বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

যে শহরে থাকেন ধনীরা

আবদুল কাদের

যে শহরে থাকেন ধনীরা

 কোনো শহর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে এর বাসিন্দাদের ভূমিকা অনেক। তা যদি হয় আর্থিক দিক থেকে, তাহলে তো কথাই নেই। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ২ হাজার ৭৮১ জন অতিধনীর এক-চতুর্থাংশ বিশ্বের মোট ছয়টি দেশের প্রায় ১০টি শহরে বসবাস করেন। বলা যায়- পৃথিবীর সবকটি মহাদেশেই অতিধনীদের বসবাস। এসব শহরেই খ্যাতনামা সব তারকা, রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী বা অতিধনীরা বসবাস করে থাকেন। যাদের মধ্যে সারাক্ষণই চলতে থাকে ধনীর তকমা ধরে রাখার প্রতিযোগিতা।

পৃথিবীর মাত্র দশটি শহরে বিশ্বের অতিধনী বা কোটিপতিদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের আবাসস্থল। এদের ব্যবসা যেখানেই হোক বসবাসের জন্য তারা এসব শহরকে বেছে নেন...

২০২৪ সালে সমগ্র বিশ্বের একটি রেকর্ড হয়েছে। ২ হাজার ৭৮১ বিলিয়নিয়ার বা অতিধনীর দেখা পেয়েছেন বিশ্ববাসী। যাদের বসবাসও আবার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। উদাহরণস্বরূপ- এসব অতিধনীর অনেকে আবাসস্থল হিসেবে উরুগুয়ের ছোট্ট একটি মাছধরার গ্রাম কিংবা ‘রিসোর্ট আইল অব ম্যান’ এমনকি মান্যানটিয়েলেস-এর মতো দূরবর্তী স্থানকেও বেছে নিয়েছেন। তবুও বিশ্বের অসংখ্য অতিধনীরা রয়েছেন, যারা সাধারণত বিশ্বের কয়েকটি অভিজাত শহরকে তাদের বসবাসের জন্য ঠিক করেন। এমনকি সেখানে বসবাস করেন বছরের পর বছর। যুগের পর যুগ।

প্রকৃতপক্ষে ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, প্রায় এক-চতুর্থাংশ অতিধনীরা (৩ ট্রিলিয়ন ডলার) মাত্র ছয়টি দেশের ১০টি শহরে বাস করেন। নিউ ইয়র্ক সিটি আবারও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনকুবেরের আবাসস্থল। ‘বিগ অ্যাপল’ প্রায় এক যুগের কাছাকাছি তালিকায় সবার ওপরে অবস্থান করছে। গত ১১ বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি একটি ছাড়া (২০২১ সালে বেইজিং সংক্ষিপ্তভাবে শীর্ষস্থান দখল করেছিল) নিজেদের প্রথম স্থানে রেখেছিল। নিউইয়র্কের অতিধনীদের মধ্যে প্রায় ৬২ জন ওয়াল স্ট্রিটার্স, ফিন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট টাইকুন, ১৪ জন সেরা রিয়েল এস্টেট এবং এক ডজনের বেশি ফ্যাশন এবং খুচরা ম্যাগনেট। তালিকায় মস্কো ও হংকং যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই শহর দুটির প্রতিটিতে ৭৪ জন অতিধনীর বসবাস। গত বছর ১৩ জন অতিধনী যোগ করার পরে মুম্বাই এক লাফে সপ্তম থেকে চতুর্থ স্থানে এসেছে। তবে চীনের একটি শহর শীর্ষ ১০-এর স্থান হারিয়েছে। তা হলো শেনজেন। এদিকে বেইজিং ও সাংহাই উভয়ই শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে। যদিও তারা তালিকায় নিচে নেমে গেছে। এদিকে সান ফ্রান্সিসকো এবং লস অ্যাঞ্জেলেস উভয়ই এই বছর ওপরে স্থান করে নিয়েছে। কারণ- ফোর্বস তাদের কাউন্টির শহরগুলোকেও ধনীদের শহর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেমন- সান্তা মনিকা এবং গ্লেনডোরা। তবে ফোর্বস ২০২৪ সালে ২,৭৮১ অতিধনীদের মধ্যে ৫৯ জনের প্রাথমিক বাসস্থান নির্ধারণ করতে পারেনি।

 

মস্কো [ রাশিয়া ]

মোট ধনকুবের : ৭৪ । নতুন যোগ হয়েছে : ১২ জন । মোট সম্পদ : ৩৭৮ বিলিয়ন ডলার । সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা : ভ্যাগিট আলেকপেরভ (২৮.৬ বিলিয়ন ডলার) ।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ। ইউক্রেনে যখন রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে; তখন মস্কোর অতিধনী ব্যক্তিরা মাত্র ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমন্বিত সম্পদ অর্জন করেছে। ‘৫০ বিলিয়ন ডলার’ সংখ্যাটি সামান্য হলেও তা বদলে দিয়েছে ধনীদের আবাসস্থল বা ধনীদের পছন্দের শহরের তালিকা। রাশিয়ার রাজধানী শহরটি তালিকায় ৬ নম্বর থেকে ২ নম্বরে চলে এসেছে। তাও আবার যৌথভাবে। অর্থাৎ হংকংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মস্কো। শহরটি নব্য ১২ জন অতিধনীর দেখা পেয়েছে। যারা এই বছর বিলিয়নিয়ার বা অতিধনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ আছেন, যারা চলমান ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ থেকে (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে) লাভ করছে। এর মধ্যে রয়েছেন ভ্লাদিমির মেলনিকভ (১.৭ বিলিয়ন ডলার), যিনি ফাস্ট-ফ্যাশনের খুচরা বিক্রেতা। তার প্রতিষ্ঠান গ্লোরিয়া জিন্স গত দুই বছরে বিক্রি ২৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর তা থেকেই তিনি ৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ লাভ করেছেন। এ জন্য অবশ্য আংশিকভাবে ধন্যবাদ পাবেন তাদের বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ঐ্গ এবং তধৎধ। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রায় ৬৫০টি দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল। রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের সম্মিলিত সম্পদ ৩৭৮ বিলিয়ন ডলার। মস্কোর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ভ্যাগিট আলেকপেরভ (২৮.৬ বিলিয়ন ডলার)।

 

নিউইয়র্ক সিটি [ আমেরিকা ]

মোট ধনকুবের : ১১০ । গত বছর নতুন যোগ হয়েছে : ৯ জন । মোট সম্পদ : ৬৯৪ বিলিয়ন ডলার । সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা : মাইকেল ব্লুমবার্গ (১০৬ বিলিয়ন ডলার) ।

দীর্ঘ সাত বছর ধনীদের পছন্দের শহরের শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছিল নিউইয়র্ক সিটি। মাঝে অবশ্য ২০২১ সালে হারিয়েছিল সেই গৌরব। কিন্তু পরের বছর আবারও ফিরিয়ে আনে সেই গৌরব। আমেরিকার এই শহরকে বলা হয়- ‘ক্যাপিট্যাল অব বিলিয়নিয়ার’ বা ‘অতিধনীদের রাজধানী’। আর হবেই না কেন! ২০২২ ও ২০২৩ সালেও যে একইভাবে গৌরবময় অর্জনটি নিজেদের করে রেখেছে। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ১১০ ধনাঢ্য ব্যক্তিকে নিয়ে ধনীদের পছন্দের শহরের তালিকায় সবার ওপরে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটি। স্বপ্নের শহরটিতে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ৯ জন অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে। এই শহরের দুজন ধনীর সম্পদের পরিমাণ বাকিদের এক-চতুর্থাংশের সমান। তারা হলেন- মিডিয়া ম্যাগনেট ও সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ (১০৬ বিলিয়ন ডলার) এবং কচ ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরাধিকারী জুলিয়া কচ (৬৪.৩ বিলিয়ন ডলার)। এ ছাড়াও নিউইয়র্ক আট নব্য ধনীদের বাড়ি। যাদের মধ্যে জিন মাদার (১.১ বিলিয়ন ডলার) অন্যতম, যিনি ফরাসি সুগন্ধি প্রতিষ্ঠান ইন্টারপারফামসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আরও আছেন আসাফ রাপাপোর্ট (১ বিলিয়ন ডলার), যিনি ইসরায়েলি ক্লাউড সিকিউরিটি স্টার্টআপ উইজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

 

হংকং সিটি [ হংকং ]

মোট ধনকুবের : ৭৪ । নতুন যোগ হয়েছে : ৪ জন । মোট সম্পদ : ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : লি কা-শিং (৩৭.৩ বিলিয়ন ডলার) ।

হংকং চলতি বছর আবারও দ্বিতীয় স্থানে এসেছে। ৭৪ জন অতিধনী নিয়ে ২০২৪ সালে মস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে ধনী শহরের তালিকায় অবস্থান ধরে রেখেছে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরে হংকং সিটির ধনীদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণও সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও নাটকীয়ভাবে অতিধনীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল হংকং সিটিতে। তবে চলতি বছর সে অবস্থা বদলেছে। ২০২৪ সালে হংকংয়ের রাজধানী শহরে চারজন ধনাঢ্য ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। তবে শহরটির মোট ধনীদের মধ্যে আটজন নবাগত রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ প্রযুক্তি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যাদের মধ্যে জিন-লুই ভ্যান ডার ভেল্ড (৩.৯ বিলিয়ন ডলার), ক্রিপ্টো ব্যবসা ঈঊঙ ঞবঃযবৎ এবং ইরঃভরহবী-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। আছেন সোলিনা চাউ (৩.১ বিলিয়ন ডলার), যিনি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, হরিজন্স ভেঞ্চার, ফেসবুক, স্পটিফাই এবং জুম-এর মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম সারির বিনিয়োগকারীদের একজন।

 

মুম্বাই [ ভারত ]

মোট ধনকুবের : ৬৯ । নতুন যোগ হয়েছে : ১৩ জন । মোট সম্পদ : ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : মুকেশ আম্বানি (১১৬ বিলিয়ন ডলার) ।

ধনীদের আবাসস্থলের তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাই। রাজ্য বা শহরটির সবচেয়ে ধনী নাগরিকরা কেবলমাত্র তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার বাড়ায়নি, তারা ১৩ জন নতুন ধনকুবেরকেও এই তালিকায় স্বাগত জানিয়েছে। এমনিতে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর ভারতমাতার সবচেয়ে ধনী শহরের তালিকায় সবার ওপরেই রয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ের অবস্থান। শহরটিতে বসবাসরত মোট ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা ৬৯ জন। তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার। শহরটিতে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির (১১৬ বিলিয়ন ডলার) বসবাস। সেই সঙ্গে শাপুর মিস্ত্রিও (৯.৯ বিলিয়ন ডলার) থাকেন এই নগরীতে। যিনি একজন আইরিশ নাগরিক। কিন্তু এই ধনী ব্যক্তি মুম্বাইভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্মাণ জায়ান্ট শাপুরজি পালোঞ্জি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ভারতের সবচেয়ে ধনী ২৫ ব্যক্তি বা কোটিপতির শেকড় বিবেচনায় বহু অতিধনী কিংবা বিলিনিয়ারের বসবাস মুম্বাই নগরীতে। যাদের অনেকের ব্যবসার গোড়াপত্তনও হয়েছে এই শহরে।

 

সাংহাই [ চীন ]

মোট ধনকুবের : ৫৪ । নতুন যোগ হয়েছে : ১১ জন । মোট সম্পদ : ১৬৭ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : কলিন হুয়াং (৩৮.৯ বিলিয়ন ডলার) ।

নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের সাতটি শহর বা রাজ্য ২০২৪ সালের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তন্মধ্যে তিনটি শহর রয়েছে বিশ্বের সেরা ১০ ধনীর শহরের তালিকায়। তন্মধ্যে অন্যতম চীনের সাংহাই সিটি। ধনীদের অন্যতম পছন্দের শহর। সেরা দশের তালিকায় সপ্তম স্থানে থাকলেও চীনের বাণিজ্যিক এই রাজ্যটি চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ধনাঢ্য ব্যক্তি হারিয়েছে। আগের বছর যেখানে ৬৫ ধনীদের বসবাস ছিল, সে সংখ্যাটি এখন ৫৪-তে নেমে এসেছে। আর তালিকায় যারাও রয়েছেন- তাদের অর্ধেকের বেশি ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০২৩ সালের তুলনায় কম। অন্যান্য চীনা শহর যেমন- বেইজিংয়েও একইভাবে ধনীদের সংখ্যা কমে এসেছে। এত কিছুর পরও এ বছর বেইজিং ধনীদের শহরের তালিকায় রয়েছে। এমনকি রাজ্যটি নতুন করে আরও ১১ জন ধনীর দেখা পেয়েছে। যাদের বেশির ভাগই প্রযুক্তি শিল্পে ব্যাপক চমক দেখিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। আর শহরের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। সাংহাইয়ের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা হলেন কলিন হুয়াং (৩৮.৯ বিলিয়ন ডলার), যিনি ই-কমার্স জায়ান্ট পিপিপি হোল্ডিংসের প্রতিষ্ঠাতা। এ বছর তার সম্পদের পরিমাণ ৮.৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শহরে বসবাসরত অতিধনীদের সম্মিলিত সম্পদ ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

সিঙ্গাপুর সিটি [ সিঙ্গাপুর ]

মোট ধনকুবের : ৫২ । নতুন যোগ হয়েছে : ছয়জন । মোট সম্পদ : ১৫৬ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : এডুয়ার্ডো সাভারিন (২৮ বিলিয়ন ডলার) ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধনী নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশের বাণিজ্যিক স্থান হিসেবে ব্যবহৃত দেশটি আজ বৈশ্বিক অর্থনীতির ‘হাব’-এ পরিণত হয়েছে। ফলে দেশটিতে দিন দিন বসবাসে আগ্রহী ধনীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আসলে সিঙ্গাপুর সিটি বিশ্বের অসংখ্য অতিধনীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০২৩ সালে এই তালিকায় শহরটি ৯ নম্বরে ছিল। নতুন করে শহর-রাজ্যটিতে ছয়জন অতিধনীর দেখা মেলে। তাতেই শহরটি তালিকায় ৮ নম্বরে চলে আসে। এটি ধনী এডুয়ার্ডো সাভারিনের আবাসস্থল। যিনি ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তার সম্পদের পরিমাণ ২৮ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ত্রয়ী ধনাঢ্য ভাই বখতিয়ার করিম (১.৪ বিলিয়ন ডলার), বুরহান করিম (১.২ বিলিয়ন ডলার) এবং বাহারি করিম (১.২ বিলিয়ন ডলার) সিঙ্গাপুর সিটিতে বসবাস করেন। যারা একসঙ্গে ‘মুসিম মাস’ নামের একটি পাম অয়েল ফার্ম পরিচালনা করেন। এ ছাড়া উই ই চিওং (১.৬ বিলিয়ন ডলার), উই ই চাও (১.৩ বিলিয়ন ডলার) এবং ওয়ে ই লিম (১.৩ বিলিয়ন ডলার) এই শহরের অন্যতম ধনী বাসিন্দা। যারা ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতার নাতি।

 

লন্ডন [ ইংল্যান্ড ]

মোট ধনকুবের : ৬২ । নতুন যোগ হয়েছে : একজন । মোট সম্পদ : ৩২৬ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : লেন ব্লাভাটনিক (৩২.১ বিলিয়ন ডলার) ।

২০২২ সালে ধনীদের শহরের তালিকায় লন্ডনের অবস্থান ছিল ৪ নম্বর। কিন্তু ২০২৩ সালে তালিকায় একধাপ পিছিয়ে ৫ নম্বর, আর সবশেষ ২০২৪ সালে আরও এক ধাপ পিছিয়ে ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। ‘দ্য বিগ স্মোক’ এ বছর মাত্র একজন নব্য ধনকুবেরের দেখা পেয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরটি সবচেয়ে পরিচিত বাসিন্দাকে হারিয়েছে। নাম তার মোহাম্মদ আল ফায়েদ। যিনি লন্ডন ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডস-এর এক সময়ের মালিক। তার আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি দোদি আল-ফায়েদের পিতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। দোদি আল-ফায়েদ ছিলেন ব্রিটেনের প্রিন্সেস ডায়ানার প্রেমিক। তিনি ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। মোহাম্মদ আল ফায়েদ গেল বছর আগস্ট মাসে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান।

 

লস অ্যাঞ্জেলেস [ আমেরিকা ]

মোট ধনকুবের : ৫৩ । নতুন যোগ হয়েছে : ১৯ জন । মোট সম্পদ : ২২২ বিলিয়ন ডলার। ধনী বাসিন্দা : জন তু (১৩.৬ বিলিয়ন ডলার)।

লস অ্যাঞ্জেলেস দীর্ঘকাল ধরে দৃষ্টিনন্দন সৈকত, আবহাওয়া এবং সমৃদ্ধিশালী স্থানীয়দের জন্য পরিচিত। তবে কয়েক দশক ধরে হলিউডের নামিদামি তারকা এবং অতিধনীদের আনাগোনা শহরের জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যা আমেরিকার অন্যান্য স্বপ্নের রাজ্যগুলোর মতো এই শহরকেও ফোর্বসের (ঋড়ৎনবং) নতুন তালিকায় শীর্ষ দশে নিয়ে এসেছে। এই রাজ্যের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল বাস্কেকবল অ্যাসোসিয়েশনের (এনবিএ) সেরা খেলোয়াড় লেব্রন জেমস (১.২ বিলিয়ন)। হলিউডপাড়ার রিয়েলিটি শো তারকা কিম কার্দিশিয়ান (১.৭ বিলিয়ন) এবং সেরা গায়িকা রিহানা (১.৪ বিলিয়ন)।

 

বেইজিং [ চীন ]

মোট ধনকুবের : ৬৩ । নতুন যোগ হয়েছে : শূন্য । মোট সম্পদ : ২১১ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : ঝাং ইমিং (৪৩.৪ বিলিয়ন ডলার) ।

বেশ কয়েক বছর ধরে চীনের রাজধানী শহর বেইজিংও যেন ধনীদের পছন্দের শহর হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে ফোর্বসের সেরা ১০০ ধনীর শহর হিসেবে পরিচিত ছিল বেইজিং। আর সময় তখন ২০২১ সাল; সেবার ধনীদের পছন্দের শহরের তালিকায় সবার ওপরে ছিল চীনের এই রাজধানী শহর। যদিও তারা সে অবস্থানটি ধরে রাখতে পারেনি। তবে বিশ্বের অন্যান্য ধনী শহরের মতো চীন আজও সেরা ধনীদের আবাসস্থল। বিশ্বের ৬৩ জন সেরা ধনী ব্যক্তি বেইজিংয়ে বসবাস করছেন। নতুন কোনো অতিধনীর দেখা পায়নি বেইজিং। উপরন্তু চীনের অর্থনৈতিক সংগ্রাম অর্থাৎ অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিশ্বে বেইজিংয়ে বসবাসরত ধনীদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৪ শতাংশ কমে গেছে। এত কিছুর পরও এ বছর বেইজিংয়ে দুজন নবাগত ধনীর আবির্ভাব ঘটে। তাদের মধ্যে দাই ওয়েনইউয়ান (১.৬ বিলিয়ন ডলার), যিনি এআই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ৪চধৎধফরমস-এর প্রতিষ্ঠাতা-সিইও এবং ঝেং ফ্যান (১.৫ বিলিয়ন ডলার), লি অটোর পরিচালক, যা মূলত একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

 

সান ফ্রান্সিসকো [ আমেরিকা ]

মোট ধনকুবের : ৫০ । নতুন যোগ হয়েছে : ১৩ জন । মোট সম্পদ : ১৮৫ বিলিয়ন ডলার । ধনী বাসিন্দা : ডাস্টিন মস্কোভিটজ (১৮.৩ বিলিয়ন ডলার) ।

সিলিকন ভ্যালির শেকড় থেকে বহু অতিধনীর জন্ম, সান ফ্রান্সিসকোর সবচেয়ে ধনীরাও এর বাইরে নন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং আসানার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডাস্টিন মস্কোভিটজ (১৮.৩ বিলিয়ন ডলার) এবং ইভান ঝাওসহ (১.৫ বিলিয়ন ডলার) ছয়জন নবাগত অতিধনী বা ধনকুবেরের দেখা পেয়েছে সান ফ্রান্সিসকো। ইভান ঝাও আর কেউ নন, মার্কিন মুলুকের প্রোডাক্টিভিটি এবং ওয়ার্ক-অ্যাপস সফটওয়্যার ধারণার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে শহরটির মোট ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ জন। যাদের মধ্যে তালিকায় নতুন ছয়জন। তাদের সবার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৮৫ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় আছেন মিশেল জাটলিন (১.২ বিলিয়ন ডলার), যিনি ইন্টারনেট স্ট্রাকচার এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। আছেন ওপেন এআই-এর প্রধান এবং প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী স্যাম অল্টম্যানও (১ বিলিয়ন ডলার)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর