সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধনীদের অন্যরকম জীবন

ধনীদের অন্যরকম জীবন

ধনকুবেররা অন্যদের চেয়ে বেশি সফল। তাদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও অন্যদের চেয়ে আলাদা। এরা সাধারণত পরিশ্রমী হন।  আর তাদের ইতিবাচক মানসিকতা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে সাহায্য করে।

ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকেন। তারা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য সাময়িক সুখকে বিসর্জন দিয়ে থাকেন। পুরনো বাড়ি কিংবা ব্যবহৃত গাড়ি, এমনকি সাদামাটা পোশাকেও তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা উচ্চাভিলাষী জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বিষয়ে কোনো চিন্তা করেন না। তাদের মূলত জীবনের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থান রয়েছে। এরা সাধারণত অনেক বেশি পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। আর তাদের ইতিবাচক মানসিকতা-সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সাহায্য করে। তারা এমন কিছু সাধারণ অভ্যাসের সঙ্গে লেগে থাকেন, যা তাদের সামগ্রিক সাফল্য এবং সমৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। ইলন মাস্ক থেকে মার্ক জাকারবার্গ, দেখে নেওয়া যাক- বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সাধারণ অভ্যাস।

 

দৈনন্দিন জীবনে নির্দিষ্ট সময় ধর্মীয়ভাবে ধৈর্য চর্চা করেন

বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল পণ্য প্রতিষ্ঠানের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট। তার প্রতিষ্ঠিত বিলাসী পণ্যের ব্র্যান্ড লুই ভিতোঁ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাসী পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। আর্নল্ট প্রতিদিন ধর্মীয়ভাবে ধৈর্য চর্চা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যবসা বুঝতে সময়, প্রতিশ্রুতি এবং ধৈর্য লাগে। তিনি মনে করেন, গ্রাহকের সন্তুষ্টি বিবেচনা করে ব্যবসায় কীভাবে কাজ করবে এবং সফলতার দেখা পাবে, সে সব বুঝতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। ধনীরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য সাময়িক সুখ বিসর্জন দিয়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করেন। আর্নল্টও তাদের একজন। তিনি বিশ্বাস করেন, পরিকল্পনা হওয়া উচিত দীর্ঘস্থায়ী।

 

প্রতিদিন পড়ার জন্য নিজেকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেন

টেসলার সিইও ইলন মাস্কের সম্পদ শুধু টেসলাতে আবদ্ধ নয়। বরং তার সম্পদের উৎস যথাক্রমে স্পেসএক্স, এক্স (পূর্বে টুইটার) থেকে শুরু করে দ্য বোরিং কোম্পানি, টানেলিংয়ের মতো প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। অর্থাৎ মাস্ক নিজের আয়ের উৎস এবং পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছেন। ধনী হতে-এই কৌশলটি অনুকরণ করা যেতেই পারে। এ ছাড়াও বিশ্বের এই শীর্ষ ধনকুবের একজন বইপ্রেমী। তিনি প্রতিদিন জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে পড়ার জন্য নিজেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় দেন। তিনি একজন উদাসীন পাঠক। বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জ্ঞানার্জনে বিশ্বাসী একজন।

 

নিজের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে ভালো থাকেন

অ্যামাজনের সাফল্যের গল্প নিয়ে, বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের জেফ বেজোস। ইলন মাস্কের মতো তারও একটি বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও রয়েছে। বেজোসের বিনিয়োগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, এমনকি মহাকাশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত। তাই বলা যায়, তিনি এই গ্রহের অন্যতম একজন ব্যস্ত মানুষ। তা সত্ত্বেও জেফ বেজোস সারা দিনের সময়সূচির মধ্যে অন্তত একটি পছন্দের কাজের জন্য সময় বের করে নেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি মানুষ যদি তার পছন্দের কাজটি করেন, তা তাকে আরও উজ্জীবিত করবে। আর মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, নিজের পছন্দের কাজটি করার মাধ্যমে শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে কখনই হারাবেন না।

 

মিতব্যয়ী জাকারবার্গ সময়কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন

মেটার মালিক মার্ক জাকারবার্গ প্রচুর অর্থবিত্ত অর্জন করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি বিলাসবহুল জীবন অতিবাহিত করতে পারেন। কিন্তু জাকারবার্গ তার মিতব্যয়িতার জন্য পরিচিত। তিনি দামি স্পোর্টস কারের পরিবর্তে বেসিক অ্যাকুরা চালান। তার পোশাকও বেশ সাদামাটা। বেশিরভাগ সময় তাকে সাধারণ ধূসর টি-শার্টে দেখা যায়। এছাড়াও জাকারবার্গ মনে করেন, লোকেরা ভুল করলে অনুশোচনাতেই সময় ব্যয় করে ফেলে। যা উচিত নয়। কারণ মনে রাখবেন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ভুল করেছেন। সফলও হয়েছেন। লোকেরা সেদিকে মনোযোগ দেয় না। মূল কথা, সব সঠিক হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে সময় অপচয়ই হয়ে থাকে।

 

নিত্যদিনের খাবারে বেশি অর্থ ব্যয় মোটেও পছন্দ করেন না

ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের অন্যতম ধনী বিনিয়োগকারী। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তিনি খুবই সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত। যার উদাহরণ- তার বাড়ি। ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলারে কেনা বাড়িতেই থাকেন। এ ছাড়া ওয়ারেন বাফেটের আশ্চর্যজনক অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি-তিনি তার দৈনন্দিন খাবারে বেশি অর্থ ব্যয় পছন্দ করেন না। এমনকি বাইরে খেতেও তেমন পছন্দ করেন না। তবে কাজের জন্য বাইরে থাকলে তিনি মাত্র ৫ ডলারের বার্গার খেয়ে নেন। অন্যথায়, বাড়িতে ফিরে শেফের হাতে রান্না করা আরামদায়ক নাশতা করেন। এটি অর্থ সংরক্ষণের জন্য খুবই ভালো একটি উপায়, যা প্রতিটি সাধারণ মানুষেরই মেনে চলা উচিত।

 

অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে সংরক্ষণ ও দান করায় আনন্দ খুঁজে পান

বিল গেটস তার সাফল্যের গল্পের জন্য অনেকের কাছে অনুপ্রেরণীয় হয়ে আছেন। ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত অর্থ আয়ের পাশাপাশি বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু বিল গেটস এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে সংরক্ষণে বিশ্বাসী। এসব অর্থ জমিয়ে দাতব্য সংস্থাগুলোয় কোটি কোটি টাকা দান করেন। এমনকি পরোপকারী গেটস সর্বদা জ্ঞান-অন্বেষণে নিজেকে বাড়তি সময় দেন। তিনি ক্রমাগত শিখতে পছন্দ করেন। এ জন্য বই নিয়েই পড়ে থাকেন। জ্ঞানীরা বলেন, জ্ঞানের অনুসন্ধান মানুষকে ধনী না করলেও, পরবর্তী ধারণাকে প্রসারিত করে। গেটস একজন আগ্রহী পাঠক। তার ধনী হওয়ার বিষয়টি কাকতালীয় নাও হতে পারে।

সর্বশেষ খবর