সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

আশ্চর্য গুহা

আশ্চর্য গুহা

বিষাক্ত গুহা

রোমানিয়ার মোভাইল গুহা। এই গুহা আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে। রোমানিয়া-বুলগেরিয়া সীমান্তে কৃষ্ণসাগরের উপকূল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই এই প্রাকৃতিক বিস্ময় আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান লাস্কু। আশির দশকে ম্যাঙ্গালিয়া প্রান্তরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট করতে গিয়ে এ গুহার খোঁজ পাওয়া যায়। এখানে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড আছে। ভিতরে অক্সিজেন খুবই কম। সব মিলিয়ে গুহার ভিতর বিষাক্ত পরিবেশ। অতল মহাসাগরের গভীরে, অন্ধকার গুহাসহ পৃথিবীর বহু অংশে এই অবাক করা বাস্তুতন্ত্র আবর্তিত হয়। ঠিক সেভাবেই হয়েছে মোভাইল গুহাতেও। সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় অনুপাতের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। কিন্তু মোভাইল গুহায় অক্সিজেনের উপস্থিতি মাত্র ৭-১০ শতাংশ। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে যেখানে কার্বন-ডাইঅক্সাইড আছে ০.০৪ শতাংশ, সেখানে মোভাইল গুহায় এই গ্যাসের পরিমাণ ২ থেকে ৩.৫ শতাংশ। এই গুহায় মিথেনের পরিমাণ ১-২ শতাংশ। পাশাপাশি মোভাইল গুহার বাতাস এবং জলে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়া আছে। রহস্যজনক এই গুহায় বাস করে এমন ৪৮টি প্রজাতির প্রাণীকে শনাক্ত করা গিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩টির বাইরের পৃথিবীতে অস্তিত্বই নেই। গুহার জীবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জোঁক, সহস্রপদী, শামুক, মাকড়সা এবং ওয়াটার স্করপিয়ন। এই গুহায় খাদ্য শৃঙ্খলও নির্ভর করছে কেমোসিন্থেসিসের ওপর। গবেষকদের ধারণা, এই গুহায় প্রথমে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর কোনোভাবে গুহায় প্রাণীরা বাইরে থেকে ঢুকে পড়ে। তারপর থেকে এখানেও চলেছে তাদের জীবনচক্র। তুষার যুগে পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে পড়লেও এই গুহার জীবজগৎ রক্ষা পেয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। সূর্যালোক না পাওয়ায় এই গুহার প্রাণীরা অনেকে জন্মান্ধ। এমনকি সূর্যের অনুপস্থিতিতে তাদের গায়ের রংও স্বাভাবিক নয়। এই গুহামুখ বন্ধই রাখে রোমানিয়া সরকার। আজ পর্যন্ত একশ’রও কম মানুষের পা এই গুহায় পড়েছে।  কোমরে দড়ি বেঁধে সংকীর্ণ গুহাপথে নামতে হয় অন্তত ২০ মিটার। আলো বলতে একমাত্র সম্বল হেলমেটে লাগানো লাইট। গুহার সর্পিল পথগুলো গিয়ে মিশেছে এর কেন্দ্রে একটি হ্রদে। সালফারপূর্ণ এই জলের গন্ধ পচা ডিম বা জ্বলন্ত রবারের মতো।

 

ভিতরে অবাক নেটওয়ার্ক

পানির নিচে আশ্চর্য গুহা গ্রেট ব্লু হোল। আকাশ থেকে এর বড় চোখের আকৃতি যে কাউকে বিস্মিত করবে। ক্যালসিয়াম কার্বনেটের তৈরি এই গুহা বাহামায় অবস্থিত। বাহামার বিলিজ শহরের ৬০ মাইল পূর্বে লাইট হাউস রিফে অবস্থিত এই ব্লু হোলগুলো। ব্লু হোলগুলো মূলত একটি বিশাল কেভ নেটওয়ার্কের প্রবেশদ্বার। পুরো বাহামার নিচেই বিস্তৃত পানির এই বিশাল কেভ নেটওয়ার্ক। অনেক ব্লু হোল প্রায় ১৪ কিলোমিটার মোটা। এগুলো দিয়ে ডাইভাররা হোলের ভিতর গিয়ে নেটওয়ার্ক ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছে আজব এক দুনিয়া। হোলের ভিতর পুরো আলাদা একটা জগৎ চলছে। সেখানে যে কত আজব আজব প্রাণী আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! এমনও অনেক জলজ প্রাণী সেখানে পাওয়া গেছে, যেগুলোর খোঁজ বিজ্ঞানীরা এখানেই প্রথম পেয়েছেন। এখনো চলছে নতুন প্রাণী খোঁজার প্রক্রিয়া। প্রায় ৬৫ হাজার বছর আগের কথা। পৃথিবীতে শেষবারের মতো বরফ রাজত্ব করছে। পৃথিবীর সব পানি জমে জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠও তাই তখন ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বাহামাতে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়েও আরও ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হলো পাথর। আর সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হলো কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু যখন বরফ আবার গলতে শুরু করল, সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। পানির নিচে ডুবে গেল সেই কাঠামো।  মোটামুটি আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্কই একেবারে পানির নিচে ডুবে গেল। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হলো এই ব্লু হোলগুলো।

 

ভয়ংকর তবু ভিড় পর্যটকদের

ওর্দিকসকায়া ডুবো গুহা। রয়েছে রাশিয়ায়। এই গুহাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিপসাম (খনিজ পদার্থ) সমৃদ্ধ গুহা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গুহার প্রবেশ পথ লম্বায় মাত্র ৫ মি. এবং প্রস্থে ২ মি.। গুহায় এত জায়গা যে কোনো অভিযাত্রী এখন পর্যন্ত এই গুহা পুরোপুরি ঘুরে দেখতে পারেননি। প্রতি বছর হাজার হাজার অভিযাত্রী এই গুহায় অভিযান চালিয়ে থাকে। মেক্সিকোতে বহু প্রাচীন গুহা রয়েছে। সবচেয়ে সুন্দর গুহাগুলোর একটা এল জেসিনতো। এই গুহার মূল আকর্ষণ হচ্ছে দুর্লভ এবং অদ্ভুত সুন্দর কিছু জলজ প্রাণী। এই গুহা বহুল পরিচিত ‘মায়া শহরের’ কাছাকাছি অবস্থিত। এ গুহাকে কেন্দ্র করে মিয়ানদের (মায়া শহরের বাসিন্দারা) মধ্যে অনেক লোকগল্প প্রচলিত আছে। গুহাটি লম্বায় প্রায় ৩৫ কিমি এর মতো। স্পেনের

মেলোরকায় বছরের পর বছর জমে থাকা খনিজ গুহা রয়েছে।  নানা রকম খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ এই গুহা একটু বিপজ্জনক। তাই, পেশাদার অভিযাত্রী ছাড়া আর কাউকে এই গুহায় না আসতে পরামর্শ দেওয়া হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর গুহার মধ্যে বাহামাস কেভ একটি। নানা রকম খনিজ পদার্থের উপস্থিতি এ গুহাকে আকর্ষণীয় করেছে। এখানকার খনিজ পদার্থগুলো খুব বিষাক্ত। এই গুহায় বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইডের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুহায় ডুবুরিরা নানা রকম পশুর হাড় এবং তাদের মাথার খুলি দেখতে পায়। একবার এক ডুবুরি তিন হাজার বছর পুরনো একটা কুমিরের মাথার খুলি খুঁজে পেয়েছিল।

 

ভাইকিংসরা রাখে এ গুহার নাম

স্কটল্যান্ডের অদূরে উত্তাল সমুদ্রে স্টাফা দ্বীপপুঞ্জে ‘ফিংগালস গুহা’র অবস্থান। ভাইকিংসরা এ দ্বীপের নাম রেখেছিল। কেউ বাস করে না সেই দ্বীপে। গুহাটির ভিতরে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে অসংখ্য খিলান। এ ব্যাপারে ভূতত্ত্ববিদরা মনে করেন, আজ থেকে প্রায় ছয় কোটি বছর আগে লাভা থেকে এ গুহার সৃষ্টি। এর গলিত পাথর খড়িমাটির ওপর দিয়ে যাওয়ায় গুহাটি এ বিশেষ আকৃতি পায়। আয়ারল্যান্ডের ‘জায়ান্টস কজওয়ে’ গুহার সঙ্গেও ফিংগালসের আশ্চর্য মিল রয়েছে। যদিও ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এদের মধ্যে মিল নাকি আপতিক নয়। তবে তাদের ধারণা, এ দুই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। তারা মনে করেন, একই লাভাস্রোত থেকে এ দুই গুহার সৃষ্টি হয়। এমনকি দুটি গুহার সঙ্গে সংযোগ ছিল বলেও উপকথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর