রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

ফরিদুর রেজা সাগর

জয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশের ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের সফলতার ইতিহাস প্রায় সমসাময়িক। আমরাও বেড়ে উঠেছি এই সাফল্যের সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনের পরপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ তার আপন পথ খুঁজে পায়। জাতীয়তাবোধে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-সবকিছুর অগ্রভাগে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় প্রধান ভূমিকা রেখেছে এই রাজনৈতিক দলটি। সকল সংগ্রামে, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। দলটির জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে। পরে কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। আমাদেরও একটা খাবার-দাবার-দোকান ছিল গুলিস্তানে। ঐতিহ্যবাহী খাবারের দোকান খাবার-দাবার। উল্টোদিকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। বিখ্যাত নেতারা নিয়মিত এই অফিসে যাতায়াত করতেন। মনে পড়ে আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, আবদুল জলিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকেও দেখেছি দু-একবার। গাজীপুরের আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আইভি রহমান, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরীসহ অনেক নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী আসতেন খাবার-দাবার-এ। খাবার-দাবার রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব তৈরি হয়।

দুই

পিঠা ঘর স্থাপিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়। আওয়ামী লীগ ষাট দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় গুলিস্তান এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় খাবার-দাবার পিঠা ঘর। তখন মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, নবাবপুর এলাকায় কোনো ভালো রেস্টুরেন্ট ছিল না। খাবার-দাবার এই বিশাল এলাকায় প্রথম অভিনব রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টের স্লোগান ছিল বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। রেস্টুরেন্টটি ঊনসত্তরে উদ্বোধন করেন কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রমুখ। খাবারের মেনুতে ছিল ষোলআনা বাঙালিয়ানা। এ রেস্টুরেন্টের মূল চেতনায় ছিল আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। চালচলনে পোশাকে-আশাকে মুখের ভাষায় বাঙালি হতে হবে এই ব্রত ও আদর্শ নিয়ে জেগে ওঠে ষাট দশকের বাংলাদেশের মানুষ। তখন পার্টি অফিসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের নেতা-কর্মীদের পদচারণ ছিল। তাদের অনেকেই খাবার-দাবারে আসতেন। চা-পানি ছাড়াও মধ্যাহ্নভোজে শামিল হতেন। সে সময় অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয় আজও অব্যাহত আছে। আমার বাবা প্রয়াত ফজলুল হক ষাট দশকে খাবার-দাবার পিঠা ঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এ দেশের প্রথম সিনেমা-বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তিনি এ দেশের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র সান অব পাকিস্তান-এর পরিচালক। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কথিকা পাঠ করতেন। আকাশবাণীতে একাত্তর সালে যুদ্ধ চলাকালীন প্রথম নাটক ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ লিখেছিলেন তিনি। আমার বাবার প্রিয় এক বন্ধু ছিলেন সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত এমপি ফজলুল করিম। তিনি ঢাকা এলে আমাদের বাসায় থাকতেন। আমার মনে আছে আমাদের বাসার নেমপ্লেটে লেখা থাকত ফজলুল করিম এমপি ঠাকুরগাঁও। অর্থাৎ আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে আওয়ামী ঘরানায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। আমার জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে পরিবারে একটি দলের নামই আমি শুনেছি তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। খুব শৈশবেই বুঝেছিলাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা কখনোই সম্ভব ছিল না। বাবা ফজলুল হক, মা প্রখ্যাত লেখিকা রাবেয়া খাতুন তাঁরা ছোটবেলা থেকেই আমাদের বড় করেছেন বাঙালি আদর্শবাদে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা আমাদের ভিতর প্রথিত করেছেন। পরিবারের কাছ থেকে সব সময় উচ্চ আদর্শের শিক্ষা পেয়েছি। যা আওয়ামী লীগের আদর্শ ও শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত।

আমার বাবা ফজলুল হক ছিলেন পুরোদস্তুর বাঙালি। খাবার-দাবার পিঠা ঘরে তিনি চালু করলেন খিচুড়ি, হাঁসের মাংস, কই মাছ, ডাল-ভাত, মাছ-মাংস। এ ছাড়াও খাবার-দাবার পিঠা ঘরে পাওয়া যেত নানা ধরনের দেশীয় পিঠা এবং গরম জিলাপি। অভিনব মেনু-একেবারেই ভিন্ন রকম পরিবেশনা। ’৭১-এ এই রেস্টুরেন্ট লুট হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে রেস্টুরেন্ট। সত্তর দশকের শেষে আবার চালু হয়ে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খাবার-দাবার পিঠা ঘর। সত্তর দশকের শেষের দিকে ও আশির দশকজুড়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসেবে লড়াই-সংগ্রামে রাজপথ দখল করে রাখে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার শোক কাটিয়ে আওয়ামী লীগ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে, গণমানুষের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে আওয়ামী লীগের সংগ্রাম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কোনো ধরনের আপস করেনি কখনো। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তপাতের পর গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সত্তর ও আশির দশকে আওয়ামী লীগের অনেকেই নির্বাচিত হতেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে-পার্টি অফিস থেকে অনেক নেতা-কর্মী খেতে আসতেন। অনেক যত্ন করে আমরা চেষ্টা করতাম সেই সংসদ নেতাদের আপ্যায়িত করতে। আমরাও আওয়ামী লীগের ভাব ও আদর্শের সঙ্গে একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ সব যেন এক সূত্রে গাঁথা।

তিন

সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের অবদান শতভাগ। পরবর্তীতে বাংলাদেশ গঠনে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ প্রধান ভূমিকা রাখে। এসব তো ইতিহাসে সত্য। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ চিরস্থায়ী হয়ে আছে। আশির দশকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববরেণ্য নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয়। শেখ হাসিনা তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন বাঙালি জনগণের জন্য। গণতন্ত্র ও জনসেবা তাঁর জীবনের প্রধান ব্রত। আশি ও নব্বই দশকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়মিত আসতেন। আলোচনা সভা, সেমিনারে অংশ নিতেন। তখন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েই খাবার-দাবারের কফি খেতে চাইতেন। আমরাও অনেক যত্ন করে নেত্রীর জন্য কফি বানিয়ে পাঠাতাম। এভাবে আওয়ামী লীগ ও দলের প্রধানের সঙ্গে আমাদের নৈকট্য স্থাপন হয়। আমরাও এ দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের মতো আওয়ামী লীগের অংশ হয়ে উঠি। আওয়ামী লীগ আমাদের স্বপ্নের সফলতা। আমাদের সুন্দর সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। জাতির পিতার স্বপ্নকে তিনি লালন করেন। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম সুখী সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।

বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। প্রমত্ত পদ্মায় সেতু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মালিক হয়েছে বাংলাদেশ। ছিটমহলে আলো জ্বলেছে। পাহাড়ে শান্তি এসেছে। সাগরের সীমানা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর তলদেশে টানেল হয়েছে। মেট্রোরেলের জগতে প্রবেশ করেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গড় আয় বেড়েছে, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট কোথায় হয়নি উন্নয়ন? আর এসবই হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার হাত ধরে। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্যই কাজ করে যার কারণে বারবার দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে শান্তি থাকে। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচবে বাঙালি।

জয় হোক শেখ হাসিনার। জয় হোক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর