রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বের উঁচু দালানের শহর

আবদুল কাদের

বিশ্বের উঁচু দালানের শহর
বিস্ময়কর হলেও পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত এবং সামাজিক উন্নয়নের ফলে ১৮ শতকের শেষের দিকে উঁচু ভবনের বিকাশ ঘটে। ১৮৫৭ সালে আমেরিকা তেমনি এক অট্টালিকা নির্মাণ করে সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীকালে এসব উঁচু উঁচু দালান অর্থনীতির উন্নতি, মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি স্থাপিত শহরগুলোকেও দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি...

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাড়ছে নগরায়ণ, বাড়ছে অর্থনীতি এবং আধুনিক নগরায়ণের ফলে বাড়তি মানুষের আবাসনের জন্য তৈরি হচ্ছে উঁচু উঁচু সব দালান। কিছু কিছু ভবন বা স্থাপনা এতটাই উঁচু যে, মনে হবে তা যেন আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এসব উঁচু দালানগুলোর জন্য সেসব শহরগুলো আলাদা পরিচিতি পাচ্ছে। আমেরিকার শহরগুলোয় নগরবিদরা ১৮৭০-এর দশকে উচ্চতর ভবন তৈরি করতে শুরু করেন। সে সময় তারা গৃহযুদ্ধের পরপরই ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছিলেন। চীনের মতো দেশের জন্য আকাশচুম্বী ভবনগুলো আরও বেশি অর্থপূর্ণ। কারণ- সেখানে সীমিত ভূমি এবং উল্লেখযোগ্য হারে জনসংখ্যার চাপ রয়েছে। মূলত ১৯ শতকের গোড়ায়- উন্নত দেশগুলোয় বিস্ময়কর সুউচ্চ ভবনের নির্মাণশৈলীর দেখা মেলে। আমেরিকার ‘শিকাগো’কে ‘আকাশচুম্বী ভবনের জন্মস্থান’ বলা আখ্যায়িত করা হয়। ১৮৮৫ সালে বিশ্ববাসী আমেরিকার বুকে প্রথমবারের মতো ‘হোম ইন্স্যুরেন্স বিল্ডিং’-এর নির্মাণ দেখেছিলেন। সে সময় উঁচু স্থাপত্যযুগের সূচনা হয় এবং ইস্পাত ফ্রেম দিয়ে নির্মাণ কৌশলে ব্যাপক বিপ্লব দেখা গেছে। আকাশচুম্বী এসব ভবন কেবল স্বতন্ত্র ভবনই ছিল না; এগুলো ছিল সবচেয়ে উঁচু এবং বৃহত্তর স্থাপনা। যদিও আজকাল অনেক বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকায়ও উঁচু দালানের দেখা মেলে। তবে অবশ্যই তা সীমিত। যেখানে স্থাপিত অফিসগুলোয় হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুবিধা মেলে। আজকাল আকাশচুম্বী স্থাপনা এবং আশপাশের এলাকাগুলো এক নান্দনিক ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে। ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট, লুডভিগ মিস ভ্যান ডের রোহে এবং ফ্রাঙ্ক গেহরির মতো স্থপতিরা তাদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্থানগুলোকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তোলেন। যেমন- স্পেনের বিলবাওতে অবস্থিত স্থপতি গেহরির নকশায় নির্মিত গুগেনহেইম মিউজিয়াম অনন্য এক মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত। তবে অ্যাড্রিয়ান স্মিথের নকশায় নির্মিত দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা আধুনিক এবং উদ্ভাবনের প্রতীক। আজকের বিশ্বের বেশির ভাগ প্রধান শিল্পোন্নত শহরগুলোর নিজস্ব অনন্য সুউচ্চ ভবন রয়েছে, যা সুবিশাল ভবন, অবকাঠামো এবং অবশ্যই সুদূরপ্রসারী আকাশচুম্বী ভবনগুলোর সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। কিন্তু কিছু মেট্রোপলিস বা নগরায়ণে আরও আকাশচুম্বী অট্টালিকার দেখা মেলে; যা অন্য যে কোনো স্থাপনাগুলোর মতো নয়। অফিস ভবন, আবাসিক টাওয়ার থেকে বিলাসবহুল হোটেল পর্যন্ত এমন সব সুবিধা নিয়ে আজকালের উঁচু দালানগুলো প্রতিটি শহরকে অনন্য এক পরিচিতি দিয়েছে।

 

শেনজেন, চীন

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ১২০

বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে শেনজেন হলো চীনের অর্থনৈতিক শহর। যেখানে প্রায় ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, চীনের এই শেনজেন শহরে ২০০ মিটারের বেশি ১২০টি ভবন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চীনাদের দৃঢ় সংকল্পে শেনজেন শহরটি ব্যাপক অগ্রগতির দেখা পেয়েছিল। আশ্চর্য হলেও সত্য, এই শহরের প্রতিটি কোণা সুউচ্চ ভবনে পরিপূর্ণ। যা অনন্য এক বিস্ময়। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে ৩০০টি উঁচু ভবন তৈরি হয়েছে। এক সময়ের ছোট্ট এই মাছ ধরার গ্রামটি আজ দক্ষিণ চীনের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত শহর।। শেনজেনের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হলো পিং অ্যান ফাইন্যান্স সেন্টার। উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার। এর নিচে যেন মেঘের দল ছুটে বেড়ায়। শেনজেনের সবচেয়ে উঁচু এই ভবনটির কাছাকাছি ভবনটি হলো- কেকে টাওয়ার, যা ১০০ তলা লম্বা এবং উচ্চতা ৪৪১ মিটারেরও বেশি। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চায়না রিসোর্স হেড কোয়ার্টার (প্রায় ৩৭৪ মিটার) এবং হ্যাঙ্কিং সেন্টার (প্রায় ৩৫৮ মিটার)।

 

দুবাই, আরব আমিরাত

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ১০৭

৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল দুবাই, আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনবহুল শহর। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আধুনিক মক্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং এর আশপাশের শহরগুলো বর্তমান বিশ্বের বিস্ময়। মরুভূমির পরিবেশের শ্বাসরুদ্ধকর তাপ থেকে চমৎকার স্থাপত্যের আশ্চর্যের ভবিষ্যৎ মরূদ্যান পর্যন্ত, দুবাই হলো- অনন্য এক উদাহারণ। ধনকুবেরদের শহর দুবাইয়ে ২০০ মিটারেরও বেশি লম্বা প্রায় ১০৭টি অনন্য আকাশচুম্বী ভবন রয়েছে। নিঃসন্দেহে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। ২০০৯ সালে সমাপ্ত হওয়া সবচেয়ে উঁচু এই অট্টালিকা বিস্ময়করভাবে ৮২৮ মিটারে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে মনে হতেই পারে, বিশাল ভবনটি দুবাইয়ের আকাশরেখাকে ছুঁয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে দুবাইয়ের দ্বিতীয় সুউচ্চ দালানটি হলো- মেরিনা ১০১, যার উচ্চতা মাত্র ৪২৪ মিটার! ১৯৭০-এর দশকে সুউচ্চ দালান নির্মাণের সূচনা হওয়ার পর থেকে দুবাই ধারাবাহিকভাবে আরও বেশি গগনচুম্বী ভবন নির্মাণ করে চলেছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম অনন্য একটি মরুভূমির শহর।

 

হংকং, চীন

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৯৪

১৯৯৪ সাল থেকে হংকং ২০০ মিটারের বেশি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের ফলে শহরটি পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আকাশচুম্বী ভবনের আয়োজক। তদুপরি ৭০ লাখের বেশি লোকের এই শহরে বিস্ময়কর হলেও ৯ হাজার ভবন রয়েছে। যেগুলোকে স্থানীয়রা উঁচু বলেই মনে করেন। কারণ প্রতিটি ভবনের উচ্চতা অন্তত ১৫০ মিটার। হংকং পুরনো এক ব্রিটিশ উপনিবেশ, যেখানে ১৯৮০-এর দশকের পর থেকে সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ এবং শিল্পের উন্নয়ন ঘটে। আজ এটি একটি সত্যিকারের বিস্ময়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অত্যাশ্চর্য ভিক্টোরিয়া হারবারে অবস্থিত; যেখানে রয়েছে হংকংয়ের অসংখ্য আকাশচুম্বী ভবন। যেগুলো অনেক বেশি ঘনীভূত। রাতের বেলা হংকংয়ের ৪২টি ভবন ‘দ্য সিম্ফনি অব লাইটস’ নামক শো-এ আলোকিত হয়; যার চকচকে রং, আলোকসজ্জা হারবারের জলে সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়। শহরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আকাশচুম্বী ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমার্স সেন্টার (৪৮৪ মিটার), ব্যাংক অব চায়না টাওয়ার (৩৬৭ মিটার) এবং ৭৮ তলা উঁচু সেন্ট্রাল প্লাজা বিল্ডিং।

 

নিউইয়র্ক, আমেরিকা

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৯২

প্রায় ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ নিউইয়র্ক সিটি এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে বসবাস করে। যার ফলে এখানকার ‘বিগ অ্যাপল’ আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল মহানগরে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার সত্যিকারের কংক্রিটের স্থাপনার নিউইয়র্ক সিটির (বিশেষত ম্যানহাটন) প্রায় প্রতিটি কোণে রয়েছে বিপুলসংখ্যক উঁচু, আকাশচুম্বী এবং সুউচ্চ ভবন। ১৯, ২০ এবং ২১ শতকগুলোয় অর্থাৎ কয়েক দশক ধরে নির্মিত হয়েছিল এসব অট্টালিকা। নিউইয়র্কের আকাশছোঁয়া ভবনগুলোর জন্য প্রকৃতপক্ষে এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শহর। নিউইয়র্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৮১ মিটারের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং (১৯৩১), ৩১৮ মিটারের ক্রাইসলার বিল্ডিং (১৯৩০), ৫৪১ মিটারের সুউচ্চ ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (২০১৪), যা টুইন টাওয়ার। যা ২০০১ সালে এক ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলায় ধসে পড়েছিল। স্কাইস্ক্র্যাপার হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ কমপক্ষে ৩০২টি পৃথক ভবনসহ, নিউইয়র্কে ৭ হাজারের বেশি উঁচু অকাঠামো বা দালান রয়েছে, যা দর্শকদের সত্যিকারের বিস্ময়ের অনুভূতি দেয়।

 

সাংহাই, চীন

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৬০

সাংহাই হলো চীনের দ্রুততম উন্নত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফলস্বরূপ বিশ্ব একে সত্যিকারের একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সাংহাই হলো একটি সুন্দর বন্দরনগরী, ১৯২০-এর দশকে যার আধুনিকায়ন শুরু হয়েছিল। চীনের বিখ্যাত এই শহরটি প্রায় ১০০ বছর ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে তার উন্নয়নের চাবিকাঠি অব্যাহত রেখেছে। আজকের সাংহাইয়ে ২০০ মিটারেরও বেশি লম্বা কমপক্ষে ৬০টি অনন্য গগনচুম্বী অট্টালিকা দিয়ে ভরা, যার মধ্যে রয়েছে স্মারক সাংহাই টাওয়ার (২০১৪), যা ৬৩১ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে! প্রকৃতপক্ষে এই টাওয়ারটি একাই চীনের সবচেয়ে উঁচু এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন। শহরটির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আকাশচুম্বী ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে- জিন মাও টাওয়ার, উচ্চতা ৪২০ মিটার এবং ১০১ তলাবিশিষ্ট সাংহাই ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার, যার উচ্চতা ৪৯২ মিটার। ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাসহ চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহর এই সাংহাই নগরী। যেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোয় ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিকতা একসঙ্গে মিলিত হয়েছে।

 

টোকিও, জাপান

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৫৩

টোকিও শহরটি জাপানের ৪৭টি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর। এখন পর্যন্ত টোকিও নগরীতে প্রায় ১৬৮টি ভবন রয়েছে; যা ১৫০ মিটারের চেয়ে বেশি লম্বা। এমনকি জাপানের সবচেয়ে পুরনো এই নগরীতে কমপক্ষে ৫৩টি উঁচু দালান রয়েছে; যার উচ্চতা ১৮৫ মিটারের বেশি। টোকিওর সবচেয়ে উঁচু দালান এবং একমাত্র সুপারটাল স্কাইস্ক্র্যাপার হলো- আজাবুদাই হিল মরি জেপি টাওয়ার, যা ৩০৫ মিটারের চেয়ে একটু বেশি উঁচু। যাই হোক শহরের সবচেয়ে উঁচু অবকাঠামোটি হলো- টোকিও স্কাইট্রি, যা মাটি থেকে প্রায় ৬৩৪ মিটার উঁচু। এটি সুমিদা সিটি ওয়ার্ডের টোকিও স্কাইট্রি টাউনের কেন্দ্রস্থল আসাকুসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। টোকিও স্কাইট্রি জাপানের সবচেয়ে লম্বা কাঠামো এবং বিশ্বের তৃতীয়-উচ্চতম ফ্রিস্ট্যান্ডিং কাঠামো। যার কাজ সমাপ্ত হওয়ার সময় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থাপনার মর্যাদা পেয়েছিল। টোকিওর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু দালানটি হলো টোরানোমন হিলস কমপ্লেক্সের ২৬৫ মিটার লম্বা টোরানোমন হিলস স্টেশন টাওয়ার, যার নির্মাণ প্রক্রিয়া ২০২৩ সালের শেষ দিকে সম্পন্ন হয়েছিল।

 

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৪৪

কুয়ালালামপুর শহরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, সুদৃশ্য সবুজ পার্ক, সুউচ্চ মসজিদের মিনারে ভরা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে শহরের প্রতিটি কোনায়। শহরটি মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির প্রধান কেন্দ্র। এখানে ২০০ মিটারেরও বেশি লম্বা কমপক্ষে ৪৪টি ভবন রয়েছে। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। ১৯৪৫ সালে কুয়ালালামপুরে আকাশচুম্বী অট্টালিকার নির্মাণ শুরু হয়েছিল। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার হলো মালয়েশিয়ার গর্বের স্থাপনা। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বহুতল ভবনটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। এর উচ্চতা ৪৫২ মিটার। তবে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হলো- মার্দেকা ১১৮। ১১৮ তলাবিশিষ্ট দালানটির উচ্চতা ৬৭৯ মিটার। কুয়ালালামপুর টাওয়ার সারা বিশ্বে কুয়ালালামপুরের প্রতিনিধিত্ব করে। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেও কুয়ালালামপুর টাওয়ার সরকারিভাবে শহরটির প্রধান কেন্দ্র। ৪২০ মিটার উচ্চতার ভবনটি মূলত একটি যোগাযোগ টাওয়ার, যা ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়।

 

শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৩৭

আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর শিকাগো। এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ, যা এটিকে সবচেয়ে জনবহুল শহর করে তুলেছে ইলিনয় অঙ্গরাজ্য এবং মধ্য-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের মধ্যে। শিকাগো অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প, প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং পরিবহনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র। এটি আমেরিকার পুরনো শহর। একে ‘আকাশচুম্বী ভবনের জন্মস্থান’ বলা হয়। ১৮৮৫ সালে আমেরিকা ‘হোম ইন্স্যুরেন্স বিল্ডিং’-এর নির্মাণ করেছিল। তৎকালীন শিকাগোয় ইস্পাত ফ্রেম দিয়ে নির্মাণ কৌশলে এক বিশাল বিপ্লব দেখা যায়। শিকাগো শহরটি হলো আমেরিকার ১ হাজার ৩৯৭টি সম্পূর্ণ উঁচু দালানের আবাসস্থল, যার মধ্যে ৩৭টি অট্টালিকা ২০০ মিটার থেকে উঁচু। শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হলো ১১০ তলা উইলস টাওয়ার (পূর্বে সিয়ার্স টাওয়ার) যা শিকাগো লুপে ৪৪২ মিটার ওপরে উঠেছিল এবং ১৯৭৪ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। শিকাগো শহরটির দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ উচ্চতম ভবনগুলো হলো যথাক্রমে- ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার, সেন্ট রেজিস শিকাগো এবং এওন সেন্টার।

 

উহান, চীন

উঁচু ভবনের সংখ্যা : ৩০

উহান হলো হুবেই প্রদেশের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। সেই সঙ্গে এটি মধ্য চীনের বৃহত্তম শহর। ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার নিয়ে এটি হুবেই প্রদেশের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ঐতিহাসিকভাবে উহান নগরী ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য চীনের প্রসিদ্ধ একটি শহর। উহানকে কখনো কখনো বিদেশি উৎসগুলো ‘চীনের শিকাগো’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে, যা মধ্য চীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। চীনের উহান নগরীতে অসংখ্য আকাশচুম্বী ভবন রয়েছে। তন্মধ্যে ২৬৭টি ভবনের উচ্চতা ১৫০ মিটার। উহান চীনের পঞ্চম সেরা আকাশি শহর এবং অষ্টম স্থানে রয়েছে। আধুনিক উহান শহরে প্রায় ৩০টি উঁচু ভবন রয়েছে, যা ২০০ মিটার থেকেও বেশি উঁচু। উহানের সবচেয়ে উঁচু ভবন হলো উহান গ্রিনল্যান্ড সেন্টার যার উচ্চতা ৪৭৬ মিটার। উহানের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবনটি হলো উহান সেন্টার, যার উচ্চতা ৪৪৩ মিটার। ২০২৩ সালে ভবনটির নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর