রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্ববিখ্যাত ঘড়ি

আবদুল কাদের

বিশ্ববিখ্যাত ঘড়ি

ঘড়ি তো সেদিনের আবিষ্কার! খ্রিস্টের জন্মের হাজার চারেক বছর আগে। তবে কালের পরিক্রমায় পৃথিবীর বুকে আজও মিলবে প্রাচীন সব স্থাপনা; যার দেয়ালে সাঁটানো আছে বিশাল দেয়াল ঘড়ি। এই ঘড়িগুলো কেবল সময়ের নির্দেশনা দেয় না, তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের শিল্পচর্চার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। রইল তেমনি কয়েকটি প্রাচীন এবং দৃষ্টিনন্দন ঘড়ির বিস্তারিত তথ্য...

 

মক্কা রয়্যাল ক্লক

আরব্য রজনীর এক ঐতিহ্য

মুসলিম সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন সৌদি আরবের বিখ্যাত ‘মক্কা রয়্যাল ক্লক টাওয়ার’। মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে ৫০ মিটার দূরেই অবস্থিত ‘আবরাজ-আল-বাইত’ হোটেলের ওপর নির্মিত ঘড়িটি স্থাপিত, যা ১৩০ তলা ওপরে! এমনকি ঘড়িটি লন্ডনের বিখ্যাত বিগ বেনের চেয়েও ছয় গুণ বড়। গ্রিনিচ মান সময় বা গ্রিনিচ মান টাইম-এর বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ‘মক্কা টাওয়ার’। ৩৬ হাজার টন ওজনের ঘড়িটির নকশা করেছেন জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের স্থপতি। সুইস ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ২৫০ জন অভিজ্ঞ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে এই ঘড়ি স্থাপন করতে সময় লেগেছে আট বছর। ২০০৪ সালে ক্লক টাওয়ারটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, আর শেষ হয় ২০১১ সালে। এর ব্যাস ৪৩ মিটার। মাটি থেকে উচ্চতা ৬০০ মিটার এবং এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কার্বন ফাইবার। চতুর্মুখী ঘড়িটির চারপাশে করা হয়েছে মোজাইকের কারুকার্য করা শিলালিপি; যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দগুচ্ছ। ঘড়ির ভিতরে বিভিন্ন রঙের লেখাগুলো বসানো হয়েছে ১৪ হাজার কাচের টুকরোর সমন্বয়ে। প্রতিটি কাচের ওজন ১৬ টন; যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। দিনে ও রাতে ভিন্ন ভিন্ন রং ধারণ করে এই কাচগুলো।

 

গথিক রিভাইভাল

ডিউকের স্মরণে ঘড়ি

জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত গথিক রিভাইভাল। পুরো নাম- গথিক রিভাইভাল নিউটাউন হল। মিউনিখের প্রাণকেন্দ্র মারিয়েনপ্ল্যাৎসের পর্যটক আকর্ষণীয় ঘড়ি। ২৬০ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটি রাথাউস গ্লোকেনস্পিয়েলের বাড়ি, যেখানে ৪৩টি ঘণ্টা এবং ৩২টি চিত্র রয়েছে। টাওয়ারটি ওপরের অংশে প্রতিদিন ১৬ শতকের ডিউক উইলহেম ভি-এর বিয়ের গল্প বলা হয়। কথিত আছে, সুখী দম্পতির সম্মানে বাভারিয়া (সাদা ও নীল) এবং লোথ্রিনজেন (লাল ও সাদা) প্রতিনিধিত্বকারী ঘোড়ার পিঠে আজীবন নাইটদের সঙ্গে লড়াই করে। তবে সে লড়াইয়ে বাভারিয়ান নাইট প্রতিবার জয়ী হয়। একই সময় নিচের অংশে কুপাররা শ্যাফ্লার্টানজ বা কুপারদের নৃত্য পরিবেশন করে। ঐতিহ্য অনুসারে, মিউনিখে নাচটি সঞ্চালিত হয় প্রতি সাত বছরে একবার। ঘড়িটি ১৯০৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে শহরের ৮৫০তম জন্মদিনের আগে ২০০৬-০৭ সালে এর মেরামতও করা হয়েছিল।

 

বিগ বেন, লন্ডন

ইউরোপের বিখ্যাত দেয়ালঘড়ি

লন্ডনের ‘বিগ বেন’, পৃথিবীখ্যাত ঐতিহাসিক ঘড়ি। যার নাম দ্য ক্লক টাওয়ার। এই ঘড়িটিকে বলা হয় দেয়ালে ঝুলানো সবচেয়ে বিখ্যাত ঘড়ি। তবে যে ভবনে ঘড়িটি রয়েছে, তার প্রকৃত নাম হলো এলিজাবেথ টাওয়ার। স্থানীয়দের কাছে ঘড়িটি ‘ভয়েস অব ব্রিটেন’ নামেও সর্বাধিক পরিচিত। ঘড়িটি প্রতি ঘণ্টায় বেজে উঠে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের হাউস অব পার্লামেন্টের অংশ। বিখ্যাত স্থানটি যুক্তরাজ্যের নববর্ষ উদযাপনেরও কেন্দ্রস্থল। ঘড়িটি দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ‘দ্য ক্লক টওয়ার’ ভ্রমণে আসেন। ঘড়িটির উচ্চতা প্রায় ৯৬ মিটার। বিখ্যাত স্থাপনাটি নিও গথিক শৈলীতে নির্মিত। এর চারিদিকে চারটি ঘড়ি রয়েছে। ‘ক্লক টাওয়ারটি’র নকশা করেছিলেন অগাস্টাস পুগিন। ১৮৫৯ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। টাওয়ারটির চূড়ায় আরোহণ করতে সিঁড়ির ৩৯৩টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। লন্ডনের কেন্দ্রে টেমস নদীর তীরে এটি অবস্থিত। ১৬৪ বছরের বেশি পুরনো টাওয়ারটির ডাকনাম ‘১৩ টন গ্রেট বেল’। তবে এটি বিগ বেন নামেই সুপরিচিত। অনেকের কাছে বিগ বেন ‘লন্ডন বেল’ বলেও পরিচিত। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের রানীর সিংহাসন আরোহণের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিখ্যাত ‘বিগ বেন’ ঘড়ির টাওয়ারের নাম পাল্টে এলিজাবেথ টাওয়ার রাখা হয়। যদিও অ্যা ইউগভ-এর এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধেক নাগরিক বিগ বেনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মাত্র ৩০ ভাগ নাগরিক এটি সমর্থন করেছেন। ১৩.৭ টন ওজনের ঘড়িটি দিনে চার ঘণ্টার ব্যবধানে বেজে উঠত। কিন্তু ২০১৭ সালে ভুবনখ্যাত ‘ক্লক টাওয়ার’টি স্তব্ধ হয়ে যায়। মূলত সংস্কারের জন্য তখন সেটিকে বন্ধ রাখা হয়। এ সংস্কার কার্যক্রম ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা।

 

ফিলাডেলফিয়া সিটি হল

এক কালের সবচেয়ে লম্বা ঘড়ি!

বিখ্যাত ঘড়িটি পেনসিলভানিয়া শহরের আকর্ষণ। যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম নগরী পেনসিলভানিয়ায় অবস্থিত। এর আশেপাশে রয়েছে আমেরিকান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিলর ভবন, মেয়রের অফিস, এমনকি কোর্ট হাউস। ফিলাডেলফিয়ার কোর্টহাউস পেনসিলভানিয়ার প্রথম বিচারিক ভবন হিসেবে পরিচিত। ১৮৯৪ সাল থেকে ১৯০৮ সাল; এ সময় অবধি ‘ফিলাডেলফিয়া সিটি হল’ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবনের খেতাব ধরে রেখেছিল। ভবনটির উচ্চতা প্রায় ৫৪৮ ফুট (১৬৭ মিটার)। এই টাওয়ারে বিশালাকারের চারটি ঘড়ি আছে- যা টাওয়ারের চারপাশে অবস্থিত। প্রত্যেকটি ঘড়ির ব্যাস ৮ মিটার (২৬ ফুট)। ১৮৭১ সালে ভবনটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১৯০১ সালে শেষ হয়। ইউরোপীয় দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের আদলে টাওয়ারটি নির্মিত। এর নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইট, সাদা মার্বেল এবং চুনাপাথর। যার নকশাও করেছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত স্থপতি জন ম্যাক আর্থার জুনিয়র এবং থমাস উস্টিক ওয়াল্টা। ১৮৯৪ সালে নির্মাণাধীন অবস্থায় টাওয়ারটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের খেতাব পায়। তবে এর আগে একই স্বীকৃতি ছিল ওয়াশিংটন মনুমেন্ট এবং আইফেল টাওয়ারের দখলে। ১৯৭৬ সালে আমেরিকার ঐতিহাসিক টাওয়ার এবং তার ঘড়িগুলো বিখ্যাত হওয়ার স্বীকৃতি অর্জন করে। এ ছাড়াও ২০০৬ সালে টাওয়ারটি আমেরিকার জাতীয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং টাওয়ারের খেতাব পায়। আর সে খেতাব প্রদান করেছিল আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন।

 

অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ক্লক : মহাজাগতিক

বিখ্যাত ঘড়ি

প্রাগের ঐতিহাসিক ‘অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ক্লক’। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে অবস্থিত টাউন হলের দেয়ালে খচিত জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক ঘড়িটি গোথিক প্রযুক্তির এক নির্দেশনা। যা স্থানীয়দের কাছে ‘টাউন হল ক্লক’ নামেও পরিচিত। এটি ‘প্রাগ অরলজ’ নামে পরিচিত। এটি একটি মধ্যযুগীয় মহাজাগতিক ঘড়ি। অর্থাৎ জ্যোতিষীরা সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।

১৪১০ সালে বিখ্যাত ঘড়িটির নির্মাণ প্রক্রিয়া কয়েক ধাপে শেষ হয়। কথিত আছে, ১৪১০ সালে স্থাপিত এই ঘড়ি নির্মাণের পর নকশাকারীর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। যেন এমন নকশার ঘড়ি আর কেউ নির্মাণ করতে না পারে।

 

স্ট্রাসবার্গের

জ্যোতির্বিদ্যার ঘড়ি

জার্মানির স্ট্রাসবার্গ ক্যাথেডেলের জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘড়িটি শিল্প এবং বিজ্ঞানের এক চমৎকার উদাহরণ। এক সুইস স্থপতি বিখ্যাত এই ঘড়িটির নকশা করেছিলেন। যা ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগের অন্যতম নির্দশন। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় এটি চালু হয়। ঘড়িটির চারপাশে শিশু, তরুণ, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রবীণদের মূর্তি রয়েছে। মূর্তি এবং তার আশপাশের অলঙ্কৃত ক্লক ডায়ালগুলো মহাজাগতিক সময় এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা বিষয়কে নির্দেশ করে। ১৫৭৪ সালে যখন স্ট্রাসবার্গের জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘড়িটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল, তখন একে জার্মানির সাতটি আশ্চর্যের একটি বিবেচনা করা হতো। ঘড়িটির তারিখ গণনা করে মহাকাশীয় সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো- এর একটি ডায়াল রয়েছে, যা স্পষ্ট সৌর সময় নির্দেশ করে (সূর্য ও চাঁদের গতিবিধি)। ঘড়িতে খালি চোখে দৃশ্যমান ছয়টি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ এবং চাঁদের গতিবিধি নির্দেশনার জন্য আলাদা একটি ডায়াল রয়েছে।

 

ওয়ার্ল্ড টাইম ক্লক

ভিন্ন ভিন্ন স্থানের সময় জানান দেয়

আধুনিক নকশায় খচিত বার্লিনের আলেকজান্দ্রিয়া প্লাৎসে স্থপিত ‘ওয়ার্ল্ড টাইম ক্লক’ বার্লিনবাসী এবং দর্শনার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় মিলনস্থল। বিখ্যাত ঘড়িটি বার্লিনের আলেকজান্দ্রিয়া প্লাৎসের সমাজতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণের সময় নকশাবিদ এরিক জন এর নকশা করেছিলেন। নয় মাসের নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ সালে ঘড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ঘড়িটি মূলত একটি স্তম্ভের ওপরে নির্মিত। যেখানে ২৪টি কোণসহ একটি বিশালাকার সিলিন্ডার রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে খচিত ঘড়ির ওপরের অংশ- আমাদের সৌরজগতকে চিত্রায়িত করে। আর নিচের নকশাখচিত সিলিন্ডার বিশ্বের ২৪টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানের সময় নির্দেশনা করে। অর্থাৎ পৃথিবীর ২৪টি অঞ্চলের সময়কে উপস্থাপন করে। যেখানে ভিন্ন ভিন্ন এসব স্থানের সময় এবং অঞ্চল বা শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নামগুলো অ্যালুমিনিয়াম প্লেটে খোদাই করা রয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ঘড়িটি বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থাপনায় স্থান পেয়েছে।

 

টাওয়ার অব ওয়াইন্ডস

পানির মাধ্যমে চালিত ঘড়ি

এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ঘড়ি। যা এথেন্সের রোমান অ্যাগোরার অষ্টভুজ পেন্টেলিক মার্বেল ক্লক টাওয়ার। তবে মূলত এটি হরোলজিন বা ‘টাইমপিস’ হিসেবে কাজ করে। মার্বেলে নির্মিত ৪০ ফুট লম্বা ক্লক টাওয়ারটির অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। বিশ্বের প্রথম আবহাওয়া কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত টাওয়ার অব ওয়াইন্ডস। এর উচ্চতা ১২ মিটার এবং এর ব্যাস ৮ মিটার। জলের মাধ্যমে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে চালানো হতো প্রাচীনতম এই ঘড়িটি। সে জন্যই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ঘড়িটি ‘ওয়াটার ক্লক’ নামে সর্বত্র পরিচিতি। ঘড়িটির নকশা করেন সাইরাসের অ্যান্ড্রোনিকাস। ৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সূর্যঘড়ির পরেই ওয়াটার ক্লকের আবির্ভাব। অবশ্য এই টাওয়ারের ওপরেও একটি সূর্যঘড়ি রয়েছে।

 

সেভিয়র টাওয়ার

রেড স্কয়ারের ঘড়ি

দুর্গঘেরা মস্কোর কথা বললে চলে আসে সেভিয়ার টাওয়ারের নাম। যা স্প্যাসকায়া টাওয়ার নামেও পরিচিত। ঘড়িটি রেড স্কয়ারের সেইন্ট বাসিলের কাছাকাছি অবস্থিত। এটি ১৪৯১ সালে নির্মিত। সবশেষ সংস্কার হয় ১৬২৫ সালে। প্রাথমিকভাবে ক্রেমলিনের চার্চ অব ফ্রোল এবং লাভরের নামে টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়েছিল ফ্রোলভস্কায়া টাওয়ার, যা এখন আর নেই। ক্লক টাওয়ারটি নকশা করেন ইতালির স্থপতি পিয়েত্রো আন্তোনিও। ২৩৩ মিটার উচ্চতার টাওয়ারটিতে ১৭০৬ সালে পিটার দ্য গ্রেট আবারও নতুন করে ঘড়ি বসান। এই ঘড়িটির রিম, কাঁটা ও সময় নির্দেশক সংখ্যাগুলো সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি। মোট ২৮ কেজি স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছিল এই ঘড়ি নির্মাণে। ঘণ্টাসহ ঘড়িটির ওজন ২৫ টন! ১৯১৭ সালে এই ঘড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক বছর পর ঘড়িটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। চতুর্মুখী এই ঘড়ির ডায়ালের প্রতিটির ব্যাস ৬ মিটারেরও বেশি। এর একেকটি ঘণ্টার কাঁটা প্রায় তিন মিটার লম্বা। মিনিটের কাঁটাটি প্রায় সাড়ে তিন মিটার লম্বা। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এলাকাটি ঘুরে দেখার সঙ্গে ঘড়িটিও দেখতে আসেন।

