সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

হত্যার শিকার যত আমেরিকান রাষ্ট্রপতি

ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতা হারিয়ে ফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করছেন। চলছে নির্বাচনি প্রচারণা। ভোট চাইতে গিয়ে সমাবেশে হামলার শিকার হয়েছেন তিনি।  বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টকে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল হামলাকারী। গুলি লাগে ট্রাম্পের কানে। রক্তাক্ত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর হামলার ইতিহাস বেশ পুরনো। এর আগে অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন কেউ কেউ...

 

জন এফ কেনেডি

১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর, রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছিল মার্কিনিদের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডির। কেনেডি ১৯৬১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন এক রাজনৈতিক সফরে যান প্রেসিডেন্ট কেনেডি। তিনি যখন মোটরগাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, সে সময় এক আততায়ী গুলি চালায়। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কেনেডি আধা ঘণ্টা পর হাসপাতালে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে স্কুল বুক ডিপোজিটোরির ছয় তলা ভবন থেকে তাঁকে গুলি করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার দিনই ভবনটির গুদামখানার কর্মচারী লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। যদিও অসওয়াল্ড হত্যার দায় স্বীকার করেননি, করাতেও পারেননি। ঠিক তার দুই দিন পর স্থানীয় এক নৈশ ক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি তাকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর থেকে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। কেনেডি হত্যাকান্ড নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ইতিহাসবিদরা এখনো লি হার্ভে অসওয়াল্ডের ব্যাপারে সন্দিহান। অনেক মার্কিনি বিশ্বাস করেন যে, কেনেডির হত্যার পেছনে কেবল এক ব্যক্তি জড়িত। আবার অনেকেই মনে করেন, কোনো মাফিয়া দল অথবা দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) কেনেডিকে হত্যা করেছে।

 

আব্রাহাম লিংকন

গৃহযুদ্ধ তখন শেষের দিকে। টানা পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ছিল দাসপ্রথা বাতিলের আরেকটা জয়। নিজেদের দেশে আরেকটা শুভক্ষণ যখন এগিয়ে আসছে তখন তো শান্তিতে থাকারই কথা। কিন্তু তা আর হলো না, আততায়ী জন উইকিস বোথের হাতে প্রাণ হারান আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে কমেডি শো দেখতে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি ফোর্ড থিয়েটারে। মাত্র ৩/৪ ফুট পেছন থেকে সরাসরি মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় আমেরিকার এই প্রেসিডেন্টকে। বোথ ছিলেন একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। দক্ষিণের কনফেডারেটের স্টেট অব আমেরিকার একজন সহযোগী। এর আগে একই বছরে বোথ ও তার ছয়জন সহকারী একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেসিডেন্ট লিংকনের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা চেয়েছিল, যদি লিংকনকে জিম্মি হিসেবে ধরে রাখা যায়, তাহলে তাঁর প্রাণের বিনিময়ে কনফেডারেটের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা কারাবন্দিদের ছাড়িয়ে আনা যাবে। কিন্তু তার এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। প্রেসিডেন্ট কোনো এক কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ওই স্থানে পৌঁছাননি। এরপরই তাদের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। তারা নতুন ছক কষতে শুরু করে। তখন থিয়েটারে যে কনফেডারেটের গুপ্তচর ছিল কেউ জানত না। তাই প্রবেশ নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। যখন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ সহকারে নাটক দেখছিলেন, তখনই বোথ পেছন থেকে তাঁর মাথার বাম পাশে গুলি করে। খুব কাছে থেকে গুলি করায় তা চোখ দিয়ে বের হয়ে যায়। এর পরদিন অর্থাৎ ১৫ তারিখ সকাল ৭টা ২২ মিনিটে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়।

 

উইলিয়াম ম্যাককিনলি

ম্যাককিনলি ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাফেলোতে বক্তব্য দেওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হন। বক্তব্য শেষে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন। সেসময় লিয়ন এফ সলগোস নামক এক ব্যক্তি তাঁর বুকে গুলি চালান। চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন, ম্যাককিনলি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু গুলির ক্ষতগুলোর চারপাশে গ্যাংগ্রিন তৈরি হয়। ম্যাককিনলি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার ছয় মাস পর ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান।

 

জেমস গারফিল্ড

গারফিল্ড হলেন হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কার্যভার নেওয়ার ছয় মাস পরই তাঁকে হত্যা করা হয়। জানা গেছে, ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেসময় চার্লস গুইটো নামক এক আততায়ী তাঁকে গুলি করেন। কয়েক সপ্তাহ হোয়াইট হাউসে চিকিৎসা নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে নিউজার্সিতে নিয়ে গেলে গারফিল্ড মারা যান। গারফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার। আর চার্লস গুইটোকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও ১৮৮২ সালের জুনে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।

 


বেঁচে গেছেন যারা


থিওডোর রুজভেল্ট, ২৬তম প্রেসিডেন্ট : ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। ১৯১২ সালে নির্বাচনি প্রচারণাকালে তাঁকে গুলি করা হয়। এক সেলুনের কর্মী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। জানা যায়, রুজভেল্টের পকেটে ভাঁজ করে রাখা ৫০ পৃষ্ঠার বক্তব্যের অনুলিপি ও ধাতব চশমার কেস গুলির গতি কমিয়ে দেওয়ায় গুরুতরভাবে আহত হননি তিনি। হামলার পরও সমাবেশে বক্তব্য দেন রুজভেল্ট।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট : ৩২তম প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৩ সালে মিয়ামিতে গুলি করা হয় মার্কিন এই প্রেসিডেন্টকে। বন্দুকধারী গুইসেপ্পে জাঙ্গারা রুজভেল্টকে হত্যা করতে না পারলেও শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাককে হত্যা করেন।

হ্যারি ট্রুম্যান : ৩৩তম প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মৃত্যুর পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন হ্যারি ট্রুম্যান। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসে তাঁর ওপর বন্দুক হামলা চালান পুয়ের্তো রিকান এক জাতীয়তাবাদী।

জেরাল্ড ফোর্ড : ৩৮তম প্রেসিডেন্ট সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৫ সালে দুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে হামলার আগেই একবার তা রুখে দেওয়া হয়। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর সান ফ্রান্সিসকোতেও তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে সেবার এক পথচারীর কারণে তিনি বেঁচে যান।

রোনাল্ড রিগ্যান : ৪০তম প্রেসিডেন্ট ১৯৮১ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে হিলটনের বাইরে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডি রিগ্যানের চেয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। পরে এই ব্যক্তি আমেরিকায় বন্দুক নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেন।

জর্জ ডব্লিউ বুশ : ৪৩তম প্রেসিডেন্ট বুশ ২০০৫ সালে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে তিবিলিসিতে একটি সমাবেশে যোগদান করছিলেন। সেসময় তাঁকে লক্ষ্য করে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ওই ঘটনায় ভøাদিমির আরুটিউনিয়ান নামক এক ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল।

বারাক ওবামা, ৪৪তম প্রেসিডেন্ট : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়। ২০১১ সালে হোয়াইট হাউসে তিনি হত্যাচেষ্টার শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তায় রয়েছে আলাদা বিশেষ বাহিনী। সিক্রেট সার্ভিস নামে গঠিত বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে আজীবন তাঁদের এই বাহিনী নিরাপত্তা দেয়।

বিশেষায়িত এই বাহিনীর নিরাপত্তা সত্ত্বেও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। সবশেষ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি সভায় হামলা হয়েছে। এতে রক্তাক্ত হয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর