শিরোনাম
সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

রহস্যঘেরা জাহাজের কথা

রহস্যঘেরা জাহাজের কথা

ভূতুড়ে সব কাণ্ড ঘটতে থাকে কুইন মেরিতে

ভূতুড়ে জাহাজ হিসেবে খ্যাতি আর আলোচনার শীর্ষে পৌঁছালেও এমন সব কা-কীর্তির আগ থেকেই বিলাসবহুল জাহাজ হিসেবে আলাদা নাম করেছিল বৃহৎ জলযান কুইন মেরি। সুবিশাল আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার কাজে ব্যবহƒত জাহাজটি ১৯৩৬ সাল থেকে সমুদ্রের বুকে চলাচল শুরু করে। আর যাত্রা শুরুর অল্পদিনের মধ্যেই এটি ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় সমুদ্র রুটে বেশি চলাচলের খেতাব অর্জন করে। এ জাহাজটি একদিকে যেমন বৃহৎ, আধুনিক এবং বিলাসবহুল ছিল, ঠিক তেমনি এটি তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে দ্রুতগামী জাহাজ ছিল। কুইন মেরি জাহাজটি মাত্র পাঁচ দিনে সুবিশাল আটলান্টিক পাড়ি দিতে পারত। যে জাহাজের প্রাপ্তির খাতায় এতসব অর্জন, সেটি কিন্তু আস্তে আস্তে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে। কারণ যাত্রা শুরুর একেবারে প্রথম দিন থেকেই জাহাজটিতে অদ্ভুত সব কা- ঘটতে শুরু করে। যাত্রার প্রথম দিনেই জাহাজটির ক্রু, যাত্রীসহ প্রত্যেকেই এর ভিতরে রহস্যময় ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু শুরুর দিকে এদের কথা কেউ সেভাবে পাত্তা দেয়নি। কুইন মেরির এ রহস্যময় আচরণের কথা সর্বপ্রথম বড় পরিসরে তুলে ধরেন কুইন মেরিতে চাকরিরত ১৭ বছরের এক যুবক। কুইন মেরির ইঞ্জিন রুমে কয়লা সরবরাহ করা ছিল তার কাজ। সে জানায়, জাহাজটির করিডোরে একটি অস্পষ্ট ছায়াকে ব্যাগ পাইপ নামক বাঁশি বাজাতে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। এরপর অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। সবার সতর্ক দৃষ্টি থাকল কুইন মেরির দিকে। তাই বলে এদের যাত্রা কিন্তু বন্ধ হয়নি। এ ছাড়াও সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সময় অনেক যাত্রীই সাদা পোশাকধারী একজন নারী এবং আট থেকে নয় বছরের একটি মেয়েকে ডেকের ওপর দিয়ে ভেসে ভেসে চলতে দেখেছেন। জাহাজটির কেবিনে প্রেতাত্মা দেখা ও রহস্যময় শব্দ শুনেছেন বলেও দাবি করেন অনেকেই। কুইন মেরিকে ঘিরে এমন রহস্যময় প্রশ্ন আর অভিজ্ঞতার পাল্লা দিনের পরদিন কেবল ভারীই হতে থাকল কিন্তু কেউই এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে দিনের পর দিন জাহাজ বিষয়ে এমন অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারী হওয়ায় আস্তে আস্তে সারা বিশ্বেই কুইন মেরির এ রহস্যময়তার গল্প ছড়িয়ে পড়ে। রহস্যময় এ জাহাজটি আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে একে সৈন্যদের জাহাজে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একবার কুইন  মেরির প্রায় ৩০০ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। ধারণা করা হয়, এসব মৃত ব্যক্তির আত্মাই জাহাজটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে দ্য সিটি অব লং বিচ নামক একটি প্রতিষ্ঠান কুইন মেরিকে কিনে নেয় এবং জাহাজটিকে একটি ভাসমান হোটেল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কিন্তু হোটেল হওয়ার পরও এখানে রহস্যময় এ ঘটনাগুলো বারবার ঘটতে থাকে।

অদৃশ্য হয়ে যান যাত্রীরা

আরেকটি বিলাসবহুল ভূতুড়ে জাহাজ ছিল এমভি জয়িতা। এ জাহাজটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে তৈরি তৎকালীন সময়ের অন্যতম আধুনিক প্রযুক্তির একটি বিলাসবহুল মোটরচালিত নৌযান। জাহাজটির নকশা এমন ছিল যে, চাইলেও ডোবানো সম্ভব নয়। ১৯৩১ সালে রোনাল্ড ওয়েস্ট নামের এক চলচ্চিত্র পরিচালকের নির্দেশে এটি বানানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নৌযানটি কাজে লাগানো হয়। ১৯৫৫ সালে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে টোকিলাও দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয় জয়িতা। রওনা হওয়ার দুই দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার কথা থাকলেও জয়িতার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।  পাঁচ সপ্তাহ অনুসন্ধানের পর নৌযানটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেলেও মেলেনি কোনো যাত্রী। অক্ষত জাহাজ থেকে ভূতুড়ে ঘটনার মতোই গায়েব হয়ে যান যাত্রীরা।

ডুবে যায় এলিজা বেটেল

১৮৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় যাত্রা শুরু করা এলিজা বেটেল ছিল ইন্ডিয়ানা রাজ্যের মেয়র এবং অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তির বিলাস ভ্রমণের জন্য তৈরি বিশেষ একটি জাহাজ। ১৮৫৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের এক শীতের রাতে জাহাজটিতে দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজের প্রধান ডেকে আগুন লেগে দ্রুত গোটা জাহাজে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাঠের আবরণে মোড়ানো জাহাজটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঝড়ো  বাতাসের কারণে আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় ১০০ যাত্রীর মধ্যে ২৬ জন মারা যান। মুহূর্তের মধ্যেই সমুদ্রের ২৮ ফুট নিচে ডুবে যায় জাহাজটি। লোকমুখে শোনা যায়, পূর্ণিমার রাতে জাহাজটিকে পানির নিচ থেকে জ্বলন্ত অবস্থায় ভেসে উঠতে দেখা যায়। ভিতর থেকে ভেসে আসে গানের শব্দ। এই এক অপার রহস্য।

নবদম্পতির প্রেম জাহাজে খুন

ভূতুড়ে জাহাজের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে। বিশ্বের আলোচিত সব ভূতুড়ে জাহাজের অধিকাংশই যুক্তরাজ্যের। আর এর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত একটি জাহাজ হচ্ছে লেডি লোভিবোন্ড। এ জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন সাইমন রিড। ১৭৪৮ সালে ক্যাপ্টেন সাইমন রিড তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে পর্তুগালের উদ্দেশে রওনা হন। উদ্দেশ্য ছিল জাহাজে চড়ে নতুন স্ত্রী ও অন্যদের নিয়ে নিজের বিয়ে উদযাপন। কিন্তু জাহাজের আরেক কর্মকর্তা জন রিভারস সাইমনের স্ত্রীর প্রেমে পড়ে যান। তিনি নবদম্পতির প্রেম        সহ্য করতে পারলেন না। ফলে জন সাইমনকে খুন করে জাহাজের দায়িত্ব নিয়ে নেন। এরপর রহস্যজনকভাবে একে একে মারা যায় সবাই।  বলা হয়ে থাকে, ৫০ বছর পরপর নাকি জাহাজটির প্রেতাত্মা সমুদ্রে ভেসে ওঠে। সেই সঙ্গে ভেসে ওঠে মৃত মানুষও।

আউরাং মিডান

আউরাং মিডানের গল্প শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৪৭ সালে, যখন দুটি আমেরিকান জাহাজ একটি রহস্যময় কল পেয়েছিল। কলার তার পরিচয়ে বলেছিল, সে আউরাং মিডান নামের একটি ডাচ জাহাজের ক্রু। সে দাবি করে জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং ক্রুদের প্রত্যেকেই নাকি মরে গেছে। আর বাকি যে কজন আছে তারাও মরে মরে অবস্থা। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমি মরে যাচ্ছি বলে কল আইডেন্ডিফাই করার আগেই লাইন কেটে যায়। পরে দেখা গেছে আউরাং মিডান জাহাজটি অক্ষত থাকলেও এর প্রত্যেকে মরে পড়ে রয়েছেন।

অনেকে বলে, এখনো ভাসছে ফ্লায়িং ডাচম্যান

এটিকে ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ভূতুড়ে জাহাজ বলা হয়। সতের শতকের শেষ দিকের এ জাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন হ্যানরিক ভ্যানডার ড্যাকেন। অনেক ঝড়ের মধ্যেও তিনি উত্তমাশা অন্তরিপ ঘোরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জাহাজচালক অন্যদের কথা চিন্তা করে সেদিকে যেতে নারাজ হলে তিনি তাকে মেরে পানিতে ভাসিয়ে দেন। এখনো নাকি জাহাজটি সমুদ্রের ওপর ভাসতে দেখা যায়। অনেক খ্যাতিমান এবং অভিজ্ঞ নাবিকও সমুদ্রের ওপর ফ্লায়িং ডাচম্যানকে ভাসতে দেখেছেন বলে শোনা যায়। ফ্লায়িং ডাচম্যানকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বই, নাটক ও চলচ্চিত্রের গল্প।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর