সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশে দেশে থিম পার্ক

রকমারি ডেস্ক

দেশে দেশে থিম পার্ক

বিশ্বের সেরা থিম পার্কগুলোর কথা উঠলে ডিজনি ওয়ার্ল্ডের কথা বলতেই হয়। ছোটরা তো বটেই, বড়দের জন্যও এমন পার্ক যেন স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। কী নেই এখানে! মানুষের কল্পনায় যতটা ছোঁয়া যায় তার অনেক কিছু দিয়ে সাজানো হয়েছে এটি। ডিজনি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছে এটি। ভিতরে রয়েছে চারটি থিম পার্ক ও দুটি ওয়াটার পার্ক। আছে হন্টেড ম্যানশন, পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানের মতো ক্লাসিক রাইড। এ পার্কের অ্যাভাটার ফ্লাইট অব প্যাসেজ এবং স্টার ওয়ার্স : রাইজ অব দ্য রেজিস্ট্যান্স রাইডগুলো দর্শনার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়। ডিজনি ওয়ার্ল্ডে প্রত্যেকের জন্যই কিছু না কিছু রয়েছে।

 

ডিজনিল্যান্ড : ডিজনিল্যান্ড শিশুদের এক আনন্দরাজ্য। এই পার্কের নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে আলাদা করে বলতে হয়। ওয়ালট ডিজনির মাথা থেকে এমন একটি থিম পার্ক গড়ে তোলার বুদ্ধি আসে। ১৯৫৪ থেকে নির্মাণ শুরু হয় এটির। ১৬০ একর জমিজুড়ে থাকা বিভিন্ন গাছপালা কেটে সাফ করা হয় প্রথমে। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ। এত বড় নির্মাণ কাজের জন্য চাই টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিয়োগ খুঁজতে তিনি ডেকে আনেন সে সময়ের সেরা বিনিয়োগকারী ও মিডিয়া মোগলদের। তিনটি বৃহৎ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক- NBC, CBS এবং ABC-এর কাছে। এদের মধ্যে শুধু এবিসি নেটওয়ার্ক ডিজনিল্যান্ড প্রকল্পে পাঁচ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি হয় এবং এ বিনিয়োগের ফলে তারা ডিজনিল্যান্ডের ৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পেয়ে যায়। এরপর যোগ হয় কোকাকোলা, সুইফট, ইস্টম্যান কোডাক, ফ্রিটো-লেইয়ের মতো বড় কোম্পনিগুলো। ডিজনিল্যান্ড তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তীতে ডিজনিল্যান্ড উদ্বোধনের পর যখন তা লাভের মুখ দেখতে থাকে তখন ধীরে ধীরে ওয়াল্ট ডিজনি এসব শেয়ার কিনে নিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ডিজনিল্যান্ডে শুধু এবিসি নেটওয়ার্কের শেয়ার টিকে ছিল। ডিজনি কোম্পানি পরে এক সময় এবিসি নেটওয়ার্ককেই কিনে নেয়।  ডিজনিল্যান্ডজুড়ে রয়েছে ফ্রন্টিয়ারল্যান্ড, অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড, টুমরোল্যান্ড, ফ্যান্টাসিল্যান্ডের মতো থিম পার্কগুলো। অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ডে গড়ে তোলা হয় আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা ইত্যাদি অঞ্চলের জঙ্গলগুলোর মতো বন্য পরিবেশ। ভবিষ্যৎ দুনিয়ার মতো করে তৈরি করা কাল্পনিক এক জগৎ হলো ডিজনির টুমরোল্যান্ড। এখানকার অসাধারণ সব রাইড সবাইকে নিমিষেই যেন নিয়ে যায় বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের জগতে। অবশ্য ডিজনিল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় থিম পার্ক সম্ভবত ফ্যান্টাসিল্যান্ড। একে তৈরি করা হলো জাদুবাস্তবতার এক অপূর্ব মিশেলে। এই ফ্যান্টাসিল্যান্ডে রয়েছে একটি বিশালাকার সিøপিং বিউটি ক্যাসল এবং একটি ফ্যান্টাসি ভিলেজ। ডিজনিল্যান্ড নির্মাণের সব ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন ওয়াল্ট ডিজনি। তিনি সপ্তাহে একাধিকবার নির্মাণাধীন পার্ক পরিদর্শনে যেতেন। এক সময় ডিজনিল্যান্ড উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। উদ্বোধনী দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ছয় হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ছিলেন হলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীর তারকার। সেদিন প্রায় ২৮ হাজারের বেশি মানুষ ভিড় জমিয়েছিল ডিজনিল্যান্ডের বাইরে। শুরু হয় বিনোদন দুনিয়ার অন্য এক জগৎ।

ইউনিভার্সাল স্টুডিও

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত একটি পার্ক ইউনিভার্সাল স্টুডিও। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। এতে দুটি থিম পার্ক রয়েছে। হলিউড স্টাইলের আদলে ইউনিভার্সাল স্টুডিও রয়েছে এই পার্কে। এর রাইডগুলো একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই পার্কের জনপ্রিয় রাইডগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হ্যারি পটারের উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড রাইডটি।

 

টিভোলি গার্ডেন, ডেনমার্ক

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিনোদন পার্ক টিভোলি গার্ডেনে অ্যাকিলা, দ্য ফেরিস হুইল, দ্য অ্যাস্ট্রোনমার, দ্য গোল্ডেন টাওয়ার, দ্য ফ্লাইং ট্রাঙ্ক, দ্য ড্রাগন বোটস, দ্য লিটল ড্রাগন এবং আরও অনেক কিছুতে অনন্ত রোমাঞ্চ এবং হাসি উপভোগ করুন। কোপেনহেগেনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, এটি প্রায় ১৭২ বছর বয়সি। থিয়েটার, রাইডস এবং রেস্তোরাঁয় পরিপূর্ণ, এটি অবকাশ যাপনকারীদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ।

 

এফেলিং, নেদারল্যান্ডস

ইউরোপের পর্যটনপ্রিয় বিনোদন পার্কগুলোর মধ্যে একটি। নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে বড় পার্ক এটি। এর নিমগ্ন রাইড, বিস্তৃত উদ্যান এবং রূপকথার গল্প এবং ডাচ লোককাহিনির থিমগুলোর ওপর ভিত্তি করে অনন্য আকর্ষণ দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। ১৫-একর জমির বিশাল বিস্তৃত রূপকথার বনের জাদুকরী জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলুন। আশ্চর্যজনক রাইডগুলো সবাইকে ব্যস্ত রাখে এবং বিনোদন দেয়। আশ্চর্যজনক খাবার এবং পানীয় বিকল্পগুলো মানুষকে আরাম করতে এবং একে অপরের কোম্পানিতে সময় উপভোগ করতে দেয়।

 

টোকিও ডিজনি রিসোর্ট

জাপান টোকিও ডিজনি রিসোর্ট জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। পার্কটি জাপানি-শৈলীর এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। এতে রয়েছে দুটি থিম পার্ক ও একটি ওয়াটার পার্ক। এর জনপ্রিয় রাইডগুলো হলো -হন্টেড ম্যানশন, পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান, বিগ থান্ডার মাউন্টেন এবং মনস্টারস।

 

ওশান পার্ক

ওশান পার্ক হংকংয়ে অবস্থিত। এটি বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। দুটি থিম পার্ক এবং একটি ওয়াটার পার্ক রয়েছে এখানে। এই পার্ক দর্শনার্থীদের তার রোমাঞ্চকর রাইড এবং আকর্ষণগুলোর সঙ্গে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। ক্লাসিক রোলার কোস্টার, দ্য অ্যাবিস, হেয়ার রাইজার এবং মাইন ট্রেনের মতো উত্তেজনাপূর্ণ রাইড রয়েছে এ পার্কে।

এভারল্যান্ড থিম পার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার গেয়ংগি-ডু শহরে অবস্থান এভারল্যান্ডের। ১৯৭৬ সালে চালু হওয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা বিনোদন পার্কটিতে প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সাত মিলিয়নেরও বেশি দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন। পার্কটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার পাঁচটি চমকপ্রদ থিম। যেগুলো হচ্ছে- ‘জু-তপিয়া’, ‘গ্লোবাল ফেয়ার’, ‘ম্যাজিক ল্যান্ড’, ‘আমেরিকান অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘ইউরোপিয়ান অ্যাডভেঞ্চার’। প্রতি বসন্তে পার্কটি দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ‘টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করে। চমৎকার থিমসমূহ এবং ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে এ পার্কের রোমাঞ্চকর রাইড ‘টি-এক্সপ্রেস’ ও ‘ফেরিস হুইল’ প্রাণভরে উপভোগ করুন।

সর্বশেষ খবর