’ নামের এক বীরযোদ্ধা ছিল তাদের সেরা যোদ্ধা। পরবর্তীতে তারা স্পেনীয় শক্তির কাছে পরাজিত হয় কিন্তু তার মূল কারণ ছিল স্পেনীয়রা অনেক আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করে। তারা অনেক আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত স্প্যানিশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হয় ঠিকই কিন্তু আর্যটেসরা তাদের কিছু বীর যোদ্ধার জন্যই তাদের সাম্রাজ্য নিয়ে বহুকাল টিকে ছিল।

 

মাওরি যোদ্ধারা অত্যন্ত জঘন্য

মাওরি যোদ্ধারা নিউজিল্যান্ডের প্রাচীন আদিবাসী। এরা ছিল অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। এরা মূলত নিউজিল্যান্ডের পলিনেশিয়ান আদিবাসী। যেহেতু মাওরিরা বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল; তাই তারা একটি অনন্য যোদ্ধা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তাদের নিজস্ব ভাষা এবং পুরাণও রয়েছে। মাওরি যোদ্ধারা তাদের সারা শরীরে ট্যাটু আঁকত; যা দেখতেও ছিল বেশ বড় এবং ভয়ানক। এরা বেশ আক্রমণাত্মক। সাধারণত এক শর কম যোদ্ধা (‘হাপু’ বলা হতো) দলে আক্রমণ করত। শত্রুকে অতর্কিত আক্রমণের পাশাপাশি অবাক করা উপাদান ব্যবহার করত। এরা তাদের দেশে অনুপ্রবেশকারীদেরও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করত না। এই হত্যাযজ্ঞ তারা চালায় প্রায় ১৮০০ শতক পর্যন্ত। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হতো না, এরা এতটাই জঘন্য প্রকৃতির ছিল যে, অনুপ্রবেশকারীদের হত্যা করে তাদের মাংস দিয়ে ভোজন উৎসবে মেতে উঠত। সর্বপ্রথম তারা ১৮০৯ সালে আসা প্রথম ইউরোপের জাহাজে আক্রমণ করে। সে সময় তারা প্রায় ৬৬ জন নাবিককে হত্যা করেছিল।

 

মঙ্গোল যোদ্ধারা অত্যন্ত নির্মম ও বর্বর

১২০৬ থেকে ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দ; মানবসভ্যতা জঘন্যতম এক বর্বর যোদ্ধার দল দেখেছিল। নাম মঙ্গোলিয়ান। চেঙ্গিস খানের অধীনস্থ এই মঙ্গোল সাম্রাজ্য এশিয়া এবং ইউরোপের কিছু অংশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পৃথিবীর বুকে এই জাতি সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। ইতিহাসবিদদের ভাষ্য, মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধারা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম বর্বর আর অসভ্য জাতি হিসেবে বিবেচিত। জাতি হিসেবে এরা ভবঘুরে ছিল। কিন্তু তারা অতীতে এত শক্তিশালীও ছিল না, যত দিন না চেঙ্গিস খান তাদের নেতৃত্বে এসেছিলেন। ‘চেঙ্গিস খান’ ছিলেন তাদের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার। যিনি ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে যুদ্ধের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। মঙ্গোলরা ভয়ংকর যোদ্ধা ছিল। তারা এতটাই নির্মম ছিল যে, তারা প্রতিপক্ষের প্রতি কোনো দয়া দেখাত না। এদের ছেলেরা বয়স ১৫ পেরোলেই বাধ্যতামূলক সমর প্রশিক্ষণ নিত। তারা একতার জন্য সেরা, রণক্ষেত্রে অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। মঙ্গোল যোদ্ধারা ঘোড়ার পিঠে চড়েই তীর আর ধনুকের ব্যবহার করতে পারত। এই যোদ্ধারা ধারালো বল্লমের মাধ্যমে তীর-ধনুক চিরে ফেলতে পারত।

 

নাইট যোদ্ধারা মূলত ব্রিটিশ যোদ্ধা

নাইটরা ছিল মধ্যযুগের সৈন্যদল। ভারী সাঁজোয়া যোদ্ধার এই দলের সদস্যরা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে রণাঙ্গণে দাপিয়ে বেড়াত। কেবল ধনী এবং অভিজাত পরিবারের সদস্যরাই নাইট দলে নিয়োগ পেত। তারা সভ্য আচরণবিধি অনুসরণ করত। নাইটরা যুদ্ধে তাদের প্রাথমিক অস্ত্র হিসেবে তলোয়ার ব্যবহার করত। ‘নাইট’ যোদ্ধারা মূলত ব্রিটিশ যোদ্ধা। এদের সবচেয়ে দক্ষতাসম্পন্ন অশ্বারোহী যোদ্ধা বলে মানা হয়। যুদ্ধের পোশাক হিসেবে তারা সারা শরীরে বর্ম ব্যবহার করত। ইতিহাসে এরা ছিল ধনী, কঠিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সম্মানিত যোদ্ধা। এই দলের যোদ্ধারা তাদের যুদ্ধের মিশন সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহার করত ঘোড়া, ফুলবডি আর্মার ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধ করে এই নাইটদের হত্যা করা ছিল সবচেয়ে কঠিন। কারণ তাদের সম্পূর্ণ শরীর ছিল বর্ম দিয়ে ঢাকা। এই নাইট যোদ্ধাদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এক কথায় তাদের সারা জীবনই কাটত প্রশিক্ষণে। অল্প বয়স থেকেই নাইট সৈন্য হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিত। তারা রাজার নির্দেশে স্পাই হিসেবেও কাজ করত, রাজার নিরাপত্তার দিকটাও তারাই দেখত।

 

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছিল রোমান সাম্রাজ্য

রোমান সাম্রাজ্য হলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। এক সময়ে রোমান সম্প্রদায় পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ শাসন করত। এমনকি ঈসা (আ.)-এর জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই রোমান সাম্রাজ্য। রোমান সৈন্য বাহিনীর মূলভিত্তি হলো অতুলনীয় নেতৃত্বদানের দৃঢ়তা, তারা ছিল বর্ম আর ঢালে আবৃত যা প্রাচীন গ্রিক অস্ত্রের মধ্যে ছিল অনেক উন্নত। যদিও নাকি বর্তমানে এই রোমান সাম্রাজ্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে পশ্চিম ইউরোপে রোমানরা এখনো টিকে আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে এই রোমান সাম্রাজ্যের অনেক নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে- ‘গণতন্ত্র’ বা ‘সংসদ’ ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছিল এই রোমান সাম্রাজ্য থেকেই। এরা ছিল ঢালের সঙ্গে তলোয়ার-বর্শায় দক্ষ যোদ্ধার দল। রোমান সৈনিকরা ছিল অনেক বিত্তশালী ও তারা তাদের যুদ্ধের পোশাক তৈরি করত অস্ত্র ও বর্ম বেষ্টিত করে। তারা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সশস্ত্র এবং উন্নত রণকৌশল তাদের সাম্রাজ্য বা রাজত্বকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। রোমান সাম্রাজ্যের নেতৃত্বের মধ্যে যে দৃঢ়তা ছিল তা মূলত অনেকটাই রোমান সৈন্যদের জন্যই। রোমানরা ঢাল-তলোয়ার, বর্শার মাধ্যমে অনায়াসেই শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে পারত। অস্ত্রবিদ্যার কৌশল, তাদের সাম্রাজ্য অতিক্রম করতে পাহাড় সমান বাধা অতিক্রম করতে হতো।

 

শাওলিন যোদ্ধাদের ইতিহাস পুরনো

শাওলিন যোদ্ধাদের ইতিহাস প্রাচীন ইতিহাসের মতোই অনেক পুরনো। তারাই এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মার্শাল আর্টের প্রচলন করেন। এর আবার রয়েছে একটি দারুণ ইতিহাস যা অনেকেরই অজানা। আনুমানিক ৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ থেকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী চীনে যান রাজার সঙ্গে দেখা করার জন্য। চীনা ভাষায় সেই সন্ন্যাসীর নাম ছিল ট্যামো। সেই সময় চীনের শাওলিন মন্দিরে সরাসরি রাজার তত্ত্বাবধানে বৌদ্ধধর্মের বাণীগুলো সংস্কৃত থেকে চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। একটা সময় চাইনিজ রাজার সঙ্গে ট্যামোর বিরোধ বাধে। তখন থেকেই ট্যামো একটি গুহায় ধ্যান শুরু করেন। কথিত আছে, এই ধ্যানের মাধ্যমেই তিনি অলৌকিক কিছু দেখাতে পারেন যা পরবর্তীতে শাওলিন নামে রূপ নেয়। সন্ন্যাসীদের শক্তি এবং সাহস বৃদ্ধির জন্য এক বিশেষ ধরনের শরীরচর্চার কৌশল উদ্ভাবন করেন, যা কি না কিছু প্রাণীর চালচলন অনুকরণে করা হয়েছিল। আস্তে আস্তে ট্যামোর প্রচলিত শরীরচর্চার এই কৌশলগুলো তারা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করা শুরু করল। আর এভাবেই মূলত মার্শাল আর্টের উদ্ভব হয়। প্রথমদিকে তারা কোনো অস্ত্র ব্যবহার করত না কিন্তু কালের পরিক্রমায় তারা বেশকিছু অস্ত্রের ব্যবহারও শুরু করে। যেমন- লাঠি, বর্শা, চেইন।

 

স্পার্টান্সরা জাতি হিসেবে সবচেয়ে ভয়ংকর

গ্রিক সময়কার সেরা যোদ্ধার দল স্পার্টান্স। গ্রিক সময়ের হলেও- এরা ছিল গ্রিক সম্প্রদায় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ জাতির প্রতিটি পুরুষ ছিল একেকজন বীরযোদ্ধা এবং স্পার্টান্স জাতির ঐতিহ্য হলো যুদ্ধ আর যোদ্ধা হওয়া। এ জাতি তাদের নীতিতে অত্যন্ত কঠোর, এরা রণক্ষেত্রে কখনো পেছনে ফিরে তাকাত না। তাদের জাতির মূলনীতিই হলো যদি জয়ী হও তবেই ফিরে এসো অথবা মৃত্যুবরণ কর। যুদ্ধ ছিল এদের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ও হবি। তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর যোদ্ধা ছিল এই স্পার্টান্স জাতি এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আমৃত্যু লড়াই করে যেত। স্পার্টান্সবাসীর জীবন মানেই ছিল যুদ্ধ, ছোটবেলা থেকেই ছেলেকে যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো আর তাদের প্রথম প্রশিক্ষক জš§দাতা পিতা। ‘স্পার্টান্স’ অর্থ হচ্ছে ‘আত্মবিসর্জন’ এবং ‘সোজা জীবনযাপন’। এরা সাধারণত সোজা জীবনযাপন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত ও যুদ্ধ ছাড়া এরা কিছুই বুঝত না। যুদ্ধে আত্মবিসর্জন এদের জন্য সবচেয়ে গর্বের বিষয়। এ কারণেই যুদ্ধের সময়ের কুখ্যাত কিছু কার্যকলাপ ইতিহাস তাদের অমর করে রেখেছে। এরা একজন পুরুষ শুধু একজন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করত। তবে যুদ্ধে অর্জিত নারীদের ভোগ এবং দাসী হিসেবে রাখতে পারত।

 

ভাইকিংরা মূলত উত্তর জার্মানির আদিবাসী

ভাইকিং যোদ্ধাদের সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই কম-বেশি ধারণা আছে। এরা মূলত সমুদ্রভ্রমণপ্রিয় উত্তর জার্মানির আদিবাসী। ভাইকিং যোদ্ধাদের বলা হয় প্রাচীন ইউরোপের ত্রাস ও সন্ত্রাস! প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর যোদ্ধা। এরা মূলত ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে বেশি পরিচিত। তারপরও এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ী, গোয়েন্দা অনুসন্ধানের কাজে বিভিন্ন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াত। প্রায় ১১ শতকের দিকে এরা ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আটলান্টিক দ্বীপের দিকে আসা শুরু করে। এরা খুবই যুদ্ধপ্রিয় মানুষ ও নিজেদের সীমানা নিয়ে সর্বদাই ছিল জাগ্রত এক জাতি। যুদ্ধের প্রতি এদের কোনো অনীহা ছিল না বরং যুদ্ধ করতে না পারলে এদের মন খারাপ হতো। এরা লুটপাট করত, আত্মসাৎ করত, লুটতরাজ চালাত ইউরোপজুড়ে। তারা ছিল হিংস্র ও তাদের দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী অস্ত্র ব্যবহার করত। যে যত বড় দেহের অধিকারী তার তত বড় অস্ত্র। তারা ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বিশাল দেহের অধিকারী। তারা অনেক ধারালো কুড়াল, তলোয়ার ও বর্শা-বল্লম ব্যবহার করত। তাদের সামনে যারা পড়ত তাদের কোনো রেহাই ছিল না; এমনকি পথে পড়ে যাওয়া শহরের পর শহর তারা ধ্বংস করে দিত।

 

অ্যাপাচিদের বলা হয় আমেরিকান নিনজা

অ্যাপাচি উপজাতিরা ছিল ভয়ংকর যোদ্ধা। এদের বলা হতো, আমেরিকার নিনজা। তারা ছিল অনেকটা জলদস্যু সম্প্রদায়ের মতো। তারা এতটাই গোপনে আসত যে, বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না। রেড ইন্ডিয়ানদের মতো এই জাতিও আমেরিকার আদিবাসী। কিন্তু এরা অন্যান্য আমেরিকান আদিবাসীর মতো এত সহজে নিজেদের ভূমি বা দলের মেয়েদের অন্যদের হাতে তুলে দিত না। এরা আদিম কাঠ, পশুর হাড় ব্যবহার করে নিজেদের জন্য বেশির ভাগ অস্ত্র তৈরি করত। অ্যাপাচি যোদ্ধা হিসেবে এরা ছিল অনেক ধূর্ত এবং চালাক প্রকৃতির। প্রতিপক্ষকে সব সময় লুকিয়ে হামলা করত। হঠাৎ করে প্রতিপক্ষের পেছনে গিয়ে এরা এক টানে ছুরি দিয়ে গলা কেটে ফেলত। এতে প্রতিপক্ষের কিছুই বোঝার উপায় থাকত না। তারা ছিল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ছুরি-যোদ্ধা এবং কুঠার নিক্ষেপে খুবই পারদর্শী। এরা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমে লুটপাট, হামলা করত এবং তাদের উচ্ছেদ করতে সামরিক বাহিনীকেও অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছিল। তারা গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ছিল অত্যন্ত দক্ষ ও তাদের উত্তরাধিকারীরা আধুনিক দিনের স্পেশাল ফোর্সকে হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট প্রশিক্ষণ দেয়। বর্তমানে এদের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক কম হলেও আমেরিকার সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সফল তাদের উত্তরাধিকারীরা। তাই আমেরিকান আর্মি ফোর্সে এদের অবস্থান অনেক বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর