রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেই অভিযাত্রীদের বিশ্বভ্রমণ

আবদুল কাদের

সেই অভিযাত্রীদের বিশ্বভ্রমণ

ক্রিস্টোফার কলম্বাস

আমেরিকায় উপনিবেশের সূচনা

ক্রিস্টোফার কলম্বাস; একজন বিশ্বজয়ী অভিযাত্রী। তিনি আটলান্টিক মহাসাগর চারবার পাড়ি দিয়েছিলেন। ১৪৯২, ১৪৯৩, ১৪৯৮ এবং ১৫০২ সালে। বিশ্বাস ছিল- একদিন ইউরোপ থেকে এশিয়ার পশ্চিমের সরাসরি জলপথ খুঁজে বের করবেন। কিন্তু পারেননি। তবে বলা হয়, প্রায় ৫০০ বছর আগে তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও তিনি তথাকথিত নিউ ওয়ার্ল্ডকে ‘আবিষ্কার’ করেননি। ইতোমধ্যেই সেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস করত। তবে তার হাত ধরে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় উপনিবেশের সূচনা হয়েছিল। এমনকি শতাব্দীর নতুন নতুন অনুসন্ধানেও তার ভূমিকা ভোলার নয়। ধারণা মতে, কলম্বাসের জন্ম ১৪৫১ সালে। ইতালির জেনোয়াতে। তার বাবা ছিলেন একজন উল ব্যবসায়ী। কিশোর বয়সেই একটি বণিক জাহাজে চাকরি পেয়েছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে যোগ দেন এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। তার ধারণা ছিল, আটলান্টিক দিয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছতে পারবেন। ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট অভিযান শুরু করেন। সঙ্গী হিসেবে ছিল মূল জাহাজ সান্তা মারিয়া এবং অন্য দুটি জাহাজ নিনা ও পিন্টা। দলবল নিয়ে কলম্বাস ১২ অক্টোবর আমেরিকায় পা ফেলেন। ভারতে পৌঁছানোর জলপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে খুঁজে পান আমেরিকা মহাদেশ। তিনি ও তার সঙ্গীরা তখনো জানতেন, ভারতের কোনো দ্বীপে পৌঁছেছেন। কলম্বাস এর নামও দেন ‘সান সালভাদর’। কলম্বাসের আবিস্কারকে ভুল প্রমাণ করেন আমেরিগো ভেসপুচি নামের আরেক নাবিক।  তার নামানুসারে আমেরিকার নাম হয়েছিল। যদিও এর ৩০০ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন বলে ধারণা অনেকের। ১৪৭৬ সাল পর্যন্ত এই অভিযাত্রী সমুদ্র দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন।

 

ইবনে বতুতা

পাড়ি দিয়েছিলেন ৭২ হাজার মাইল

আজ থেকে ৭০০ বছর আগে মরক্কোর তানজিয়ার থেকে পৃথিবী দেখার নেশায় ঘর ছাড়েন এক মুসলিম যুবক। নাম ইবনে বতুতা। ২১ বছর বয়সে হয়ে ওঠেন অভিযাত্রী। বিশ্ব ভ্রমণে পার করেন ৩০টি বছর। তিনি মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, ভারত ও চীন ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণ তালিকায় রয়েছে ইরাক, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব এবং পূর্ব আফ্রিকা। এসেছিলেন বাংলায়ও। পাড়ি দিয়েছেন ৭২ হাজার মাইল। ইবনে বতুতা যে কোনো আদি-আধুনিক ভ্রমণকারীর চেয়ে অনেক বেশি ভ্রমণ করেছেন। যদিও অনেকে মার্কো পোলোকে তার সমকক্ষ মনে করেন। তবে ইবনে বতুতা সবার চেয়ে বেশি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ। ১৩০৪ সালে মরক্কোর তানজিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ, বিচারক। তিনিই একমাত্র পরিব্রাজক যিনি তার সময়কার সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং সুলতানদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। বিশ্ব ভ্রমণের সময় তিনি জীবনে কাজির চাকরি করেছেন। তার পূর্বপুরুষরা কাজির পেশায় ছিলেন। বিয়ে করেছেন মন্ত্রীর মেয়েকে।  কখনো রাষ্ট্রদূত, কখনোবা সেনা কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশির ভাগ ভ্রমণে ইবনে বতুতার সঙ্গে কাফেলা ছিল। তিনি নিজে একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। ফলে তিনি যে দেশে গেছেন সেখানেই রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন। প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ করে নিজ দেশে ফিরলে সুলতান আবু ইনান ফারিস তার ভ্রমণকাহিনি লিপিবদ্ধ করার জন্য কবি নিয়োগ করেন।

 

স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর সবই তার জানা

নামটি তার বেশ বড়। স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি। ২০ শতকের বিখ্যাত অভিযাত্রী এবং পর্বতারোহী। ১৯৫৩ সালে সর্বপ্রথম যিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বত। তিব্বতি পর্বতারোহী তেনজিং নোরগেকে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। পরে অবশ্য পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু অভিযানে অংশ নেন। মাউন্ট হার্শেলের শীর্ষে পৌঁছানো প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন। এখানেই শেষ নয়, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর সবই তার জানা। এডমন্ড হিলারি নিউজিল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী ও অভিযাত্রী। জন্ম ১৯১৯ সালের ২০ জুলাই নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। ১৬ বছর বয়সে পর্বত আরোহণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তখনই টের পেয়েছিলেন তুষার এবং পর্বতারোহণের প্রতি তার ভালোবাসা। ১৯৫৩ সালে হিলারি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে শেরপা তেনজিং নোরগেকে সঙ্গে নিয়ে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেন। ২৯ মে ১১.৩০ মিনিটে এডমন্ড হিলারি শেরপা তেনজিং নোরগেকে নিয়ে পৃথিবীর প্রথম মানব ইতিহাস রচনা করেন। জয় করেন মাউন্ট এভারেস্ট। ১৯৫৮ সালে কমনওয়েলথ ট্রান্স-আটলান্টিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি দক্ষিণ মেরু পৌঁছান।  পরবর্তীকালে উত্তর মেরু অভিযানে অংশ নিয়ে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর দুই মেরু ও সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদার্পণের দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেন এডমন্ড হিলারি। এভারেস্ট জয় করে থেমে থাকেননি, নেপালের কৃষক এবং কৃষি উন্নয়নেও কাজ করেছিলেন এই পর্বতারোহী।

 

সিলভিয়া আর্লে

পানির নিচে ৭ হাজার ঘণ্টা!

সিলভিয়া এলিস আর্লে; একজন আমেরিকান সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী। যার নেতৃত্বে পৃথিবীবাসী জেনেছিল সমুদ্রগর্ভের অসংখ্য রহস্যের গল্প। তার ঐতিহাসিক সেই অভিযানের নাম ‘মিশন ব্লু’। আর টাইম ম্যাগাজিনের চোখে তিনি ‘হিরোস ফর দ্য প্ল্যানেট’। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান, জীব সংরক্ষণ এবং সমুদ্রগর্ভে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এই বিজ্ঞানী। কেবল প্রথম শ্রেণির সমুদ্রবিশারদই নন, ৬ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় সমুদ্রের নিচে অবস্থান করে গড়েছেন রেকর্ড। কারও কারও মতে, সিলভিয়া আর্লে ৭ হাজার ঘণ্টা পানির নিচে অবস্থান করেছিলেন। নেতৃত্ব দেন শতাধিক সামুদ্রিক অভিযানের। আর্লের জন্ম ১৯৩৫ সালে। কর্মজীবনে তিনি একজন মার্কিন মেরিন বায়োলজিস্ট, লেখক ও প্রভাষক।  ১৯৯৮ সাল থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এক্সপ্লোরার-এর সঙ্গে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ওষুধ ও অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভের প্রথম নারী বিজ্ঞানীও তিনি। আর্লে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আজ পর্যন্ত ১৯০ টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বই লিখেছেন। তার বয়স যখন ১২, তখন তার বাবা পরিবারকে নিয়ে ফ্লোরিডার ডুনেডিনে চলে আসেন। সেখানে আর্লে কাছাকাছি লবণের জলাভূমি এবং সামুদ্রিক জীবন্ত প্রাণের অনুসন্ধানের সুযোগ পান।

 

ভাস্কো দা গামা

প্রথম ইউরোপীয়র ভারত আবিষ্কার

ভাস্কো দা গামা; পর্তুগিজ অভিযাত্রী। যাকে বলা হয়, পাশ্চাত্য দুনিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সমুদ্রপথে ইউরোপ থেকে ভারতে আসেন। তিনি প্রথম ইউরোপিয়ান, যিনি সমুদ্রপথে ভারতে আসেন। তার ভ্রমণ এশিয়া-ইউরোপকে সংযোগের পাশাপাশি আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করেছিল। তার ভ্রমণে পর্তুগিজরা এশিয়া মহাদেশে দীর্ঘকালীন উপনিবেশ স্থাপনের পথ পেয়েছিল। ভাস্কো দা গামার জন্ম পর্তুগালের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সিনেস নামক জায়গায় ১৪৬০ কিংবা ১৪৬৯ সালে। ১৪৯৭ সালে ভাস্কো দা গামা লিসবনের উদ্দেশে সমুদ্রযাত্রা করেন। ১৪৯৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোজাম্বিক দ্বীপের কাছে সময় অতিবাহিত করেন। এরপর ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে মোম্বাসা বন্দরের পরিচয় পান।  ২৪ এপ্রিল দলবল নিয়ে মালিন্দি থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একই বছর ২০ মে তিনি নৌবহরসহ ভারতের কালিকটের নিকটবর্তী কাপ্পাডুতে এসে পৌঁছান। কালিকটের রাজা সামুদিরি (জামরিন) এক বিশাল শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাদের অভ্যর্থনা জানান।

 

ফা-হিয়েন

বিনয় পিটক সংগ্রাহক

সময় তখন ৫০ শতক। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল। চীনের পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারত ভ্রমণ করেন। এ জন্য সঙ্গী-সাথী নিয়ে দীর্ঘ পথ হাঁটেন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল বৌ ধর্মপুস্তক ‘বিনয় পিটক’-এর মূল রচনা সংগ্রহ। মধ্য এশিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করে এ সংক্রান্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। প্রথমে আসেন ভারতে। ৩৯৯ সালে তিনি ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ভারত ঘুরে উত্তর ভারতে পৌঁছান। জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের মঠতান্ত্রিক নীতি সংবলিত গ্রন্থ ‘বিনয় পিটক’-এর সন্ধানে তিনি ভারতে এসেছিলেন। দর্শন করেন গঙ্গা উপত্যকায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির পবিত্র স্থানগুলো।  ভ্রমণ শেষ হলে তাম্রলিপ্ত বন্দর হয়ে সমুদ্রপথে সিংহল, মালয় এবং যবদ্বীপ থেকে স্বদেশে ফিরে আসেন। ভারত ভ্রমণে সীমান্ত রাজ্য চম্পা দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন। তার বিবরণ অনুসরণ করে ভারত ও বাংলার বহু প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

 

ইউরি আলেক্সেভিচ গ্যাগারিন

মহাকাশ ভ্রমণে প্রথম ব্যক্তি

ইউরি আলেক্সেভিচ গ্যাগারিন, পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করা ‘প্রথম মহাকাশচারী’। জন্ম রাশিয়ায়। কৈশোর থেকেই মহাকাশ ও গ্রহ সম্পর্কে বেশ আগ্রহী ছিলেন গ্যাগারিন। স্কুলে পড়াশোনাকালীন ফাউন্ড্রি-ম্যান হয়ে ওঠেন। অবসরে তিনি রাশিয়ান মহাকাশ গবেষক কনস্ট্যান্টিন সিওলকোভস্কির বই নিয়ে পড়ে থাকতেন। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সোভিয়েত আর্মিতে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন বৈমানিক। তিনি ভস্টক নভোযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। পৃথিবী থেকে ১৭৭ কিলোমিটার দূরের মহাকাশে একাকী গ্যাগারিনের ১০৮ মিনিটের কক্ষপথ ভ্রমণ ছিল দুর্দশাপূর্ণ। তার তৃতীয় প্রজন্মের ‘ভস্টক-১’ রকেটের ন্যাভিগেশনাল নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত ছিল না।  চরম সাহসের সঙ্গে তিনি পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। ২৭ বছর বয়সেই গ্যাগারিন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। আর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুঃসাহসী নায়কে পরিণত হন এবং দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কার-পদক লাভ করেন।

 

হিউয়েন সাং

৬৫৭টি গ্রন্থ অনুবাদ

ভারতবর্ষে চৈনিক তীর্থ ভ্রমণকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় বিবরণীটি হিউয়েন সাংয়ের। সাত শতকে হিউয়েন সাং উত্তর ভারতে হর্ষবর্ধন, বাংলায় শশাঙ্ক এবং আসামে ভাস্করবর্মণ শাসন করছিলেন। শৈশব থেকেই ধর্মগ্রন্থ, বিশেষত চৈনিক ধ্রুপদি গ্রন্থ ও প্রাচীন জ্ঞানীদের লেখা পাঠে আগ্রহী ছিলেন। ৬৫৭টি সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থ সংগ্রহ ও অনুবাদ করেন তিনি। তৎকালীন ভারতের বৌদ্ধ শাস্ত্রের ওপর সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালাভ করেন তিনি।  পরিব্রাজক হিসেবে তিনি কিরগিজস্তানের রাজা তুর্ক খানের সঙ্গে দেখা করেন। ৬৩৮ সালে বাংলায় এসেছিলেন। তার বিবরণী অনুসারে, বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কর্ণসুবর্ণের নিকটবর্তী রক্তমৃত্তিকা, পুন্ড্রনগর ও এর সংলগ্ন এলাকা, সমতট ও তাম্রলিপ্তি অন্যতম।

 

মার্কো পোলো

পায়ে হেঁটে বাগদাদ

ভেনিসের সম্ভ্রান্ত পোলো পরিবার। বংশানুুক্রমে যারা বিদেশে বাণিজ্য করত। দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ত রোজগার ও ভ্রমণে। এই পরিবারে জন্ম পর্যটক মার্কো পোলোর। তিনি ১২৭১ থেকে ১২৯৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপ থেকে সিল্ক রোডে এশিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। তার এই ভ্রমণকাহিনি নিয়ে পরবর্তীতে তিনি একটি বই লেখেন। যা ইংরেজিতে ‘দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো’ নামে পরিচিত। তিনি প্রথম ইউরোপীয় ছিলেন, যিনি প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের কাছে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে অবশ্য দূরপ্রাচ্য বা চীন সম্পর্কে ইউরোপের মানুষের খুব একটা জানাশোনা ছিল না। ভ্রমণকালে পোলো হেঁটে বাগদাদে পৌঁছান। তখন বাগদাদ ছিল বিশ্বের সেরা নগরী। মার্কো পোলোর বয়স যখন ১৭ বছর তখন থেকেই মার্কো বাবার দুঃসাহসিক যাত্রার সঙ্গী হন।  এখান থেকেই মার্কো পোলোর পৃথিবী ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। তিনি যে এলাকা ভ্রমণ করতেন তার সবকিছু ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। এই শুরুর মাধ্যমেই তিনি পৃথিবীর সেরা পর্যটকে পরিণত হন।

 

ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা

মহাকাশে প্রথম নারী নভোচারী

ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মতো মহাকাশ ভ্রমণ করেন। ভস্তোক-৬ মহাকাশ যানে চেপে তিনি পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে ফিরে আসেন...

১৯৬৩ সাল। বিশ্ববাসী দেখল এক সাহসী নারীকে; নাম ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা। মানব ইতিহাসে তিনি প্রথম নারী, যিনি মহাকাশ গমন করেছেন। একক পাইলট হিসেবে ভস্টক-৬-কে নিয়ে যান মহাকাশে। সেই নারীও একজন সোভিয়েত নাগরিক। তেরেসকোভা স্কুলে করেসপন্ডেস কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনা করেন, পাস করেন ইঞ্জিনিয়ারিং। ছেলেবেলা থেকেই ছিল তার প্যারাসুট ঝাঁপের প্রতি বিশেষ আগ্রহ। বুকোভস্কোই এয়ারফোর্স একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথম প্যারাসুট নিয়ে ওড়েন তেরেসকোভা। তখন ২৭ বছর বয়সী ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশ জয় করেছেন। এরই মধ্যে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ঘোষণা করল, বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে একজনকে মহাকাশ ভ্রমণে পাঠানো হবে। আবেদনও পড়ল অনেক। ৪ শতাধিক আবেদনকারীর মধ্যে মেধা ও যোগ্যতার বিচারে মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে  নির্বাচিত হন তেরেসকোভা।  সুযোগ পেলেন প্রথম নারী এবং প্রথম বেসামরিক হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণের। আর মহাকাশ অভিযানে প্রথম সফল নারী নভোচারী।

সর্বশেষ খবর