 

পিস টাওয়ার

সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত ঘড়ি

এটি কানাডার অটোয়া শহরের পার্লামেন্টারিয়ান কমপ্লেক্সে অবস্থিত। স্থাপনাটি কানাডার বিজয় ও শান্তির প্রতীক। যা অফিশিয়ালি টাওয়ার অব ভিক্টোরি অ্যান্ড পিস নামে পরিচিত। জানা গেছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৬৫ হাজার কানাডিয়ান সৈনিকের স্মরণে ক্লক টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। ১৯১৬ সালে পিস টাওয়ারে আগুন লাগে। ফলে ঘড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাওয়ারটির বেশির ভাগ সেন্টার ব্লকসহ সংসদের লাইব্রেরি টিকে ছিল তখন। পরে ঘড়িটি ভিক্টোরিয়া টাওয়ারে প্রতিস্থাপন করা হয়। মূলত এটি কানাডার প্রাচীন ঐতিহ্য। টাওয়ারটির উচ্চতা ৩২০ ফুট। টাওয়ারের যে ঘড়ি রয়েছে তা ১৬ ফিট লম্বা। ঘড়ির সময় জানান দেওয়ার জন্য রয়েছে মোট ৫৩টি বেল বা ঘণ্টা; যা আকারে তিনটি বিশালাকৃতির হাতির সমান। ঘড়ির নকশা করেন জিন মার্চ্যান্ড এবং জন পিয়ারসন।

 

জিৎস্লগ ক্লক টাওয়ার

সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীন ঘড়ি

সুইজারল্যান্ডের আকর্ষণ জিৎস্লগ ক্লক টাওয়ার। যা বিশ্বের প্রাচীন ঘড়িগুলোর একটি। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ায় এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। সুইসবাসীর কাছে যা শহরের নিরাপত্তাঘাঁটি, কারাগার, ক্লক টাওয়ার এবং একই সঙ্গে নাগরিক স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিচিত। টাওয়ারের ঘড়িটি মূলত পঞ্চদশ শতকের জ্যোতির্বিদ্যার ঘড়ি। এর মাধ্যমে সাধারণ সময়ের পাশাপাশি মহাজাগতিক সময়ের ধারণাও পাওয়া যায়। ১২১৮ থেকে ১২২০ সালের মধ্যে বিখ্যাত ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়। তখন টাওয়ারটি ছিল মাত্র ১৬ মিটার লম্বা। পরে ১২৭০ সালে টাওয়ারের উচ্চতা ৭ মিটার বাড়ানো হয়। ঘড়ির ওপরের দরজা ১৫ শতকে বানানো হয়। দীর্ঘ ৮০০ বছরের নির্মাণ অস্তিত্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসক এই ঘড়ি সংস্কার করেন এবং একেকজন এর একেক রূপ দেন। আজও বিখ্যাত ‘ক্লক টাওয়ার’টি সুইজারল্যান্ডের প্রাচীনতম স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত। ইউনেস্কো বার্নকে ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করার পর থেকে টাওয়ারটির গুরুত্ব বেড়েছে। বর্তমানে স্থানটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। জিৎস্লগ ক্লক টাওয়ারের ফাদার টাইম ঘণ্টায় ঘণ্টায় কাচ উল্টায় এবং সময় জানান দেওয়ার জন্য হাতুড়ি মারা হয়। এই ঘড়ির সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলো- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় পুতুলের বিভিন্ন চরিত্ররা এসে এখানে নাচ দেখায়; যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর